করোনা ভাইরাস প্রতিবেদন রচনা

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা | CORONA virus Protibedon Rochona |করোনা ভাইরাস

Content Checklist : 1. করোনা ভাইরাসের সূচনা 2. করোনা ভাইরাসের উৎস 3. করোনা রোগের উপসর্গ ও সংক্ৰমণ 4. রোগ প্রতিরোধের উপায়।

 সূচনা:

বর্তমানে বিশ্ব নােভেল করােনা ভাইরাস (COVID-19) সংক্রমণজনিত এক অতিমারির সম্মুখীন। 2019 নােভেল করােনা ভাইরাস, একটি নতুন ভাইরাস যা চিনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম চিহ্নিত করা গেছে। এটি নােবেল বলা হচ্ছে কারণ এটি পূর্বে দেখা যায়নি। এই ভয়ংকর অতিমারির হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য দেশে, বিদেশে নিরন্তর গবেষণা চলছে। যদিও এখনও পর্যন্ত স্থায়ী কোনাে সমাধানের পথ আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এই ভাইরাস সম্বন্ধে কিছু সাধারণ ধারণা এবং ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত হওয়ার সম্পর্কে শিক্ষার্থী তথা জনমানসে যথেষ্ট সচেতনার প্রয়ােজন। এই উদ্দেশেই আমাদের এই প্রতিবেদন।

করােনা ভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন শব্দ করােনা থেকে সৃষ্টি হয়েছে, যার অর্থ হল ক্রাউন (Crown) বা সুশোভিত করা। ভাইরাসের উপরিতলে কাঁটার ন্যায় স্পাইক প্রােটিন দ্বারা সুশােভিত থাকে বলে, ভাইরাসের এইরুপ নামকরণ করা হয়েছে।

করােনা ভাইরাসের উৎস: 

করােনা ভাইরাসের জিনগত উপাদান একতন্ত্রী RNA। মানুষসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিদের এই ভাইরাস সংক্রামিত করে। মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে এই রকম ছয়টি প্যাথােজেনিক স্ট্রেনের মধ্যে SARS-COV (Severe Acute Respiratory Syndrome) এবং MERS-COV Middle East Respiratory Syndrome) দ্বারা সৃষ্ট রােগের প্রভাব খুব মারাত্মক। অন্যান্য স্ট্রেনগুলি দ্বারা সৃষ্ট রােগের লক্ষণ মৃদু । অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্লু (Flu)-এর ন্যায়। দক্ষিণ চিনের উহানে অবস্থিত সি ফুড মাকেটে 2019 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে, মানুষের দেহে প্রথম যে রােগ ছড়িয়ে পড়ে সেই রােগের প্রভাব SARS বা MERS থেকেও মারাত্মক। নতুনভাবে সৃষ্ট এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় nCov 19 বা নােভেল করােনা ভাইরাস। এর উৎপত্তি বাদুড় থেকে সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে কারাে কারাে মতে বাদুড় থেকে প্যাঙ্গোলিন নামক প্রাণীকে অন্তর্বর্তী পােষক হিসেবে ব্যবহার করে ভাইরাসটি প্রবল সংক্রামক রূপে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাদুড়ের SARS সৃষ্টিকারী ভাইরাসের সাদৃশ্য তার জন্য এই ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে SARS.COV-2 বা COVID-19 (Corona virus diseases-19)। 2020 সালের মার্চ মাসে WHO এই রােগটিকে বিশ্ব অতিমারিরূপে ঘোষণা করে। এখনও পর্যন্ত করােনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রায় 50 বারের বেশি মিউটেশন লক্ষ করা গেছে। বার বার মিউটেশনের ফলে ভাইরাস খুব সহজেই নতুন নতুন পরিবেশে ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা
করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা

রােগের উপসর্গ ও সংক্ৰমণ:

এই ভাইরাস সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণ হল হাঁচি, শুকনাে কাশি, জ্বর,গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ইত্যাদি। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রবল শ্বাস কষ্ট, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। এই সকল কারণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। মানুষের হাঁচি এবং কাশির সময় যে ড্রপলেট (Droplet) মুখ থেকে নির্গত হয়, তার মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রামিত মানুষ থেকে সুস্থ মানুষের মধ্যে সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রতি 6 জন আক্রান্তের মধ্যে একজনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা তীব্র হাতে পারে। যাদের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কম তাদের এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

আরও দেখুন : প্রবন্ধ রচনা মহামারি করোনা

 রােগ প্রতিরােধের উপায়:

ড্রপলেট সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মুখে মাস্ক এবং ফেস শিল্ড-এর ব্যবহার খুবই প্রয়ােজনীয়। পারস্পরিক শারীরিক দুরত্ব কমপক্ষে 6 ফুট বজায় রাখা উচিত। নাক, মুখ যথাযথভাবে ঢেকে রাখতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে বারে বারে সাবান ও জল দিয়ে হাত ধােওয়া এবং সাবান না থাকলে অ্যালকোহলযুক্ত (70% –95%) স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির যাতে মানসিক স্বাস্থ্য বজায় থাকে এবং তারা যেন কোনাে সময়ে হতাশাগ্রস্ত না হয় সব সময় তার ব্যবস্থা রাখা উচিত। ভাইরাসঘটিত রােগ প্রতিরােধের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনই সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। তাই দেশে-বিদেশে ওষুধ উৎপাদন কারী সংস্থা Covid-19-র প্রতিরােধক ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। তবে তা এখনও পর্যন্ত সর্বসাধারণের কাছে পৌছায়নি।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাইরাস যে হারে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে মানব শরীরে সংক্রমণজনিত অনাক্রম্যতা গড়ে উঠছে। তার সঙ্গে যদি ভ্যাকসিন প্রয়ােগ দ্বারা অনাক্রম্যতা সৃষ্টির সমন্বয় গড়ে তােলা যায়। তাহলে খুব দ্রুত মানব শরীরে Herd immunity তৈরি হবে। সমগ্র মানবজাতি আজ সেই আশায় রয়েছে। ভাইরাস ধীরে ধীরে তার ক্ষমতা হারিয়ে বিনষ্ট হবে। সমগ্র বিশ্ব অতিমারির প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আসবে। জীবন আবার তার নিজস্ব ছন্দে ফিরে আসবে। তাই আমরা সুস্থ, সতর্ক থাকার চেষ্টা করি। আমরা আগামী সুদিনের জন্য অপেক্ষা করবাে।

More Post ⇩

প্রবন্ধ রচনা : মহামারি করোনা

21st February Shaheed Day