বাংলা রচনা : ধর্মের অপব্যাখ্যা ও সাম্প্রদায়িকতা
রচনা সংকেত : ভূমিকা— ধর্ম ও জীবন—ধর্মমত, ধর্মের সংকীর্ণতা—ধর্মে ধর্মে বিরােধ—ধর্মের মূল হল-(মানবপ্রেম)—মৌলবাদের আবির্ভাব—উপসংহার।
ভূমিকা :
আমাদের এই পৃথিবীতে সেই আদিযুগ থেকে প্রচলিত হয়ে রয়েছে নানা ধর্ম এবং এই সঙ্গে নানান ধৰ্মৰ্মত। প্রতিটি ধর্ম আবর্তিত হচ্ছে নিজেদের স্ব-নির্মিত আরাধ্য এক ঈশ্বরকে নিয়ে। এই ঈশ্বর অনেক সময় স্বর্গলােকবাসী, আবার কখনও বা আমাদের চোখের সামনে উপস্থিত বিশেষ বিশেষ প্রাকৃতিক অত্যাশ্চর্য বস্তু সমূহ। কখনও কখনও দেখা যায় পার্থিব বস্তুকে ছাড়িয়ে এক অদৃশ্য মহাজাগতিক শক্তিকে মেনে নিয়ে ধর্মগুলিকে গড়ে তুলছে মানুষ এবং নিজের নিজের গড়ে তােলা ধর্ম অনুসারে ধর্মের উদ্ভব, জীবনচর্যা মানুষ তৈরি করে নিচ্ছে নিজের নিজের ধর্মমত এবং জীবন চর্যা।
ধর্ম ও জীবন:
মজার ব্যাপার এই যে, প্রত্যেক মানুষই নিজের নিজের ধর্মমতকেই শ্রেষ্ঠ মত বলে মনে করে। নিজের মনােমতাে ধর্মমতের অনুসরণে প্রত্যেক মানুষই তার জীবনযাত্রা এবং জীবন পদ্ধতি তৈরি করে নিয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, প্রত্যেকের নিজের নিজের উপাসনা এবং ঈশ্বর বন্দনা।
ধর্মমত, ধর্মের সংকীর্ণতা:
বর্তমান পৃথিবীতে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, ইহুদি, মুসলমান, পারসিক, শিখ প্রভৃতি ধর্মমত ছাড়াও আরও অনেক ছােটো ছােটো সম্প্রদায় নিয়ে অনেক ধর্ম রয়েছে এবং এঁরা সকলেই নিজের নিজের ধর্মকে একান্ত সত্য এবং পৃথিবীর সেরা ধর্ম বলে মনে করে থাকেন। নিজের ধর্মের বাইরে আর কোনাে ধর্মের অস্তিত্বকে এঁরা পাত্তা দেন না। বলা বাহুল্য, এখানেই সাম্প্রদায়িকতার বীজ নিহিত।
ধর্মে ধর্মে বিরোধ :
পৃথিবীর অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিটি ধর্মই নিজের নিজের সম্প্রদায়কে বাড়াবার জন্য ধর্মীয় যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ফলে মানুষের রক্তে ভেসে গেছে পৃথিবীর বুক। ভেঙেছে সমাজ, ভেঙেছে দেশ। ধর্মের কারণেই আমাদের এই ভারতবর্ষ ভেঙে তিন টুকরাে হয়ে গেছে। ধর্মকে কেন্দ্র করে ধর্মে ধর্মে বিরােধ, সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা আজও আমাদের নানাভাবে বিভক্ত করে রেখেছে। ভারতবর্ষের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরােধের অন্যতম প্রধান কারণ ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা। পাকিস্তানের বেশ কিছু মৌলবাদী ধর্মীয় গােষ্ঠী নানা অজুহাতে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়া-যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের ভেতরেও এই সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি কখনও কখনও প্রবল আকার নিয়েছে।

ধর্মের মূল হল মানবপ্রেম :
প্রতিটি ধর্মের মৌলিক আদর্শ হল, মানব প্রেম’। হিংসা নয়, পীড়ন নয়, মানুষকে ভালােবাসতে হবে, এটাই হল প্রতিটি ধর্মের মূল কথা। “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। যিশুখ্রিস্ট প্রাণ উৎসর্গ করেছেন মানব প্রেমের কথা বলে। প্রেম ও অহিংসার কথা বলে গেছেন বুদ্ধ। হজরত মহম্মদ বলেছেন বিশ্বাস ও মঙ্গলের ধর্ম হল ইসলাম। তিনি চেয়েছিলেন সাম্য ও মৈত্রী।
মােট কথা, সকল ধর্মের মূলকথা হল, মানব প্রেম এবং প্রতিটি মানুষের কল্যাণসাধন। সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতা যে ধর্ম নয়, তা যুগে যুগে ধর্মীয় মহাপুরুষরা দেখিয়ে গেছেন।
মৌলবাদের আবির্ভাব :
মহাপুরুষদের ওই নির্দেশ অমান্য করে এবং ধর্মের অপব্যাখ্যা করে আজ আমরা ভয়ংকর বিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতার পাঁকে ডুবে গেছি। সব ধর্মের ভেতরই মাথা চাড়া দিয়েছে মৌলবাদীরা। তাঁরা ধর্মকে বিকৃত করেছেন ও সাম্প্রদায়িকা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। তাই বাড়ছে দাঙ্গা, হানাহানি এবং রক্তপাত।
উপসংহার :
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, ‘যত মত, তত পথ’। ধর্মের লক্ষ্য মানুষ, মানুষই সত্য। মানুষের কল্যাণেই ধর্মের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তাই সাম্প্রদায়িকতা নামক মিথ্যাকে ধর্ম নাম দিয়ে চালানাে অন্যায়। মানুষের শুভচেতনাই পারে মানুষকে প্রকৃত ধর্মের পথে নিয়ে যেতে।
বাংলা রচনা : ধর্মের অপব্যাখ্যা ও সাম্প্রদায়িকতা
You must be logged in to post a comment.