
শিশুশ্রমিক, শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, শিশুদের বর্তমান পরিবেশ, শৈশব ফিরিয়ে দাও ? শিশু কী চায়? জাতীয় সমস্যা রূপে শিশুশ্রমিক।
বাংলা রচনা ➩ শিশুশ্রমিক – জাতীয় সমস্যা
রচনা সংকেত :
১. সূচনা
২. শিশুশ্রমিক সমস্যা
৩. শিশুদের শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়ােগ ও নৃশংসতা
৪. শিশুশ্রমিক সম্পর্কে সমীক্ষা
৫. সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ
৬. প্রতিকারের উপায়
৭. সরকারি বেসরকারি প্রচেষ্টা
৮. উপসংহার।
সুচনা :
“শিশুশ্রমিক দেশের লজ্জা, জাতির অপমান,
শিশুর হাসি কেড়ে নিলে কোথায় পাবে প্রাণ ?”
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। সেই শিশুরা যদি সমাজে অবহেলিত হয়, শােষিত হয়, তাহলে দেশের উন্নতি কোনাে মতেই সম্ভব নয়। ঠিক, শিশুরা স্বভাবত কল্পনাপ্রবণ, ভাবপ্রবণ, শিশুমনের আকাশে ইন্দ্রধনুর সপ্ত রত্রে সমাবেশ। কিন্তু, শিশুদের সেই শৈশব কেড়ে নিয়ে তাকে যদি রুজিরােজগারের কাজে লাগানাে যায়, তাহলে এর থেকে বড়াে দুঃখের কথা আর কী আছে? মহাত্মাগান্ধি বলেছেন—“শিশুকে অর্থের বিনিময়ে শ্রম করানাের চেয়ে বড়াে জাতীয় অভিশাপ আর কিছুই হতে পারে না।”
শিশুশ্রমিক সমস্যা :
মানুষের লােভ আজ ক্রমবর্ধমান। এক শ্রেণির মানুষ শিশুদেরকে কলকারখানার কাজে লাগিয়ে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। ক্রিশ্চিনা রসেটি শিশুশ্রমিকদের কান্না শুনে লিখেছেন—“Cry of the Children”। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন—————— “যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণভরে সরাব এ পৃথিবীর জঞ্জাল, এ পৃথিবীকে এ শিশুর বাসযােগ্য করে যাব আমি,নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
শিশুদের শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়ােগ ও নৃশংসতা :
বর্তমানে সভ্য মানুষ কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করার জন্য শিশুদের কঠিন পরিশ্রম করিয়ে কম মজুরি দিচ্ছে। এছাড়া গৃহকর্ম, চায়ের দোকান, জুতাে পালিশ, দেশলাই কারখানা প্রভৃতির মতাে বহু কর্মে শিশুদের অতি অল্প পারিশ্রমিকে নিযুক্ত করা হয়। এইসব শিশুরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করে কাজ করে যায়। এরা ভালাে করে খেতে-পরতে এমনকি ঘুমােতেও পারে না, এক মুহূর্তের বিশ্রাম পায় না। কাজ করতে না পারলে তাদের ভাগ্যে জুটছে বেত্রাঘাত, লাথি, অপমান। তাদেরকে না খেতে দিয়ে বন্দি করে রাখা হচ্ছে।

ভারতের শিশুশ্রমিক সম্পর্কে সমীক্ষা :
শিশুশ্রমিক সমস্যা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই দেখা যায়। ভারতে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং এদের হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ভারতে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা দশ কোটিরও বেশি।
সামাজিক ও অথনৈতিক কারণ :
অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, অর্থাৎ দারিদ্র ও অশিক্ষা শিশুশ্রমিক সমস্যার প্রধান দুটি কারণ। দরিদ্র পরিবারে অধিক সন্তান ও শিশুশ্রমিক হওয়ার অন্যতম কারণ। অবশ্য দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতাই প্রধান সমস্যা।
প্রতিকারের উপায় :
শিশুশ্রমিক সমস্যা দূর করা সম্ভব ‘শিশুশ্রমিক নিরােধ ও নিয়ন্ত্রণ আইনটি কঠোরভাবে প্রয়ােগ করা হলে। কিন্তু ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এই আইন হলেও এখনও এর যথাযথ প্রয়ােগ হয়নি। তবে শুধু আইন প্রয়ােগ করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দেশের দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণে সর্বাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সার্বিক শিক্ষাবিস্তার করতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে শিশুদেরকে উপযুক্ত গড়ে উঠবার পরিবেশ দিতে পারলে এ সমস্যা আমাদের দেশ থেকে দূর হবে।
সরকারি – বেসরকারি প্রচেষ্টা :
শিশুশ্রমিক সমস্যা আজ সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শিশুর মুখে হাসি ফোটাবার জন্যে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে থেকে ‘আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষের’ আয়ােজন করা হয়েছে। আমাদের ভারতবর্ষে বর্তমানে ‘শিশুশ্রমিক নিরােধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন কড়াকড়ি করা হয়েছে। সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিড ডে মিল পদ্ধতি চালু করে তাদেরকে শিক্ষার সুযােগ ও ক্ষুধা নিবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছ। কিন্তু এটুকুই যথেষ্ট নয়। সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরির্তন তথা উন্নয়ন ব্যতিরেকে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না।
উপসংহার :
শিশুশ্রমিক সমস্যা একটা জাতির অপমান, কলঙ্কের বিষয়। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের মুখে ফুলের হাসি ফোটাতে হলে আমাদের চাই মানবিক মূল্যবােধ, আর চাই শিশুর প্রতি ভালােবাসা।
Also Read : ধর্মের অপব্যাখ্যা ও সাম্প্রদায়িকতা
You must be logged in to post a comment.