Madhyamik History Suggestion 2022 |পঞ্চম অধ্যায়|দশম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন | বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা : পঞ্চম অধ্যায়
প্রশ্ন: শান্তিনিকেতনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলােচনা করাে।
উত্তর :
ভূমিকা : বীরভূম জেলার বােলপুরের কাছে অবস্থিত একটি গ্রাম হল শান্তিনিকেতন, পূর্বে ভুবনডাঙ্গা নামে এই স্থান পরিচিত ছিল।
ব্ৰহ্মবিদ্যালয় : ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্ৰহ্মবিদ্যালয়’। সেখানেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন, তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে নিজের এবং অন্যান্য আশ্রমবাসীদের থাকার জন্য ভবন নির্মাণ করেন যা প্রকৃতির মাধুর্য্যে লালিত।
বিশ্বভারতীর ভাবনা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর তপােবন’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন যে, তপােবনে রয়েছে প্রাকৃতিক নিবিড় শান্ত রূপ, ঔপনিবেশিক শিক্ষার বাইরে তিনি এক বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তােলার জন্য শান্তি ও নিবিড় রূপের মধ্যে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার : ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রশ্ন: টীকা লেখাে : জাতীয় শিক্ষা পরিষদ।
উত্তর :
ভূমিকা : বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনকালে জাতীয় শিক্ষা ধারণার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (১৯০৬ খ্রিঃ)।
প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য : জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি হল—(১) ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষানীতির বিরােধীতা করা, (২) দেশের প্রয়ােজনে স্বদেশি ধাঁচে এক বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তােলা।
ন্যাশনাল কলেজ : সাধারণ বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যা শিক্ষার জন্য জাতীয় শিক্ষা পরিষদ বউবাজারে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করে।
বিদ্যালয় : জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে ও উৎসাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে (রংপুর, ঢাকা, দিনাজপুর) জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে।
ব্যর্থতার কারণ : ব্যর্থতার কারণগুলি হল—(১) বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ার জন্য অর্থসংকট দেখা দেয়; (২) বেতনের স্বল্পতার কারণে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান ত্যাগ; (৩) চাকরির বাজারে প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত ডিগ্রি বা সার্টিফিকেটের গুরুত্বহীনতা ইত্যাদি।
উপসংহার : জাতীয়তাবাদী নেতাদের অর্থানুকূল্যে কলকাতার টাউন হলে ১৯০৬ খ্রিস্টাদের ১৪ আগস্ট রাসবিহারী ঘােষের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
Madhyamik History Suggestion 2022|দশম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন | বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা : পঞ্চম অধ্যায়
প্রশ্ন: ICAS পরিচালিত গােষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আলােচনা করাে।
অথবা,
বিজ্ঞান চর্চায় ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’-এর অবদান আলােচনা করাে।
উত্তর :
ভূমিকা : ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কান্টিভেশন অফ সায়েন্স যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই। ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ছিলেন তিনিই।
পরিচালন গােষ্ঠী : IACS-এর প্রথম অধিকর্তা ছিলেন প্যারিমােহন মুখার্জি। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় হিসাবে তিনি এর প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন।
ICAS এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ : IACS নামক প্রতিষ্ঠানটির বহু গুণী ব্যক্তিবর্গ যুক্ত ছিলেন। এখানে যাঁরা গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতােষ মুখােপাধ্যায় প্রমুখ।
সি. ভি. রমন : ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কেন্দ্রীয় হিসাব রক্ষক অফিসের ১৯ বছর বয়সের এক সাধারণ যুবক সি.ভি.রমন এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণার কাজে যােগ দেন।
মেঘনাদ সাহা : বিখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেছেন। তিনি এখানে একটি পৃথক গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
জগদীশচন্দ্র বসু : এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিষয়ে বিভিন্ন বক্তৃতা রাখা হত। এই সমস্ত বক্তাদের মধ্যে জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন অন্যতম।
উপসংহার : মহেন্দ্রলাল সরকারের মৃত্যুর পর তার পুত্র অমৃতলাল সরকার এই প্রতিষ্ঠানটির দায়ভার নেন। বাংলাদেশের বিজ্ঞান গবেষণায় এর অবদান অবিস্মরণীয়।
প্রশ্ন: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তা বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর :
ভূমিকা : বিংশ শতকে ও সরকারি উদ্যোগ বিজ্ঞানচর্চা ও কারিগরি শিক্ষার পর্যাপ্ত প্রসার ঘটেনি; তাই বিশিষ্ট আইনজীবী তারকনাথ পালিত ও জাতীয়তাবাদী নেতা
রাসবিহারী ঘােষের উদ্যোগে কলকাতায় একটি বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় (২৯ মার্চ, ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ)।
উদ্দেশ্য : ব্রিটিশ কর্মচারীদের ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠানের প্রয়ােজন ছিল। এই উদ্দেশ্যকে সামনে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার চিন্তা করা হয়। এছাড়া নেটিভদের চিকিৎসার বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছিল।
ভাষা মাধ্যম : প্রাচ্যবিদ্যায় বিশারদ ড, টাইটলার চেয়েছিলেন এদেশীয় ভাষায় পশ্চিমিধারার চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা দেওয়া হােক কিন্তু আলেকজান্ডার ডাফ চেয়েছিলেন পশ্চিমি মিশন ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে দেওয়া উচিত।
গভর্নর জেনারেলের ঘােষণা : কমিটির রিপাের্টাকে খতিয়ে দেখে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি গভর্নর জেনারেল এক নির্দেশনামা বলে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘােষণা করলেন।
ভর্তির যােগ্যতা : প্রতিষ্ঠাবর্যে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের যাত্রা নির্বিশেষে ইংরেজি ও বাংলা বা হিন্দুস্থানি ভাষা জানা ১৪-২০ বছর বয়স্ককে ছাত্র হিসাবে ভরতির সুযােগ দেওয়া হবে।
পাঠ্য বিষয় : কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রারম্ভিক পর্বের ছাত্রদের অ্যানাটমি, সার্জাটমি সার্জারি, ওষুধ প্রয়ােগ ও ওষুধ তৈরি বিষয়ে শিখতে হত। এ ছাড়া হাতেকলমে লেখার জন্য ছাত্রদের জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন করা হয়।
মূল্যায়ন : সকল অধ্যাপকের প্রচেষ্টায় এখানে বিশ্বমানের শিক্ষাদান ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা এই কলেজ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পেয়ে বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণার কাজে এগিয়ে যায়।
Madhyamik History Suggestion 2022|দশম শ্রেণীর ইতিহাস সাজেশন | বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা :
প্রশ্ন: বাংলার শিক্ষার ইতিহাসে শ্রীরামপুর মিশনারিদের অবদান লেখাে।
অথবা
মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস-এর অবদান কী ছিল?
উত্তর :
ভূমিকা : ঊনবিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিন্যাস ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর অবদান অনস্বীকার্য।
শ্রীরামপুর ত্রয়ী : উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড ও জোসুয়া মার্সম্যান-এর উদ্যোগে বাংলার হুগলির শ্রীরামপুরে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে এই ছাপাখানাটি গড়ে উঠেছিল। এরা তিনজন পরিচিত ছিল ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে।
শ্রীরামপুর ছাপাখানা স্থাপন : ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। সেখান থেকে তারা বাংলা ভাষায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশ করেন। আর এই ছাপাখানার সূত্র ধরে বাংলা ভাষায় সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অভিজ্ঞতা : ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে উইলিয়াম কেরি যুক্ত ছিলেন। তিনি ওই কলেজের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ধর্মপ্রচারের জন্য শ্রীরামপুর ত্রয়ী বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বিস্তার ও বিকাশে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর: মান- ৮
প্রশ্ন: প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।
উত্তর :
ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথের মতে, শিক্ষার লক্ষ হল ব্যক্তি জীবনের পরিপূর্ণ। বিকাশ, ধর্মীয় ভাবের জাগরণ এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মাধ্যমে প্রকৃত জীবনাদর্শ গঠন। এককথায়, মনুষ্যত্বের সার্বিক বিকাশ সাধন আর সে কারণেই তিনি প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার
মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছিলেন।
মানুষ ও শিক্ষা : রবীন্দ্রনাথ তাঁর একাধিক প্রবন্ধে লিখেছেন যে, আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা এই যে, শিক্ষার সঙ্গে সমাজের এবং মানুষ কোনাে যােগ নেই।
শিক্ষার লক্ষ ও উদ্দেশ্য : রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষার মূল লক্ষ বা উদ্দেশ্য হল—(১) শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন, (২) প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সম্পর্ক সাধন, (৩) শিক্ষার্থীর মধ্যে সৌন্দর্যবােধের বিকাশ ঘটানাে, (৪) শিক্ষার্থীকে চিরন্তন পরম সত্তার উপলব্ধিতে সহায়তা করে।
শিক্ষায় আনন্দ : রবীন্দ্রনাথের মতে, আন্দের মধ্য দিয়েই প্রকৃত শিক্ষা লাভ করা সম্ভব। কেবল পুঁথিগত শিক্ষা শিক্ষার্থীকে আনন্দ দিতে পারে না। তার জন্য চাই হৃদয়বৃত্তির চর্চা।
শিক্ষার স্বাধীনতা : রবীন্দ্রনাথ শিক্ষায় এবং কর্মে মানুষকে স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি মনে করতেন যে, শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তাদের শৃঙ্খলবােধ গড়ে উঠবে। কেউই আত্মমর্যাদা বিসর্জন দেবে না। অন্যায়ের সঙ্গে
কোনাে প্রকার আপস করবে না।
কর্মমুখী শিক্ষাদান : গতানুগতিক পুঁথিগত বিদ্যা অধ্যয়নের পরিবর্তে রবীন্দ্রনাথ কর্মমুখী শিক্ষাদানের প্রয়ােজনীয়তার ওপরেও গুরুত্ব দিয়েছেন। বিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য তিনি এমন সব কাজকর্মের প্রচলন করেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে তারা বৃহত্তর কর্মজগতের
সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযােগ পাবে।
শিক্ষণ পদ্ধতি : কোনােরকম ছক কাটা পদ্ধতির উল্লেখ না করলেও রবীন্দ্রনাথ। ইন্দ্রিয়ানুশীল প্রকৃতির পর্যবেক্ষণ, সৃজনধর্মী কাজকর্ম প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছেন।
শিক্ষার মাধ্যম : শিক্ষার মাধ্যমে হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মাতৃভাষার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের প্রয়ােজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে তিনি মাতৃভাষাকে তুলনা করেছেন মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে।
পাঠক্রম : রবীন্দ্রনাথের মতে, শিশুদের জন্য পাঠক্রম জাতীয়, সামাজিক ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। আর সেই সঙ্গে পাশ্চাত্য জগতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমূলক অগ্রগতির সঙ্গে সংযােগ থাকবে।
শান্তিনিকেতনের ভাবনা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক শান্তিনিকেতনের এরূপ আবাসিক ব্রম্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা করা এবং এভাবে প্রাচীন ভারতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
বিশ্বভারতীর ভাবনা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার যে সমস্ত আদর্শ তা হল শান্তিনিকেতনকে কেন্দ্র করে ভারতের আদর্শ বাণী বিশ্বে তুলে ধরার লক্ষ্যেই তিনি বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন।
উপসংহার : উপরােক্ত আলােচনা থেকে দেখা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রচলিত শ্রেণিকক্ষের চার দেওয়ালের পরিবর্তে প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন করাতে সচেষ্ট হন।
প্রশ্ন: বঙ্কিমচন্দ্র ও ভারতমাতা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর :
ভূমিকা : উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনাবলির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের প্রচার করেছিলেন। তাঁর রচনার মধ্যে অমর কীর্তি হল ‘আনন্দমঠ উপন্যাস। উনবিংশ শতাব্দীতে জাতীয়তাবােধের বিকাশের ক্ষেত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবিগুলির মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ছবি হল “ভারতমাতা“।
বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান :
স্বদেশপ্রেম : বঙ্কিমচন্দ্র রচিত ‘আনন্দমঠ উপন্যাস জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীর মনে স্বাদেশিকতা ও সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ধারণা সঞ্চারিত করেছিল।
দেশমাতার আদর্শ : আনন্দমঠে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন, ‘দেশমাতা হলেন মা, দেশপ্রেম হল ধর্ম, দেশসেবা হল পূজা।
বন্দেমাতরম্ সংগীত : আনন্দমঠ উপন্যাসের ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি ছিল পরাধীন ভারতের জাতীয় সংগীত বিপ্লবীদের মন্ত্র। এই গানে বঙ্কিমচন্দ্র দেশকে ভৌগােলিক সত্তারূপে বিচার না করে একটি পরিপূর্ণ রাষ্ট্ররূপে দেখেছেন।
ভারতমাতা :
বিষয়বস্তু : ‘ভারতমাতা’ হলেন গেরুয়া বসন পরিহিতা এক যােগিণী মূর্তী। তিনি একাধারে দেবী ও মানবী। ভারতমাতার চার হাতে শােভা পাচ্ছে রুদ্রাক্ষের মালা, শুভ্রবস্ত্র, পুঁথি ও ধানশীষ। পদযুগলের চারপাশে রয়েছে শ্বেতপদ্ম।
জাতীয় চেতনায় ভারতমাতা : ভারতমাতা ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে বিরাজমান। এই চিত্রটি ছিল নবজাতীয়তাবােধের প্রতীক, এই ছবি নিয়ে কখনাে শােভাযাত্রা বের হয় আবার পতাকায় এই ছবি অঙ্কিত করে মিছিল করা হয়।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া : চিত্রটি জাতীয়তাবাদী ভারতীয়দের মধ্যে উচ্ছ্বাস-এর জন্ম দেয় ।সিস্টার নিবেদিতাও এই চিত্রটি নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছ্বসিত ছিলেন কিন্তু ব্রাম্মসমাজ এই পৌত্তলিকতার বিরােধিতা করে, মুসলমান সমাজও বিরক্ত হয়।
উপসংহার : ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসটি শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদের বিকাশের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বিপ্লবী সংগঠনগুলি কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্দেশ্য ছিল ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির দ্বারা সারা দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবােধের জাগরণ ঘটানাে।