আমার বাংলা (সুভাষ মুখোপাধ্যায়)

আমার বাংলা (সুভাষ মুখোপাধ্যায়) পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :

আমার বাংলা (সুভাষ মুখোপাধ্যায়) পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :

Question: “একটা দুষ্টু শনি কোথাও কোনো আনাচে যেন লুকিয়ে আছে।”- ব্যাখ্যা করো।

Ans : পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গ্রন্থটি “আমার বাংলা” থেকে গৃহীত প্রবন্ধ “গারো পাহাড়ের নীচে”।

এখানে গারো পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা ও তাদের উপর দুষ্টু শনির মত জমিদারি নির্মম অবর্ণনীয় অত্যাচার বর্ণিত হয়েছে যেন তুলির সুনিপুণ টানে।এই অত্যাচার তাদের জীবনকে প্রতি মুহূর্তে দুর্বিষহ করে তোলে।

আমাদের বাংলা সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা হলেও জামিনদারি অত্যাচারে নিপীড়িত কৃষকদের জীবন অতিবাহিত হয় অর্ধাহারে বা কখনও অনাহারে।নতুন ধানের অধিকাংশই উঠে যায় জমিদারের গোলায়।জমিদারের প্রাপ্য আদায়ের জন্য তার পাইক বরকন্দাজ বাহিনী ঠিক সময়ে চলে আসে।

তাই সারাবছর সংসার চালানোর জন্য তাদের জমিদারের মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হয়,তাদের সামনে হাত পেতে দাঁড়াতে হয়।ফসলের মরশুমে গ্রাম্য পথে লোহার খুর পরানো নাগরা জুতোর শব্দে হৃদয় কম্পিত হয় গ্রামবাসীদের।দূর থেকে মোটা কোঞ্চির আগা দেখেই ছোটরা মায়ের আঁচলে আশ্রয় গ্রহণ করে।বয়স্করা অভিশাপ বর্ষণ করতে থাকে।

তারা জমিদারের অত্যাচার জুলুমকে নিয়ে গানও বেঁধেছ।লেখক যথার্থই বলেছেন- “জমিদারের টঙ্ক দিতে চাষিরা ফকির হয়।”


Question : ‘দাফার কথা মনে পড়ে- দাফার কথা কখন মনে পড়ে ? দাফার পরিচয় দাও ।
Ans: দাফা হলো এক অজ্ঞাত কুলশীল ব্যক্তি । মৈমনসিংহ অঞ্চলে সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর সঙ্গে তার পরিচয় ললিতেরর বাড়িতে । ছেলেবেলায় দাফা ছিল গোরু চোর ।
লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় তার ‘ আমার বাংলা ‘ গ্রন্থে অজ্ঞাত পরিচয় এব ব্যক্তি দাফার পরিচয় দিয়েছেন । ছোটবেলায় সে গোরু চুরি করত । তাতে ধরা পড়ার পর প্রায়শই কপালে জুটতো অমানবিক প্রহার । ফলে সারাগায়ে তার সেই চিহ্ন লেগে থাকত । ললিত তাকে পথ থেকে তুলে এনে গোরুর রাখালির কাজে লাগায় । প্রথমে একটু সে হাবাগোবা ধরনের ছিল , ক্রমে সে পড়াশোনা শিখল , এক কমিউনিষ্ট পার্টির সক্রিয় কর্মীতে পরিণত হলো । একটা সময় সমিতির প্রচার , পার্টির কাজ , হাটে হ্যান্ডবিল বিলি করা , মিটিং এ চোঙা ফোঁকা সব কাজে দাফা সক্রিয় ছিল ।
এই সহজ সরল দাফা সারাজীবন গ্রামে কাটিয়েছে । কখনও শহর দেখেনি তাই শহরে যাওয়ার বড়ো সাধ ছিল । তবে এই সাধ অপূর্ণই থেকে গিয়েছে । দেশভাগের আগে পূর্ববঙ্গে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল দাফা তারই শিকার । মৃত্যুর পূর্বেও সে প্রবল লড়াই করেছিল । কিন্তু খালি হাতে বন্ধুকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরাজিত দাফা বুকে গুলি লেগে মৃত্যুবরণ করে ।


Question: গারো পাহাড়ের নীচে যারা বাস করে তাদের জীবনযাত্রার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ।
Ans: গারো পাহাড়ের নীচে বিভিন্ন জাতি অধিবাসীর বসবাস । তাদের মধ্যে রয়েছে গারো , হাজং , ডালু , কোচ , বানাই , মার্গান প্রভৃতি উপজাতি । তারা সকলেই প্রায় নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ে মঙ্গোলীয় ধাঁচের , কেন – না তাদের চোখে – মুখে পাহাড়ি ছাপ । আর তারা সকলেই পাহাড়ি জমিতে কঠোর পরিশ্রমে চাষআবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে । এদের মধ্যে গারোরা প্রত্যেকেই মাচার উপর ঘর বেঁধে বাস করে । রান্নাবান্না – খাওয়া শোয়া সবই সেই মাচার উপর । এটা আসলে তাদের পাহাড়ি স্বভাব । পাহাড়ি জানোয়ারের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যই তাদের এমন উচ্চাসনে বাস ।
হাজংরাই নাকি এই অঞ্চলের সংখ্যাগুরু অধিবাসী । তারাই নাকি এখানে প্রথম এসে পাহাড়ি জঙ্গল হাসিল করে , আবাদ করে এবং স্থায়ী আবাস গড়ে তোলে । হাজরো চাষআবাদে দারুণ দক্ষ । প্রথমাবস্থায় চাষের কাজে তাদের কোনো জুড়ি ছিল না বলে অন্যেরা তাদের নাম দিয়েছিল ‘ হাজং ’ ‘ হাজং ’ শব্দের অর্থ পোকা । চাষে দক্ষ বা চাষের পোকা বলেই তাদের এমন নামকরণ । যদিও এখানকার অধিবাসীরা পর্যাপ্ত ফসল ফলালে ও জমিদারের অত্যাচারে এবং মহাজনী শোষণে চাষের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারে না বলে তাদের মুখেচোখে অশান্তির একটা কালো ছায়া লক্ষ করা যায় ।

আমার বাংলা (সুভাষ মুখোপাধ্যায়)

Question: “তোমরা হাত বাড়াও,তাকে সাহায্য করো।”/”সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সেইসব খুনীদের সে শনাক্ত করছে।”- বিশ্লেষণ করো।

Ans: পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত গ্রন্থ “আমার বাংলা” এর একটি বিখ্যাত প্রবন্ধ হল “হাত বাড়াও।”এখানে পঞ্চাশের মন্বন্তরের হৃদয়বিদারক বিপর্যয়ের কুপ্রভাবে বাস্তব চিত্রায়ন ঘটেছে।যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত হয়েও মানুষের মনে যে নিজের পায়ে দাড়িয়ে ওঠার সাহসটুকুও আছে,সেই সাহসী মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার কথাই লেখক এখানে উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশের নানান প্রান্তে ঘুরে লেখকের একটা চরমোপলব্ধি ঘটে যে যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে মানুষের বিপন্নতা হল মানুষেরই সৃষ্টি।ফরিদপুরে গাড়ীর অপেক্ষায় লেখক রাজবাড়ির বাজারে বসে ছিলেন।ঠিক তখনই মিলিটারি ছাউনির পাশে বারো-তেরো বছরের মাজা পড়ে যাওয়া কেন জন্তুর মত অদ্ভুত চেহারার একটি ছেলেকে দেখতে পান।মন্বন্তরের সময় চলা কালোবাজারির জন্য সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার- টুকুও যেন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।ছেলেটি হাঁটতেই পারেনা,কোন জানোয়ারের মত চার পায়ে চলে।আর খিদে মেটানোর জন্য বাজারের রাস্তায় পড়ে থাকা পরিত্যক্ত চাল ও ছোলা খুঁটে খুঁটে খায়।ছেলেটার চোখে যেন লেলিহান বহ্নিশিখা দেখতে পান তিনি যার প্রতিটা কণা চাইছে শান্তি।তার সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সে সেই সব খুনীদের শনাক্ত করছে যারা শহরে, গ্রামে,বন্দরে জীবনের হত্যা লীলায় মত্ত;যারা মানুষের মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকারটুকুও ছিনিয়ে নিয়েছে।স্পষ্টতই গ্রামের শোষক,মহাজন থেকে শুরু করে শহরের পুঁজিপতিদের দিকেও সেই আঙুলের ইঙ্গিত রয়েছে যারা মানুষের গলায় পরাচ্ছে মৃত্যুফাঁস।

Question: “ কিন্তু হাতি – বেগার আর চলল না । ” — হাতি – বেগার আইন কী ? তা আর চলল না কেন ? অথবা , “ পঞ্চাশ – ষাট বছর আগে এ অঞ্চলে জমিদারি একটা আইন ছিল । ” — এখানে কোন আইনের কথা বলা হয়েছে ? এই আইনের পরিচয় দাও ।
Ans: ‘ আমার বাংলা ‘ গ্রন্থের ‘ গারো পাহাড়ের নীচে ‘ রচনাংশে ‘ হাতি – বেগার’আইনের প্রসঙ্গ আছে । এটি একটি জমিদারি আইন , যা গারো পাহাড়ে উনিশ শতকের শেষে আরম্ভ হয় । জমিদার হাতে অস্ত্র নিয়ে গারো পাহারের ওপর মাচা বেঁধে সেপাই – সান্ত্রিদের নিয়ে হাতি শিকার করার জন্য বসে থাকতেন । জমিদার আপদ – বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এই আইন প্রচলন করেছিলেন । উক্ত আইনানুসারে ছেলে – বুড়ো সহ গ্রামের সকল পুরুষ প্রজাকে জঙ্গলে উপস্থিত হতে হতো এবং যে জঙ্গলে হাতি থাকত সে জঙ্গলকে ঘিরে রাখার জন্য তাদের সারি সারি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো । কিন্তু একাজের বিনিময়ে প্রজাদের কোনো খাবার দেওয়া হতো না । প্রজাদের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় সাপের বাঘের কামড়ে অনেককেই মরতে হতো ।
জমিদারের বিলাসবহুল এই জঘন্য আইন প্রজারা মেনে নিতে পারেনি । গারো পাহাড়িরা গোরাচাঁদ মাস্টারের নেতৃত্বে এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মিটিং করে । প্রজারা এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য মিটিং করে এবং কামারশালায় অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করে । বিদ্রোহী প্রজারা জমিদারকে পরাজিত করতে না পারলেও জমিদার এই আইন চালু রাখতে সাহস পাননি । এভাবেই ‘ হাতি – বেগার ‘ আইনের অবসান ঘটে ।

আমার বাংলা (সুভাষ মুখোপাধ্যায়)

Question : “ তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল । ” — প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল কেন ? কে তাদের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ? অথবা,
Question : “প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল।”- /”হাতিবেগার আর চলেনা।”- ব্যাখ্যা কর।

Ans– পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গ্রন্থটি “আমার বাংলা” থেকে গৃহীত প্রবন্ধ “গারো পাহাড়ের নীচে”।এখানে গারো পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা ও তাদের উপর জমিদারি নির্মম অবর্ণনীয় অত্যাচার বর্ণিত হয়েছে যেন তুলির সুনিপুণ টানে।

আমাদের বাংলা সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা হলেও জামিনদারি অত্যাচারে নিপীড়িত কৃষকদের জীবন অতিবাহিত হয় অর্ধাহারে বা কখনও অনাহারে।নতুন ধানের অধিকাংশই উঠে যায় জমিদারের গোলায়।তাই সারাবছর সংসার চালানোর জন্য তাদের জমিদারের মুখাপেক্ষী হয়েই থাকতে হয়,তাদের সামনে হাত পেতে দাঁড়াতে হয়।

এর পাশাপাশি আর একটি বিশেষ আইন হল হাতি বেগার।জমিদারের হাতি ধরার ভীষণ শখ।পাহাড়ে মাচা নির্মাণ করে তার উপর তিনি সেপাই সান্ত্রী নিয়ে থাকতেন।আর প্রত্যেক গ্রাম থেকে বুড়ো থেকে ছেলে সব প্রজাকেই আসতে হত।জঙ্গল বেড় দিয়ে হাতি তাড়িয়ে এনে ফেলতে হত জমিদারের সামনে।কেউ সাপের ছোবলে আবার কেউ বা বাঘের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারাতো।তাই প্রজারা গোরাচাঁদ মাষ্টারের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষনা করে।

চাকলায় চাকলায় মিটিং বসে,কামারশালায় তৈরী অস্ত্র।কিন্তু এত প্রস্তুতি সত্ত্বেও জমিদারের সৈন্যদলের কাছে প্রজারা পরাজিত হয়।তবে হাতি বেগার প্রথা আর চলেনি,তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।


Question: সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ কলের কলকাতা রচনা অবলম্বন করে লেখকের জেলখানা ভ্রমণের বর্ণনা দাও । অথবা , “ চেয়ারের উপর যিনি বসে আছেন , তাকে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না- চেয়ারের উপর কে বসেছিলেন ? লেখক তাকে কোথায় দেখেছিলেন ? লেখকের স্থান দেখার অভিজ্ঞতা সংক্ষেপে লেখো । অথবা , “ ইংরেজের জেলখানায় হেঁট হয়ে ঢুকতে যা রাগ হচ্ছিল ” — লেখকের জেলখানার ভ্রমণের অভিজ্ঞতার বিবরণ দাও ।
Ans: ব্রিটিশ পুলিশের হাতে বন্দি রামদুলালবাবুকে দেখতে জেলখানায় গিয়েছিলেন । বালক লেখক । রামদুলালবাবুর দাদার সঙ্গে লেখক ট্রামে চড়ে পৌছান জেলের সিংহদুয়ারে । কিছুক্ষণ পর তাঁরা ভেতরে ঢোকার অনুমতি পান । মাথা নীচু করে জেলে ঢুকতে হয় বলে ক্ষুদ্ধ হন তিনি । লেখকদের পর পরই জেলখানায় পৌঁছায় একটি কয়েদিভ্যান । ভ্যানে থাকা স্বাধীনতার সেনানী ঐ কয়েদিদের ‘ বন্দেমাতরম ‘ স্লোগানে কেঁপে ওঠে জেলখানা । কয়েদিদের সঙ্গে দেখা করার ঘরটিতে পৌঁছে লেখক দেখেন সেখানে বসে রয়েছেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু । একটি মাত্র চেয়ার – টেবিলে সুভাষচন্দ্র বসে থাকলেও শতরঞ্জি পাতা ঘরের মধ্যে অগণিত মানুষের সমাবেশ ঘটেছিল । একের পর এক কয়েদিভ্যান আসছে । সুভাষচন্দ্র এগিয়ে গিয়ে নবাগতদের জড়িয়ে ধরে বলছেন , “ তোমরা এসেছ ? ”
জেল ওয়ার্ডারদের নজর এড়িয়ে ভেতরের বন্দিরা মাঝে মাঝে এসে ভিড় করেছিল জালের জানালায় । সিপাহিরা দেখামাত্রই তারা দৌড়ে পালিয়েও যাচ্ছিল । এমনই এক কয়েদি “ শোনো খোকা ” বলে লেখককে ডাকে । নিজের বাড়ির ঠিকানা ও নম্বর জানিয়ে ঐ কয়েদি তার ভালো থাকার খবর বৃদ্ধা মাকে পৌছে দিতে বলে । কিন্তু তার বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়নি লেখকের । বাইরে বেরিয়ে এসে লেখকের মনে হয় যে রাস্তায় আন্দোলনরত মানুষগুলি জেলের অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছে , এর প্রতিদানে তারা কী পাবে ? এসব ভাবতে ভাবতে তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন । আর তখন মায়ের মুখে শোনা গান— “ ও তোর শিকল পরা ছল । শিকল পরে শিকলরে তুই করবি যে বিকল ” গাইতে গাইতে চাঙ্গা হয়ে ওঠেন তিনি । প্রসঙ্গত , বালকের কৌতূহলবশত জেলের কয়েদিদের ও জেলখানার পরিবেশ দেখার সুযোগ পেয়ে লেখক যেমন আপ্লুত হয়েছিলেন , তাদের দুর্দশাও তাকে যথেষ্ট ব্যথিত করেছিল ।

আরও দেখুন : বাংলা গানের ধারা

আমার বাংলা (সুভাষ মুখোপাধ্যায়) | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

Question: “ তোমরা হাত বাড়াও , তাকে সাহায্য করো । ” — লেখক কাকে , কীভাবে , কেন সাহায্য করতে বলেছেন ?
Ans: লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় মাজা পড়ে যাওয়া , হাটতে অক্ষম বারো – তেরো বছরের উলঙ্গ ছেলেটিকে , যে জানোয়ারের মতো চার পায়ে চলে , তাকে সাহায্য করতে বলেছেন ।
লেখক ওই মাজাভাঙা ছেলেটিকে কীভাবে সাহায্য করা হবে তা – ও বলেছেন । ছেলেটি দু’হাত প্রসারিত ক’রে মাটি ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চায় । সে দাঁড়ানোর জন্য তৎপর ও সচেষ্ট । তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাকে ধরে দাঁড়াতে সাহায্য করা হোক ।
অবশ্য ওই ছেলেটি প্রকৃত পক্ষে দীর্ঘ পরাধীন ও যুদ্ধ – দুর্ভিক্ষের অভিঘাতে ন্যূব্জপৃষ্ঠ বাঙালি জাতির প্রতীক । বাঙালি এখন মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় , তাকে হাত ধরে উচ্চশির হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করা হোক । ওই ছেলেটির জ্বলজ্বলে দীপ্ত দু’চোখে শান্তির প্রত্যাশা । সে চায় মাঠের সোনালি ফসলে , চাষির গোলাভরা ধানে শান্তি । সে চায় কলকারখানায় শ্রমিকদের আন্দোলিত মিলিত বাহুতে শাস্তি । সে চায় আর দুর্ভিক্ষ নয় , আর যুদ্ধ নয় , স্বাধীন সুখী জীবন ও পরম শাস্তি । সে জন্য তাকে সাহায্য করা হোক ।

Question : “যেন রাবণের চিতা-“- ব্যাখ্যা কর।

Ans:পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গ্রন্থটি “আমার বাংলা” থেকে গৃহীত প্রবন্ধ “গারো পাহাড়ের নীচে”।এখানে গারো পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা ও তাদের উপর জমিদারি নির্মম অবর্ণনীয় অত্যাচার বর্ণিত হয়েছে যেন তুলির সুনিপুণ টানে।

তিনি বলেন যে,ফিবছর চৈত্রমাসের রাতে ময়মনসিংহ জেলার উত্তরদিকেট আকাশে একরাশ ধোঁয়াটে মেঘ দেখা যায় যা প্রকৃতপক্ষে অবিভক্ত বঙ্গদেশের গারো পাহাড়।যদিও বর্তমানে এটি মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত।ওখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের চাষের জন্য না আছে লাঙল,না আছপ হাল-বলদ।আবার ফসল না ফলালে সারাবছর খাবে কি?তাই ফসল ফলানোর উদ্দেশ্যে পাহাড়বাসীরা প্রতি চৈত্রমাসে পাহাড়ের শুকনো ঝোপঝাড়ে একদিন আগুন ধরিয়ে দেয়।আর সেই অগ্নি বিভীষিকার দাবানল দেখেই লেখক মন্তব্য করেন- “যেন রাবণের চিতা- জ্বলছে তো জ্বলছেই।”

Question: সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে সেই সব খুনীদের সে শনাক্ত করেছে ” – কে শনাক্ত করেছে ? কাদের কেন ‘ খুনী ’ বলা হয়েছে ?
Ans: সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ আমার বাংলা ‘ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘ হাত বাড়াও ‘ রচনায় রাজবাড়ির বাজারে বারো – তেরো বছরের মাজা পড়ে যাওয়া শীর্ণকায় যে ছেলেটিকে লেখক দেখেছিলেন তাকে উদ্দেশ্য করেই মন্তব্যটি করা হয়েছে ।
ফরিদপুরে ট্রেন ধরার জন্য এক কুয়াশায় মোড়া সকালে রাজবাড়ির বাজারে বসেছিলেন লেখক । সেই সময় দূর থেকে চারপায়ে প্রায় জতুর মতো ভঙ্গিমায় এগিয়ে আসতে দেখেছিলেন শীর্ণকায় ছেলেটিকে । সে হাঁটতে অক্ষম , জানোয়ারের মতো বাজারে রাস্তায় খুঁটে খুঁটে চাল আর ছোলা খায় । অসহনীয় এই দৃশ্য দেখে ছুটে স্টেশনে পালিয়ে গেলেও তার জ্বলন্ত চোখ লেখকের জীবনকে তাড়া করে বেড়ায় । শুধু তাই নয় , লেখক সোনা ছড়ানো নদীমালার দিকে তাকিয়ে তার নিঃশ্বাস শুনতে পান । লেখকের মনে হয় সরু লিকলিকে আঙ্গুল দিয়ে সে সেইসব খুনিদের শনাক্ত করছে যারা শহরে , গ্রামে , বন্দরে জীবনকে হত্যা করছে , মানুষের মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকারকে কেড়ে নিচ্ছে । যারা সমাজের শ্রমের মূল্য দেয় না , যারা মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্নকে হত্যা করছে তাদেরকে সে শনাক্ত করেছে খুনী বলে ।