
বাংলা চলচ্চিত্রের কথা| উচ্চমাধ্যমিক বাংলা
বাংলা চলচ্চিত্রের কথা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি)
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা – প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :
১) উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেনকে নায়ক-নায়িকা জুটি হিসেবে প্রথম দেখা যায় যে চলচ্চিত্রে- সাড়ে চুয়াত্তর।
২) উত্তম-সুচিত্রা জুটি হিসেবে কাজ করেছেন যে কটি চলচ্চিত্রে- ৩০ টি
৩) ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল- ১৯৪৪ খ্রিঃ।
৪) সত্যজিৎ রায় পরিচালিত প্রথম ছবিটির নাম- পথের পাঁচালী।
৫) ‘পথের পাঁচালী’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল- ১৯৫৫ খ্রিঃ ২৬ শে আগষ্ট।
৬) ‘আগন্তুক’ ছবির পরিচালক হলেন- সত্যজিৎ রায়।
৭) ঋত্বিক ঘটকের প্রথম ছবি- নাগরিক।
৮) ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিটি তৈরি করেছেন- ঋত্বিক ঘটক।
৯) মৃণাল সেনের প্রথম ছবি – রাতভোর।
১০) ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিটির পরিচালক- তপন সিংহ।
১১) ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিতে কাবুলিওয়ালার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন- ছবি বিশ্বাস।
১২) প্রথম রঙিন বাংলা ছবি হল- পথে হল দেরি।
১৩) ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুর।
১৪) ‘সত্যজিতের নায়ক’ নামে পরিচিত- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
১৫) ফেলুদার চরিত্রে প্রথম রূপদান করেছিলেন- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
১৬) ‘নষ্টনীড়’ অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় তৈরি করেন- চারুলতা।
১৭) সত্যজিৎ রায় নির্মিত ছবির সংখ্যা হল- ৩৬ টি।
১৮) সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবিতে নায়ক ছিলেন- উত্তম কুমার।
১৯) উত্তম কুমারের আসল নাম- অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়
২০) ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ নির্মিত হয়- ১৯৭৪ খ্রিঃ।
২১) ‘ভুবন সোম’ ছবির পরিচালক- মৃণাল সেন।
২২) ‘দাদার কীর্তি’ ছায়াছবির পরিচালক- তরুণ মজুমদার।
২৩) সত্যজিৎ রায় মোট তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন- ৫টি।
২৪) ‘দ্য ইনার আই’ তথ্যচিত্রটি যার উপরে নির্মিত- বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়।
২৫) চলচ্চিত্রের জন্ম হয়- প্যারিসের গ্র্যান্ড কাফেতে ১৮৯৫ খ্রিঃ।
২৬) ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’ তৈরি হয়েছিল- ১৮৯৮ খ্রিঃ
২৭) ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ ছবিটি তৈরি করেছিলেন- দাদাসাহেব ফালকে।
২৮) ভারতে প্রদর্শিত প্রথম সবাক ছবিটি হল- মেলোডি অব লাভ।
২৯) প্রথম বাংলা সবাক সিনেমা হল- জামাইষষ্ঠী।
৩০) উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে তৈরি নিমাই ঘোষের ছবিটি হল- ছিন্নমূল।
৩১) ‘দো বিঘা জমিন’ সিনেমাটির নির্দেশক ছিলেন- বিমল রায়।
৩২) ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ী’ ছবিটির পরিচালক হলেন- সত্যজিৎ রায়।
৩৩) প্রথম বাংলা রঙিন ছবিটির নাম হল- পথে হল দেরী।
৩৪) ‘সফেদ হাতি’ ও ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ ছবিদুটির পরিচালক হলেন- তপন সিংহ।
৩৫) ভারতীয় সিনেমার পথিকৃৎ রূপে চিহ্নিত হন- হীরালাল সেন
৩৬) প্রথম ভারতীয় সবাক সিনেমা হল- আলম আরা।
৩৭) ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ ছবির পরিচালক হলেন- তপন সিংহ
৩৮) ‘বালিকা বধূ’ সিনেমার পরিচালক হলেন- তরুণ মজুমদার।
৩৯) ভারতীয় তথ্যচিত্রে প্রথম তথ্যচিত্রকার হলেন- হীরালাল সেন।
৪০) ‘Rabindranath Tagore’ তথ্যচিত্রের নির্মাতা হলেন- সত্যজিৎ রায়।
———————————————— আরও দেখুন : বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা————————————————
বাংলা চলচ্চিত্রের কথা
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো:
Q. তপন সিংহের ‘ কাবুলিওয়ালা ‘ সিনেমার ভূমিকায় কে ছিলেন ?
(A) পাহাড়ী সান্যাল
(B) ছবি বিশ্বাস
(C) কমল মিত্র
(D) জহর রায়
Ans: (B) ছবি বিশ্বাস
Q. প্রথম ভারতীয় সবাক হিন্দি সিনেমা কোনটি ?
(A) রাজা হরিচন্দ্র
(B) সত্যবাদী রাজা হরিচন্দ্র
(C) আলম আরা
(D) বিদ্যাপতি
Ans: (C) আলম আরা
Q. ১৯৬২ সালে নির্মিত ঋত্বিক ঘটকের প্রথম ছবি নাগরিক কবে মুক্তি পায় ?
(A) ১৯৭৭ সালে
(B) ১৯৫৩ সালে
(C) ১৯৫৫ সালে
(D) ১৯৭০ সালে
Ans: (A) ১৯৭৭ সালে
Q. আযান্ত্রিক সিনেমার গল্পকার হলেন –
(A) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
(B) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
(C) মানিক বন্দোপাধ্যায়
(D) সুবোধ ঘোষ
Ans: (D) সুবোধ ঘোষ
Q. প্রথম বাংলা সবাক সিনেমার নাম কী ?
(A) জামাইষষ্ঠী
(B) আলম আরা
(C) নল – দময়ন্তী
(D) জনা
Ans: (A) জামাইষষ্ঠী
Q. মৃণাল সেনের প্রথম ছবি হলো –
(A) রাতভোর
(B) নীল আকাশের নীচে
(C) আকাশের সন্ধানে
(D) কোরাস
Ans: (A) রাতভোর
Q. হীরালাল সেন ও মতিলাল সেন ভাতৃদয় কবে রয়াল বায়োস্কোপ কোম্পানি তৈরি করেন ?
(A) ১৮৯৮ সালে
(B) ১৮৯৬ সালে
(C) ১৮৯৯ সালে
(D) ১৮৮০ সালে
Ans: (A) ১৮৯৮ সালে
Q. ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রথম তথ্যচিত্রকার কে ছিলেন ?
(A) মতিলাল সেন
(B) লই লুমিয়ের
(C) অগাস্ট
(D) হীরালাল সেন
Ans: (D) হীরালাল সেন
Question: সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী ছবি সংগীত পরিচালনা করেছিলেন –
(A) সত্যজিৎ রায়
(B) পণ্ডিত রবিশঙ্কর
(C) ওস্তাদ বিয়ালেৎ খা
(D) ওস্তাদ বিসমিল্লা খা
Ans: (B) পণ্ডিত রবিশঙ্কর
Q. ১৯৭০ সালে ঋত্বিক ঘটক কোন চলচ্চিত্র তৈরি করেন ?
(A) Chhau Dance of Purulia
(B) Scientists of tomorrow
(C) Why বা ইয়ে কিউ
(D) Adivasiyon ka jeeban sharat
Ans: (C) Why বা ইয়ে কিউ
Q. কত সালে প্রথম সবাক সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ?
(A) ১৯৩৬ সালের ১৬ এপ্রিল
(B) ১৯১৩ সালের ১৩ মে
(C) ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি
(D) ১৯৩১ সালের ১১ এপ্রিল
Ans: (D) ১৯৩১ সালের ১১ এপ্রিল
Q . ১৯৩২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাটকে চলচ্চিত্রায়িত করেন ?
(A) শ্যামা
(B) রাজা
(C) চিত্রাঙ্গদা
(D) নটির পূজা
Ans: (D) নটির পূজা
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা – বাংলা চলচিত্রের কথা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :
রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর :
Question: বাংলা সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো ।
Ans:বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায় একজন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক রূপে চিরদূত্যিতে ভাস্বর।তবে চলচ্চিত্র জগতে তার আগমন ঠিক যেন এক অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছিল।স্বাধীনতা ও দেশভাগের উত্তরকালে তিনি একের পর এক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ছবি উপহার দিয়ে চলচ্চিত্র জগতের বাণিজ্যিক দুঃসময় কাটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। চলচ্চিত্র নিছক বিনোদন নয় , এটা এক সামাজিক বার্তাও বহন করে – সত্যজিং রায় বাংলা সিনেমায় প্রথম এই সত্যটি তুলে ধরেন । এজন্য তিনি শিল্প , সাহিত্য , সংগীত এই চারের মিশেল ঘটান তার সিনেমায় । আর তখন থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রে উঠে এল অনেক না বলা কথা , মানুষের জীবনের আঙিনায় পৌঁছে গেল বাংলা সিনেমা । তাই বাংলার মেঠো পথ , নদীর ধারের কাশবন , শরতের আকাশ , গ্রামের সবুজ – শ্যামলের বুক চিরে রেলগাড়ির ছুটে চলা আর অপু – দুর্গার কিশোরসুলভ চাঞ্চল্য জয় করল বিশ্ব – সিনেমামোদী মানুষের মন ।
দেশভাগ যেমন জীবনযন্ত্রণা বাড়িয়েছে তেমনি বাংলা সিনেমার বাজারটাকেও ছোটো করে দিয়েছিল । সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে বাংলা সিনেমার প্রায় মরা গাঙে এসেছিল । বাণিজ্যের জোয়ার । সত্যজিতের ছায়াছবি একের পর এক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার পর দেশে – বিদেশে বাংলা সিনেমার প্রদর্শন বেড়ে যায় । ‘ পথের পাঁচালী ‘ ( ১৯৫৫ ) দিয়ে যে বিজয়রথ ছুটেছিল তা থেমেছিল ‘ আগন্তুক ‘ – এ পৌঁছে । এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সত্যজিৎ রায় বাংলা চলচ্চিত্রে উপহার দিয়েছেন অপরাজিত , পরশপাথর , জলসাঘর , অপুর সংসার , দেবী , তিনকন্যা , কাঞ্চনজঙ্ঘা , অভিযান , মহানগর , চারুলতা , কাপুরুষ ও মহাপুরুষ , নায়ক , গুপী গাইন বাঘা বাইন , অরণ্যের দিনরাত্রি , অশনি সংকেত সোনার কেল্লা , জন অরণ্য , হীরক রাজার দেশে , ঘরে বাইরে , গণশত্রু ইত্যাদি কালজয়ী সিনেমা চলচ্চিত্রে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য তিনি ‘ অস্কার ’ সম্মান পান । ভারত সরকার তাঁকে ‘ ভারতরত্ন ’ সম্মানে ভূ ষিত করে । এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি শতাধিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন ।
Question: বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের কৃতিত্ব আলোচনা করো ।
Ans: সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটকের মতো প্রথমেই সিনেমা জগতে স্বীকৃত না পেলেও ধীরে ধীরে নিজের আসনকে স্থায়ী করেছিলেন মৃণাল সেন । ছয়ের দশকে তাঁর তৈরি ‘ বাইশে শ্রাবণ ‘ ( ১৯৬০ ) থেকে ‘ আকাশ কুসুম ‘ ( ১৯৬১ ) পর্যন্ত সিনেমাগুলি সাড়া না ফেললেও জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়ের মতো কয়েকজন অভিনেতার অভিনয় দক্ষতা তাঁকে কিছুটা খ্যাতির আলোর নীচে এনেছিল । এরপরই ১৯৬৯ – এ ‘ ভুবন সোম ’ ( হিন্দি ) তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয় । গুজরাটে বসবাসকারী নিয়মনিষ্ঠ ব্যুরোক্র্যাটের সঙ্গে গ্রাম্য বালিকার সম্পর্ক নিয়ে ‘ ভুবন সোম ‘ সিনেমাটি উৎপল দত্তের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় দর্শকমনে চিরস্থায়ী আসন গড়ে নেয় । এরপর সত্তর দশকে কলকাতার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘ ইন্টারভিউ ‘ ( ১৯৭১ ) , ‘ কলকাতা ৭১ ’ ( ১৯৭২ ) , ‘ পদাতিক ’ ( ১৯৭৩ ) , ‘ কোরাস ’ ( ১৯৭৪ ) প্রভৃতি ছবি পরিচালনা করেন । তিনি গল্প বলার বর্ণনাত্মক রীতিকে বর্জন করে কোলাজধর্মী কাহিনির মধ্যে দিয়ে উপস্থাপন করেন । মৃণাল সেন তার ‘ মৃগয়া ’ , ‘ ওকা ভরি কথা ’ , ‘ ‘ পরশুরাম ‘ , ‘ একদিন প্রতিদিন ’ , ‘ খারিজ ’ , ‘ খণ্ডহর ’ , ‘ আকালের সন্ধানে ‘ প্রভৃতি ছবিতে মনোজগতের দ্বিধা – দ্বন্দ্ব – জটিলতাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন ।
Question: বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তপন সিংহের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো । অথবা , বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তপন সিংহের অবদান আলোচনা করো ।
Ans: লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মেলবন্ধন ঘটিয়ে তপন সিংহ বাংলা সিনেমাপ্রেমী মানুষকে একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেন । তিনি নারী – পুরুষের প্রেমের গণ্ডি ছাপিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে তুলে এনেছিলেন মানবপ্রেম , বিশ্বপ্রেম । তাঁর সময় থেকেই বাংলা সিনেমা হয়ে উঠল গীতিকবিতার মতো চিত্রধর্মী ও মানবাবেগে পূর্ণ শিল্পকলা । ফলে সিনেমা হলে পাশাপাশি দেখা গেল সব ধরনের মানুষের উপস্থিতি । সাধারণ আর বিশিষ্টের ফারাকটা তিনি ঘুচিয়ে দিলেন । এভাবে সব ছবিতেই তপন সিংহ পাল্টেছেন প্রেক্ষাপট । রবীন্দ্র ভাবধারা গ্রহণ করে তিনি কখনো চার দেওয়ালের মাঝের জীবনকে ছুঁয়েছেন আবার কখনো পাড়ি দিয়েছেন নিসর্গ প্রকৃতির কোলে ।
তপন সিংহের সিনেমাগুলির মধ্যে প্রধান হলো অঙ্কুশ , কাবুলিওয়ালা , ক্ষুধিত পাষাণ , হাঁসুলি বাঁকের উপকথা , নির্জন সৈকতে , জতুগৃহ , হাটেবাজারে , অন্তর্ধান ইত্যাদি । ভালোবাসার কথা শুনিয়েছেন বলে তিনি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভালোবাসা যথেষ্টই পেয়েছেন । এছাড়াও পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার । বিশ্ব চলচ্চিত্রের দর্শকদের মধ্যে তপন সিংহ বাঙালি দর্শককেই শ্রেষ্ঠ বলেছেন । তাঁর ভাষায়— “ সারা পৃথিবীতে দর্শক হিসেবে বাঙালি দর্শকই শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা , ছবির প্রতি ভালোবাসা , নাটকের প্রতি ভালোবাসা আর কোনো দেশের দর্শকের মধ্যে খুঁজে পাবেন কি না সন্দেহ । ”
বাংলা চলচ্চিত্রের কথা
Question: বাংলা চলচ্চিত্র ধারায় ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো ।
Ans: বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটক এক বিষ্ময়কর প্রতিভা। নিষ্ঠুর সামাজিক সত্যকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণের ক্ষেত্রে যার অবদান অনস্বীকার্য তিনি হলেন বাংলার প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক । ঋত্বিক ঘটক প্রথমে নাটক লেখা , পরিচালনা ও অভিনয়ের মধ্যে ব্যাপৃত ছিলেন । পরবর্তী কালে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দেন । নিমাই ঘোষের ‘ ছিন্নমূল ’ ( ১৯৫১ ) সিনেমার মধ্য দিয়ে ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন । তাঁর পরিচালিত সর্বশ্রেষ্ঠ ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে ‘ নাগরিক ‘ ( ১৯৫২ ) , ‘ অযান্ত্রিক ’ ( ১৯৫৮ ) , ‘ মেঘে ঢাকা তারা ’ ( ১৯৬০ ) ; ‘ কোমল গান্ধার ‘ ( ১৯৬১ ) , সুবর্ণরেখা ’ ( ১৯৬২ ) , তিতাস একটি নদীর নাম ‘ ( ১৯৭৩ ) , যুক্তি তর্ক আর গল্প ‘ ( ১৯৭৪ ) ইত্যাদি । চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাহিনি ও চিত্র নাট্য রচনার ক্ষেত্রেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন । যেমন- ‘ দ্বীপের নাম টিয়া রং ’ ‘ রাজকন্যা ’ ‘ মধুমতী ’ , ‘ মুশাফির ’ ইত্যাদি । কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছেন । যেমন- ‘ তথাপি ‘ , ‘ সুবর্ণরেখা ‘ , ‘ তিতাস একটি নদীর নাম ‘ ।
চলচ্চিত্রের উপর ঋত্বিক ঘটক চিন্তামূলক বেশ কিছু প্রবন্ধ গ্রন্থও লিখেছেন । যেমন- ‘ Human Society ‘ , ‘ Our tradition ‘ Filmmaking and My Efforts ‘ , ‘ Film Making ‘ – ইত্যাদি ।
ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে বাণিজ্যিক কারণের প্রভাব নেই । তার চলচ্চিত্র বুদ্ধিদীপ্ত জীবনরস , সামাজিক নিদারুণ অভিঘাত দেখা গেছে । চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ পদ্মশ্রী ’ , ‘ রজতকমল ’ পুরস্কার এবং ১৯৭০ এ ষোড়শ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ।
Question: বাংলা তথ্যচিত্রের ধারাটির পরিচয় দাও । অথবা , বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় তথ্যচিত্রের ধারাটির পরিচয় দাও ।
Ans: যে চলচ্চিত্রে কাহিনি থাকে না , তথ্যের সমাহার থাকে , তাকে তথ্যচিত্র বলে । তথ্যচিত্রে অভিনেতা – অভিনেত্রীর কোনো ভূমিকা থাকে না । বিশেষ কোনো ব্যক্তি , ঘটনা , স্থানকে কেন্দ্র করে এ জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মিত হয় । গল্প পরিসর এবং একমুখিনতা তথ্যচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । বাংলা তথা ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের আদি পুরুষ হীরালাল সেনের হাত ধরেই বাংলা তথ্যচিত্র্যের জন্ম হয় । তাঁর ‘ দিল্লী দরবার ‘ তথ্যচিত্রের উদাহরণ । তবে সার্থক তথ্যচিত্র তৈরি হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ।
বাংলা তথ্যচিত্র্যের ধারায় অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব হরিসাধন দাশগুপ্ত । তিনি বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন । সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ Konark ‘ , ‘ Panchthupi : A Village in West Bengal ‘ , ‘ A Tale of Two Leaves and a Bud ‘ , ‘ Baba ‘ , ‘ Acharya Nandalal ‘ ‘ Mizoram ‘ ইত্যাদি । তথ্যচিত্রের ধারায় সত্যজিতের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় । তিনি কাহিনিচিত্রের পাশাপাশি তথ্যচিত্র নির্মাণেও বিশেষ অবদান রেখে গেছেন । তার পাঁচটি তথ্যচিত্রের মধ্যে একমাত্র তথ্যকেন্দ্রিক চিত্র হলো ‘ Sikkim ’ , বাকি চারটি জীবনীমূলক তথ্যচিত্র হলো ‘ Rabindranath Tagore The Inner Eye ‘ , ‘Bala ‘ , ‘ সুকুমার রায় ’ । ঋত্বিক ঘটক তথ্যচিত্রের ধারায় আরেক দিকপাল । তাঁর উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘ Adivasiyo Ki Jeevan Short ‘ , ‘ Bihar Ke Darshaniya Sthan ‘ , ‘ Scientists of Tomorrow ‘ , ‘ Chhau Dance of Purulia ‘ ইত্যাদি । একে একে সিনেমা সমালোচক চিদানন্দ দাশগুপ্ত , বারীন সাহা তথ্যচিত্রের ধারাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন । বিমল রায় আরেক তথ্যচিত্রকার যাঁর হাতে এই শিল্পধারা বিশেষভাবে পূর্ণতা পেয়েছে । তার স্মরণীয় তথ্যচিত্রগুলি হলো ‘ Immortal Stupa ’ , ‘ Life and message of Swami Vivekananda , Gautam The Buddha ‘ ইত্যাদি । এছাড়া তথ্যচিত্র নির্মাণে যেসব শিল্পীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন পুর্ণেন্দু পত্রী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত গৌতম ঘোষ প্রমুখ ।