
ভাত (গল্প) |মহাশ্বেতা দেবী
অতি সংক্ষিপ্ত ( MCQ) :
Q. ছোট বাবু কোন চালের ভাত খান ?
(A) কনকপানি
(B) ঝিঙ্গেসাল
(C) রামশাল
(D) পদ্মজালি ।
Ans: পদ্মজালি
Q. উচ্ছব কী পরেছিল?
(A) প্যান্ট (B) লুঙ্গি (C) ছেঁড়া কানি (D) কাপড়
Ans. (B) লুঙ্গি
Q. “উনি আমার দেবতা” – উনিটা কে ?
(A) বাবু
(B) শিবঠাকুর
(C) বামুন
(D) উচ্ছব ।
Ans: শিবঠাকুর
Q. শ্বশুর খেতে আসার কতক্ষন আগে বড় বউকে লুচি করতে হত ?
(A) পাঁচ মিনিট
(B) দশ মিনিট
(C) দু মিনিট
(D) এক ঘন্টা ।
Ans: পাঁচ মিনিট।
Q.‘কনকপানি’ চালের ভাত খান –
(A) বড়বাবু
(B) মেজবাবু
(C) ছোটবাবু
(D) পিসিমা ।
Ans: বড়বাবু
Q. উচ্ছব বাসিনীর গা সম্পর্কে কে হয় ?
(A) দাদা
(B) কাকা
(C) বোনাই
(D) বেহাই ।
Ans: দাদা
Q. ট্রেন ধরে উচ্ছব প্রথমে কোথায় যাবে ভেবেছিল ?
(A) দেশে
(B) কালীঘাটে
(C) গায়ে
(D) ক্যানিং – এ
Ans: ক্যানিং – এ
Q. কার চাহনি বড় ভাইয়ের ভালো লাগেনি ?
(A) উচ্ছবের
(B) নার্সের
(C) তান্ত্রিকের
(D) সসুরের ।
Ans: উচ্ছবের
Q. ভাত গল্পে কার বিয়ে হয়নি ?
(A) উদ্ধবের
(B) উচ্ছবের
(C) ছোট ছেলের
(D) পিসিমার ।
Ans: পিসিমার
Q. ‘ডাক্তার বলে দিয়েছে বলেই যজ্ঞ – হোম হচ্ছে – ডাক্তার কী বলেছিলেন ?
(A) যজ্ঞ করতে
(B) চন্দ্রায়ন করতে
(C) তান্ত্রিক ডাকতে
(D) মৃত্যু আসন্ন ।
Ans: মৃত্যু আসন্ন ।
Q. “এ বাড়িতে চাকরি করা হয়ে ওঠেনি । “কারণ –
(A) তারা ঘর জামাই থাকে
(B) তারা এগারোটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না
(C) তারা অসুস্থ
(D) তারা বাড়ির কাজে ব্যাস্ত ।
Ans: তারা এগারোটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না ।
Q. কর্তার মৃত্যু হলে পিসিমা তান্ত্রিককে কী অপবাদ দিয়েছিলেন ?
(A) পিশাচ
(B) ভন্ড সন্ন্যাসী
(C) ডাকাতের সন্ন্যাসী
(D) যজ্ঞের ।
Ans: ডাকাতের সন্ন্যাসী ।
Q. গ্রামের শ্রদ্ধার জন্যে কাকে ডাকা হতো ?
(A) উচ্ছবকে
(B) অগ্রদানিকে
(C) পণ্ডিতকে
(D) মহানাম শতপথিকে ।
Ans: মহানাম শতপথিকে ।
Q. ” এ পিশাচের বাড়ি কেমন তা ঝোননি দাদা ” – এখানে দাদা কে ?
(A) ডাক্তার
(B) ভজন
(C) তান্ত্রিক
(D) উচ্ছব ।
Ans: উচ্ছব
আরও পড়ুন : ছাত্রজীবনে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর – ভাত (গল্প) | মহাশ্বেতা দেবী | HS Bengali Question and Answer
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:
Q. ” তাস পিটানো ছেলেগুলি অস্বস্তিতে পড়ে । ” কেন ছেলেগুলি অস্বস্তিতে পড়েছিল ?
Ans: ঝড়ে – জলে উচ্ছবের সর্বনাশ হয়েছে , তার মানুষও ভেসে গেছে , সেজন্য সে কাদছে । কান্নার এই কারণ শুনে তাস পিটানো ছেলেগুলি অস্বস্তিতে পড়ে ।
Q. “ তার জন্য দই পেতে ইসবগুল দিয়ে শরবত করে দিতে হত ” – কার জন্যে , কে শরবত করে দিতেন ?
Ans: ‘ ভাত ‘ গল্পে বড়ো বাড়ির বড়ো বউ শ্বশুরমশাইয়ের জন্য শরবত করে দিতেন ।
Q. “ বাদায় থাকে অথচ ভাতের আহিংকে এতখানি ” – ‘ আহিংকে ‘ শব্দের অর্থ কী ?
Ans: এখানে ‘ আহিংকে ‘ শব্দের অর্থ হলো ‘ আকাঙ্ক্ষা ‘ ।
Q. উচ্ছবকে জেলখানায় কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ?
Ans: উচ্ছব ভাত খাওয়ার জন্যে বড়ো বাড়ির ভাতসুদ্ধ পিতলের ডেকচি নিয়ে স্টেশনে চলে গিয়েছিল । তাতে লোকেরা উচ্ছবকে চুরির অপবাদ দিয়ে জেলে নিয়ে গিয়েছিল ।
Q. “ লোকটার চাহনি বড়ো বাড়ির বড়ো বউয়ের প্রথম থেকেই ভাল লাগেনি ” — ভালো না লাগার কারণ কী ?
Ans: লোকটার চাহনি খুব উগ্র ছিল বলে বড়ো বাড়ির বড়ো বউয়ের ভালো লাগেনি । Q. “ শ্বশুরের ঘরে নাস ” – নার্স কাকে বলে ?
Ans: বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রোগীর সেবিকাকে নার্স বলে ।
Q. গরিবের গতর এরা শস্তা দেখে ” – কে , কাকে , কাদের প্রসঙ্গে এই কথা বলেছিল ?
Ans: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ‘ গল্পের বাসিনী উচ্ছবকে বড়ো বাড়ির মানুষজনদের সম্বন্ধে এই কথা বলেছিল ।
Q. “ তোমার শ্বশুরই মরতে বসেছে বাছা ” কথাটি যিনি যাঁকে বলেছেন উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক কী ?
Ans: কথাটি যিনি যাঁকে বলেছেন উভয়ের মধ্যে পিসিশাশুড়ির ও ভাইপো – বৌ সম্পর্ক ।
Q. “ তোমরা রা কাড়না ক্যান ” – কে , কাদের উদ্দেশে এই কথা বলেছিল ?
Ans: আলোচ্য কথাটি উচ্ছব তার স্ত্রী – সন্তানদের উদ্দেশে বলেছিল ।
Q. তান্ত্রিকের হোম – যজ্ঞ প্রস্তুতির বর্ণনা দাও ।
Ans: পাঁচ প্রকার গাছের কাঠ— প্রতিটা আধমণ করে । কালো বিড়ালের লোম , শ্মশান থেকে বালি , বেশ্যার ঘর থেকে আনতে হবে হাত – আর্শি ।
Q. “ চোখ ঠিকরে আসে তার ” — কী দেখে , কার চোখ ঠিকরে আসে ?
Ans: পাঁচ রকমের চাল দেখে উচ্ছবের চোখ ঠিকরে আসে ।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর– ভাত (গল্প) | মহাশ্বেতা দেবী প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :
Q. ‘ভাত’ ছােটোগল্পটির বিষয়বস্তু নিজের ভাষায় লেখাে।
Ans: গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উৎসব নাইয়া। সবাই তাকে উচ্ছব বলে ডাকে। গ্রামের সতীশ মিস্ত্রির জমিতে উচ্ছব চাষের কাজ করে। তাতেই কয়েকমাস তার খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তা সারাবছরের জন্য নয়। এরকমই একবার অনেকদিন পরে উচ্ছব সপরিবারে পেট ভরে ভাত খাওয়ার সুযোেগ পেয়েছিল। কিন্তু সেদিনই বন্যায় মাতলা নদীর বিধ্বংসী জলের তােড়ে সে। তার স্ত্রী, পুত্রকন্যা সব হারায়। নষ্ট হয় মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও। দু-মুঠো ভাতের আশায় গ্রামতুততা বােন বাসিনীর মনিব বাড়িতে ফাইফরমাশ খাটার জন্যে কলকাতায় আসে উচ্ছব। সেখানে নাকি ভাতের ছড়াছড়ি। সেখানে বাদা থেকে বিভিন্ন প্রকারের চাল আসে। সেই বাড়িতে চালের প্রাচুর্য দেখে উচ্ছব অবাক হয়। এদিকে সে বাড়িতে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত বডােকর্তার অন্তিম দশা। তা থেকে মুক্তিলাভের জন্য সবাই তান্ত্রিকের শরণাপন্ন হয়। উচ্ছবের উপরে দায়িত্ব পড়ে হােমযজ্ঞের কাঠ কাটার। অভুক্ত অবস্থায় সারাদিন কাঠ কাটে সে। অথচ ভাত জোটে না। তান্ত্রিক বিধান দেয়। যজ্ঞ শেষ হওয়ার আগে খাওয়া যাবে না। দিনের শেষে উচ্ছব ক্লান্ত শরীরে মন্দিরের চাতালে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তার ঘুম ভাঙে কারও ধাক্কায়, শােনে কত্তাবাবু গত হয়েছেন বাড়ির সব খাবার ওরা ফেলে দিচ্ছে। উচ্ছর ভাতের হাঁড়িটি নিজের জিম্মায় নেয়, ছুটে যায় স্টেশনে, সেখানে বসে পাগলের মতন দু-হাতে ভাত খেতে থাকে, মনে মনে তার হারানাে স্ত্রী, পুত্রকন্যাদেরও ভাত খাইয়ে দেয়। তারপর হাঁড়ির কানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে উচ্ছব। পরদিন সকালে হাঁড়ি চুরির অপরাধে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যে বাদা থেকে বড়ােবাড়িতে অত চাল আসত সেটি দেখার ইচ্ছা ছিল উচ্ছবের। কিন্তু তার সন্ধান পাওয়া উচ্ছবের আর হয়ে ওঠে না।
Q. মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা আলােচনা করাে।
Ans:
ভূমিকা : ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণে বিষয়বস্তুগত ভিত্তি যেমন কার্যকরী, সেরকমই বিষয়কে ছাপিয়ে ব্যঞ্জনাকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দেখা যায়।
প্রেক্ষাপট : মূলত দুটি প্রেক্ষাপটের ব্যবহার এই কাহিনিতে আছে। একটি প্রান্তিক বাদা অঞ্চল, অন্যটি শহরের বড়ড়া বাড়ি। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উচ্ছব নাইয়া এই দুটি প্রেক্ষাপটের যােগসূত্র। কিন্তু এই কাহিনির প্রকৃত প্রেক্ষাপটে আছে অন্নবিলাস আর অন্নহীনতার চিরন্তন দ্বন্দ্ব ও বৈষম্য।
উচ্ছবের গ্রাম : উচ্ছবের বাস যে বাদা অঞ্চলে সেখানে শুধুই গুগলি-গৌঁড়ি- কচুশাকসুশনাে শাক জন্মায়। সেখানে অন্নের আয়ােজন হয় হিঞ্জে সেদ্ধ, গুগলি সেদ্ধ, নুন আর লংকা পােড়া দিয়ে। তা-ও এই খাওয়া নিয়মিত নয়। সতীশ মিস্ত্রির জমিতে কাজ করে উচ্ছব কয়েকমাসের অন্ন জোগার করে, কিন্তু তা বারােমাসের না। মাতলার বন্যা সুযােগ পায় অভাবী মানুষের সর্বস্ব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে, সতীশ মিস্ত্রিরা কিন্তু অক্ষত থেকে যায়।
শহরের বড়াে বাড়ি : বাদা থেকে আনা চালের প্রাচুর্য, অন্নবিলাসিতার বিকৃত ছবি সেখানে। ব্যঞ্জন এবং চরিত্রভেদে চালের নাম পালটে যায়। এমনকি বাড়িরসর্বময়ী কত্রী বড়ােপিসিমাও লুকিয়ে চাল বিক্রি করে দেন। কিন্তু উচ্ছব ক্ষুধার্ত জেনেও তাকে তারা খেতে দেয় না, অজুহাতে বিলম্ব করে। ক্ষুধার্ত উচ্ছব ভেবে যায়—“ভাতই সব। অন্ন লক্ষ্মী..’।
কাহিনির পরিণতি : কাহিনির পরিণতিতে অন্নকাতরতাই প্রধান রূপ নেয়। ক্ষুধার্ত উচ্ছব অশৌচ বাড়ির ফেলে দেওয়া ভাত নিয়ে ছুটতে থাকে। সেই ভাতে হাত দিয়ে সে স্বর্গসুখ খুঁজে পায়। অবশেষে স্টেশনে গিয়ে পেটভরে ভাত খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন পিতলের ডেকচি চুরির অপরাধে তাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। উচ্ছবের স্বপ্ন ছিল ধান ভরতি বাদার সন্ধান করা। ইচ্ছা ছিল সন্ধান পেলে গ্রামের সবাইকে সেটির খবর জানিয়ে দেওয়া। সে সাধ তার পূর্ণ হয় না। অন্নকাতরতাই যেন স্থায়ী সুর হয়ে থাকে গল্পের। আর সে কারণেই গল্পের নামকরণ’ ভাত অত্যন্ত সার্থক।
Q. মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটগল্প অবলম্বন করে ঝড়জল-বন্যার রাতের বর্ণনা দাও।
Ans: ঝড় জল-বন্যার রাতের বর্ণনা : প্রশ্নে উদ্ধৃত ঝড় জল-বন্যার রাত উচ্ছবকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। সেদিন সন্ধ্যায় অনেকদিন পর সপরিবারে উচ্ছব পেট পুরে ভাত খেয়েছিল। খেতে খেতে চন্নুনীর মা বলেছিল যে, দেবতার গতিক ভালাে নয়। নৌকা নিয়ে যারা বেরিয়েছিল, তাদের নৌকা সহ ডুবে মরে যাওয়ার আশঙ্কাও সে প্রকাশ করেছিল। এরপরই শুরু হয় প্রবল ঝড় বৃষ্টি। ঝড় বৃষ্টিতে উচ্ছবদের কাঁচা বাড়ির মাঝ-খুঁটিটি ‘মাতাল আনন্দে টলছিল’ ধনুষ্টংকার রোগীর মতাে। তাই উচ্ছব সর্বশক্তি দিয়ে ঘরের মাঝখানের খুঁটিটা মাটির দিকে চেপে ধরে ছিল। কিন্তু তার মনে হচ্ছিল মা বসুস্ধরা যেন সেই খুঁটি রাখতে চাইছেন না, ঠেলে বের করে দিতে চাইছেন। তাই ভয়ে ভগবানের নাম নিতে থাকে সে। অন্যদিকে, ছেলেমেয়েকে জাপটে ধরে তার বউ ঠান্ডায় এবং ভয়ে কাঁপতে থাকে। এ সময়েই হঠাৎ বিদ্যুতের ঝলকানিতে উচ্ছব দেখতে পায় মাতাল মাতলা নদীর সফেন জল বাতাসের তােড়ে দ্রুত ছুটে আসছে। পরে একসময় জল নেমে গেলেও উচ্ছবের ঘরের সব কিছু এবং তার পরিবারকে উচ্ছব আর খুঁজে পায়নি, সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় সেই জল। বানের জলে ভেসে যাওয়া উচ্ছব গাছে বেধে কোনােক্রমে প্রাণে বাঁচে। এভাবে ঝড় জল-বন্যার সেই রাত উচ্ছবের জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছিল।
ভাত (গল্প) |মহাশ্বেতা দেবী
Q. “ দাঁতগুলো বের করে সে কামটের মতোই হিংস্র ভঙ্গি করে ” – কে , কার এরূপ আচরণ করেছিল ? তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করো ।
Ans: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ‘ ছোটগল্পের মুখ্য চরিত্র উচ্ছব নাইয়া তার গ্রাম্য সম্পর্কিত বোন বাসিনীর প্রতি এমন আচরণ করেছিল।
গল্পে বুড়ো কর্তার মৃত্যুর পরে তার মৃতদেহ শ্মশানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার পরে বড়ো পিসিমার কথায় বাড়ির সব রান্না ফেলে আসতে বলেন । আর ঠিক সেই মুহুর্তেই উচ্ছব স্থির করে নেয় যে সে কী করবে । সুদূর সুন্দরবন থেকে শুধুমাত্র খাবারের সন্ধানে সে এসেছিল শহরের বড়ো বাড়িতে কাজ করতে । কিন্তু বুড়ো কর্তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হোম – যজ্ঞ শেষ না হলে খাওয়া হবে না – এই যুক্তিতে সে তার চরম আকাঙ্খিত খাবার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল । এর মধ্যে সে নানা রকম চালের এবং খাবারের গল্প শুনেছে ও দেখেছে । আর তাই তো- ‘ ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তাকে বড়ো উতলা করে ’ । কিন্তু ভাত জোটেনি উচ্ছবের ।
কিন্তু আজ যখন বাসিনী ভাত ফেলতে গেল তখন উচ্ছব ভাতের ডেকচি নিয়ে সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে সে কী করবে ? ডেকচি নিয়ে প্রথমে হনহনিয়ে হাঁটা তারপর দৌড়ানো শুরু করে । যে ভাতের জন্য তার দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা , সেই ভাত এখন তার হাতের মুঠোয় । এই সময়েই যখন বাসিনী তাকে ‘ অশুচ বাড়ির ভাত ’ খেতে নিষেধ করে তা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে উচ্ছবের পক্ষে । সে ফিরে দাঁড়ায় এবং কামটের মতো হিংস্র চোখে বাসিনীর দিকে তাকায় । তার দাঁত বের করা মুখ ভঙ্গি কামটের মতো হিংস্র লাগে বাসিনীর ।
Q.“ ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তাকে বড়ো উতলা করে । ” – তাকে বলতে এখানে কাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে ? এই গন্ধ তাকে কেন উতলা করে ?
Ans: এখানে ‘তাকে ’ বলতে মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ‘ গল্পের মুখ্য চরিত্র বাদা অঞ্চলের বাসিন্দা অন্নহীন উচ্ছব নাইয়ার কথা বলা হয়েছে ।
সুন্দরবনের নিম্ন জলাভূমি অঞ্চল অর্থাৎ বাদা অঞ্চলেই হলো প্রায় স দক্ষিণবঙ্গের অন্নের মূল উৎস স্থান । অথচ সেখাকার বাসিন্দা উৎসব দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে । জমিহীন উৎসব সতীশবাবুর জমিতে কাজ করত । কিন্তু মড়ক লেগে উচ্ছব বলতে থাকে- “ লক্ষ্মী না আসতে সেধে ভাসান যাচ্ছে তা কাঁদব না এতটুকু ? আমরা খাব ‘ । শুধু অনাহারই নয় , সর্বঘাতী বন্যায় উৎসব তার বউ ছেলে মেয়েকে হারিয়ে ফেলেন । একদিকে শোক আর অন্যদিকে ক্ষুধার তীব্র জ্বালায় সে প্রেতে পরিণত হয় ।
ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য উৎসব বাসিনীর সাহায্যে বড়ো বাড়িতে এলে ভাতের বিনিময়ে কাঠ কাটার কাজে নিয়োজিত হয় । বড়ো বাড়িতে অপরিসীম ভাতের গল্প তাকে পাগল করে তোলে এবং সে জানতে পারে এ সব ভাত আসে বাদা অঞ্চল থেকে । কিন্তু উৎসবের বাদায় ভাত নয় শুধু- ‘ গুগলি – গোঁড়ি – কচুশাক , সুশনো শাক ’ পাওয়া যায় । আর সেই জন্য উৎসব ভাতের হুতাশে আড়াই মন কাঠ কেটেছিল । বড়ো বাড়ি থেকে ভেসে আসা ফুটন্ত ভাতের গন্ধে তার বহুকালের খিদে বেড়ে যায় , উৎসব তাই ‘ ভাতের হুতাশে ’ উতলা হয়ে উঠে ।
Q. “ আসল বাদাটার খোঁজ করা হয় না আর উচ্ছবের । ” “ আসল বাদা ‘ কোনটা ? উচ্ছব আর আসল বাদাটার খোঁজ করতে পারল না কেন ?
অথবা , “ সে বাদাটা বড়ো বাড়িতে থেকে যায় অচল হয়ে । ” কোন বাদাটা , কেন বড়ো বাড়িতে অচল হয়ে থেকে যায় ?
Ans: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ’ গল্প থেকে সংগৃহীত উক্তিটিতে ‘ আসল বাদা ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে উচ্ছবের গ্রামতুতো বোন বাসিনীর মনিবের যে বাদা অঞ্চলে ঝিঙেশাল , রামশাল , কনকপানি ,পদ্মজালি , মোটা সাপটা ইত্যাদি ধান উৎপাদিত হতো সেই অঞ্চলকে ।
গল্পে দেখা যায় , বাসিনী উচ্ছবকে বড়ো বাড়িতে নিয়ে এসেছে হোমযজ্ঞের কাঠ কাটার জন্য । উচ্ছব ভাত খেতে পাবে এই আশায় আড়াই মণ কাঠ কেটে ফেলে । সে অনেক দিন ধরে ভাত খেতে পায়নি , তাই সে ভাতের জন্য উতলা হয়ে ওঠে । কিন্তু তান্ত্রিকের বিধানে তার কাঙ্ক্ষিত ভাত খাওয়া অধরা থেকে যায় । কেননা অসুস্থ বুড়োকর্তা মরে গিয়ে নাকি বাড়ির রান্না করা ভাত অশুচি করে দিয়েছে । তাই এই ভাত আর খাওয়া চলবে না । সংস্কার মতো এই অশুচি ভাত ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে উচ্ছবের ওপর । কিন্তু ভাতের ডেকচি হাতের নাগালে পেতেই উচ্ছব অশুচি ভাত খাওয়ার ব্যাপারে কোনোরূপ বাধানিষেধ মানতে রাজি নয় । মনের আনন্দে ভাত খেয়ে ভুখা পেটের খিদে মিটাবে এই আশায় সে ভাতের ডেকচি নিয়ে হনহন করে হাঁটতে শুরু করে । সে খুব দ্রুত স্টেশনে উপস্থিত হয় , এবং প্রাণভরে ভাত খেয়ে স্বর্গসুখ অনুভব করে । সব ভাত খেয়ে উচ্ছব ডেকচির কানা মাথা স্পর্শ করে ঘুমিয়ে পড়ে । আর এখানেই উচ্ছবের স্বর্গসুখের স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায় । সকাল না হতেই পেতলের ডেকচি চুরি করার অপরাধে লোকজন উচ্ছবকে ধরে ফেলে এবং মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায় । উচ্ছব একদিন যে আসল বাদাটার খোঁজ করার স্বপ্ন দেখেছিল , সেই বাদাটার খোঁজ করা তার আর সম্ভব হলো না । এইভাবেই শেষ পর্যন্ত সেই আসল বাদাটা বড়ো বাড়িতে অচল হয়ে থেকে যায় ।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর– ভাত (গল্প) | মহাশ্বেতা দেবী প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :
Q. “ তুমি কি বুঝবে সতীশবাবু । ” সতীশবাবু কী বুঝবে না ? কেন বুঝবে না ? সতীশবাবু উচ্ছবের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল ?
Ans: আলোচ্য অংশটি মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ‘ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । ভাত না খেলে কীরূপ ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় , উচ্ছব তা বুঝতে পেরেছে । একারণেই উচ্ছব জানিয়েছে সতীশবাবু ভাত না খেতে পারার জ্বালা বুঝতে পারবে না ।
সতীশবাবু আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল । উচ্ছবের মতো যে নদীর পাড়েও থাকে না , মেটে ঘরেও থাকে না । তার পাকা ঘর ঝড়ে ভেঙে যায়নি , এছাড়া তার ধান – চাল সম্পূর্ণ নিরাপদে আছে । তাই দেশজোড়া দুর্যোগের সময়েও তার ঘরে রান্না হয়েছে । উচ্ছবের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় । তার যা কিছু ছিল তাতেও ভগবানের মার পড়েছে । তুমুল ঝড়বৃষ্টিতে মাতলার জলে উচ্ছবদের সংসার সর্বনাশ হয়ে যায় । একে উচ্ছবের ঘরদোর বিপর্যস্ত তার ওপর স্ত্রী – পুত্র হারিয়ে যায় এ হেন অবস্থায় হতদরিদ্র উচ্ছবদের পেটের জ্বালা সতীশবাবু কোনোমতেই বুঝতে পারবে না ।
তুমুল ঝড়বৃষ্টিতে উচ্ছবদের সংসার বিপর্যস্ত হয়ে গেলে সে সম্পূর্ণ একাকী হয়ে পড়ে । কয়েকদিন ধরে অভুক্ত থাকার জন্য উচ্ছব খিদের জ্বালায় ছটফট করে । খিদের জ্বালা মিটানোর জন্য সে সতীশবাবুর কাছে ভাতের প্রার্থনা করে , কিন্তু সতীশবাবু জানায় তাকে ভাত দিলে পঙ্গপালের মতো মানুষ তার কাছে ভিড় করবে । প্রচণ্ড ক্ষুধার তাড়নায় উচ্ছব ভাত ভাত করছে শুনে সতীশবাবু মস্তব্য করেছে তার মতিভ্রম হয়েছে । উচ্ছবকে ভাত না দিয়ে সতীশবাবু নিষ্ঠুর , অমানবিক কাজ করেছে ।
Q. “ মারতে মারতে উচ্ছবকে ওরা থানায় নিয়ে যায় । ” কারা , কেন উচ্ছবকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায় ?
Ans: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ‘ গল্পে উচ্ছব নাইয়াকে পেতলের ডেকচি চুরি করার অপরাধে পুলিশের লোকজন মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায় ।
গল্পে দেখা যায় , বাসিনী উচ্ছবকে বড়ো বাড়িতে নিয়ে এসেছে হোমযজ্ঞের কাঠ কাটার জন্য । উচ্ছব ভাত খেতে পাবে এই আশায় আড়াই মণ কাঠ কেটে ফেলে । সে অনেক দিন ধরে ভাত খেতে পায়নি , তাই সে ভাতের জন্য উতলা হয়ে ওঠে । কিন্তু তান্ত্রিকের বিধানে তার কাঙ্ক্ষিত ভাত খাওয়া অধরা থেকে যায় । কেননা অসুস্থ বুড়োকর্তা মরে গিয়ে নাকি বাড়ির রান্না করা ভাত অশুচি করে দিয়েছে । তাই এই ভাত আর খাওয়া চলবে না । সংস্কার মতো এই অশুচি ভাত ফেলে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে উচ্ছবের ওপর । কিন্তু ভাতের ডেকচি হাতের নাগালে পেতেই উচ্ছব অশুচি ভাত খাওয়ার ব্যাপারে কোনোরূপ বাধানিষেধ মানতে রাজি নয় । মনের আনন্দে ভাত খেয়ে ভুখা পেটের খিদে মিটাবে এই আশায় সে ভাতের ডেকচি নিয়ে হনহন করে হাঁটতে শুরু করে । সে খুব দ্রুত স্টেশনে উপস্থিত হয় , এবং প্রাণভরে ভাত খেয়ে স্বর্গসুখ অনুভব করে । সব ভাত খেয়ে উচ্ছব ডেকচির কানা মাথা স্পর্শ করে ঘুমিয়ে পড়ে । আর এখানেই উচ্ছবের স্বর্গসুখের স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায় । সকাল না হতেই পেতলের ডেকচি চুরি করার অপরাধে লোকজন উচ্ছবকে ধরে ফেলে এবং মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায় । উচ্ছব একদিন যে আসল বাদা খোঁজ করার স্বপ্ন দেখেছিল , সেই বাদাটার খোঁজ করা তার আর সম্ভব হলো না ।
ভাত (গল্প) |মহাশ্বেতা দেবী
Q. মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ ছোট গল্পের ‘বড় বাড়ি’-র চার পুত্র ও পুত্রবধূর পরিচয় দাও।
Ans: বড়াে বাড়ির চার পুত্রের পরিচয় :মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ ছােটোগল্পে ‘বড়াে বাড়ির’ যে অশীতিপর বৃদ্ধের মৃত্যু বর্ণিত হয়েছে, তাঁর ছিল চার পুত্র ও পুত্রবধূ। বড়াে, মেজো এবং ছােটো পুত্র বাড়িতে থাকলেও সেজো পুত্র বিলেতে থাকে। বাড়িতে থাকা তিন পুত্র ছিল অত্যন্ত অলস- “বাড়ির ছেলেরা বেলা এগারােটার আগে ঘুম থেকে ওঠে না।” যেহেতু বাড়ির জ্যেষ্ঠ বুড়ােকর্তার দূরদর্শিতায় আঠারােটা দেবত্র বাড়ি এবং বাদা অঞ্চলের অনেক উর্বর জমি তাদের অধিকারে, তাই তারা ছিল ভীষণ কর্মবিমুখ এবং উপার্জনবিমুখ।
বড়াে বাড়ির চার পুত্রবধূর পরিচয় : বড়ো বাড়ির পুত্রবধূরা ছিল অত্যন্ত কর্মপটু এবং কর্তব্যসচেতন। এ গল্পে ছােটোবউয়ের বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় না, কেবল তার পিতা যে বুড়াকর্তাকে সুস্থ করার জন্য তান্ত্রিক নিয়ে এসেছিলেন, সেটুকুই জানা যায়। অন্যদিকে, মেজোবউ শাশুড়ির সম্ভাব্য বৈধব্যের আশঙ্কা তাকে বড় ইলিশ, বড়াে ভেটকি, চিতলের কোল, ডিমপােরা ট্যাংরা, পাকাপােনার পেটি প্রভৃতি মাছের বিভিন্ন পদ রান্না করে খাওয়ায়। আবার বড়ােবউয়ের চরিত্রটি উল্লেখযােগ্য একটি চরিত্র। “শ্বশুর তার কাছে ঠাকুরদেবতা সমান” ছিল। সে শ্বশুরের জন্য প্রতিদিন দই পেতে সেই দইয়ের সঙ্গে ইসবগুল মিশিয়ে শরবত বানাত। শ্বশুর খেতে আসার পাঁচ মিনিট আগে বড়ােবউ তার জন্য রুটি বা লুচি তৈরি করে দিত। এ ছাড়া, প্রতিদিন শ্বশুরের বিছানা করা এবং তার পা টিপে দেওয়ার কাজও সে করত।
Q. “মেজ বউ উনােন পাড়ে বসেছে।”—উনার পাড়ে বসে মেজোবউ কোন্ কাজ করছিল এবং কেন? বাড়ির বড়ােবউয়ের কাজ কী?
Ans: মেজোবউয়ের দায়িত্ব : মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ভাত’ ছোটগল্পে আমরা বড়াে বাড়ির মেজোবউকে দেখি উনানের পাড়ে বসে শাশুড়ির জন্য রান্না করতে। মেজোবউয়ের বিরাশি বছরের শ্বশুরমশাই লিভারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী। বিধবা হয়ে গেলে শাশুড়ি আর মাছ খেতে পারবেন না। এই আশঙ্কায় মেজো বউ কয়েকদিন ধরে বড়াে ইলিশ, পাকা পােনার পেটি, চিতলের কোল, ডিমপােরা ট্যাংরা, বড়া ভেটকি ইত্যাদি রান্না করে ও বেড়ে শাশুড়িকে খাওয়াচ্ছিল। তাই সে উনােপাড়ে বসে রান্না করছিল।
বড়ােবউয়ের দায়িত্ব : বাড়ির বড়ােবউ কাজকর্মে বেশ দক্ষ ছিল। আর শ্বশুর তার কাছে ছিল ‘ঠাকুরদেবতা সমান’। সে শ্বশুরের জন্য প্রতিদিন দই পেতে সেই দইয়ের সঙ্গে ইসবগুল মিশিয়ে শরবত করে দিত। শ্বশুর খেতে আসার পাঁচ মিনিট আগে তার জন্য রুটি বা লুচি তৈরি করত সে প্রতিদিন। প্রতিদিন শ্বশুরের বিছানা করত, শােওয়ার আগে শ্বশুরের পা টিপে দিত। এ ছাড়াও শ্বশুরের এবং সংসারের অন্য অনেক কাজই করত এই কর্মপটীয়সী নারী। শ্বশুর মৃত্যুশয্যায় থাকায় সে শঙ্কা প্রকাশ করে- “কত কাজ করতে হত সারা জীবন ধরে। এখন সে সব কি আর করতে হবে না…।”
Q. “লক্ষ্মী না আসতে সেধে ভাসান যাচ্ছে তাকাব না এতটুকু?”- বক্তার এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট আলোচনা করাে।
Ans: প্রেক্ষাপট : মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটগল্পে উচ্ছব নাইয়া ছিল গ্রামের এক ভূমিহীন কৃষক। সে কাজ করত সতীশ মিস্তিরির জমিতে। বন্যার জলে বাড়িঘর ও সংসার ভেসে যাওয়া উচ্ছবের মাঝেমাঝেই মনে পড়ে যায় তার কৃষকজীবনের স্মৃতি। প্রাথমিক দিশেহারা অবস্থায় সে শুধুই তার স্ত্রী আর সন্তানদের খুঁজেছিল, কিন্তু পরে যখন তার অস্থিরতা কমে, তখনই উচ্ছবের খিদের যন্ত্রণা তীব্রতর হয়ে ওঠে। কর্মজীবনের কথা, ফসল ফলানাের স্মৃতি, তখনকার উদবেগ আর অনিষ্ট তার স্মৃতি তার মনের মধ্যে ভিড় করে আসে। মাথার ভেতরটা তার দপদপ করতে, কোনাে কথা গুছিয়ে ভাবতে পারে না সে। কিছু ভাবতে গেলেই তার মনে হয় ধানের গােছা হওয়ার আগেই ধানগাছের সবুজ রং চলে যাচ্ছে; কার্তিক মাসেই ধান খড়ে পরিণত হয়ে গেল- এসব দেখে মাথায় হাত পড়ে উচ্ছবের। সে দেখল যে সতীশ মিস্তিরির হরকুল, পাটনাই এবং মোটা তিন প্রকার ধানে মড়ক লেগেছে। সতীশ মিস্তিরির জমিতেই তাে বছরের ক-মাস কাজ করে উচ্ছব। তাই উচ্ছব সতীশের খেতে হওয়া ধানের দশা দেখে কাদতে থাকে। সাধনবাবু উচ্ছবকে মনিবের ধান নষ্ট হওয়ায় তার কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করে। উচ্ছব তার উত্তরেই সাধনবাবুকে বলে যে, লক্ষ্মীর আবাহনের আগেই তার বিসর্জন হয়ে যাচ্ছে বলে সে কাদছে, কারণ গ্রামের মানুষদের কাছে ফসলই লক্ষ্মী।
ভাত (গল্প) |মহাশ্বেতা দেবী
Q. “যা আর নেই, যা ঝড়-জল-মাতলার গর্ভে গেছে তাই খুঁজে খুঁজে উচ্ছব পাগল হয়েছিল।”- দুর্যোগের বর্ণনা দাও। দুর্যোগটি উচ্ছবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?
Ans: দুর্যোগের বর্ণনা : মহাশ্বেতা দেবীর ভাত’ ছােটোগল্পে আমরা দেখি, দুর্যোগের দিন সন্ধ্যাবেলায় কন্নুনীর মা খেতে খেতে বলছিল যে, দেবতার গতিক ভালাে নয়। তারপরে রাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল দুর্যোগে উচ্ছবদের কাঁচা বাড়ির মাঝখানের খুঁটিটি মাতাল আনন্দে টলছিল ধনুষ্টংকার রোগীর মতাে। তাই ঘরের মাঝখানের খুঁটিটা উচ্ছব মাটির দিকে সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরেছিল এবং ভয়ে ভগবানের নাম নিচ্ছিল। অন্যদিকে, ছেলেমেয়েদের জাপটে ধরে তার বউ ঠান্ডায় আর ভয়ে কাঁপছিল। এসময় হঠাৎ বিদ্যুতের আলাের ঝলকানিতে উচ্ছব দেখে, মাতাল মাতলা নদীর সফেন জল বাতাসের তােড়ে দ্রুত ছুটে আসছে। নিমেষের মধ্যে সেই বানের জল উচ্ছবের বউ ছেলে মেয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। গাছে বেঁধে কোনােক্রমে প্রাণে বেঁচে যায় উচ্ছব।
উচ্ছবের উপরে দুর্যোগের প্রভাব : দুর্যোগের আকস্মিকতায় সাময়িকভাবে উচ্ছবের বুদ্ধি লােপ পায়। বউ-ছেলে মেয়ে-সহ সবকিছু ফিরে পাবার আশায় শুনসান বাড়ি ছেড়ে তাই সে নড়ে না। লঙ্গরখানায় দেওয়া খিচুড়ি তাই তার খাওয়া হয় না। কয়েকদিন পর সরকার শুকনাে চাল দিলে দীর্ঘদিন যাবৎ উপােসি উচ্ছব তা চিবিয়েই কয়েকদিন কাটায়। এ সময় মাঝে-মাঝেই তার মনে পড়ে সেই দুর্যোগের রাতটার কথা। তার মনে হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভাত না খেয়ে সে ভূত হয়ে যাচ্ছে, ভাত খেলেই সে পুনরায় মানুষ হবে এবং বউ-ছেলেমেয়ের দুঃখে কাঁদতে পারবে। তাই কয়েকদিন পেট পুরে ভাত খেতে সে কলকাতা। যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
Q. “তারপরই মনে পড়ে যে রাতে ঝড় হয়।”- কোন কথার পর ঝড়ের রাতের কথা উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মনে পড়ে? কোন্ কোন কথা এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে তার?
Ans: মনে পড়ার পরিপ্রেক্ষিত : মহাশ্বেতী দেবীর ‘ভাত’ ছােটোগল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে উচ্ছব নাইয়ার কথা বলা হয়েছে। ধান খেতে আগুন লাগার কথা মনে পড়ার পরে উচ্ছবের ঝড়ের রাতের কথা মনে পড়ে।
প্রসঙ্গত মনে পড়া কথাগুলি : উচ্ছব নাইয়ার এ প্রসঙ্গে মনে পড়েছিল যে, অনেকদিন পর সেই সন্ধ্যায় সে পরিবার সহ পেটপুরে খেয়েছিল। অনেকটা হিঞ্চে শাক সেদ্ধ, গুগলি সেদ্ধ, নুন এবং লংকাপােড়া দিয়ে মেখে ভাত খেয়েছিল সে। সেদিন উচ্ছবের মতাে গ্রামের সকলেই পেট পুরে খেয়েছিল। চনুনীর মা খাওয়ার সময় বলেছিল যে, ভগবানের লক্ষণ ভালাে নয়। সে আরও বলেছিল যে, নৌকো নিয়ে যারা বেরিয়েছে, তারা নৌকা-সহ ডুবে মরতে পারে। এরপর উচ্ছবের মনে পড়ে ঘরের মাঝখুটিটা মাটির দিকে ঠেলে ধরে রাখার কথা। ধরণি যেন সেই খুঁটি উপড়ে ফেলতে চাইছিল। ভগবানের নাম নিয়েছিল উচ্ছব। তারপর বিদ্যুতের চমকে সে দেখেছিল, মাতলার সফেন জল ছুটে আসছে। তারপর আর কিছু মনে পড়ে না তার, নিজের পরিচয় পর্যন্ত। উচ্ছব ভাবে, তার কাগজ-ভরা, সুন্দর কৌটোটির কথা। আরও ভাবে, ভগবান যদি তার বউ-ছেলেমেয়েদের বাঁচিয়ে রাখত, তবে সে শত হাতির শক্তি পেত। সেই কৌটোটি নিয়ে তবে সপরিবারে সে ভিক্ষায় বেরােত। সতীশবাবুর নাতির ফুড খাওয়ার কৌটোটি উচ্ছব চেয়ে এনেছিল। অমন সুন্দর কৌটো থাকলে প্রয়ােজনে একমুঠো চাল ফুটিয়েও নেওয়া যায়।
Q. ঝড়জল-বন্যার রাতের আকস্মিক আঘাত উচ্ছবের মনােজগতে কী কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল, তা ‘ভাত’ ছােটোগল্প অবলম্বনে লেখাে।
Ans: প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া : মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছােটোগল্পে ঝড়জল- বন্যার রাতটি উচ্ছবের ঘরের সব কিছু এবং তার পরিবারকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও গাছে বেঁধে কোনােক্রমে বেঁচে যায় সে। জল নেমে গেলে পরদিন সকাল থেকে উচ্ছব সব কিছু ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ আশায় কয়েকদিন উদগ্রীব হয়ে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় সাময়িকভাবে উচ্ছবের বুদ্ধি লােপ পায়। ঘরের চালের নীচ থেকে প্রিয়জনদের ডাক শােনার আশায় সে আকুল হয়ে ওঠে। সব কিছু ফিরে পাওয়ার আশায় শুনসান বাড়ি ছেড়ে কয়েকদিন কোথাও না নড়ায় তার কিছু খাওয়াও হয় না। এমনকি, লঙ্গরখানায় দেওয়া খিচুড়িও নয়।
পরবর্তী আচরণ : যখন সে খানিকটা স্বাভাবিক হয়, তখন খিচুড়ি দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই শুকনাে চাল চিবিয়েই সে কয়েকদিন কাটায়। টানা বেশ কিছুদিন ভাত না জোটায় সে ভাত খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। যার জমিতে উচ্ছব চাষ করে, সেই সতীশবাবুও তাকে ভাত দিতে অস্বীকার করলে সে অত্যন্ত দুঃখ পায়। ক্রোধও জন্ম নেয় তার মনে। দিনের পর দিন উপােসের ফলে সব হারানাে উচ্ছবের মানসিক বিকৃতি ঘটতে থাকে। তার মনে হয়, দীর্ঘদিন ধরে পেটে ভাত না পড়ায় সে প্রেত হয়ে যাচ্ছে। ভাত খেলে সে মানুষ হবে এবং তখনই সে বউ ও ছেলেমেয়ের দুঃখে কাঁদবে।
ভাত (গল্প) |মহাশ্বেতা দেবী
Q. মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ রচনাটি ছােটোগল্প হিসেবে কতখানি সার্থক, তা আলােচনা করাে।
Ans: বিষয়বস্তু : মহাশ্বেতা দেবীর ভাত একটি ছােটোগল্প। ঝড়জল বন্যার এক রাতে সুন্দরবনের ভাগচাষি উচ্ছব নাইয়ার ঘরবাড়ি এবং স্ত্রী-সন্তান বানের জলে ভেসে যায়। প্রাথমিকভাবে শােক ও তারপর খিদের তাড়না তাকে পাগল করে তােলে। তার চাষ-করা জমির মালিক সতীশ মিস্তিরির কাছে ভাতের প্রার্থনা করে ব্যর্থ হয়ে ক দিন পেটপুরে ভাত খাওয়ার আশায় সে কলকাতায় চলে যায়। গ্রামতুতাে বােন বাসিনীর মনিববাড়িতে গিয়ে পেটপুরে ভাত খাওয়ার চুক্তিতে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সে। কিন্তু বিকেলে সেই বড় বাড়ির বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটলে দীর্ঘদিন ধরে ভাত না খাওয়া উচ্ছব প্রমাদ গােনে। তাই যখন সেই অশৌচ বাড়ির রাধা ভাত ফেলে দেওয়ার উপক্রম হয়, তখন মরিয়া উচ্ছব বাসিনীর হাত থেকে ভাতের একটা পেতলের ডেকচি নিয়ে এক দৌড়ে স্টেশনে চলে যায়। সেই ভাত পেটপুরে খেয়ে সেখানেই সে শুয়ে পড়ে। ভােরে পেতলের ডেকচি চুরির অপরাধে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। যে বাদার জমির বিপুল ও উন্নত ধান বড়াে বাড়ি কৈ বড়াে করে তুলেছিল, সেই ‘আসল বাদাটার খোঁজ’, বন্ধ্যা বাদার অধিবাসী উচ্ছবের আর পাওয়া হয় না।
সার্থকতা : সুতরাং, উচ্ছবের ভাত খাওয়াকে কেন্দ্র করেই সুন্দরবন ও কলকাতার পটভূমিতে ‘ভাত’ ছছাটোগল্পের মাত্র কয়েকদিনের কাহিনি গড়ে উঠেছে। এ গল্পে তাই স্থান-কাল-ঘটনাগত ঐক্য বজায় রাখা হয়েছে। তা ছাড়া, ঘটনার ঘনঘটা, তত্ত্ব’, বা উপদেশও এখানে অনুপস্থিত। উচ্ছব এবং আরও চার-পাঁচটি চরিত্র নিয়েই গল্পটি বিস্তার লাভ করেছে। সমাপ্তিতে উচ্ছবের জেলে যাওয়া এবং ‘আসল বাদাটার খোঁজ’ না পাওয়ার মধ্যে যেমন চমক রয়েছে, তেমন তা গল্পটিকে চরম ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছেও দিয়েছে। ‘ভাত’ তাই নিঃসন্দেহে একটি শিল্পসার্থক ছােটোগল্প।
Q. মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছােটোগল্পে উচ্ছবের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করাে।
Ans: দুর্ভাগ্যপীড়িত : মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছােটোগল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উৎসব নাইয়া নিম্নবর্গীয় সমাজব্যবস্থার একজন প্রতিনিধি। ভাগ্যের ফেরে মাতলার বন্যায় বউ-ছেলেমেয়েকে হারায় সে। ভেসে যায় তার মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ উৎসবের জীবন থেকে সব কিছু কেড়ে নিলেও কেড়ে নিতে পারেনি তার আদিম প্রবৃত্তিকে, যে প্রবৃত্তির নাম খিদে। তাই প্রিয়জন হারানাের শােক কাটিয়ে ওঠার আগেই তার মধ্যে জেগে ওঠে ভাতের জন্য হাহাকার।
মমতা ও ভালােবাসাপ্রিয় : হাভাতে উৎসবের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসার আগে পর্যন্ত তার মধ্যেও কোমলতার স্পর্শ ছিল। তাই সতীশ মিস্তিরির তিন ধানে মড়ক লাগলে ধানের প্রতি পরম মমতায় কেঁদে ভাসায় এই গরিব ভাগচাষি। ভেসে যাওয়া ঘরের চালের নীচ থেকে পরিচিত স্বর শােনার আশায় নাওয়াখাওয়া ভুলে বসে থাকে উৎসব। অসম্ভব জেনেও পাগলের মতাে বলতে থাকে, “রাকাড় অ চল্লুনীর মা!”
মানবিকতা : পরম আকাঙ্ক্ষিত ভাতের স্পর্শে ‘প্রেত’ উচ্ছবের ভিতর থেকে জেগে ওঠে ‘মানুষ’ উৎসব। তাই বড়াে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ডেকচির ভাত খেতে খেতে সে মনে মনে সেই ভাত তুলে দেয় বউ-ছেলেমেয়ের মুখে… “চনুনী রে! তুইও খা, চন্নুনীর মা খাও, ছােটো খাকা খা, আমার মধ্যে বসে তােরাও খা!”
সর্বহারা বঞ্চিত : আসলে উৎসবের মতাে বঞ্চিত, প্রান্তিক মানুষদের সমাজজীবনে ব্যক্তিনামেরও কোনাে মূল্য নেই। তাই আমরা দেখি তার নিরুৎসব জীবনে সে আর উৎসব থাকেনি, তার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্ছব নাইয়া।
You must be logged in to post a comment.