
ভারতবর্ষ (গল্প) সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর|HS Bengali Question and Answer :
বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :
Question: “হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেলো ।” – দৃশ্যটি হল –
(A) হিন্দুরা বুড়ির মৃত দেহ নিয়ে আসছে
(B) হেঁটে হেঁটে বুড়ি এইদিকে আসছে
(C) বুড়ি মারা গেছে সকলে কাদঁছে
(D) মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মৃত দেহ নিয়ে আসছে
Ans: (D) মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মৃত দেহ নিয়ে আসছে ।
Question: বুড়িকে নদীতে ফেলে দিতে কে বলেছিল ?
(A) চৌকিদার
(B) জগা
(C) ভট্টাচার্য মশাই
(D) মোল্লা
Ans: (A) চৌকিদার।
Question: “চোখের মাথা খেয়েছিস মিনসেরা” – কার উক্তি ?
(A) মোল্লার
(B) ভট্টাচার্য মশাইয়ের
(C) বুড়ির
(D) নাপিতের
Ans: (C) বুড়ির ।
Question: “জোর কাটাকাটি চলে” – চায়ের দোকানে এর ফলে কী হয় ?
(A) চা বিক্রি বারে
(B) ঝগড়া হয়
(C) সময় কাটে
(D) বিরক্তি লাগে
Ans: (A) চা বিক্রি বারে।
Question: “যবন নিধনে অবতীর্ণ হও় মা !” একথা বলেছিল –
(A) ভট্টাচার্য মশাই
(B) গাঁয়ের দারোগা
(C) নিবারণ বাগদি
(D) গাঁয়ের পুলিশ
Ans: (A) ভট্টাচর্য্য মশাই।
Question: “বুড়িমা ! তুমি মরনি !” বক্তা হল –
(A) চৌকিদার
(B) গাঁয়ের দারোগা
(C) নিবারণ বাবু
(D) গাঁয়ের পুলিশ
Ans: (A) চৌকিদার।
Question: দাকপুরুসের বচন অনুযায়ী সোমবার পৌষে বাদল কতদিন চলে ?
(A) সাতদিন
(B) পাঁচদিন
(C) তিনদিন
(D) একদিন
Ans: (D) একদিন।
Question: “তোমার কত্তাবাবা টাট্টু” – কাদের উদ্দেশ্যে এই কথা বলেছিল ?
(A) মুসলমানদের
(B) হিন্দুদের
(C) যুবকদের
(D) দেশের
Ans: (C) যুবকদের।
Question: “মাথার ওপর আর কোনো সালা নেই রে – কেউ নেই” – কথাটি বলেছিল –
(A) গ্রামের কোনো যুবক চাষি
(B) গ্রামের মোড়লেরা
(C) গ্রামের এক গণমান্য চাষি
(D) এক ভবঘুরে
Ans: (A) গ্রামের কোনো যুবক চাষি।
Question: “আমি স্বকর্নে শুনেছি, বুড়ি লা ইলাহা বলেছে ।” কথাটি বলেছিল –
(A) করিম ফরাজি
(B) মোল্লা সাহেব
(C) ফজলু শেখ
(D) মৌলবি সাহেব
Ans: (C) ফজলু শেখ।
Question: এ বারের বাদলা কী বারে লেগেছিল ?
(A) সোমবারে
(B) মঙ্গলবারে
(C) বুধবারে
(D) শনিবারে
Ans: (B) মঙ্গলবারে।
Question: “পিচের সড়ক বাক নিয়েছে, যেখানে, সৈখানেই গড়ে উঠেছে” –
(A) একটি মিষ্টির দোকান
(B) একটি ছোট্ট বাজার
(C) একটি শনি মন্দির
(D) একটি চায়ের দোকান
Ans: (B) একটি ছোট্ট বাজার।
Question: “তোর সতগুষ্টি মরুক” – উক্তিটি কার ?
(A) জগাড়
(B) মোল্লার
(C) নরকির
(D) বুড়ির
Ans: (D) বুড়ির।
Question: থূর্তুরে ভিখিরি বুড়ির গায়ে জড়ানো –
(A) তুলোর কম্বল
(B) ছেরা কাপড়
(C) নোংরা চাদর
(D) দামী সাল
Ans: (A) তুলোর কম্বল।
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা (অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর)– ভারতবর্ষ (গল্প) সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :
Question: চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে গ্রামবাসীরা কীসের প্রতীক্ষা করছিল ?
Ans: চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে গ্রামবাসীরা রোদ ঝলমল একটা দিনের প্রতীক্ষা করছিল ।
Question: “ বোঝা গেল , বুড়ির এ অভিজ্ঞতা প্রচুর আছে । ” বুড়ির কী অভিজ্ঞতা ছিল ?
Ans: গাছের মোটা শিকড়ে বসে শিকড়ের পিছনে গাছের খোঁদলে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে বসার অভিজ্ঞতা বুড়ির আছে ।
Question: “ তর্কাতর্কি , উত্তেজনা হল্লা চলতে থাকল । ” কী বিষয়ে , কাদের মধ্যে তর্কাতর্কি উত্তেজনা ও হল্লা চলছিল ?
Ans: সমাজসচেতন লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত ‘ ভারতবর্ষী গল্পে একটি চেতনাহীন বৃদ্ধা হিন্দু না মুসলমান এই বিষয়কে কেন্দ্র করে হিন্দু – মুসলমানদের মধ্যে । তর্কাতর্কি , উত্তেজনা , হল্লা চলছিল ।
Question: “ হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল ” — অদ্ভুত দৃশ্যটি কী ?
Ans: সকালে যে বুড়ির মৃতদেহ গ্রামের যুবকরা নদীর তীরে ফেলে দিয়ে এসেছিল বিকেলে মাঠ পেরিয়ে মুসলমানরা সেই দেহকেই চ্যাংদোলায় বহন করে আনছে ।
Question: “ নিবারণ বাগদি রাগী লোক ” — নিবারণ বাগদি আগে কী করত ?
Ans: নিবারণ বাগদি একসময় দাগি ডাকাত ছিল , ডাকাতি করত ।
Question: “ বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস জোরালো ” হলে বলা হয় কী ?
Ans: ডিত্তর বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস জোরালো হলে তাকে ফাপি বলা হয় ।
Question: পউষে বাদলা সম্পর্কে গ্রামের ‘ ডাকপুরুষের ‘ পুরনো ‘ বচন’টি কী ?
Ans: পউষে বাদলা সম্পর্কে ‘ ডাকপুরুষ ‘ – এর পুরনো বচন হলো – শনিতে মঙ্গলে পাঁচ , বুধে তিন— বাকি সব দিন এক দিন বৃষ্টি হবে ।
Question: “ সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল ” —কোন ঘটনা সবাইকে অবাক করেছিল ?
Ans: থুরথুরে কুঁজো ভিখিরি বুড়ি ওই দুর্যোগে কীভাবে বেঁচেবর্তে হেঁটে চায়ের দোকানে আসতে পারে , সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল ।
Question: নাপিত নকড়ি বুড়িকে কী বলতে শুনেছিল ?
Ans: নাপিত নকড়ি বুড়িকে ‘ হরিবোল হরিবোল ‘ বলতে শুনেছিল ।

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা | রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর – ভারতবর্ষ (গল্প) সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ | HS Bengali Question and Answer :
Question: “ভারতবর্ষ” গল্পের বিষয়বস্তু আলোচনা কর।
Ans: – ধর্ম হল এমন একটি বিষয় যা ধারণ করে আমরা আত্মতুষ্টি অনুভব করি।এখানে জাতি বা সম্প্রদায়ে কোন ভেদাভেদ থাকেনা।কিন্তু কুটকৌশলী মানুষ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টিকারী ধর্মের জন্ম দিয়েছে।কবিগুরুর মতে,যারা আমাদের মুখে দুমুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য পৃথিবীতে এসেছেন তাদের আমরা স্পর্ধা সহকারে জাতে ঠেলে দিয়েছি।আর এই স্পর্শকাতর বিষয়কে উপজীব্য করেই সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অসামান্য কাহিনী “ভারতবর্ষ”।
ধর্মের উৎপত্তির সন্দর্ভ সন্ধান করতে গেলে দেখা যায় এর পশ্চাতে মূল কারণ ছিল জনকল্যাণ।কিন্তু কালচক্রের বহ্নিশিখায় তা ক্রমে মানবসভ্যতা ধ্বংসকারী রক্তবীজে পরিণত হয়েছে।মহান মনিষীগণের শোনানো সৌভ্রাত্রের বাণী আজ ক্রমে বিফলতায় পর্যবসিত হচ্ছে।বর্তমান গল্পে এই মূল হৃদয়বিদারক সত্যটিই তুলে ধরা হয়েছে।দাঙ্গা,ধর্মীয় হানাহানি,ব্যক্তি-ধর্মীয়-রাজনৈতিক স্বার্থ- এসবই আজ সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতবর্ষ সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের দেশ,এ দেশ গণতন্ত্র মেনে চলে।নানা জাতি,নানা ধর্ম,নানা সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে বাস করে এখনে।তবে কখনও কখনও কারনে অকারণে বেঁধে যায় দ্বন্দ্ব বিবাদ,যার অন্তিম পরিণতি হয় দাঙ্গাফাসাদে।গল্পে ভারতবর্ষের একটা ছোট্ট জনপদের একটা চায়ের দোকানে আড্ডার পরিবেশ দিয়ে কাহিনীর সূত্রপাত ঘটেছে।তবে বেশীরভাগ মানুষই কৃষি নির্ভর।শীতকালের সময় দিনকতক ধরে অসময়ের বৃষ্টির দাপট,যাকে বলে ফাঁপি;তাতে ফসলের নিদারুণ ক্ষতি হচ্ছে।দুশ্চিন্তিত লোকগুলো তখন আল্লা আর ভগবানের উদ্দেশ্যে গালি দিতে লাগল।হাঠাৎ গল্পের মোড় ঘুরিয়ে সেখানে রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করে জনৈকা থুরথুরে কুঁজো ভিখিরি বুড়ি।তার গলা শুনে সকলে মন্তব্য করে,বুড়ির শরীর গেলেও গলার জোর এখনও আছে।সে বীরদর্পে চা খায় আর পয়সা দেয়।সকলের মনে দানা বাঁধে হাজার প্রশ্ন।সেখানে থেকে তখন বুড়ি চলে যায়।
দিন পাঁচেক পর আবহাওয়া ভালো হয়ে রৌদ্রময় হয়ে উঠলে সকলে দেখতে পায় যে গ্রামের বটতলার গুঁড়ির খোঁদলে বুড়ি অসাড় হয়ে পড়ে আছে।তাকে হিন্দু মৃতদেহ মনে করে চৌকিদারের পরামর্শমত গাঁয়ের হিন্দু লোকেরা মাঁচায় বেঁধে ফেলে আসে নদীর ধারে।বিকালে কিন্তু দৃশ্যের পরিবর্তন ঘটে।তাকে মুসলমানরা নদীর ধার থেকে তুলে নিয়ে আসে।সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে একটিই প্রশ্ন বর্তমান- বুড়ি হিন্দু নাকি মুসলমান।তার সৎকার কাদের ধর্মীয় পদ্ধতি মেনে হবে তা নিয়ে প্রবল মতানৈক্যের সূত্রপাত ঘটে।প্রায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয় আর কি।মৌখিক নানা প্রমান দেওয়ানেওয়া চলে,তবুও সমস্যা অমিমাংসীতই থেকে যায়।এমতাবস্থায় হঠাৎ মৃত ভেবে যাকে নিয়ে এত সমস্যা সেই বুড়ি জেগে ওঠে।সকলে জিজ্ঞেস করে-“বুড়ি!তুমি মরনি!”।সে বলে-“তোরা মর!তোরা মর্ মুখপোড়ারা!”এভাবে গালাগালি দিয়ে শাপশাপান্ত করে দূরে মিলিয়ে যায়।
ক্রমে রোদের আলোয় তার মূর্তি আবছা হয়ে আসে।আর তার সাথে সাথে অস্পষ্ট হয়ে আসে আমাদের ভারতবর্ষ।অস্পষ্ট করে দিল আমাদের আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মান্ধতাকে।
Question:বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রোদে তপ্ত বালিতে চিত হয়ে পড়ে রইল ।’- বুড়ির চেহারা ও পোশাকের পরিচয় দাও । তার তপ্ত বালিতে পড়ে থাকার কারণ কী ?
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বিরচিত ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে শীতকালে অকাল দুর্যোগকে উপেক্ষ করে এক বুড়ির আগমন ঘটে । সেই বুড়ি প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন- “ থুথুরে কুঁজে ভিখিরি বুড়ি । রাক্ষুসী চেহারা । ” তার এক মাথা সাদা চুল এবং ক্ষয়ে যাওয়া খর্ব আকৃতির মুখে সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন বিরাজমান । শুধুমাত্র তার দৈহিক বিবরণই নয় , পোশাক পরিচ্ছেদের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-
“ ছেঁড়া নোংরা একটা কাপড় পরনে , গায়ে জড়ানো তেমনি চিটচিটে তুলোর কম্বল , এক হাতে বেঁটে লাঠি । ”
সবাইকে অবাক করে যেমন বুড়িটি এসেছিল , তেমনি অবাক করে বাজারের রাস্তার বাঁকের পাশে বট গাছ তলায় সে অশ্রয় নেয় । ফাকা বটগাছ তলায় মাটি ভিজে কাদা হয়ে গেছে । আর তাই সেই বুড়িটি— “ . – সেখানে গিয়ে গুঁড়ির কাছে একটা মোটা শেকড়ে বসে পড়ল ” । নিরাশ্রিতা বুড়ির কাছে এই অভিজ্ঞতা খুব চেনা মনে হয় । কিন্তু দুর্যোগ কেটে গিয়ে রোদ ঝলমলে দিন এলেও বুড়ি কেনো সাড়া না পেয়ে চাওয়ালা জগা বলল— “ নির্ঘাত মরে গেছে বুড়িটা । ‘ আর ঠিক এইভাবে তাঁর মৃতদেহকে নিয়ে সকলেই চিন্তায় পড়লেন । কিন্তু সেই চিন্তার নিরসন ঘটালেন বিজ্ঞ চৌকিদার । তিনি বললেন “ – নদীতে ফেলে দিয়ে এসো । ঠিক গতি হয়ে যাবে – যা হবার । ” আর তাই মাঠ পেরিয়ে দু মাইল দূরে নদীর শুকনো চড়ায় কয়েকজন মিলে বাঁশের চ্যাংদোলায় ঝুলিয়ে ফেলে দিয়ে এল । বুড়ির নিস্তেজ শরীর এইভাবে রোদে তপ্ত বালিতে পড়ে রইল ।
Question: “ হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল । ” অদ্ভুত দৃশ্যটি কী ? দৃশ্যটিকে অদ্ভুত বলার কারণ কী ছিল ?
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বিরচিত ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে হিন্দুদের দ্বারা ফেলে দিয়ে আসা বুড়িকে পুনরায় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা বাজার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল । আর এই যাওয়ার দৃশ্যকে লেখক ‘ অদ্ভুত দৃশ্য ‘ বলেছেন ।
শীতের অকাল দূর্যোগের দিনে বাজারের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার বাঁকে এক বট গাছের তলায় এক বুড়ি আশ্রয় নেয় । কয়েকদিন পরে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল । কিন্তু বট তলায় সেই বুড়িটিকে সবাই দেখল নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছে । অনেক বেলা গড়িয়ে গেলেও বুড়ি নড়ছে না দেখে সকলে সিদ্ধান্ত নিল যে , বুড়ি মৃত । পাঁচ ক্লোশ দূরে থানা । তাই বিজ্ঞ চৌকিদার পরামর্শ দিল’— নদীতে ফেলে দিয়ে এসো । ঠিক গতি হয়ে যাবে- যা হবার ” । আর এই ভাবেই বুড়ির মৃতদেহকে নদীর শুকনো ডাঙায় ফেলে দেওয়া হলো । আর সবাই দিগন্তে চোখ রাখল । কখন ঝাঁকে ঝাকে শকুন এসে মৃতদেহ খুবলে নেবে । অথচ বিকেলে এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখল । যারা বুড়িকে ফেলে এসেছিল তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের । আর যারা বুড়িকে নদীর চড়া থেকে তুলে এনেছিল । তারা মুসলমান । আর এই ভাবেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ তাকে নিজ ধর্মের মনে করে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে শুরু করে । কোনো পক্ষই কোনো কর্তব্য পালন করেনি বুড়ির প্রতি অথচ ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেছে । তাই দৃশ্যটিকে অদ্ভুত বলা হয়েছে ।
Question: “ দেখতে দেখতে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়াল চারিদিকে ” – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার বিবরণ দাও ।
অথবা , “ নির্ঘাত মরে গেছে বুড়িটা । ” – এই অনুমানকে সত্য ভেবে জনতা কী করেছিল ?
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে এক পরিচয়হীন মলিনবস্ত্র পরিহিত দরিদ্র বৃদ্ধার কথা আছে । সে পৌষের শীতে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে পিচের সড়কের বাঁকে ছোটো বাজারের রাস্তায় এসে শেষে এক গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে নিঃসাড় হয়ে যায় । গ্রামের হিন্দুরা বুড়ি মারা গেছে ভেবে চৌকিদারের পরামর্শে নদীর পাড়ে ফেলে দিয়ে আসে । কিন্তু গ্রামের মুসলমানেরা বুড়িকে মুসলমান সাব্যস্ত করে কবর দেবার জন্য তুলে আনে । বুড়ির এই ধর্মপরিচয় নিয়েই গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ।
আরবি মন্ত্র পড়তে পড়তে চ্যাংদোলায় চাপিয়ে বুড়িকে মুসলমানেরা বাজারে পৌছায় । তাদের অনেকেই নাকি বুড়িকে আল্লা বা বিসমিল্লা বলতে শুনেছে । গাঁয়ের মোল্লাসায়েব বা ফজলু শেখ সে ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় । অন্যদিকে , হিন্দুদের মধ্যে ভচামশাই বা নকড়ি নাপিত সাক্ষ্য দেয় তারা বুড়িকে শ্রীহরি বা হরিবোল বল শুনেছে । হিন্দু সম্প্রদায়ের নিবারণ বাগদি বা মুসলমানদের করিম ফরাজি উগ্র স্বভাবের দু’টি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে । হওয়ায় বুড়ির ধর্ম নির্ধারণের প্রশ্নে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র বিবাদের সূচনা হয় । এভাবেই দুটি সম্রদায়ের মধ্যে তীব্র দাঙ্গার সৃষ্টি হয় ।
Question: ‘ ভারতবর্ষ ’ গল্পটিতে লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের যে বক্তব্য ফুটে উঠেছে তা বিবৃত করো ।
অথবা , “ আনুষ্ঠানিকতাই প্রচলিত ধর্মের সঙ্গে মানবধর্মের সবচেয়ে বড়ো বিভেদ ঘটিয়ে দেয় । ” — ‘ ভারতবর্ষ ’ গল্পটি অনুসরণে বিষয়টি বুঝিয়ে দাও ।
অথবা , ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে লেখকের সমাজ সচেতনতার কী পরিচয় পাওয়া যায় , তা আলোচনা করো ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পটিতে এদেশের গ্রামের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে । অশিক্ষা ও অজ্ঞানতার ফলে কুসংস্কার এবং সাম্প্রদায়িকতা ভারতবর্ষকে আজও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রেখেছে । গল্পটিতে এই বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি লেখক গল্পের শেষে পাঠক ও জনতাকে নিয়ে যান অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক অনুভবে ।
‘ ভারতবর্ষ ’ গল্পে আমরা দেখি , কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করে । মানুষের মঙ্গলের জন্য সমাজে ধর্মের উদ্ভব । কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে বেড়েছে মানুষে মানুষে অবিশ্বাস , ঘৃণা ও হানাহানি । মহামানবরা মানুষের সাথে মানুষের মিলনের কথা , বিশ্বাসের কথা বলেছেন ; শুনিয়েছেন ভালোবাসার বাণী । যুগে যুগে এসবই যে বৃথা প্রয়াস ছিল তা আমরা প্রত্যক্ষ করি ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পটিতে । গল্পের প্রেক্ষাপট এক ছোট্ট জনপদ , কৃষিনির্ভর মানুষ , চায়ের দোকানে আড্ডা এবং পৌষের বাদলায় এক থুথুরে , জরাজীর্ণ বুড়ির সেখানে হঠাৎ উদয় । এরপর বুড়ির ‘ মৃত্যু ‘ ও তার ধর্ম নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরোধ যা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নিচ্ছিল ।
ভরা শীতের টানা বৃষ্টিতে বটতলায় আশ্রয় নেওয়া বুড়ি নিঃসাড় , মৃতবৎ পড়েছিল । গ্রামের হিন্দুরা বুড়িকে মৃত মনে করে মাচায় বেঁধে দূরে নদীর ধারে ফেলে আসে । আবার মুসলিমরা তাকে বিকেলে চ্যাংদোলা করে নিয়ে আসে । দু’পক্ষই বুড়িকে তাদের ধর্মের লোক ভাবে । এরপর দু’পক্ষই নিজেদের দাবির সমর্থনে যুক্তি , প্রমাণ ইত্যাদির অবতারণা করে । কিন্তু কোনোভাবেই সমস্যা মিটে না । পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে , দাঙ্গার চেহারা নেয় । আর তখনই হঠাৎ জেগে ওঠে ‘ মৃত ’ বুড়ি । উৎসাহী একজন বুড়িকে জিজ্ঞাসা করে যে সে হিন্দু না মুসলমান । এই প্রশ্নে বুড়ি রেগে গিয়ে দু’পক্ষকেই গালাগালি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায় । ধর্ম নিয়ে দু’পক্ষের এই হানাহানি , বিরোধ বুড়ির কাছে হাস্যকর মনে হয় । বুড়ির এই চরিত্রবৈশিষ্ট্য , মনোভাবের মধ্য দিয়ে লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ভারতবর্ষের প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরেছেন এই গল্পে । এই গল্পের মূল বক্তব্যই হলো কুসংস্কারাচ্ছন্ন , ধর্মনির্ভর কুৎসিত মানুষগুলির কাছে মানবিক সম্পর্কের চেয়ে ধর্মীয় সংস্কারই প্রধান আর বুড়ির ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে উদার মানসিকতার জোরে সেই বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দেওয়ার কাহিনি । ফলে গল্পটিতে শেষপর্যন্ত লেখক আমাদের নিয়ে যান অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক অনুভবে ।
Question: “ বুড়ি , তুমি হিন্দু না মুসলমান ? ” — উক্তিটি কার ? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? উদ্ধৃতাংশটিতে বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তির যে মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে , তা নিজের ভাষায় লেখো ।
Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বিরচিত ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে একটি চেতনাহীন বৃদ্ধাকে মৃতদেহ মনে করে হিন্দু – মুসলমানের মধ্যে উত্তেজনা রহস্যময় হয়ে উঠেছিল । এই দুই সম্প্রদায়ের লোকেরাই আলোচ্য উক্তিটি করেছে ।
আলোচ্য গল্পে এক পরিচয়হীন মলিনবস্ত্র পরিহিত দরিদ্র বৃদ্ধা পৌষের শীতে ঝড়বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পিচের সড়কের বাঁকে ছোটো বাজারের রাস্তায় এসে শেষে গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে নিঃসাড় হয়ে যায় । গ্রামের হিন্দুরা বুড়ি মারা গেছে ভেবে চৌকিদারের পরামর্শে নদীর পাড়ে ফেলে দিয়ে আসে । আবার গ্রামের মুসলমানরা বুড়িকে মুসলমান সাব্যস্ত করে কবর দেওয়ার জন্য তুলে আনে । বুড়ির এই ধর্মপরিচয় নিয়েই গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা প্রসঙ্গে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে ।
আলোচ্য উক্তিটিতে লেখকের গভীর মানসিকতা ধরা পড়েছে । লেখক এখানে সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে দূর করে মানবিকতাকে বড়ো করে তুলেছেন । লেখকের বক্তব্য মানুষের ধর্মীয় পরিচয় মানুষের একমাত্র পরিচয় হতে পারে না , মানুষের অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্ব , বিবেক তার শ্রেষ্ঠ পরিচয় । মানুষের গায়ে হিন্দু – মুসলমান বলে কিছু লেখা থাকে না , তার পরিচয় সে মানুষ । সংজ্ঞাহীন বৃদ্ধাকে মারমুখী জনতা নিজ নিজ ধর্মের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইলে লেখক বৃদ্ধার মুখ দিয়ে মানুষের মানবিক পরিচিতিকেই বড়ো করে তুলেছেন ।
আরও পড়ুন : বাঙালির চিত্রকলা
Question: “ কতক্ষণ সে এই মারমুখী জনতাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারত কে জানে ? ” — ‘ সে ’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? জনতা মারমুখী হয়ে উঠেছিল কেন ?
Ans: ‘ সে ’ বলতে এখানে বিপন্ন আইনরক্ষক নীল উর্দিপরা চৌকিদারকে বোঝানো হয়েছে ।
মৃত ভেবে বৃদ্ধার ধর্ম – পরিচয়ের প্রশ্নে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ বিবদমান হয়ে উঠেছিল । উভয় ধর্মের বেশ কিছু মানুষ বৃদ্ধার ধর্ম পরিচয়ের প্রমাণ দিতে শুরু করলেন । মোল্লাজি , ফজলু সেখ , করিম ফরাজি প্রমাণ করতে শুরু করল বৃদ্ধা মুসলমান । আবার ভট্চাযমশাই , নিবারণ বাগদি , নকড়ি নাপিত প্রমাণ দিল বৃদ্ধা হিন্দু ধর্মাবলম্বী । ধর্ম পরিচয়ের প্রশ্নে বচসা বাড়তে লাগল , তর্কাতর্কি উত্তেজনা – হল্লা চলতে থাকল । দু’পক্ষের মানুষেরাই মৃতদেহের উপর দাবি জানিয়ে বাঁশের চ্যাংদোলাটা নিয়ে টানাটানি শুরু ক’রে দেয় । প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে , দোকানের ঝাপ বন্ধ হতে থাকে । তারপরেই দেখা যায় গ্রাম থেকে অনেক লোক দৌড়ে আসছে । সবার হাতেই মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র । বৃদ্ধার শবদেহের দু’পাশে স্পষ্ট ‘ দুটো জনতা ‘ – কে দণ্ডায়মান দেখা যায় ।
এই পরিস্থিতিতে অগ্নিতে ঘৃতাহুতির মতো কাজ করে মোল্লাসায়েব এবং ভট্চাযমশাইয়ের ইন্ধন । এরই ফলশ্রুতিতে ধুন্ধুমার গর্জন – প্রতিগর্জন শোনা গেল এবং জনতা মারমুখী হয়ে উঠল । উভয় পক্ষই বৃদ্ধার ধর্মপরিচয়ের প্রশ্নে নিজ নিজ মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রত হলো । সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ প্রস্তুতির পটভূমিকাকেই ‘ মারমুখী জনতা ‘ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
Question: “ আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে ? ” – কোন প্রশ্নের উত্তরে বক্তা একথা বলেছে ? গল্পানুসারে বক্তার স্বরূপ উদ্ঘাটন করো । অথবা , “ দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য । ” – দৃশ্যটি বর্ণনা করো । এই দৃশ্যের মাধ্যমে বুড়ি কী শিক্ষা দিয়ে গেল ? অথবা , ‘ ভারতবর্ষ ’ গল্পে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের যে রূপটি ফুটে উঠেছে তার সম্পর্কে লেখো । প্রসঙ্গত গল্পে বুড়ির মৃত্যুর পর পুনরায় বেঁচে ওঠার ঘটনাটি কোন তাৎপর্য বহন করে ?
Ans: মরণঘুম থেকে জেগে ওঠার পর উৎসাহী ও বিস্মিত জনতা বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করে সে হিন্দু না মুসলমান । এ প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধা প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছেন ।
বৃদ্ধার এই উক্তিতে স্পষ্ট তিনি ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে উদার মানবিকতাে করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই তিনি দৃষ্টিভঙ্গির অভিমুখকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন । উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন । সকলেই যখন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৃদ্ধাকে মূল্যায়ন মানুষের প্রবণতা এই যে তারা পূর্ব নির্দিষ্ট কিছু প্রথাবন্ধ দৃষ্টিতে মানুষের বিচার ব কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি সভ্যতার পরিপন্থী ও বিদ্বেষমূলক । বৃদ্ধা এ গল্পে সম্প্রীতির বার্তা শুনিয়েছেন । মানুষকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার বাণী শুনিয়েছেন । ‘ ভারতবর্ষ প্রাচীনকাল থেকেই প্রেম – প্রীতির বার্তা বহন করে চলেছে । বৃদ্ধা তারই ধারক ও বাহক । এ গল্পে তিনি যেন ভারতজননীতে রূপান্তরিত । বিবদমান , বিদ্বেষ পোষণকারী , অসুর মনোভাবের অধিকারী ভারত সন্তানদের তিনি সংশোধন করতে এসেছেন । শান্ত – সৌন গ্রামবাংলার অন্তরে যে বিদ্বেষের বিষবাষ্প প্রচ্ছন্ন থাকে তাকেই তিনি বাইরে বের করে এনে দূর করতে চেয়েছেন । এ গল্পে বৃদ্ধা জাতি – ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবিক উদারতার বাঁ প্রচার করেছেন ।
You must be logged in to post a comment.