
বীমা পরিচিতি |Introduction to Insurance
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা বীমার বুনিয়াদ, বিবর্তন,কর্মপদ্ধতি,কীভাবে এটি অপ্রত্যাশিত ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় তা সম্পর্কে আলোচনা করব।
শিক্ষার বিষয় –
A ) জীবন বীমা – ইতিহাস ও বিবর্তন
B ) কীভাবে বীমা কাজ করে
C ) ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল
D) ঝুঁকি পরিচালনার জন্য একটি হাতিয়ার হিসাবে বীমা
E ) সমাজে বীমার ভূমিকা
Insurance Introduction
A ) জীবন বীমা – ইতিহাস ও বিবর্তন:
দূর্ঘটনা, বন্যা, ভূমিকম্প, অকাল মৃত্যু ইত্যাদি ঘটনা আমরা শুনতে পাই এবং এগুলি আমাদের উদ্বিগ্ন এবং ভীত করে। তাই পরস্পরের সাহায্যের মাধ্যমে এমন একটি সিস্টেম গঠন করা যায় যা সম্প্রদায়ের বিপদ্গ্রসস্থ মানুষটিকে সাহায্য করতে পারে।
প্রাচীনকালে বিভিন্ন আকারে বীমা প্রচলিত ছিল যেমন – সুরাট, বারূক, ব্যবিলনীয় ব্যবসায়ীদের সমুদ্রে পন্য নিয়ে যাতায়াতকালে যদি ক্ষতি হত তার জন্য এক ক্ষতিপূরনের ব্যবস্থা ছিল। চীনা, রোডস ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনুরূপ ব্যবস্থা ছিল। গ্রীক ও ইংল্যান্ডে এরকম সমিতি ছিল যারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের যত্ন নিত।
আধুনিক বাণিজ্য বীমার যে চর্চা হয় তার উৎস লন্ডনে লয়েডের কফি হাউস। 1706 সালে প্রতিষ্ঠিত লন্ডনের বন্ধুত্বপূর্ণ সমিতিকে প্রথম জীবন বীমা কোম্পানি বলে মনে করা হয়।
ওরিয়েন্টাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোং লিমিটেড হল ভারতে স্থাপিত প্রথম ইংরেজী জীবন বীমা কোম্পানি।
ট্রিটল ইন্সুরেন্স কোং লিমিটেড হল ভারতে স্থাপিত প্রথম অ-জীবন বীমা কোম্পানি।
বোম্বে মিউচুয়াল অ্যাসুউরেন্স সোসাইটি লিমিটেড হল 1870 সালে মুম্বাইয়ে গঠিত প্রথম ভারতীয় জীবন বীমা কোম্পানি।
ন্যাশানাল ইন্সুরেন্স কোং লিমিটেড হল 1906 সালে স্থাপিত ভারতের প্রাচীনতম বীমা কোম্পানি এবং এটা এখনও ব্যবসায়িক।
1956 সালে জীবন বীমা ব্যবসা জাতীয়করণ হয় এবং জীবন বীমা কর্পোরেশন (LIC of India) স্থাপিত হয়।
1972 সালে সাধারন বীমা ব্যবসা জাতীয়করণ আইন (GIBNA) বিধিবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে অ-জীবন বীমা রাষ্ট্রয়াত্ত হয়েছিল এবং ভারতের সাধারন বীমা কর্পোরেশন (GIC) স্থাপন করা হয়েছিল।
B ) কীভাবে বীমা কাজ করে:
বীমাকে একটি প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যার দ্বারা কয়েকজনের লোকসান, যারা দুর্ভাগ্যজনক ক্ষতি ভোগ করে বা অনুরূপ অবস্থায় যারা পড়ে তদের মধ্যে ঐ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবদানের দ্বারা সঞ্চিত অংশ ভাগ করা।
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন থাকে যে – তহবিলে নিয়মিত অর্থ জমা করাতে মানুষ সম্মত হবে কি? বা অর্থ সঠিক কাজে লাগছে কি? কিংবা দেয় অর্থ কি খুব সামান্য না খুব বেশী? ইতাদি ইত্যাদি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বীমা প্রদানকারীকে অবশ্যই বাক্তি ও সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে হবে।
a. এটি এমন সম্পদ হবে যার অর্থনৈতিক মূল্য আছে যেমন – বাড়ী, গাড়ী, শরীরের অঙ্গ ইত্যাদি।
b . নির্দিষ্ট ঘটনা ঘটলে সম্পদ তার মান হারাতে পারে। ক্ষতির এই সম্ভাবনাটিকে ঝুঁকি বলা হয়। ঝুঁকি ঘটনার কারণটি বিপদ হিসাবে পরিচিত। পুলিং নামে একটি পরিচিত নীতি রয়েছে যা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অসংখ্য ব্যক্তিগত অবদান নিয়ে গঠিত। তহবিলের পুলটি বিপদজনিত কারণে লোকসান কাটাতে পারে এমন কয়েকজনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
1. বীমার বোঝা হ্রাস করা: ঝুঁকি বোঝা যা একজন বহন করে তা দুই প্রকারের – a) প্রাথমিক বোঝা b) গৌণ বোঝা
a. প্রাথমিক বোঝা: এই লোকসান ভোগ করে বাড়ির লোকেরা বা ব্যাবসা ইউনিট। এটি প্রায়ই প্রত্যক্ষ ও পরিমাপযোগ্য এবং সহজেই বীমা দ্বারা ক্ষতিপূরণ করা যায়। যেমন চিকিৎসার খরচ, আগুনে পন্যের ক্ষতি ইত্যাদি।
b. গৌণ বোঝা: এটি হল অনিশ্চিত, এর জন্য আগে থেকেই সঞ্চয় সরিয়ে রাখা বীমা প্রদানকারীর কাছে। যেমন মানিসিক বা শারীরিক কোনো যন্ত্রনা মতো কিছু বা এমন কিছু যা ব্যাক্তির ভালো থাকাকে বিঘ্নিত করতে পারে।

Insurance Introduction|বীমা পরিচিতি
Also Read: Insurance Customer service
C . ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল:
বীমা সব ঝুঁকি পরিস্থিতিতে সমাধান দিতে পারে না।এক্ষেত্রে ব্যাক্তি বীমা কোম্পানীকে ঝুঁকি হস্তান্তর করতে পারে। এর কতগুলি কৌশল আছে।
ঝুঁকি পরিহার: একটি ক্ষতি পরিস্থিতি এড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ হল ঝুঁকি পরিহার। যেমন – নিজে উৎপাদন চুক্তিতে অস্বীকার করা অন্যকে ঐ উৎপাদন চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ করার মাধ্যমে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বাইরে না বেরানো বা ভ্রমণ না করা।ঝুঁকি পরিহার ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি নাতিবাচক উপায়।
ঝুঁকি ধারন: এক্ষেত্রে একজন ঝুঁকি ও তার প্রভাব সংক্রান্ত পরিচালনার জন্য নিজে চেষ্টা করেন, এটি হল আত্মবীমা। যেমন – কোনো ছোটো সংগঠন এমন দ্বায়িত্ব নেয় যে সে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ক্ষতি বহন করবে।
ঝুঁকি হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ: এক বা একাধিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ঝুঁকি ও তার প্রভাব কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যেমন – পরিবেশ সচেতনতার দ্বারা বিভিন্ন রোগের প্রার্দূভাবের সম্ভাবনা কমানো, প্রশিক্ষণ দ্বারা হেলমেট, সীটবেল্ট ব্যবহারের মাধ্যমে অ্যাক্সিডেন্ট কমানো, অসুস্থ হওয়ার কারন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ইওত্যাদি।
ঝুঁকি অর্থায়ন: এটি হল লোকসান পূরণ করার জন্য তহবিল সংস্থান। এটি উপরে বর্ণিত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশলগুলির কোনো একটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
Insurance Introduction
D. ঝুঁকি পরিচালনার জন্য একটি হাতিয়ার হিসাবে বীমা:
বীমাতে যোগদানের আগে কতগুলি আলোচ্য বিষয় আছে। যেমন –
সামান্যের জন্য অনেক ঝুঁকি না নেওয়া, অর্থাৎ ঝুঁকি যেন যুক্তিসঙ্গত হয়। যেমন একটি সাধারণ বল পেনের কি বীমা করা যায়?
আপনার যা ক্ষতির সামর্থ্য তার বেশী ঝুঁকি না নেওয়া।যেমন – একটি বড় তৈল শোধনাগার যদি ধংস হয় তার ক্ষতি কি বহন করা সম্ভব?
সাবধানে ঝুঁকির সম্ভাব্য ফলাফল বিবেচনা করা।সেসব সম্পদের বীমা করালে ভালো হয় যার ক্ষতির সম্ভাবনা কম। যেমন – কেউ কি মহাকাশ স্টেশন বীমা করাতে সমর্থ?
Insurance Introduction
E. সমাজে বীমার ভূমিকা:
1. সংগৃহীকৃত বিনিয়োগ বৃহৎভাবে সমাজে উপকার করে।
2. বীমা পদ্ধতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বিভিন্ন সংগঠন, ব্যাক্তি তথা একটি জাতিকে একটি বিশেষ সুরক্ষা দান করে।
3. বীমা ব্যাক্তির ভবিষ্যতে থাকা বিভিন্ন ভয়, সংশয় থেকে মুক্তি দেয়, ব্যাবসায় বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়, সম্পদের ব্যবহারকে আরও দক্ষ করে তোলে।
4. বীমার বিভিন্ন কার্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, রপ্তানি ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জন বৃদ্ধি করে।
5. বিভিন্ন রকম যোজনা যেমন – রাষ্ট্রীয় কৃষি বীমা যোজনা, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা, প্রধান মন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনা, প্রধান মন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা-এগুলি সম্প্রদায়ের উপকার করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রামীণ বীমা গ্রামীণ পরিবার গুলিকে সুরক্ষা প্রদান করে।
You must be logged in to post a comment.