আন্তর্জাতিক সম্পর্ক|International relations

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক|International relations|HS Polscience Questions And Answers| উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান

Q. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের উদ্যোগ এবং অবদান লেখো।

বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি কংগ্রেসের সামনে প্রদত্ত ভাষণে সমস্ত ধরনের গােপন কূটনীতির অবসান, বিভিন্ন রাষ্ট্রের অস্ত্রের প্রতিযােগিতা হ্রাস, উপনিবেশ সমূহের স্বাধীনতা প্রদান ও একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তােলার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন। উইলসন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হওয়ার জন্য তিনটি কারণকে প্রধানত দায়ী করেন, সেগুলি হল一

[1] গোপন কূটনীতি: গােপন কূটনীতি বলতে প্রাক-বিশ্বযুদ্ধকালীন কূটনীতিকে বােঝায়। এর ফলে বিভিন্ন জাতি-রাষ্ট্রের মধ্যে সৃষ্টি হয় তিক্ততা, যার মধ্যে নিহিত থাকে ভবিষ্যতে যুদ্ধের বীজ।

[2] বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর প্রতি অবিচার: এই প্রবণতা দ্বারা বিশ্বের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের পৃথিবীর অনুন্নত অনগ্রসর অঞ্চলের মানুষকে পদানত করে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত দ্বারা জাতীয়তাবাদের অবমাননা করা হয়।

[3] স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র: তা ছাড়া প্রাক-প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত ছিল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, ফলে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার অধিকার ব্যাহত হয়।

উড্রো উইলসন এই অবস্থা নিরসনে এবং সুস্থ আন্তর্জাতিক বিশ্ব গঠনের স্বপ্ন নিয়ে তিনটি বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন করেন।
প্রথমত, গোপন কূটনীতির পরিবর্তে মুক্ত ও পারস্পরিক আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা ও বিবাদের মীমাংসা করা।
দ্বিতীয়ত, জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এই আদর্শ নিয়ে প্রত্যেক জাতিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দিতে হবে। এক জাতি-এক রাষ্ট্র- এই নীতি অনুসরণ, স্বাধীনতা ও সমতার ভিত্তিতে সমস্ত পদানত জাতিকে মুক্ত করে তাদের পৃথক রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়ে জাতীয়তাবাদের জয় ঘােষণা করতে হবে।
তৃতীয়ত, প্রত্যেক দেশের রাজনীতিতে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। উপরােক্ত তিনটি উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য উইলসন তার বিখ্যাত চোদ্দো দফা শর্ত বা নীতি ঘােষণা করেন।
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসন মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের সম্মুখে তার চোদ্দো দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাবে সর্বপ্রকার গােপন কূটনীতির অবসান, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, উপনিবেশ গুলি স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়। উইলসন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশ ও বিস্তারের ব্যাপারে বিশেষভাবে আশাবাদী ছিলেন। তার চোদ্দো দফা প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে মনে করা হয়।

Q. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে আদর্শবাদের অবদান লেখো।

Ans: মতবাদের উদ্ভব : রাষ্ট্রচিন্তাবিদ উড্রো উইলসনের চিন্তাভাবনাকে কেন্দ্র করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আদর্শবাদের উদ্ভব ঘটে। আদর্শবাদ মূলত ১৯১৯-১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের সময়ের মধ্যে বিস্তার লাভ করে।

প্রবক্তা : আদর্শবাদের প্রবক্তা দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—নর্মান অ্যাঞ্জেল, নিকোলাস ম্যুরে বাটলার, জেমস টি শার্ট ওয়েল, নােয়েল বার্কার ফিলিপ এবং আলফ্রেড জিমার্ন, উইলসন প্রমুখ।

মূল বক্তব্য : আদর্শবাদী তাত্ত্বিক ধারার মূল বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলােচনায় কতকগুলি আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি গড়ে তােলার উপর বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয় এবং একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তােলার চেষ্টা করা হয়। আদর্শবাদীরা মনে করেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির সকল স্তরের নৈতিক সমস্যা হল একটি মৌলিক সমস্যা। এই নৈতিক সমস্যাকে বাদ দিয়ে আদর্শ আন্তর্জাতিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে আদর্শবাদ মনে করে। তারা আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের মতাে প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলােচ্য বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। আদর্শবাদের লক্ষ্য হল এক উন্নততর বিশ্বসমাজ গঠন। শিক্ষা, সচেতনতা ও আন্তর্জাতিক সংগঠন সমূহের সক্রিয় সদর্থক ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে এই বিশ্বসমাজ গঠিত হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষমতার রাজনীতিকে পরিহার করার কথা বলে।

International relations

Q. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে বাস্তববাদের অবদান লেখো।

Ans: উদ্ভব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রি.) পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষণমূলক বাস্তববাদী তত্ত্বের (Realist Theory) উদ্ভব হয়।

মুখ্য প্রবক্তা : হ্যান্স জে মরগেনথাউ হলেন বাস্তববাদের মুখ্য প্রবক্তা।

মতবাদের সমর্থক : রেম আঁরাে এবং কেনেথ টমসন হলেন এই মতবাদের উল্লেখযােগ্য সমর্থক।

মূল বক্তব্য : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তববাদী তত্ত্ব মনে করে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল কথা হল ক্ষমতা। অধ্যাপক হ্যান্স জে মরগেনথাউ তাঁর রচিত ‘Politics Among Nations’ গ্রন্থে এই মতবাদের বিষয়বস্তু এবং লক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। অধ্যাপক হ্যান্স জে মরগেনথাউ-এর ভাষায়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল ক্ষমতার লড়াইয়ের রাজনীতি (“International politics, like all politics is a struggle for power”)। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কুশীলবরা ধর্মীয় বা অর্থনৈতিক স্বার্থপূরণের জন্য কাজ করতে পারে কিন্তু ক্ষমতা ছাড়া এই উদ্দেশ্যপূরণ সম্ভব নয়। হ্যান্স জে মরগ্যানথাউ বলেছেন, রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি কাজ রাজনৈতিক নয়, তবে রাষ্ট্র উদ্দেশ্য হল রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি। এই উদ্দেশ্যপূরণের জন্য তিনি বাস্তববাদী তত্ত্বে ৬টি মূলনীতির কথা বলেছেন। যাইহােক, মর্গেন্থাও এর বাস্তববাদী তত্ত্বের আলােচনার মাধ্যমে একটি অভিজ্ঞতাবাদী তাত্ত্বিক কাঠামাে গড়ে তুলতে চেয়েছেন।

মরগেনথাউ-এর মতে, অন্যান্য রাজনীতির মত আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই। তিনি ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা বিরােধকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়বস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার মতে, ক্ষমতা, সাম্রাজ্যবাদ, কূটনীতি, রাজনৈতিক মতাদর্শ, শক্তিসাম্য, বিশ্ব জনমত, আন্তর্জাতিক আইন, রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা, আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রভৃতি হল আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলােচ্য বিষয়।

Q. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে বহুত্ববাদের অবদান লেখো।


উদ্ভব : ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের পরে বাস্তববাদের রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এই তাত্ত্বিক আন্দোলনের সূচনা হয়। বাস্তববাদী তত্ত্ব এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক তত্ত্বের বিরােধিতা করে যে গােষ্ঠী, তাদেরকে বলা হয় বহুত্ববাদী গােষ্ঠী এবং তাদের মতবাদকে বলা হয় বহুত্ববাদ।

প্রবক্তা : আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষণমূলক তত্ত্বের বহুত্ববাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন অধ্যাপক জোসেফ নাই, রবার্ট কিয়ােহেন, ডেভিড মিত্রানি প্রমুখ।

মূল বক্তব্য : বহুত্ববাদের সমর্থক ও প্রচারক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির একমাত্র কারক (Actor) রাষ্ট্র নয়। আন্তর্জাতিক সমাজে বহু অরাষ্ট্রীয় কারক (Non-State Actor) আছে যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলির কার্যকলাপ, সম্পর্ক প্রভৃতি নিয়ে আলােচনা করে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা যেমন সত্য তেমনই অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংঘের ভূমিকা কোনাে অংশে কম নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুত্ববাদ তখনই সার্থকতায় পর্যবসিত হবে, যখন আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতিটি সদস্য হবে স্বাধীন এবং এইসকল সদস্য নিজের চিন্তা, প্রয়ােজন, স্বার্থ ইত্যাদি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

আরও দেখুন : বিশ্বায়ন (Globalization ) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

International relations

Q. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে আচরণবাদের অবদান লেখো।


উদ্ভব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে, বিশেষ করে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড ইস্টনের The Political System’ নামক গ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান সম্মতভাবে রাজনৈতিক আচরণ আলােচনার সাহায্যে নতুনভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের দাবি জানানাে হয়। এই মতবাদকে বলা হয় আচরণবাদ।

প্রবক্তা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডেভিড ইস্টন, মর্টন ক্যাপলান, জন বার্টন, কার্ল ডয়েস, গ্রাহাম ওয়ালাস, আর্থার বেন্টলে প্রমুখ হলেন আচরণবাদের মুখ্য প্রবক্তা।

মূল বক্তব্য : আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ভবিষ্যদ্বাণী করা এই দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম উদ্দেশ্য। আচরণবাদীরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতি-রাষ্ট্রের আচরণ বিশ্লেষণই হল আচরণবাদী আলােচনার মূল একক। আচরণবাদ তত্ত্ব কেন্দ্রিক। আচরণবাদ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ঘটনার বিচারবিশ্লেষণের পক্ষপাতী, আচরণবাদীরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলােচনায় সনাতন বাস্তববাদী মতবাদকে উপেক্ষা করেছেন। তারা অর্থনীতি, মনস্তত্ত্ব, সমাজবিদ্যা, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি শাস্ত্রে অনুসৃত পদ্ধতি ও গবেষণার ফলাফলের নিরিখে মূল্যবােধবর্জিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করার পক্ষপাতী। আচরণবাদীরা মনে করেন, জাতীয় রাজনীতির মতাে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূলেও আছে ক্ষমতা। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আলােচনায় সমরবিদ্যা-সহ সেইসব নীতির আলােচনার কথা বলা হয়, যে নীতিগুলি অন্য রাষ্ট্রের নীতিকে প্রভাবিত করে। কাজেই বলা যায় যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আচরণগত সংবেদনশীলতা পরিবর্তনের দাবি, সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে আলােচনা করে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক|International relations|HS Polscience Questions And Answers| উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান

Q. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে কাঠামােবাদ এর পরিচয় দাও ।


কাঠামােবাদ: নয়া বাস্তববাদের উপজাত হিসেবে বাস্তববাদের একটি ভিন্ন ধারার উদ্ভব হয়েছে, তাকে বলা হয় কাঠামোবাদ।

প্রবক্তা : কাঠামােগত মতবাদের প্রবক্তাদের মধ্যে মুখ্য প্রবক্তা হলেন গুন্ডার ফ্রাঙ্ক, রাউল প্রেবিশ, ইমানুয়েল ওয়ালাস্টাইন, টি স্কোশপল প্রমুখ। মতবাদের মূল বক্তব্য: মার্কসবাদের দ্বারা প্রভাবিত কাঠামােগত মতবাদের প্রবক্তা বাস্তববাদীদের মতাে বিশ্ব রাজনীতিতে রাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ কারক (Actor) বা কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ককে কাঠামােগত মতবাদীরা শােষিত ও শােষক শ্রেণির রাষ্ট্রের মানদণ্ডে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন অর্থাৎ প্রভুত্বকারী শ্রেণিভিত্তিক রাষ্ট্র হল আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব রাজনীতির মূল কর্মকর্তা। কাঠামােবাদীরা মনে করেন, আধুনিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গুটিকয়েক শক্তিশালী ও প্রভাবশালী পুঁজিবাদী রাষ্ট্র এবং তার চারপাশে বিশ্বের অধিকাংশ অনুন্নত, উন্নয়নশীল ও পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রসমূহ।

মার্কসবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা বাস্তববাদীদের মতাে রাষ্ট্রকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এঁদের মতে, তথাকথিত জাতীয় স্বার্থের নামে একটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মূলত রাষ্ট্রের প্রভুত্বকারী শ্রেণির স্বার্থরক্ষার উপযােগী নীতি অনুসরণ করে।

Q. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে নয়া উদারনীতিবাদ এর পরিচয় দাও ।


নয়া উদারনীতিবাদ: বিগত শতকের আটের দশকে বিশ্বের দুটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে ক্ষমতার লড়াই বা ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটলেও মতাদর্শগত, অর্থনৈতিক প্রতিযােগিতা কমবেশি চলতেই থাকে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আঞ্চলিক জোট গঠিত হয়। এর ফলে উইলসনীয় আদর্শবাদী তত্ত্ব তার গুরুত্ব হারায়- এই অবস্থায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে একদল সংস্কারপন্থী উদারনীতিবাদ নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে এগিয়ে আসেন, তাদের চিন্তা ভাবনার ফল বা চিন্তা দর্শন কে বলা হয় নয়া উদারনীতিবাদ।

মূল প্রবক্তা: নয়া উদারনীতিবাদের প্রবক্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জেমস রােজেনাউ, জোসেফ নাই, পিটার হাঁস এবং রবার্ট কেওহান প্রমুখ।

মূল বক্তব্য: বিগত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় ক্ষমতার লড়াইয়ের অবসান ঘটলেও অর্থনৈতিক ও মতাদর্শগত ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে থাকে। তা সত্ত্বেও, ওই সময় প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আঞ্চলিক সংহতি গড়ে ওঠে। নয়া উদারনীতিবাদ সাবেকি উদারনীতিবাদী চিন্তার দর্শন অনুসরণ করেই পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করে এবং ন্যায়বিচার ও মানবকল্যাণের পথকে প্রশস্ত করে। এই তত্ত্বের প্রবক্তা সনাতনী উদারনীতিবাদের মূল নির্যাসগুলিকে যুগােপযােগী করে গড়ে তােলেন, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল মানবকল্যাণ।

Q. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে নয়া বাস্তববাদের অবদান লেখো।


নয়া বাস্তববাদ: বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশধারার নবতম সংযােজন বা রূপকে বলা হয় নয়া বাস্তববাদ। বিশ্বে বহুজাতিক সংস্থার প্রভাব বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের ক্ষমতার সংকোচন-এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে কেনেথ ওয়াল্টজ-এর ‘Realist thought and Neo-Realist Theory’ নামক বিখ্যাত প্রবন্ধে নয়া বাস্তববাদী তত্ত্বের উদ্ভব বা আবির্ভাব ঘটে।

মূল প্রবক্তা: নয়া বাস্তববাদের প্রবক্তা হলেন, কেনেথ ওয়াল্টজ।

নয়া বাস্তববাদ মূল বক্তব্য: নয়া বাস্তববাদীগণ ধ্রুপদি বাস্তববাদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক তাত্ত্বিক কাঠামাে নির্মাণে সচেষ্ট হন। ইতিমধ্যে বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন ঘটার ফলে ক্ষমতার প্রতিযোগিতার পরিবর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উপর রাষ্ট্রগুলি অনেক বেশি গুরুত্ব আরােপ করে। অরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতিকে যথেষ্ট পরিমাণে প্রভাবিত করতে সমর্থ হওয়ায় রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতা হ্রাস পায়। এমতাবস্থায় কেনেথ ওয়াজ পুরােনাে বাস্তববাদের পরিবর্তন ও পরিমার্জন ঘটিয়ে নয়া বাস্তববাদের আবির্ভাব ঘটান। একইসঙ্গে তিনি চেয়েছিলেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র গুলোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত হােক। এই তত্ত্বের প্রবক্তা মনে করতেন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রের যুদ্ধ করার মানসিকতা হ্রাস পাবে ও রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযােগিতার বাতাবরণ গড়ে উঠবে।