মিড-ডে মিলেও নিত্যপ্রয়ােজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কোপ

মিড-ডে মিলেও নিত্যপ্রয়ােজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কোপ। মাথাপিছু পড়ুয়ার সরকারি বরাদ্দ থেকে অনেক বেশি ঘাটতি হচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ফলে মিড-ডে মিলে কাটছাট করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কোনও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খরচ পােষাতে সপ্তাহে একদিন মিড-ডে মিল বন্ধ রাখছে, তাে কোনও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৈনিক বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে। আবার কোনও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করে পড়ুয়াদের পাশে দাড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যেই শিক্ষক সংগঠনগুলির তরফ থেকে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়ে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ানাের দাবি জানানাে হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিশুই বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা মেনেই বিদ্যালয়গুলিকে মিড-ডে মিল চালু রাখতে বলা হয়েছে।

বাজার দরের সঙ্গে ম্যানেজ করে মিডডে মিল সমস্ত বিদ্যালয়েই তাে চলছে। মিড-ডে মিল বন্ধের কোনও খবর নেই। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াপিছু বরাদ্দ‌ ৪.৯৭ টাকা। এর মধ্যে রাজ্য সরকার দেয় ৪০ শতাংশ। অর্থাং ১.৯৯ টাকা। আর বাকি ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ২.৯৮ টাকা দেয় কেন্দ্র সরকার। মিড-ডে মিলের চাল সরকারিভাবে বিদ্যালয় গুলিতে সরবরাহ করা হয়।

সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী,‌প্রাথমিকে পড়ুয়াপিছু বরাদ্দ একশাে গ্রাম চালের ভাত, ৫০ গ্রাম শাকসবজির তরকারি, তেল ও স্নেহজাতীয় পদার্থ পাঁচ গ্রাম, তৈজসপত্র প্রয়ােজন অনুযায়ী। মাসে চার সপ্তাহে নূনতম চারদিন ডিম ও চারদিন সয়াবিন দেওয়ার কথা। এই নির্দেশিার পাশাপাশি দৈনিক মিড-ডে মিলের হিসাব অর্থাৎ দৈনিক বিদ্যালয়ে‌ কতজন পড়ুয়া উপস্থিত ছিল, কতজন মিড-ডে মিল খেয়েছে, কতজন খায়নি,কেন খায়নি প্রভৃতি তথ্য নির্দিষ্ট পাের্টালে আপলােড করতে হবে। ফলে কোনও‌ ফাঁকি দেওয়ার সুয্যেগ নেই শিক্ষকদের।

শিক্ষকদের অভিযােগ, রান্নার গ্যাস-সহ নিত্য প্রয়ােজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম লাগামহীন। বাজারে যেখানে সকলের‌ নাভিস্বাস উঠছে, সেখানে ছাত্রছাত্রীদের মাথাপিছু বরাদ্দ এত কম কেন? দৈনিক মিড-ডে মিল চালাতে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিজেদের পকেট থেকে টাকা খরচ করতে হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা। দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের খুকুড়দহ চক্রের সীতাপুর বাের্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়য়ার সংখ্যা ১২০। সেখানে কীভাবে চলছে মিড-ডে মিল? প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক তপন জানা বলেন, “মাথাপিছু পড়ুয়ার জন্য বরাদ্দ মাত্র ৪.৯৭ টাকা। আমার বিদ্যালয়ে দৈনিক গড় অনুপস্থিতি ১০ থেকে ১২ জন। তারপরও দৈনিক‌ঘাটতি দুই থেকে আড়াইশাে টাকা। বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক- শিক্ষিকা। আমরা মাসের শেষে ওই টাকাটা পকেট থেকে দিয়ে দিই। কোনও কোনও মাসে ডিমের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়। ডিম ও সয়াবিন চারদিনের বদলে দুদিন দেওয়া হয়। এভাবে তাে দিনের পর দিন চলতে পারে না। আমি লিখিতভাবে এসআইকে জানিয়েছি। কোনও উত্তর নেই। এক দুদিন বন্ধও তাে করতে পারছি না। খুব সমস্যায় পড়েছি।”

পশ্চিমবঙ্গ তৃণমুল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সদস্য তথা ঘাটালের ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সােমেশ চক্রবর্তী বলেন, “মিড ডে মিল নিয়ে যে কী সমস্যায় পড়েছি তা বলে বােঝাতে পারব না।”
এবিপিটিএর জেলা সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডল বলেন, “আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে মিড-ডে মিল মাথাপিছু ১২ টাকা বরাদ্দের দাবি করেছি। তা না হলে মিড-ডে মিল চালু রাখা কঠিন হয়ে দাড়াবে।” পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি সুকান্ত মণ্ডল জানান, কোভিড পরিস্থিতির সময় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে পড়ুয়া পিছু বরাদ্দ ছিল ৪ টাকা ১৩ পয়সা। দু’বছর পরে মাত্র ৮৪ পয়সা বাড়িয়ে কী করে মিড ডে মিলে ডিম দিতে বলেন, বোধগম্য নয়।সবমিলিয়ে মিড-ডে মিল এখন বহু স্কুল কর্তৃপক্ষের মাথা ব্যথা হয়ে দাড়িয়েছে মূল্যবৃদ্ধির জেরে।

[wp_top_news]