
ভারত সরকার ১৯৯৫ সালে প্রথম শিক্ষায় জাতীয় পুষ্টি সহায়তা প্রকল্প অর্থাৎ মিড–ডে মিল প্রকল্পটি চালু করেন। ভারত সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এর উদ্দেশ্য হল বিদ্যালয়ে ভর্তিকরণ, শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখা এবং তাদের উপস্থিতি বাড়িয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করে তোলা এবং একই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো।
রান্না করা খাবার দেওয়ার পরিবর্তে বেশির ভাগ রাজ্যই মাসে প্রত্যেক শিশুকে ৩ কিলোগ্রাম করে চাল বা গম দিত। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০০৩ সালে মিড–ডে মিল চালু করেন। প্রতীচী ট্রাস্ট এই প্রকল্প রূপায়ণের পক্ষে প্রথম থেকেই বলে আসছে।

মিড–ডে মিল প্রকল্প|PM POSHAN
দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষিত করার জন্য মিড্-ডে মিল প্রকল্পের সূচনা হয় ১৯৯৫ সালে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফ নিউট্রিশনাল সাপোর্ট টু প্রাইমারি এডুকেশন এটি সূচনা করে। সর্বশিক্ষা অভিযানের অন্তর্গত এই প্রকল্পে শিশুদের বিদ্যালয়ে মাথাপিছু ১০০ গ্রাম করে চাল দেওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২০০২ সালে প্রকল্প অনুসারে রান্না করা খাদ্য ও সরবরাহ করা শুরু হয় এবং প্রাইমারি ছাড়াও অন্যান্য বিদ্যালয় এর আওতায় আসে। ২০০৪ সালে বলা হয় এই খাদ্যের ক্যালোরির পরিমাণ ৩০০ এবং প্রোটিন ১২ গ্রাম ধার্য হয়। ২০০৬ সালে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৫০ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মিড–ডে মিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য
মিড-ডে মিল পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি হল:
1. সরকারি, স্থানীয় ও সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুল, এবং ইজিএস এবং এআইই কেন্দ্রগুলিতে প্রথম-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মধ্যে পুষ্টির পরিমান বৃদ্ধি করা।
2. সমাজের অনগ্রসর অংশের দরিদ্র শিশুদের নিয়মিত স্কুলে আসতে উৎসাহিত করা, শ্রেণীকক্ষের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ এবং মনোনিবেশ করতে সহায়তা করা।
3. খরা-প্রভাবিত এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের পুষ্টির ব্যবস্থা করা।
মিড–ডে মিল প্রকল্পের গুরুত্ব
এই প্রকল্প শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই বাস্তবসম্মত ব্যবস্থায় ছোট ছোট অস্বচ্ছল পরিবারের স্কুলপড়ুয়ারা নানা ভাবে উপকৃত হচ্ছে।পুষ্টিকর খাদ্য তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করছে, রান্না করা সুখাদ্যের আকর্ষনে তারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসছে ও খাদ্য গ্রহণের পরিচ্ছন্ন নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে এই মিড ডে মিল প্রকল্প । খাদ্য তাদের ক্ষুধা নিবারণ করছে তারা পাঠে মনঃসংযোগ করতে পারছে । এছাড়া অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে একসঙ্গে খাদ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের সামাজিক শিক্ষা সম্ভব হচ্ছে । শৈশব থেকে ভিন্ন ধর্ম বা জাতের সহপাঠীর সঙ্গে একত্রে পড়া, খেলা ও খাওয়ার ফলে তাদের মধ্যে গড়ে উঠছে এক সুস্থ মানসিকতা। যেখানে সামাজিক ভেদাভেদ তুচ্ছ হয়ে যায় ও সকলের প্রতি সমান ভালোবাসা জন্মায়।
মিড ডে মিল প্রকল্প অনেকাংশেই সফল হয়েছে কারণ মা-বাবারও চাইছেন তাদের শিশুরা যেন বিনামূল্যে পুষ্টিকর খাদ্যের সুবিধা পায় । তাই তারা ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন ।
সম্প্রতি মিড-ডে-মিল নিয়ে নানা দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছে এবং এই খাদ্যের মধ্যে মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে । এই প্রকল্পে যদি নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করা হয়, তাহলে গোটা প্রকল্প অর্থহীন হয়ে পড়বে। বিদ্যালয়ে বিনামূল্যের খাদ্য খেয়ে যদি শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে সর্বশিক্ষা অভিযান ব্যর্থ হবে ও স্কুল ছুটের সংখ্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না।
[wp_top_news]
You must be logged in to post a comment.