একাদশ শ্রেণীর ইতিহাস – চতুর্থ অধ্যায়| অর্থনাতির বিভিন্ন দিক- প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাস ব্যবস্থা
প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাসরা কোন্ কোন্ কাজে নিযুক্ত হত?
প্রাচীন মিশরে নাগরিকদের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করতে ক্রীতদাসদের বিভিন্ন পরিশ্রমসাধ্য এবং সাধারণ কাজকর্মে নিযুক্ত করা হত।
[1] গৃহভৃত্যের কাজ: মিশরের অধিকাংশ ক্রীতদাস গৃহভৃত্য হিসেবে গৃহের রান্নাবান্না, গৃহ পরিষ্কার, উদ্যান পরিচর্যা ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করে তাদের প্রভুর পারিবারিক জীবনে অধিক বিলাসিতা নিয়ে আসত।
[2] শ্রমিকের কাজ: মিশরের অনেক ক্রীতদাসকে বিভিন্ন খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হত। বহু ক্রীতদাসকে নুবিয়া ও সিনাই-এর বিপদসংকুল সােনার ও তামার খনির কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
[3] অভিজাতদের সম্পত্তি তদারকির কাজ: ক্রীতদাস ফ্যারাও, অভিজাত ও পুরােহিতদের স্থাবর সম্পত্তিতে মজুরের কাজে নিযুক্ত হত ও তার তদারকি করত।
[4] সেনাবাহিনীতে কাজ: সৈনিক হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকার কারণে কোনাে কোনাে যুদ্ধবন্দি ক্রীতদাসকে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করা হত।
[5] করণিকের কাজ: কোনাে কোনাে ক্রীতদাস তার প্রভুর ব্যাবসা বা অন্যান্য কাজে হিসাবরক্ষক বা করণিক হিসেবে কাজ করত।
[6] বিনোদন শিল্পীর কাজ: ক্রীতদাসদের মধ্যে অনেকে নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী প্রভৃতি হিসেবেও কাজ করত।
[7] বিশেষ সুবিধাজনক কাজ: তবে ক্রীতদাসদের বিভিন্ন কাজের মধ্যে বিশেষ সুবিধাজনক ছিল অভিজাত ও ধনী পরিবারের কাজে নিযুক্ত থাকা। অভিজাতদের পারিবারিক কাজে নিযুক্ত ক্রীতদাসদের সন্তানরা বিশেষ মেধা ও যােগ্যতার পরিচয় দিয়ে প্রভুর প্রিয় পাত্র হয়ে উঠতে পারত। সেক্ষেত্রে তার পক্ষে উচ্চ সরকারি পদলাভ, দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভের পর পূর্বতন প্রভুর পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কস্থাপন প্রভৃতিও সম্ভব হত।
প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতিতে ক্রীতদাস প্রথার প্রভাব উল্লেখ করাে।
মিশরীয় অর্থনীতির কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে ক্রীতদাসদের ভূমিকা যথেষ্ট ছিল।
[1] শ্রমিকের ভূমিকায়: বিভিন্ন খনি থেকে ক্রীতদাসদের দ্বারা উৎপাদিত মূল্যবান ধাতু দেশের আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করে। ক্রীতদাসদের অমানুষিক পরিশ্রম ছাড়া প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশে এই খনিজ উৎপাদন কখনােই সম্ভব হত না।
[2] প্রযুক্তির উন্নতিতে: খনি থেকে প্রাপ্ত ধাতু দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালির সামগ্রী তৈরি হত। প্রযুক্তির এই উন্নতির ফলে শিল্পদ্রব্যের উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল।
[3] কৃষিকাজে: ক্রীতদাসরা মিশরের উর্বর জমিতে প্রচুর ফসল ফলাত এবং নদী থেকে মাছ ধরত। উদ্বৃত্ত অংশ বৈদেশিক বাজারে রপ্তানি করে যথেষ্ট মুনাফা আসত।
[4] মজুরের কাজে: নীলনদের নুড়ি-পাথর পরিষ্কার করে নদীকে নৌ-চলাচলের উপযােগী করে তুলেছিল ক্রীতদাসরা ফলে সেই সময় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে সুবিধা হয়।
[5] কুটিরশিল্পে: ক্রীতদাসদের মধ্যে পুরুষরা শপের চাষ করত এবং মহিলারা সুতাে কাটা ও বস্ত্র বোনার কাজে নিযুক্ত থাকত। এ ছাড়া ক্রীতদাসরা অন্যান্য কুটিরশিল্পের উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিল।
উপসংহার: প্রাচীন মিশরের ব্লীতদাসরা তাদের প্রভুর পরিবারের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করে প্রভুর পারিবারিক জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসত। পাশাপাশি ক্রীতদাসদের শ্রমে মিশরে কৃষি উৎপাদনে যেমন গতি এসেছিল তেমনি গতি এসেছিল শিল্পক্ষেত্রেও। ফলে প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতিতে জোয়ার এসেছিল।
প্রাচীন মিশরের কৃষক ও ক্রীতদাসের অবস্থার তুলনা করাে।
প্রাচীন মিশরের কৃষক ও ক্রীতদাসরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানকার উৎপাদনমূলক কাজপুলিতে নিযুক্ত থাকত মূলত কৃষক ও ক্রীতদাসরাই। নীচে প্রাচীন মিশরের কৃষক ও ক্রীতদাসদের অবস্থাগত পার্থক্য উল্লেখ করা হল-
কৃষক
1. প্রাচীন মিশরের মােট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশই ছিল কৃষক।
2. কৃষকরা মিশরীয় সমাজব্যবস্থার তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের সামাজিক অবস্থান ক্রীতদাসদের ওপরে ছিল।
3. কৃষকরা সাধারণত কৃষি উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত থাকত। তবে বছরে ৩ মাস বন্যার সময় কৃষিকাজ বন্ধ থাকত বলে তখন তারা সরকারি অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণের কাজে নিযুক্ত হত।
ক্রীতদাস:
1. প্রাচীন মিশরে কৃষকদের সংখ্যার তুলনায় ক্রীতদাসদের সংখ্যা অনেক কম ছিল।
2. ক্রীতদাসরা মিশরীয় সমাজ ব্যবস্থায় কৃষকদের নীচে বা বলা যায় সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করত।
3. ক্রীতদাসরা মিশরের পরিশ্রমসাধ্য বিভিন্ন নির্মাণের কাজে নিযুক্ত থাকত বলে মনে করা হয়। তবে তারা কৃষিকাজেও নিযুক্ত ছিল।
উপসংহার: প্রাচীন মিশরের সব ব্লীতদাসেরই অবস্থা এক রকম ছিল না। দরিদ্র কৃষকদের সঙ্গে সেখানকার বেশিরভাগ ক্রীতদাসদের ব্যবধান অনেক সময় চোখেই পড়ত না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রাচীন মিশরের পিরামিডগুলি কারা নির্মাণ করেছিল, কৃষকরা না ক্রীতদাসরা সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেননা, মিশরে মধ্যরাজতন্ত্রের (১০৫০-১৬৫০ খ্রি.পূ.) পূর্বে ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ সেদেশে আদি রাজতন্ত্রের (১৬৮৬-২১৮১ খ্রি.পূ.) সময় থেকেই পিরামিড নির্মিত হচ্ছিল। সেজন্য কেউ কেউ মনে করেন যে, মিশরের ক্রীতদাসরা নয়, মিশরের কৃষকরাই সেদেশের পিরামিডগুলি গড়ে তুলেছিল। তাই বিভিন্ন দিক বিচার করে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, গ্রিক ও রােমান ক্রীতদাসদের তুলনায় মিশরের ক্রীতদাসদের অবস্থা অনেক ভালো ছিল।
—————————————————————–
প্রাচীন রোমের ক্রীতদাস প্রথা – অর্থনীতির বিভিন্ন দিক
—————————————————————–
প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাস ব্যবস্থা
প্রাচীন মিশরে কী কী উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত?
প্রাচীন মিশরে বিভিন্ন উপায়ে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত一
[1] যুদ্ধে বন্দি হওয়া: মিশরের ফারাওরা বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শত্রুপক্ষের বহু সৈন্য ও সাধারণ নাগরিককে বন্দি করত। বন্দিদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হত। বন্দিদের স্রী এবং সন্তানরাও ক্রীতদাসে পরিণত হত।
[2] ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা: কখনাে কখনাে ঋণের দায়ে বাধা পড়া ব্যক্তিটিকে ঋণদাতা ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারত।
[3] দারিদ্রের তাড়না: কেউ কেউ অত্যন্ত দারিদ্রের তাড়নায় নিজেদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত। কখনাে কখনাে দরিদ্র পিতামাতা তাদের সন্তানদেরও ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিত।
[4] স্বেচ্ছায় দাসত্ববরণ: কোনাে কোনাে নারী ক্রীতদাসী হিসেবে দেবমন্দিরে নিজেদের উৎসর্গ করত।
[5] অপহরণের মাধ্যমে: কখনাে কখনাে কোনাে পুরুষ বা মহিলাকে এবং মিশর ভ্রমণে আসা বিদেশিদের অপহরণ করে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হত।
[6] জন্মসূত্রে: কোনাে ক্রীতদাসের সন্তানসন্ততি জন্মসূত্রে তাদের প্রভুর ক্রীতদাসে পরিণত হত।
[7] আইন ভঙ্গ দ্বারা: মিশরের রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গকারীকে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি হিসেবে ক্রীতদাসে পরিণত করা হত।
প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা কেমন ছিল?
প্রাচীন মিশরে দাস ব্যাবসা ততটা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। ফ্যারাওদের যুগে মিশরে সম্ভবত কোনাে ক্রীতদাস বাজারের অস্তিত্ব ছিল না। তবে মিশরে নয়া রাজ্যের যুগ থেকে ক্রীতদাস ব্যাবসার গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
[1] ক্রীতদাসের বাজারদর: মিশরে ক্রীতদাসের মূল্য ধনী পরিবারগুলির আয়ত্তের মধ্যেই থাকত। পুরুষ ক্রীতদাসদের চেয়ে মহিলা ক্রীতদাসীদের মূল্য বেশি হত।
[2] আন্তর্জাতিক ক্রীতদাস বাজার: মিশরের ক্রীতদাস ব্যাবসা আন্তর্জাতিক চরিত্র লাভ করেছিল। বিশেষ গুণাগুণবিশিষ্ট ক্রীতদাসদের মিশর থেকে বিদেশেও চালান করা হত। বিদেশের বাজারে মিশরের ক্রীতদাসদের যথেষ্ট চাহিদা ও বাজারদর ছিল।
[3] ক্রীতদাসের চাহিদা: যুদ্ধে শত্রুপক্ষের সৈনিক ও সাধারণ মানুষ—উভয়ই বন্দি হত। তবে মিশরীয়রা শত্রুপক্ষের সাধারণ বন্দিদের চেয়ে সবল বন্দি সৈনিকদেরই বেশি পছন্দ করত। কারণ, তারা অন্য ক্রীতদাসদের তুলনায় বেশি পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে পারত।
[4] ক্রীতদাস ব্যবসায় লাভ: মিশরের ক্রীতদাস কেনাবেচা খুবই লাভজনক হওয়ায় ধনী ব্যবসায়ীরা অনেকেই এই ব্যাবসার দিকে ঝুঁকেছিল।
উপসংহার: মিশরের ক্রীতদাসরা সেদেশের ধনী প্রভুদের যাবতীয় কাজকর্ম করার মাধ্যমে তাদের পারিবারিক জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসত। এর ফলে মিশরে ক্রীতদাসদের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং সেই চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই সেদেশে দাস ব্যাবসার প্রচলন হয়।
প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাস ব্যবস্থা
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় ক্রীতদাসদের জীবন কতটা দুর্বিষহ ছিল?
প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাসের অবস্থা কতটা দুর্বিষহ ছিল তা নিয়ে বিতর্ক লক্ষ করা যায়। কেন-না, কোনাে কোনাে সূত্র থেকে মিশরে ক্রীতদাসদের দুর্বিষহ জীবনের চিত্র পাওয়া গেলেও তাদের কিছুটা স্বাভাবিক জীবনচিত্রের সন্ধানও পাওয়া যায়।
[1] কঠোর পরিশ্রমের জীবন: কোনাে কোনাে সূত্র থেকে মিশরের ক্রীতদাসদের করুণ জীবনচিত্রের সন্ধান পাওয়া যায়| মিশরে তাদের গৃহভৃত্য হিসেবে, বিপদসংকুল খনিগর্ভে, বিশালকায় অট্টালিকার বিভিন্ন কাজে ও অন্যান্য পরিশ্রমসাধ্য নির্মাণকার্যে নিযুক্ত থাকতে হত।
[2] অপেক্ষাকৃত সহনীয় জীবন: বহু উদাহরণ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মিশরে ক্রীতদাস প্রথার তীব্রতা রােম বা গ্রিসের ক্রীতদাসদের তুলনায় কম ছিল। প্রাচীন মিশরে অধিকাংশ ক্রীতদাসই গৃহভৃত্য হিসেবে কাজ করত এবং তার প্রভু ইচ্ছা করলে অর্থ দিয়ে সেই ক্রীতদাসকে পরিবর্তন করতে পারত। মিশরের প্রাচীন শিলালিপির মানবিক চিত্রগুলিতেও ক্রীতদাসদের দুর্বিষহ জীবনের সন্ধান পাওয়া যায় না।
[3] প্রভুর অচিরণ: কখনাে-কখনাে মিশরের ক্রীতদাসদের সঙ্গে তাদের প্রভুরা সদয় আচরণও করত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। মিশরে কোনাে কোনাে ক্রীতদাস তার প্রভুর কন্যাকে বা কোনাে স্বাধীন মহিলাকে বিবাহ করতে পারত।
প্রাচীন মিশরীয় জনসমাজের শ্রেণিবিন্যাস করাে।
মিশর হল সুপ্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি। রাজতন্ত্রের যুগে প্রাচীন মিশরের সমাজ সমাজ প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। এগুলি হল一
[1] অভিজাত শ্রেণি: মিশরের সম্রাট, রাজপরিবার, ধনী ভূস্বামী, পুরােহিত, উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা (ভিজিয়ার) ও অন্যান্য উচ্চবিত্তদের নিয়ে মিশরের সমাজে অভিজাত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল। সমাজে তারা সর্বাধিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও বিশেষ সুযােগসুবিধা ভােগ করত।
[2] মধ্যবিত্ত শ্রেণি: ব্যবসায়ী, নির্মাতা, শিল্পী, কারিগর ও শিক্ষিতদের নিয়ে মিশরের মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল। এই শ্রেণি মােটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবন কাটাতাে।
[3] নিম্নশ্রেণি: মিশরীয় সমাজব্যবস্থায় ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমিক, অন্যান্য দরিদ্র শ্রেণি ও বিপুল সংখ্যক ক্রীতদাসদের নিয়ে সমাজের নিম্নশ্রেণি গড়ে উঠেছিল।
প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাস ব্যবস্থা
মিশরের ক্রীতদাস প্রথা সম্পর্কে লেখো।
প্রাচীন রােমান সভ্যতার মতাে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায়ও ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব ছিল। তবে মিশরের ক্রীতদাসদের বাস্তব অবস্থা প্রাচীন গ্রিস বা রােমের ক্রীতদাসদের থেকে আলাদা ছিল।
[1] প্রাচীন মিশরে ‘ক্রীতদাস’ শব্দের অর্থ: প্রাচীন মিশরের ‘ক্রীতদাস’ ছিলেন তারা, যারা কোনাে ব্যক্তি বা পরিবারের সম্পত্তি হিসেবে তার মালিকের গােলামি বা দাসত্ব করত। এই অর্থে মিশরের ক্রীতদাসরা তাদের মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। তবে মিশরে তারা কিছু কিছু নাগরিক অধিকারও ভােগ করত।
[2] ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতা: প্রাচীন মিশরে ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতা ছিল। মিশরীয় ফ্যারাও তৃতীয় থুটমােস একটি প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, ক্যানান অভিযান থেকে ফেরার সময় তিনি প্রায় ৯০ হাজার যুদ্ধবন্দিকে এনে ক্রীতদাসে পরিণত করেন। এ থেকেই সেদেশে ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপকতার আভাস পাওয়া যায়।
[3] ক্রীতদাস সংগ্রহ: মিশরে বিভিন্ন উপায়ে ক্রীতদাস সংগ্রহ হত一 [i] শত্রু পক্ষের সৈন্যদের পরাজিত ও বন্দি করা। [ii] অভাবের তাড়নায় দরিদ্র পিতামাতাদের নিজেদের বা তাদের সন্তানদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া। [iii] মহাজন কর্তৃক ঋণ পরিশােধে ব্যর্থ ব্যক্তিকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া। [iv] কোনাে ক্রীতদাসের সন্তানসন্ততিও জন্মসূত্রে পিতামাতার প্রভুর ক্রীতদাসে পরিণত হত। [v] কেউ কেউ আবার দেবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে স্বেচ্ছায় ক্রীতদাসত্ব বরণ করত।
[4] ক্রীতদাস ব্যাবসা: মিশরে ক্রীতদাস ব্যাবসার প্রচলন হয়েছিল। দাস ক্রয়বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সেদেশে দাস বাজার গড়ে উঠেছিল। ক্রীতদাস বাজারে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি মূল্যে বিক্রি হত।
উপসংহার: ক্রীতদাস প্রথা প্রাচীন মিশরের সমাজ ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছিল ঠিকই, তবে পরবর্তীকালের রােমান সাম্রাজ্যে ক্রীতদাস প্রথার যে ব্যাপকতা দেখা গিয়েছিল ততটা ব্যাপকতা মিশরে দেখা যায়নি।