গমন অঙ্গের নাম – অস্থি, পেশী, অস্থি সন্ধি
গমন পদ্ধতির নাম – দ্বিপদ গমন
মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সমূহ – মানব দেহে মোট ২০৬ টি অস্থি থাকে। মানব অস্থি তন্ত্রের মত মেরুদণ্ড, শ্রোণীচক্র ও পায়ের অস্থি গুলি গমনে সাহায্য করে।
১৷ মেরুদণ্ড – কশেরুকার দ্বারা গঠটি ঋজু অস্থি অক্ষ কে মেরুদণ্ড বলে। মেরুদণ্ডে কশেরুকারের সংখ্যা ৩৩ টি।
২৷ শ্রোণীচক্র – সংখ্যা 1×2=2 । মানব দেহের প্রধান গমন অঙ্গ পদ শ্রোণীচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
৩৷ পায়ের অস্থি –
ফিমার ( Femur ) – 1×2=2
টিবিয়া ( Tibia ) , ফিবিউলা ( Fibula ) – 2×1=2
টারসাল ( Tarsal ) – 7×2=14
মেটাটার্সাস ( Metatarsus ) – 5×2=10
ফ্যারেঞ্জেরস ( Phalanges ) – 14×2=28
মানুষের গমনে সহায়ক অস্থি সন্ধি সমূহ – ছয় প্রকার অস্থি সন্ধি দ্বিপদ গমনের সাথে সংশ্লিষ্ট
১৷ স্কন্ধের সন্ধি, ২৷ কব্জির সন্ধি, ৩৷ কনুই ও হাঁটুর সন্ধি, ৪৷ অ্যাম্বুলার সন্ধি, ৫৷ কব্জি ও গোড়ালির সন্ধি, ৬৷ করোটি ও মেরুদণ্ডের সন্ধি।
দ্বিপদ গমন ক্রিয়া
১৷ মানুষের দ্বিপদ গমনে বাম পা ও ডান হাত এবং ডান পা ও বাম হাত একত্রে অগ্রসর হয়। এর ফলে গমন কালে দেহের ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
২৷ গমনকালে পা তোলার পূর্বে প্রথমে গোড়ালি উপরের দিকে ওঠে এবং হাঁটু ভাঁজ হয়।
৩৷ তারপর ওই পদ মাটি থেকে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে স্থাপিত হয়।
৪৷ এই সময় দেহের ভার রক্ষা করে।
বাঁ পা আগের পদ্ধতিতে স্থানান্তরিত হয়ে স্থাপিত হলে তারপর ডান পা একই পদ্ধতিতে ভাঁজ হয়।
মানুষের গমনে সচল সদ্ধি ও কঙ্কাল পেশির ভূমিকা : যেসব অস্থিসন্ধি নড়াচড়া করতে পারে তাদের সচল সন্ধি বলে। যেমন বল ও সকেট সন্ধি, কবজা সন্ধি ইত্যাদি।
অস্থিসন্ধি বেষ্টিত পর্দা সাইনােভিয়াল পর্দা, সাইনােভিয়াল পর্দার মধ্য যে ক্ষুদ্র গহ্বর থাকে তাকে সাইনােভিয়াল গহ্বর বলে। এই গহ্বরে অবস্থিত তরল হল সাইনােভিয়াল তরল। অস্থিসন্ধিগুলি লিগামেন্ট নামক বন্ধনী দ্বারা আবদ্ধ থাকে এবং টেনডন অস্থিকে পেশির সঙ্গে যুক্ত রাখে। গমনে কেবল সচল অস্থিসন্ধি সাহায্য করে।
কবজা সন্ধি : একটি অস্থির গােল প্রান্ত অপর অস্থির অর্ধগােলাকার অবতল অঙ্গে যুক্ত থাকে। এই প্রকার অস্থিসন্ধিগুলাে কেবল একটি নির্দিষ্ট দিকে সঞ্চালিত হয়। হাঁটু ও কনুইয়ের অস্থিসন্ধি এই প্রকার অস্থিসন্ধির উদাহরণ।
বল ও সকেট অস্থি সন্ধি : একটি অস্থির গােলাকার প্রান্তে অপর অস্থির সকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই ধরনের অস্থিসন্ধি প্রায় সকল দিকে সঞ্চালিত হয়। স্কন্ধসন্ধি, উরুসন্ধি এই প্রকার অস্থিসন্ধির উদাহরণ।
মানুষের গমনে সহায়ক পেশী – অস্থি ও অস্থি সন্ধির সঙ্গে যুক্ত থাকে পেশী। এই পেশী গুলির সংকোচন ও প্রসারনে অস্থি ও অস্থি সন্ধির সঞ্চালন ঘটে এর ফলে মানুষের গমন ক্রিয়া সংগঠন হয়।
কঙ্কালসংলগ্ন বা অস্থি সংলগ্ন পেশি : কঙ্কালের সঙ্গে সংযুক্ত পেশিকে কঙ্কাল সংলগ্ন পেশি বলে। এরা পাঁচ প্রকার যথা-
(a) ফ্লেক্সন পেশি : এরা দুটি অস্থিকে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করে। যেমন—বাইসেপস্ পেশি।
(b) এক্সটেনসন পেশি : এরা ভাঁজ করা দুটি অস্থিকে দূরে সরে যেতে সাহায্য করে। যেমন—ট্রাইসেপস্ পেশি।
(c) অ্যাবডাকশন : এরা অঙ্গকে দেহাক্ষ থেকে দূরে সরে যেতে সাহায্য করে। যেমন- ট্রাইসেপস পেশি।
(d) অ্যাডাকশন : এরা কোনাে অঙ্গকে দেহাক্ষের কাছে আসতে সহায়তা করে। যেমন—ল্যাটিসিমাস ডরসি পেশি।
(e) রােটেশন : এরা দেহের কোনাে অঙ্গকে আবর্তিত করতে সাহায্য করে। যেমন—পাইরিফরমিস পেশি।
লঘুমস্তিষ্কের ভূমিকা : লঘুমস্তিষ্ক, পশ্চাৎ মস্তিষ্কের করোটির পশ্চাদভাগে অবস্থান করে । লঘু মস্তিষ্কের ফ্লোকু – লোনোডুলার লোব ভেস্টিবিউলার যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেহভঙ্গি ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রন করে।
অন্তঃকর্ণের ভূমিকা : অন্তঃকর্ণ মধ্যস্থ অর্ধবৃত্তাকার নালি, ইউট্রিকল ভারসাম্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । এটি স্থির অবস্থায় মাধ্যাকর্ষন জনিত ভারসাম্য রক্ষা করে এবং গতিশীল অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করে।