ENVIRONMENTAL STUDIES —2019
বিভাগ ক
(Marks : 40 )
1. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়): 8×5=40
(i) ‘জৈববৈচিত্র্যে’র বিভিন্ন প্রকারভেদগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। ‘বীজ ভাণ্ডার’ কাকে বলে? 6+2
অথবা,
‘পরিবেশ দূষণ’-এর সাথে ‘জৈববৈচিত্র্যের’ সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।‘জৈববৈচিত্র্যের মূল্য’ বলতে কী বোঝ? 6+2
উত্তর : জৈববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ: জৈববৈচিত্র্য তিনপ্রকার—
A. জিনগত জৈববৈচিত্র্য, B. প্রজাতিগত জৈববৈচিত্র্য এবং C. বাস্তুতান্ত্রিক জৈববৈচিত্র্য। এই প্রকারভেদগুলিকে জৈববৈচিত্র্যের স্তর বা উপাংশও বলা হয়। নীচে এই প্রকারভেদগুলি পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হল।
● জিনগত জৈববৈচিত্র্য: বিভিন্ন প্রজাতির জীবের জিন ও ক্রোমোজোমের বৈচিত্র্য এবং কোনো একটি প্রজাতির জিনের ভ্যারিয়েশন-ই হল জিনগত জৈববৈচিত্র্য।
ব্যাখ্যা: প্রতিটি সজীব বস্তুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে তার কোশে উপস্থিত জিনের বৈচিত্র্যের ওপর| এই জিনগত বৈচিত্র্য
বা বিভিন্নতার ফলে একই প্রজাতিভুক্ত বিভিন্ন জীবে কিংবা এক প্রজাতির সঙ্গে অন্য প্রজাতির মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। এই জিনগত বৈচিত্র্য সম্ভব হয় জীবকোশে উপস্থিত জিন বা ক্রোমোজোমের গঠনগত পরিবর্তন বা পরিব্যক্তি (mutation)- এর মাধ্যমে। এই পরিব্যক্তির ফলেই প্রকরণ (variation) দেখা যায় | ধনাত্মক জিনগত প্রকরণগুলির উপস্থিতির দ্বারাই জীব
নিজেদের পরিবর্তিত পরিবেশে অভিযোজিত করে এবং জীবের প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটে। একই প্রজাতিভুক্ত জীবের জিনগত বৈচিত্র্যের ফলে উপপ্রজাতি (subspecies), ব্রিডস, রেস, ভ্যারাইটি এবং ফর্ম প্রভৃতি গঠিত হয়। এই জিনগত বৈচিত্র্যের মাধ্যমেই নতুন প্রজাতির সৃষ্টি (speciation) হয় ।
প্ৰজাতিগত জৈববৈচিত্র্য: কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকার বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি এবং তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্যকে প্রজাতিগত জৈববৈচিত্র্য বলে ।
ব্যাখ্যা: কোনও অঞ্চলের নির্দিষ্ট একক ক্ষেত্রফলে উপস্থিত বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যাকে প্রজাতি প্রাচুর্য (species richness) বলা হয়। আবার, বিভিন্ন প্রজাতির জীবের আপেক্ষিক সংখ্যার হিসাবকে বলা হয় প্রজাতি সাম্যতা বা সাম্যাবস্থা (species evenness or species equitability)।
কোনো জীবসম্প্রদায়ে (community) প্রায় সমান সংখ্যক সদস্য সমন্বিত প্রজাতির উপস্থিতির হারকে সমতা বা evenness হিসেবে দেখা যায়। অন্যদিকে, জীবসম্প্রদায়ে কোনোও একটি প্রজাতির সদস্য সংখ্যা বেশি হলে প্রকটতা (dominance) বা অসাম্য (unevenness) হিসেবে ধরা হয় |
প্রজাতি বৈচিত্র্য পরিমাপ করা হয় প্রজাতি প্রাচুর্য ও প্রজাতি সমতার মাধ্যমে।
একটি উদাহরণ মাধ্যমে এই সম্পর্কে আরও ভালো করে বোঝানো হল।
ধরা যাক, নমুনা অঞ্চল A-তে ময়না, টিয়া ও পায়রা, এই ওটি প্রজাতির পাখি আছে। ময়না ও টিয়া সংখ্যায় একটি করে থাকলেও পায়রা 4টি আছে। আবার, নমুনা অঞ্চল B-তেও এই
3টি প্রজাতির পাখিই আছে কিন্তু সবাই সমসংখ্যক আছে। অর্থাৎ, প্রজাতি সাম্যতা নমুনা অঞ্চল A অপেক্ষা B-তে বেশি।
যদিও প্রজাতি প্রাচুর্য উভয়েই এক| আবার, নমুনা অঞ্চল C-তে পায়রা, হাতি ও প্রজাপতি এই অসম্পর্কিত (unrelated) তিনটি প্রজাতির সদস্য সমহারে আছে। অর্থাৎ, এখানে প্রজাতি সাম্যতার সাথে সাথে অধিক প্রজাতি বৈচিত্র্যও দেখা যাচ্ছে।
সুতরাং বলা যায়, প্রজাতির সদস্য সংখ্যা এবং প্রজাতি সংখ্যা উভয়ই প্রজাতিগত বৈচিত্র্যের জন্য দায়ী |
বাস্তুতান্ত্রিক জৈববৈচিত্র্য: একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্র এবং তাতে উপস্থিত বিভিন্ন জীবসম্প্রদায়ের যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে বাস্তুতান্ত্রিক জৈববৈচিত্র্য বলে।
ব্যাখ্যা: বিভিন্ন ধরনের বাস্তুতন্ত্র এই বৈচিত্র্য নির্ধারণের অন্তর্ভুক্ত বিষয়, যেমন—(a) স্থলভাগ (বন, তৃণভূমি, মরুভূমি প্রভৃতি)-এর বাস্তুতন্ত্র এবং (b) জলভাগ (মিষ্টিজল, নোনাজল প্রভৃতি)- এর বাস্তুতন্ত্র | বিভিন্ন ভৌগোলিক ও ভৌত শর্ত (আর্দ্রতা, উন্নতা,
উচ্চতা প্রভৃতি) ভেদে এবং জীবসম্প্রদায়ের চরিত্রভেদে বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের গঠনও ভিন্ন ভিন্ন হয়, ফলে উপস্থিত জীবসম্প্রদায়েও বৈচিত্র্য দেখা যায়।
বীজভাণ্ডার: বীজভাণ্ডার বলতে এমন একটি সংরক্ষণস্থলকে বোঝায় যেখানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায়, বিশেষ পদ্ধতিতে
বিভিন্ন জেনেটিক স্ট্রেইনবিশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ সংরক্ষণ করা হয় এবং দীর্ঘসময় ধরে তাদের অঙ্কুরোদ্গমে সক্ষম (viable) রাখা হয়।
অথবা,
পরিবেশদূষণের সাথে জৈববৈচিত্র্যের সম্পর্ক
পরিবেশে যখন প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের অস্তিত্বের পক্ষে ক্ষতিকর বস্তুর উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়, সেই অবস্থাকে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা
পরিবেশদূষণ বলেন। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ু, জল, মাটি ইত্যাদি ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অবাঞ্ছিত পরিবর্তন সার্বিকভাবে মানবসভ্যতা, কোনোপ্রজাতির অস্তিত্ব, সামাজিক পরিবেশ অথবা প্রাকৃতিক সম্পদের অনিষ্ট সাধন করছে, সেটিই হল পরিবেশদূষণ |
পরিবেশদূষণ বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন—বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ বা স্থলদূষণ, শব্দদূষণ, বিপজ্জনক বর্জ্য পদার্থের
দ্বারা দূষণ, তেজস্ক্রিয়তাজনিত দূষণ ইত্যাদি।
জৈববৈচিত্র্য হল সুস্থ ও কার্যকর বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি | জৈববৈচিত্র্য বলতে বস্তুত প্রতিটি বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্নপ্রকার জীবের উপস্থিতিকে বোঝায়। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট
স্থানে উপস্থিত বা জন্মানো বিভিন্নপ্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির সমষ্টিকে ওই সময়ে ওই স্থানের জৈববৈচিত্র্য বলা হয়।
পরিবেশদূষণের সঙ্গে জৈববৈচিত্র্যের গভীর সম্পর্ক বর্তমান।
এই সম্পর্ক প্রসঙ্গে নীচে আলোচনা করা হল।
1.বেশকিছু প্রজাতি নির্দিষ্ট প্রকারের আবহাওয়া অথবা জল, বায়ু ও মৃত্তিকাদূষণের প্রতি অতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে| সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে জলদূষণ, বায়ুদূষণ ও মৃত্তিকা দূষণের মাত্রাও প্রভূত পরিমাণে বাড়ছে | এই দূষণের ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। প্রকৃতিতে প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশককেই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
2. প্রচণ্ড বায়ুদূষণের ফলে পোল্যান্ডের একটি জাতীয় উদ্যানে একবার 43টি প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়।বর্তমানে চিল-জাতীয় পাখির সংখ্যা হ্রাসের কারণও হল প্রকৃতির দূষণ।বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, আগামী 30 বছরে পৃথিবীর গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা 2°C বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে পৃথিবীর 25% জীব বিলুপ্ত হতে পারে।
3.পরিবেশদূষণের কারণে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় | যেমন— অতিবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধবস ইত্যাদি। এগুলির কারণেও বহু জৈববৈচিত্র্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
4.বায়ুদূষণের ফলে অম্লবৃষ্টি হয়| আবার অম্লবৃষ্টির কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়, বনের জৈববৈচিত্র্যও বিলুপ্ত হয়|
5.জলদূষণের ফলে জলে বসবাসকারী বহু প্রাণী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
6.মৃত্তিকাদূষণের ফলে বহু প্রাণীর বসবাসের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বহু অভঙ্গুর পদার্থ মাটিতে মিশে বাস্তুরীতির খাদ্যশৃঙ্খলে যাচ্ছে। এর ফলে জৈববৈচিত্র্যের বিভিন্নভাবে ক্ষতি হচ্ছে।
7. কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে জৈববৈচিত্র্য যদি মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যায়, তাহলে সেখান থেকে পরিবেশদূষণ ঘটে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—কোনো জলাশয়ে সালফার, ফসফরাস, পটাশিয়াম, নাইট্রোজেন প্রভৃতির পরিমাণ বাড়লে, সেই জলাশয়ে দ্রুত সবুজ শ্যাওলা বৃদ্ধি পায়।
অনেকসময় ওই শ্যাওলা পুরো জলাশয়ে বিস্তৃত হয়| জলে বসবাসকারী মাছ ও অন্যান্য প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। একসময় ওই শ্যাওলা জলের মধ্যে পচে গিয়ে মারাত্মক ধরনের জলদূষণ সৃষ্টি করে এবং জলে বসবাসকারী মাছ ও মৎস্য-জাতীয় প্রাণীদের মৃত্যু ঘটে।
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিবেশদূষণ ও জৈববৈচিত্র্য পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
জৈববৈচিত্র্যের মূল্য :
মানুষের কাছে জৈববৈচিত্র্যের মূল্য অপরিসীম কেননা মানুষ তার সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত স্বচ্ছন্দের জন্য প্রত্যক্ষভাবে জৈববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। জৈববৈচিত্র্য
বাস্তুরীতির কাঠামো গঠন করে, আর আমরা আমাদের প্রাত্যহিক চাহিদা পূরণের জন্য, নিরাপত্তার জন্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য জৈববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভর করি। নান্দনিকতা,
অস্তিত্বরক্ষা, আর্থিক স্থিতাবস্থা প্রভৃতির জন্যও জৈববৈচিত্র্য আমাদের কাছে মূল্যবান।
জৈববৈচিত্র্য প্রত্যক্ষভাবে খাদ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি তন্তু এবং জ্বালানির উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, আবার জৈববৈচিত্র্য আমাদের বাস্তুরীতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দিক থেকে ‘পৃথিবী ও পৃথিবীতে বসবাসকারী সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষের কাছে’ জৈববৈচিত্র্যের কার্যকারিতা বা গুরুত্বকে ‘জৈববৈচিত্র্যের মূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
(ii) ‘পরিবেশ ব্যবস্থাপনা’ বলতে কী বোঝ? ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব আলোচনা করো। 2+6
অথবা,
‘পরিবেশ ব্যবস্থাপনার’ সাথে ‘উন্নয়নের’ সম্পর্ক উদাহরণসহ আলোচনা করো। ‘জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট’ কাকে বলে? 6+2
উত্তরঃ




(iii) সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থাপনায় ‘জৈব সারে’র গুরুত্ব আলোচনা করো। ‘মিশ্র চাষ’ কাকে বলে? 5+3
অথবা,
‘সুসংহত কীটপোকা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ বলতে কী বোঝ? ফসল উৎপাদনে ‘মাইকোরাইজা’র ভূমিকা উল্লেখ করো। 5+3
উত্তর :





(iv) সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধান বাধাগুলি আলোচনা করো। ‘বাস্তুতান্ত্রিক উন্নয়ন’ বলতে কী বোঝ? 6+2
উত্তর :



(v) সুস্থায়িত্বের বিভিন্ন নীতিগুলি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করো। ৪













You must be logged in to post a comment.