পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এল কালাজ্বর, আক্রান্ত ৬৫, আজ থেকে শুরু সমীক্ষা



আবার পশ্চিমবঙ্গে কালা জ্বরের প্রাদুর্ভাব ! প্রায় নির্মূল হয়ে যাওয়া কালাজ্বরের
প্রকোপ দেখা দিয়েছে রাজ্যের ১১টি জেলায়।
স্বাস্থ্যভবনের প্রাথমিক তথ্য রাজ্যে অন্তত ৬৫
জনকে কালাজ্বর আক্রান্ত চিহ্নিত করা
হয়েছে। তবে ডিজিজ অডিট থেকে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
মাটির স্যাঁতসেতে দেওয়াল বা মেঝেতে স্ত্রী বালিমাছি ডিম পাড়ে। সেই মাছির শরীরে বাস করে পরজীবী। তা থেকেই কালাজ্বর সংক্রমিত হয় মানবদেহে। নবান্ন সূত্রে খবর – রোগ নির্মূল করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের পাকাবাড়ি ও শৌচালয় করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে | পাশাপাশি স্বাস্থ্যভবন থেকে এইসব এলাকায় লাগাতার সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। সূত্রের খবর, আজ বৃহস্পতিবার থেকেই স্বাস্থ্যভবনের বিশেষজ্ঞদল কালাজ্বর প্রবণ এলাকা পরিদর্শনে যাবে।
রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী
বলেছেন,“আক্রান্তদের চিহ্নিত করে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তাঁর কথায়, “রোগীকে নিখরচায় যেমন ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তেমনই এই মাস থেকে নিখরচায় মাসিক পুষ্টিকর খাবারও দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা, রক্তপরীক্ষা করে আরও আক্রান্তের সন্ধান মিলতে পারে।
তবে এখনও পর্যন্ত কোনও মৃত্যুর খবর মেলেনি। রোগীপিছু মাসে হাজার টাকার
খাবার দেওয়া হবে।
স্যান্ডফ্লাই বা বেলেমাছির শরীরে থাকা পরজীবী ‘কেমোটোমাস আর্জেন্টিনিস’ থেকে রোগ সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির হঠাৎ ওজন কমে যায়, ১৪ দিনের বেশি জ্বর, লিভার বা প্লিহা বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, রক্তাল্পতা, খিদে কমে যাওয়া,
বমিভাব এমন সব লক্ষণ থাকলে রক্তের
বিশেষ ধরনের (আরকে—৩৯) পরীক্ষার মাধ্যমে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে রোগ
নির্ণয় করা সম্ভব। স্বাস্থ্য দফতরের এক
শীর্ষকর্তার কথায়, “কালাজ্বর কার্যত নির্মূল
হয়ে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে। কিন্তু
কোভিড আবহে টানা নজরদারির কিছুটা
ঘাটতি হওয়ায় বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।” ওই শীর্ষকর্তার কথায়, “মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশে দীর্ঘসময় কাটিয়ে আসা আক্রান্তদের থেকে রোগ ছড়ায়। এমনকী বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের
শারীরিক উপসর্গ দেখে প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। এরপরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলা হাসপাতালে রক্তপরীক্ষা করে শনাক্ত করা হয়। বেসরকারি কোনও ল্যাবরেটরি বা হাসপাতালেও যদি রোগ শনাক্ত হয় তবে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্যকর্তার গোচরে আনতে হবে। রোগীর চিকিৎসা এবং
পথ্যের যাবতীয় ব্যয়ভার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর বহন করবে। গোটা বিষয়টি নজরদারি করবেন জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক।
রাজ্যের যেসব জেলায় কালাজ্বরের প্রকোপ দেখা গিয়েছে তার মধ্যে মালদহে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
এছাড়াও দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কালিম্পং জেলায় সংক্রমণ
অনেকটাই বেশি। এছাড়াও বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলাতেও আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। আবার এডস বা যক্ষ্মা আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই রোগীদেরও রক্তের আরকে-৩৯
পরীক্ষা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, ২০১৭
সালে রাজ্যে প্রতি ১০ হাজার নাগরিকের
মধ্যে ১জন কালাজ্বর রোগী ছিল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও স্বাস্থ্যদফতর যৌথভাবে
রাজ্যে কালাজ্বর নির্মূল ঘোষণা করে। এই
অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জেলায়
রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় ফের
লাগাতার সমীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু হচ্ছে।

কালাজ্বরের লক্ষ্মণ
১৪ দিনের বেশি জ্বর
■ শরীরে কালো ছোপ
■ ওজন কমে যাওয়া
■ পেট ফোলা, লিভার বা
প্লিহা বড় হয়ে যাওয়া
● বমিভাব

কালাজ্বর আক্রান্ত জেলা
মালদহ ■ দার্জিলিং, ■ কালিম্পং, উত্তর ও
দক্ষিণ দিনাজপুর, ■ বীরভূম বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, ■ আলিপুরদুয়ার, ■ কোচবিহার, ■ জলপাইগুড়ি।

কালা জ্বর বা ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস (ইংরেজি: Visceral leishmaniasis, Sahib’s disease, Dumdum fever, Black fever একটি রোগ যা লিশম্যানিয়াসিস রোগের কয়েকটি প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর। লিশম্যানিয়া গণভুক্ত এক প্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবী এই রোগটি ঘটায় এবং বেলেমাছির কামড় দ্বারা এটি বিস্তার লাভ করে। পরজীবী-ঘটিত রোগগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাণঘাতী রোগ; ম্যালেরিয়ার পরেই এর স্থান। ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিসে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় |

পরজীবীটি মানুষের যকৃতপ্লীহা (একারণে ‘ভিসেরাল’), এবং অস্থি মজ্জাতে সংক্রমন ঘটায় এবং চিকিৎসা না দিলে মৃত্যু প্রায় অবধারিত। প্রখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী(১৯ ডিসেম্বর ১৮৭৩ – ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬) ১৯২২ সালে কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইন (কার্বোস্টিবামাইড) সংশ্লেষণ করেন এবং নির্ধারণ করেন যে পূর্বে কালাজ্বরের (Leishmania donovani দ্বারা ঘটিত) চিকিৎসায় অ্যান্টিমনি-ভিত্তিক যেসব যৌগ ব্যবহৃত হত ইউরিয়া স্টিবামাইন সেসবের একটি কার্যকরী বিকল্প যৌগ।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার :

কালাজ্বর প্রতিরোধের তিনটি উপায় আছেঃ

ক) বাসস্থান উন্নয়ন: মাটির মেঝে বা দেয়াল ফাটলহীন ও পরিচ্ছন্ন রাখা যাতে বেলে মাছি বংশ বিস্তার করতে না পারে। গোয়াল ঘর থেকে দূরে মানুষের থাকার ঘর স্থাপন।
খ) বেলেমাছি নিধন: ডিডিটি বা ম্যালাথিয়ন দিয়ে বেলেমাছি নিধন করা যায়।
গ) উৎস নির্মূল: মিল্টেফোসিন, সোডিয়াম স্টিবোগ্লুকোনেট কিংবা এম্ফোটেরিসিন বি নামক ওষুধ দিয়ে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা করে কালজ্বরের জীবাণুর উৎস নির্মূল করা যায়।