যেসব ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ ও ধ্বংস করে তাদের ব্যাকটেরিওফাজ বা ফাজ ভাইরাস ( Phage Virus ) বলে ।
বিজ্ঞানী দ্য হেরেলি ( d’Herelle ) 1917 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ব্যাকটেরিওফাজ নামকরণ করেন । এরা সুনির্দিষ্ট প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করে । ব্যাকটেরিওফাজ দেখতে ব্যাঙাচির মতাে । এদের T টাইপ ফাজও বলে , যেমন— T2 , T4 ভাইরাস ইত্যাদি । T জাতীয় ফাজ লম্বায় 65-200μm এবং চওড়ায় 50-70μm হয় ।
ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস এর গঠন :
ব্যাকটেরিওফাজ এর দেহ চারটি অংশ নিয়ে গঠিত মস্তক , গ্রীবা , পুচ্ছ ও প্রান্ত ফলক ।
মস্তক ( Head ) :
মস্তকটি ষড়ভুজাকার হয় । মস্তক প্রাচীরে দুটি প্রােটিন স্তর থাকে । এই অংশটি লম্বায় 95nm ও চওড়ায় 65nm । মস্তকের ফাঁপা অংশের মধ্যে 0.05nm লম্বা একটি দ্বিতন্ত্রী DNA অণু প্যাঁচানো অবস্থায় থাকে ।
গ্রীবা ( Neck ) :
মস্তকের নীচে ছোটো নলাকার অংশ ও চাকতির মতাে কলার নিয়ে গ্রীবা গঠিত হয় । গ্রীবা নলটি উপরের দিকে মস্তক ছিদ্রের মধ্যে এবং নীচের দিকে পুচ্ছাংশের ছিদ্রের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে । চাকতির মতাে কলার ( Collar ) পুচ্ছের উপরের দিকে আবদ্ধ হয় ।
লেজ বা পুচ্ছ ( Tail ) :
গ্রীবার নীচের দিকে নলের মতাে অংশকে পুচ্ছ বলে । পুচ্ছ নলের দুটি অংশ থাকে । মাঝখানের সরু নলের মতাে অংশকে মধ্যনল বা কোর ( Core ) বলা হয় । এই মধ্যনলের বাইরে প্রােটিন দিয়ে তৈরি সংকোচনশীল আবরণ থাকে । একে পুচ্ছ আবরণী বলা হয় । পুচ্ছ অংশটি লম্বায় প্রায় 95nm ।
প্রান্ত খন্ড ( End plate ) :
এই অংশটি পুচ্ছের নীচে থাকে । প্রান্ত খন্ড তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত , যেমন —
( i ) প্রান্ত ফলক ( End plate ) — পুচ্ছের নীচে একটি ষড়বাহু যুক্ত প্রান্ত ফলক থাকে । প্রান্তফলকের কেন্দ্রে একটি ছিদ্র দেখা যায় । একে প্রান্ত ফলক ছিদ্র বলে ।
( ii ) কাঁটা বা স্পাইক ( Spike ) — প্রান্তফলকের নীচের দিকের ছয় কোণে 6 টি ত্রিভুজাকার ছােটো কাঁটা অবস্থান করে ।
( iii ) পুচ্ছতন্তু ( Tail fibre ) — প্রত্যেকটি কাঁটার সঙ্গে একটি লম্বা পুচ্ছতন্তু যুক্ত থাকে । পুচ্ছতন্তুর সাহায্যে ব্যাকটেরিওফাজ পােষক দেহপ্রাচীরের সঙ্গে নিজেকে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয় । পুচ্ছতন্তু লম্বায় প্রায় 150nm হয় । পুচ্ছতন্তুর সাহায্যে ফাজ ব্যাকটেরিয়ার দেহে আবদ্ধ হয় ।
ব্যাকটিরিওফাজের গুরুত্ব :- ব্যাকটিরিওফাজ [T2] কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দেহে পরজীবী হিসেবে বসবাস করার মাধ্যমে এবং ওই সব ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াদের ধ্বংস করার মাধ্যমে ওই সমস্ত রোগ আক্রমণের হাত থেকে পরোক্ষভাবে আমাদের রক্ষা করে —তাই ব্যাকটিরিওফাজকে উপকারী ভাইরাস বলা হয় ।