
আমাদের রহস্যময় পৃথিবীতে (প্রাকৃতিক বা অ-প্রাকৃতিক) রহস্যের সীমা নেই। এর মধ্যে আবার কিছু স্থান বা বিষয় রয়েছে যা অতি-প্রাকৃতিক। আর এ কারনেই এগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষের কাছে হাজারো রহস্যে ঘেরা। আধুনিক বিজ্ঞানের উৎকর্ষতাও এ রহস্যের কোনো কারণ বর্ননা করতে পারেনি। তাই বিজ্ঞানীরা এগুলোকে অতি-প্রাকৃতিক স্থান বলে অভিহিত করেছেন।
আওকিঘারা (Aokighara, Japan):

জাপানের আওকিঘারা জঙ্গলটি একটি রহস্যময় ভূখণ্ড। এটা জাপানের ফুজি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর স্থান জুড়ে অবস্থিত এই জঙ্গলটি কোঁকড়ানো ও মোচড়ানো গাছ পালায় পূর্ণ। গোটা এলাকাটি ভূতপ্রেতের অবাধ বিচরণ ভূমি বলে স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্থানটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আত্মহত্যার স্থান হিসেবে পরিচিত। পঞ্চাশের দশক থেকে এ পর্যন্ত ৫ শতাধিক লোক এখানে আত্মহত্যা করেছে।
এই জঙ্গলটি জাপানীদের কাছে আত্মহত্যা করার জায়গা হিসেবে পরিচিত।
প্রতি বছর এখান থেকে প্রায় শখানেক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জাপানি নথিপত্রের হিসাব অনুযায়ী ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এখানে গড়ে প্রতি বছর একশত লাশ পাওয়া গিয়েছে। ১৯৯৮ সালে ৭৪ টি, ২০০২ সালে ৭৮ টি লাশ পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে এই সংখ্যা ১০০ তে গিয়ে পৌছায়। পরবর্তীতে ২০০৪সালে ১০৮ জন ব্যক্তি নিজেদেরকে এখানে হত্যা করে। ২০১০ সালে প্রায় ২৪৭ জন ব্যক্তি আত্মহত্যার উদ্যগ নিলেও মাত্র ৫৪ জন সফল হয়েছিলো। বর্তমানে দেশটির স্থানীয় সরকার এই হিসাব প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
আত্মহত্যা নিরুৎশাহিত করবার জন্য এই অরণ্যর প্রবেশমুখেই লেখা আছে – ““Your life is a precious gift from your parents,” and “Please consult the police before you decide to die!” আত্মহত্যা করবার জন্য এইটি পৃথিবীর দ্বিতীয় জনপ্রিয় স্থান।
রক্তের জলপ্রপাত , Antarctica :

একদল গবেষক এ্যান্টার্টিকা মহাদেশে গিয়ে এটি দেখতে পান, এবং ছবি টি তোলেন। তাদের ধারনা ছিলো কোন অনুজীব এর ফলে এমন টা ঘটে, যদিও শূণ্যের অনেক নিচে হিম শীতল আবহাওয়াতে টিকে থাকা অনেক টা অসম্ভব একটা ব্যাপার । বর্তমান ধারনা সেখান কার মাটিতে থাকা অনেক পরিমান আয়রণ ও সালফার এর কারনে পানির রঙ লাল। এটা কিন্তু সুধুই ধারনা, সেই পানি কেন জমে লাল রঙের আইস ক্রিমের মত হলো না সেটার ও কোন উত্তর নাই।
Relampago del Catatumbo, Ologa, Venezuela

বজ্রপাত সবাই ই চিনি – আমাদের দেশে বছরে কতদিন আর এর দেখা পাই বলুন, দেখতে হলে তো যেতে হবে ভেনিজুয়েলা তে। এখানে বছরে ২০০ দিনের ও বেশী সময় বজ্রপাত হয়। তাও মাত্রা শুনবেন ? কখনো কখনো মিনিটে ২৫ বার এর ও বেশী। ঠাডা পড়া বুঝেন ? উহু, বজ্রপাত হইবায় লোক টি মারা গেলো বললে বুঝবেন, প্রতি স্কয়্যার কিলোমিটারে প্রতিবছর গড়ে ২৫০ বার বজ্রপাত, চিন্তা করেন একবার।
ম্যাকমার্ডো ড্রাই ভ্যালী (McMurdo Dry Valleys, Antarctica)

অনেকের মতে ‘ম্যাকমার্ডো ড্রাই ভ্যালী’ বিশ্বের সবচেয়ে গোপন জায়া। এই জনমানবহীন উপত্যকাটি বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমির একটি এবং সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক জায়গা। এন্টার্কটিকার বরফ ও তুষারের মধ্যস্থলে অবস্থিত হলেও প্রতিবছর এখানে মাত্র ৪ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়। স্থানটি মেরুঅঞ্চলের বরফে ঢাকা থাকার কথা হলেও এটা সম্পূর্ণ বরফশূন্য ও খালি। এখানে কিছু শৈবাল দেখা গেলেও কোন গাছপালা নেই। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী উপগ্রহের এই স্থানটির অদ্ভূত মিল রয়েছে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশের সাথে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (The Bermuda Triangle, Atlantic Ocean)

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভূজ নামেও পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল, যেখান বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয়। অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দূর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রকৃতিক কোন শক্তি।
মগুইচেং (Moguicheng, China)

চীনের মগুইচেং চীনের ঝিনজিয়াং অঞ্চলের একটি মরুভূমি হচ্ছে মগুইচেং। এর আক্ষরিক অর্থ ‘শয়তানের নগরী’। স্থানটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত ও জনশূন্য। অনেক অদ্ভূত ঘটনা এখানে ঘটে বলে লোকজন জানিয়েছেন। দর্শনার্থীরা এই স্থানে রহস্যময় আওয়াজ, বিষন্ন সুর ও গিটারের মৃদু ধ্বনি, বাচ্চাদের কান্না এবং বাঘের গর্জন’ শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেন। এসব শব্দের কোন উৎসের সন্ধান আজো কেউ পাননি।
You must be logged in to post a comment.