সংজ্ঞা : অতিরিক্ত আর্সেনিক যুক্ত হয়ে জল বা মাটি দূষিত হওয়াকে আর্সেনিক দূষণ বলে। তবে,আর্সেনিক দূষণের কথায় সাধারণভাবে জলদূষণের কথায় প্রথমে মনে পড়ে ।
আর্সেনিক একটি মৌল। ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে আর্সেনিক বিভিন্ন বিষাক্ত ধাতব যৌগ তৈরি করতে পারে ।
আর্সিন গ্যাস,আর্সিনাইট্স,আর্সেন অক্সাইড ইত্যাদি যৌগগুলি উদ্ভিদ, প্রাণী, মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করে । মাটির সঙ্গে অতিরিক্ত আর্সেনিক যুক্ত হলে মাটি দূষিত হয় । তেমনি জলের সঙ্গে আর্সেনিক মিশে জলকে দূষিত করে তোলে ।
আর্সেনিক দূষণের মাত্রা:
ইদানীংকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে যেমন, তাইওয়ান, মেক্সিকো,চিলি, আর্জেন্টিনা,বাংলাদেশ,ভারত ইত্যাদি । পশ্চিমবঙ্গের ১২ টি জেলায় ১১১ টি ব্লকে আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি । এদের মধ্যে প্রায় দু লক্ষ মানুষ গুরুতর চর্মরোগে ভুগছেন । এই জেলাগুলিতে প্রতি লিটার দূষিত জলের মধ্যে আর্সেনিকের গড় পরিমাণ হল ৫০ মাইক্রোগ্ৰাম-এর বেশি । যদিও আর্সেনিকের সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রা হল ০.০৫ মিলিগ্ৰাম/ লিটার ।
আর্সেনিক দূষণের কারণ :
সাম্প্রতিক কালে জলে আর্সেনিক দূষণের জন্য মাটির গভীরে অতিরিক্ত আর্সেনিকযুক্ত স্তরের প্রভাব আছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন । এখানে উল্লেখ করা যায় যে, মাটিতে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকলে সেই মাটিতে আর্সেনিকের পরিমাণও বেশি হওয়ায় আশঙ্কা বেশি থাকে । ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো,কানাডা, জার্মানি, রাশিয়া, চীন, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের মাটিতে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ বেশি বলে, এখানকার জল ও মাটি আর্সেনিক আক্রান্ত হওয়া সহজ ।
মানুষের ওপর আর্সেনিক দূষণের প্রভাব :
সাম্প্রতিক কালে জলে আর্সেনিক দূষণের প্রভাবগুলি হল :-
১. ফুসফুসের প্রদাহ,অ্যাজমা,ব্রঙ্কাইটিস হয় ।
২. যকৃতের রোগ দেখা দেয় ।
৩. মানুষের ত্বক,নখ ও চুলে আর্সেনিক সঞ্চিত হয়ে গায়ে ফুসকুড়ি, হাতে পায়ে কালো দাগ, চুলকুনি,ক্যানসার হতে পারে।
হাতে ও পায়ের নখে অসংখ্য সাদা দাগ তৈরি হয় । চুলকুনি, ক্যানসার হতে পারে । হাতে ও পায়ের নখে অসংখ্য সাদা দাগ তৈরি হয় একে’ মিজ রেখা”বা’অল্ডরিচ মিচ লাইন” বলে ।
৪. গায়ে, মুখে নীলচে ছোপ দেখা দেয় ।
৫. মূত্রনালিতে রোগ হয় ।
৬. পায়ের পাতায় কালো রঙের ঘা হয়। একে’ ব্ল্যাকফুট ডিজিজ” বলে । এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিলি ও তাইওয়ানে বহু লক্ষ লোক মারা গেছেন ।
উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর ওপর আর্সেনিক দূষণের প্রভাব :
উদ্ভিদের কোশে আর্সেনিক জমা হয় এবং ওই কোশকে ক্ষতিগ্ৰস্ত করে । আর্সেনিক দূষণে জীবজন্তুর চর্মরোগ হয় । ফুসফুস আক্রান্ত হয় ।
আর্সেনিকোসিস :
আর্সেনিক দূষণের ফলে মানুষের দেহে যে রোগের সৃষ্টি হয়, সেই রোগকে আর্সেনিকোসিস বলে ।
আর্সেনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় :
১. পানীয় জলকে পুরোপুরি আর্সেনিক মুক্ত করার উপায় সম্প্রতি ( জুলাই,২০১৬)
যাদবপুরের ইন্ডয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অব সায়েন্স ( IACS ) এর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন । পদ্ধতিটি হল :-
আর্সেনিক দূষিত জলের সঙ্গে জিঙ্ক সালফাইড ( Zinc Sulphide ) নামক যৌগের পাউডার মেশানো হলে ওই জল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ( WHO ) এর মাপকাঠি অনুযায়ী নিরাপদ জলে পরিনত হয় ।
২. ভূপৃষ্ঠের জল যেমন পুকুর,জলাশয়,হ্রদ, নদীর জল পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করা যায় । বৃষ্টির জলও ব্যবহারের যোগ্য ।এইসব জলে আর্সেনিক দূষণ হয় না ।
৩. স্বল্প গভীর জলস্তর থেকে তোলা ভৌমজল ব্যবহার করা উচিত নয় ।
৪. আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হল কো-প্রেসিপিটেসন, আয়রন এক্সচেঞ্জ,অ্যাকটিভেটেড অ্যালুমিনা ফিলট্রেশন ইত্যাদি ।