Methods for Teaching Learning of EVS : Discussion Method
পরিবেশ পাঠদানের জন্য আলোচনা পদ্ধতি ( Discussion Method ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ | সাধারণত পারস্পরিক মত বিনিময়ের প্রক্রিয়াকে আলোচনা পদ্ধতি বলে |পরিবেশ শিক্ষাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা পদ্ধতি | এটি একটি দলগত শিক্ষণ পদ্ধতি |
আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েই সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে | এই কারণে আলোচনাকে আধুনিক প্রগতিশীল শিক্ষাপদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে |
আলোচনা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Discussion Method):
আলোচনা পদ্ধতির কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন—
(1) দলগত প্রস্তুতি (Group method) :
আলোচনা পদ্ধতি হল দলগত পদ্ধতি।
ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষণে আলোচনা পদ্ধতির বিশেষ কোনো স্থান নেই। শিক্ষার্থীর প্রয়োজনে আলোচনা পদ্ধতি শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করতে হলে প্রথমে শিক্ষককে একটি দল গঠন করতে হবে। শ্রেণিকেন্দ্রিক দল গঠনের সময় সমগ্র শ্রেণিকে নেওয়া যেতে পারে।
(2) বিষয়বস্তু (Subject) :
আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠ পরিচালনার জন্য বিষয়বস্তু নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শ্রেণির বিষয়বস্তু দু-ধরনের হবে। যথা—(ক) বিষয়বস্তু বিবৃতিধর্মী হতে পারে এবং (খ) বিষয়বস্তু সমস্যাধর্মী হতে পারে। তবে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের বা বিশেষ দলের প্রস্তুতির কথা বিবেচনা করে সবসময় বিষয়বস্তু নির্বাচন করবেন।
(3) প্রস্তুতি :
নির্ধারিত বিষয়বস্তু আলোচনার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন। যে বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, সে সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পূর্ব ধারণা থাকতে হবে–তা না হলে তারা সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
আবার শিক্ষক বিষয় সম্পর্কে অবগত না থাকলে আলোচনাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। তাই উভয়েরই এই পদ্ধতিতে পূর্ব-প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক।
(4) শিক্ষকের নেতৃত্ব :
আলোচনা পদ্ধতির নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন শিক্ষক। তবে শিক্ষকের নেতৃত্ব গ্রহণের অর্থ এই নয় যে, শিক্ষক সবসময় তাঁর নিজের মতামত শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেবেন বা তাঁর কথাই শেষ কথা।
আলোচনা পদ্ধতি শুরু করবেন শিক্ষক, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি শিক্ষার্থীদের আলোচনায় সংযুক্ত করবেন এবং আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এতে শিক্ষণ বেশি কার্যকর হবে। শিক্ষক পর্যবেক্ষণ করবেন, মাঝে মাঝে উপযুক্ত প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের আলোচনার গতি নির্ধারণ করবেন। অর্থাৎ শিক্ষকের নেতৃত্ব সবসময় পরোক্ষভাবে থাকবে।
(5) শিক্ষার্থীর ভূমিকা :
আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠ পরিচালনা করার সময় শ্রেণিতে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থী যাতে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী আলোচনায় অংশগ্রহণ না করলে তার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে সমস্যা তুলে ধরে তাকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
(6) সময় নির্দিষ্টকরণ :
বিদ্যালয়ে শ্রেণি পরিচালনার জন্য সময় নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। শিক্ষক বিষয়বস্তুর প্রকৃতির কথা বিবেচনা করে আলোচনার সময় নির্দিষ্ট করে দেবেন। তা না হলে অনিয়ন্ত্রিত আলোচনা পাঠের অগ্রগতিকে হ্রাস করবে।
আলোচনা পদ্ধতির প্রয়োগ (Application of Discussion Method) :
আলোচনা পদ্ধতির প্রয়োগের জন্য পূর্বপরিকল্পনা করে অগ্রসর হতে হয়। আলোচনা পদ্ধতি তিনটি স্তরের মাধ্যমে সার্থক প্রয়োগ হয়। এই তিনটি স্তর হল—(1) প্রস্তুতি, (2) আলোচনা এবং (3) মূল্যায়ন।
প্রস্তুতি (Preparation) :
আলোচনা পদ্ধতি বাস্তবায়িত করতে হলে প্রথমে তার একটি পূর্ব-প্রস্তুতি নিতে হবে।
এই পূর্ব-প্রস্তুতি রচনায় শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রস্তুতি পর্বে শিক্ষার্থীই
প্রধান উপলক্ষ্য হলেও শিক্ষকই সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। শিক্ষক বিষয় ঠিক করবেন, সেই বিষয় কীভাবে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তুলে ধরবেন তা নির্দিষ্ট করবেন।
শিক্ষার্থীদের দল তৈরি করবেন – আলোচনার সময় নির্দিষ্ট করবেন।
পরিবেশ শিক্ষণের বিভিন্ন উপাদান থেকে তথ্য চয়ন করে শিক্ষার্থীদের সেগুলি পড়াশোনার জন্য নির্দেশ দেবেন। সহজ, সুন্দর ভাষায় সাবলীল বক্তব্য রাখার জন্য মনে মনে বিষয়কে বিশ্লেষণ করবেন।
আলোচনা পর্ব (Discussion Period) :
আলোচনার সময় শিক্ষক মহাশয় পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্তুর সূত্রানুযায়ী পরপর আলোচনা
করবেন এবং আলোচনায় যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী অংশ নেয় সেদিকে শিক্ষকের তীক্ষ্ণ নজর থাকবে। এই পর্বে শিক্ষার্থীরা খোলা মনে ও খুশি মনে আলোচনায় অংশ নেবে। বিরক্ত প্রকাশ না করে ধৈর্য সহকারে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পাঠ অনুযায়ী উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
মূল্যায়ন (Evaluation) :
শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কতটা গ্রহণ করল বা বুঝতে পারল তার জন্য মূল্যায়ন করতে হয়। পরিবেশ মূল্যায়নের জন্য তিনটি ধাপ গ্রহণ করা হয়।
প্রথমত, পরিবেশের বিষয়বস্তু সম্পর্কে শিক্ষার্থীর জ্ঞান মূল্যায়ন করা হয়। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীরা পরিবেশ বিষয়ে জ্ঞান, বোধ, প্রয়োগ ও দক্ষতার সামর্থ্য অর্জন করতে পারছে কিনা তা যাচাই করা হয়। তৃতীয়ত, আলোচনায় অংশগ্রহণকারীর শিক্ষাগত কর্মের মূল্যায়ন করা হয়।
আলোচনা পদ্ধতির সুবিধা (Advantages of Discussion Method) :
আলোচনা পদ্ধতি শিক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পাঠদান
করলে কতকগুলি সুবিধা পাওয়া যায়। এই সুবিধাগুলি হল—
(ক) সক্রিয়তা : আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলে শিখন দীর্ঘদিন মনে থাকে।
(খ) সামাজিক গণ বিকাশে সহায়তা করে : শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে বিষয়বস্তুর আলোচনায় অংশগ্রহণ করায় শ্রেণিকক্ষে এক বিশেষ ধরনের সামাজিক পরিবেশ। গড়ে ওঠে। এই পরিবেশ বিষয়কেন্দ্রিক শিখনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক গুণ বিকাশে সহায়তা করে।
(গ) স্বাধীন মতামত প্রকাশ : আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের
মতামত প্রকাশ করার সুযোগ পায়, যা তাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
(ঘ) ভুল-ত্রুটি দূর করা : আলোচনা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করায় তাদের ভুল-ত্রুটিগুলিও সংশোধন করে নিতে পারে সহজেই।
(ঙ) শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আন্তঃসম্পর্ক গড়ে ওঠে : এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষার্থী সম্পর্ক গড়ে ওঠে,ফলে শিক্ষার্থীরা নিঃসংকোচে পাঠগ্রহণ করতে পারে।
(চ) শৃঙ্খলা : প্রত্যেক আলোচনার নিজস্ব কিছু কৌশল বা নিয়ম থাকে এবং আলোচনা কালে ওই নিয়ম শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে মেনে চলতে হয়। ফলে শ্রেণি শৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জীবনেও শৃঙ্খলা গড়ে ওঠে। যে-কোনো শিক্ষণের মূল শর্ত হল শৃঙ্খলা।
(ছ) স্থায়ীভাবে চারিত্রিক পরিবর্তন: আলোচনা পদ্ধতি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটায়। যেমন—শিক্ষার্থীরা জড়তামুক্ত হয়, লজ্জা-সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারে।
আলোচনা পদ্ধতির অসুবিধা (Disadvantages of Discussion Method) :
আলোচনা পদ্ধতির কতকগুলি অসুবিধাও আছে। যেমন—
(ক) পরিকল্পনা করা অসম্ভব : আলোচনা পদ্ধতি পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়। কিন্তু
অনেক সময় পরিকল্পনা সঠিক করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে পরিবেশ শিক্ষকের পক্ষে যথাযথ পরিকল্পনা অনেক সময় সম্ভব হয় না।
(খ) সময়সাপেক্ষ ব্যাপার : আলোচনা পদ্ধতিতে পাঠ-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ শেষ করা সম্ভব হয় না।
(গ) বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা :
শিক্ষার্থী বেশি হলে শ্রেণিকক্ষে বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া শিক্ষক বা সভাপতি যদি সঠিকভাবে শ্রেণি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে শ্রেণি বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা থাকে।
(ঘ) দক্ষ শিক্ষকের অভাব : অনেক সময় দক্ষ শিক্ষকের অভাবে এই পদ্ধতিতে সুষ্ঠুভাবে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না।
(ঙ) হীনম্মন্যতাবোধ : আলোচনা পদ্ধতিতে সাধারণত দল গঠনের সময় ভালো ছেলে- মেয়েদের নির্বাচন করা হয়। ফলে অন্য শিক্ষার্থীরা হীনম্মন্যতায় ভোগে, যা শিক্ষণের ক্ষেত্রে একেবারেই কাম্য নয়।