Q. ইক্ষু বা আখ এবং চা চাষের জন্য উপযোগী অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ আলোচনা করো |
চা চাষের অনুকূল পরিবেশ:
প্রাকৃতিক পরিবেশ:
জলবায়ু: চা ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের গুল্ম-জাতীয় উদ্ভিদ।
উষ্ণতা: 24°C-27°C উম্নতা চা গাছের জন্য দরকার।
বৃষ্টিপাত : 200-500cm বৃষ্টি চা চাষের আদর্শ।
সূর্যকিরণ: চা গাছ তীব্র সূর্যকীরণ সহ্য করতে পারে না তাই ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষ দরকার।
মৃত্তিকা: হালকা দোআঁশ মাটি চা গাছের পক্ষে আদর্শ | হালকা জৈব পদার্থ, অল্প পরিমাণে অম্ল থাকলে চা চাষে ভালো হয়।
ভূমি: চা গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে গাছের ক্ষতি হয়| দ্রুত জলনিকাশি ব্যবস্থা থাকা দরকার।
অর্থনৈতিক পরিবেশ:
শ্ৰমিক: চা গাছ রোপণ, পরিচর্যা, আগাছা, জঙ্গল ছাঁটা, বিশেষভাবে চা পাতা তোলার জন্য সুদক্ষ শ্রমিক দরকার। মহিলারা একমাত্র পারদর্শী।
মূলধন : চা গাছ রোপণের পর দু-বছর বাগান থেকে পাতা পাওয়া যায় না। পরিচর্যার জন্য খরচের প্রয়োজন হয়।
ভারতে ইক্ষুচাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ:
ভারতে কতকগুলি অনুকূল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে ইক্ষু চাষ বিকাশ লাভ করেছে। এদেশে ইক্ষু চাষ বিকাশ লাভ করার অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ বর্ণনা করা হল—
অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ:
ইক্ষু ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় মণ্ডলের উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ুর ফসল। এই ফসল উৎপাদনের
অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি হল—
(a) জলবায়ু:
(i) উষ্ণতা: বার্ষিক 20°C-26°C গড় উষ্ণতা ইক্ষুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ফলনের সহায়ক |তবে তুহিন ও কুয়াশা ইক্ষু চাষের পক্ষে ক্ষতিকারক।
(ii) বৃষ্টিপাত: ইক্ষু উৎপাদনের জন্য বার্ষিক 75-150 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন হয়। তবে অধিক বৃষ্টি যেমন আখচাষের ক্ষতি করে, তেমনই স্বল্প বৃষ্টিতে আখের রস হ্রাস পায়।
(iii) সমুদ্রবায়ু: সামুদ্রিক লবণাক্ত আবহাওয়া ইক্ষুরসে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক।
(b) মৃত্তিকা: ইক্ষুচাষের জন্য চুন ও লবণ মিশ্রিত সুষম জলধারণ ক্ষমতাযুক্ত দো-আঁশ, পলি ও রেগুর মাটি উপযোগী।
(c) ভূপ্রকৃতি: উত্তম জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত ঈষৎ ঢালু সমতল জমি ইক্ষুচাষের পক্ষে আদর্শ | ইক্ষু গাছের গোড়ায় জল দাঁড়ালে ইক্ষু গাছের ক্ষতি হয় |
(ii) অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ:
(a) সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক: ইক্ষু শ্রমনিবিড় ফসল। ইক্ষু চারা রোপন, ইক্ষু গাছের পরিচর্যা, ইক্ষু গাছ সময় মতো কাটা প্রভৃতির জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে ইক্ষু চাষের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিকের অভাব হয় না |
(b) উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: ইক্ষু কাটার পর 24 ঘণ্টার মধ্যে চিনি কলে না পৌঁছোতে পারলে ইক্ষুতে রসের পরিমাণ কমে যায়। ভারতে ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চলগুলি সড়ক ও
রেলপথের মাধ্যমে চিনি কলগুলির সঙ্গে সংযুক্ত| ফলে সমস্যা হয় না।
(c) সমৃদ্ধ বাজার: ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে চিনির যথেষ্ট চাহিদা থাকায় ইক্ষু চাষের প্রসার সম্ভব হয়েছে |