ব্যাকরণ শিক্ষাদানের পদ্ধতি (Method of Teaching Grammar)
ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে,
“যে বিদ্যার দ্বারা কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ
করিয়া তাহার স্বরূপটি আলোচনা করা হয়, এবং
সেই ভাষার পঠনে ও লিখনে এবং তাহাতে
কথোপকথনে শুদ্ধরূপে তাহার প্রয়োগ করা
যায়, সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ
(Grammar) বলে।”
Dr. H. Sweet তাঁর “New English
Grammar” গ্রন্থে বলেছেন, “Grammar is
the Practical analysis of a language,
its anatomy.”
Eric Partidge এর মতে “Language
is the vehicle of our thoughts and
feelings and of our stories, whether
true or not, and kept in motion;
the Motive Power (the steam, the
electricity) is the mind; and the
speech sounds are the air and space
through which are movement of the
vehicle takes place.”
আর একটি গ্রন্থে বলা হয়েছে— “ব্যাকরণ
হল ভাষার কঙ্কাল কিন্তু কঙ্কালের সুবিন্যাসের
ফলেও তো দেহ শ্রীমণ্ডিত হয়। সুতরাং
সাহিত্যের ভিত্তিকে পাকা করতে হলে তার
কাঠামো বা কঙ্কালকেই জানতে হবে।”
ব্যাকরণ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা :-
(ক) ব্যাকরণের জ্ঞান ভাষাকে শুদ্ধভাবে প্রয়োগ করতে সাহায্য করে|
(খ) উপযুক্ত শব্দ প্রয়োগে সাহায্য করে।
(গ) শুদ্ধ বর্ণ বিন্যাসে সাহায্য করে।
(ঘ) যদি, ছেদ বা বিরতি চিহ্নের যথাযথ জ্ঞান
হয়।
(ঙ) সন্ধি সম্পর্কে জ্ঞান হয়।
(চ) সমাস সম্পর্কে জ্ঞান হয়।
(ছ) কারক, বিভক্তি সম্পর্কে জ্ঞান হয় ।
(জ) ছন্দবিধির জ্ঞান হয় ।
(ঝ) অব্যয় ও নিপাতনের ব্যবহার শেখা যায়।
(ঞ) উক্তি, প্রত্যুক্তির ক্ষেত্রে সম্যক জ্ঞান হয় ।
(ট) বাক্য বিশ্লেষণ করতে পারে।
(ঠ) বাগ্ধারা ও বিশিষ্ট অর্থযুক্ত শব্দ প্রয়োগ
করতে পারে।
(ড) অন্যভাষায় ব্যাকরণ জানার আগ্রহ বাড়ে।
(ঢ) উচ্চারণের জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে।
(ণ) ব্যাকরণের জ্ঞান লেখায় ও কথাবার্তায়
শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে ছাত্রদের
সাহায্য করে।
(ত) ব্যাকরণের নিয়ম কানুন জানা থাকলে
ছাত্রদের ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা বেড়ে যায়।
(থ) ব্যাকরণের চর্চা করলে বাংলা / যেকোনো
ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় ।
(দ) বাংলা ভাষায় / যেকোন ভাষায় লব্ধ
ব্যাকরণের জ্ঞান অন্য ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে
সহায়তা করে।
ব্যাকরণ শিক্ষাদানের অসুবিধা:
(ক) ছাত্ররা ব্যাকরণ পড়তে বিশেষ আগ্রহবোধ করে না।
(খ) ছাত্রদের উপযোগী ভালো ব্যাকরণ বইয়ের অভাব।
(গ) ব্যাকরণ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরাতন পদ্ধতি (deductive) অনুসরণ করে।
(ঘ) ব্যাকরণ শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত
শিক্ষকের অভাব।
ব্যাকরণ শিক্ষাদানের পদ্ধতি ( Method of Teaching Grammar ):
সূত্রপদ্ধতি ( Formula method ):
ছাত্রদের বারবার আবৃত্তি করে ব্যাকরণের
সূত্রগুলি মুখস্থ করাতে হবে। এই পদ্ধতিতে ব্যাকরণ শিক্ষা নিলে ছাত্ররা কোনরূপ আকর্ষণ বোধ করে না, তার কাছে বিষয়টি নীরস মনে হয়। এই পদ্ধতিতে ছাত্ররা অনেক সূত্রই না বুঝেই মুখস্থ করে। এই পদ্ধতির দ্বারা লব্ধ জ্ঞান ছাত্রছাত্রীরা বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে না। এটি বিজ্ঞানসম্মতও নয় আবার মনস্তত্ত্ব সম্মতও নয়।
ব্যাকরণ পাঠ্যপুস্তক পদ্ধতি( Textbook
method ) :
এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা অতিমাত্রার পুস্তক কেন্দ্রিক ও মুখস্থ নির্ভর হয়ে পড়ে।
ভাষা পদ্ধতি ( Language use
method ) :
সাহিত্য পড়ানোর সময় ভাষার মধ্যে ব্যাকরণের নানা প্রয়োগ দেখানো হয়। তবে এতে অনেক সময় লাগে এবং ব্যাকরণ শিক্ষা আংশিক হয়।
প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি (Contactual
method) :
ভাষা শেখানো সময় প্রসঙ্গক্রমে ব্যাকরণের যে বিষয়গুলি আসে সেগুলি শেখানো হয়। এতে ধারাবাহিক ভাবে সবকিছু শেখানো যায় না এবং এই পদ্ধতিতে ব্যাকরণেরও সবকিছু শেখানো যায় না৷
বিশ্লেষণ পদ্ধতি ( Analytic method ) :
এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সূত্রগুলিকে উদাহরণের
সাহায্যে বারবার বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীদের
কাছে বারবার উপস্থাপন করা হয়।
অবরোহী পদ্ধতি ( Deductive
method) :
ছাত্রদের ব্যাকরণ শিক্ষা দেওয়ার
জন্য এই পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই পদ্ধতি অনুসারে জানা থেকে অজানা, পরিচিত থেকে অপরিচিতে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।
আরোহী পদ্ধতি (Inductive method):
বর্তমানে এই পদ্ধতিটিই শ্রেষ্ঠ । এটি অবরোহী
পদ্ধতির এই পদ্ধতিতে উদাহরণ গুলিকে বিশ্লেষণ করে সূত্রমূলক সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়।