বাংলা রচনা : বিজ্ঞান ও কুসংস্কার
ভূমিকা :
“যে জাতি জীবন হারা অচল অসাড়
পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার।”
—-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তি দিয়েই প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করেছে; নানান প্রতিকূলতাকে জয় করে লক্ষ্যে পৌঁছেছে, বিচারবোধ, বুদ্ধি, সংগ্রাম করার মানসিকতায় জীবজগতের কাছে সাফল্য এনে দিয়েছে। আজ মানুষ সভ্যতার গর্বে গর্বিত, তবে এসবের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান।
কুসংস্কারের স্বরূপ :
কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তি বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস, মিথ্যা ধারণা। ইংরেজিতে একে বলে Superstition, যা বহুদিন ধরে চলে আসছে। এমন অন্ধবিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারণে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। যে বিশ্বাসের পিছনে কোন যুক্তি নির্ভরতা নেই, কোন তথ্যভিত্তিক প্রমাণাদি নেই , তাকেই আমরা কুসংস্কার বলি। অর্থাৎ যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসই হল কুসংস্কার।
বিজ্ঞানের স্বরূপ :
বিজ্ঞান কথাটির অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। অর্থাৎ কোন কিছু অজানা বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে কোন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহন। সেক্ষেত্রে একই কার্যকরণের ফলে একই ফল হয়। সেটাই অমোঘ সত্য। সেটাই বিজ্ঞান। এখানে আছে শুধু বিচার-বিবেচনা, যুক্তি দিয়ে বিশেষ জ্ঞানে পৌছানো।
কুসংস্কারের বিভিন্ন প্রকাশ :
একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে, কম্পিউটার, রোবট ইত্যাদির যুগে পাহাড়ের মত উচু করে দাঁড়িয়ে আছে হাচি, টিকটিকি, পিছু ডাকা আরও কত কী। ভোরের স্বপ্ন নাকি বিফল হয় না, মেয়েদের বাম চোখ নাচলে নাকি শুভ হয় অপরপক্ষে ডান চোখ নাচা নাকি ভারি অপায়া, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া মেয়েদের চুল কাটা ভূতের উপস্থিতি প্রভূতি। এছাড়া এমনকি পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সময় ঝাঁট দেখেছিলেন বলে সেদিনটি আর কাজেই যাওয়া হল না, এইরকম অনেক হাজার হাজার নাগপাশে আমাদের দিনক্ষণ বাঁধা।
কুসংস্কার দূরীকরণে আমাদের করণীয় :
কুসংস্কার দূরীকরণের প্রধান হাতিয়ার হল বিজ্ঞান। মানুষের বিজ্ঞান চেতনাকে বৃদ্ধি করতে পারলেই এই দূরারোগ্য ব্যধি থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান পরিচালিত বিতর্ক সভা, আলোচনা চক্র, প্রদর্শনাদি অনেক সুফল দিতে পারে।
উপসংহার :
বিজ্ঞান চেতনাই পারে মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্তি দিতে। তাই সব কিছুকে যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, বিচার করে গ্রহন করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আর তার জন্য চাই শিক্ষা , সার্বিক শিক্ষা । শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কুসংস্কারের অপসারণ সম্ভব।