জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা বিল ২০১৩

National Food Security Bill 2013

ভূমিকা :

ধনের ধর্ম যে অসাম্য তা ‘লােকহিত’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছিলেন। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ যেখানে খেতে পান না, ঠিক তার বিপরীতে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের অপরিমিত ধন-ঐশ্বর্য রয়েছে। এই ধনবৈষম্য আমাদের খাদ্যের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে। যার ফলে দেশের অধিকাংশ মানুষ অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে দিন কাটায়। একবিংশের এই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে এখনও মানুষ বেঁচে থাকার সামান্য খাদ্যটুকু পায় না।

খাদ্য সুরক্ষা বিলের প্রয়ােজনীয়তা:

দেশের সমস্ত মানুষ যাতে ঠিক মতাে খেতে পায় তার জন্যে এই এই বিল আনা হয়।সেপ্টেম্বর ১২ তারিখে এই বিল কার্যকরী হয়েছে। আমাদের দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে নির্দিষ্ট পরিমান ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য সরবরাহের কথা বলা হয়েছে এই বিলে। সেই লক্ষ্যে যে নির্দিষ্ট নিয়মগুলি গৃহীত হয়েছে তা হলাে :
১। একজন মানুষ প্রতিমাসে ৫ কেজি খাদ্য শস্য পাবেন।
২। প্রতি কেজি চাল ৩ টাকা, গম ২ টাকা এবং মােটা দানা খাদ্যশস্য ১ টাকা হারে পাবেন।
৩। গর্ভবতী মহিলা, সদ্য প্রসূতি মায়েরা এবং অনাহারে শিশুরা বিনামূল্যে খেতে পাবে।

খাদ্য সুরক্ষা বিলের সুবিধা:

লােকসভায় ২৬ অগস্ট খাদ্য সুরক্ষা বিল পাস হয়। এই বিলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিশু বৃদ্ধ এবং গর্ভবতী জননীদের সম্পর্কে বেশকিছু সুবিধার কথা ঘােষণা করা হয়। যেমন:
১। ৭৫ ভাগ গ্রামীণ মানুষ এবং ৫০ ভাগ শহরের মানুষ তিন বছরের জন্যে প্রয়ােজনীয় খাদ্য পাবেন।
২। Public Distribution System (PDS) অনুযায়ী ৬ মাস থেকে ৬ বছরের মধ্যে যাদের বয়স তারা সঠিক খাদ্য বিনামূল্যে  পাবে।
৩। অন্যদিকে যে শিশুদের বয়স ৬ থেকে ১৪ তারা মিড-ডে-মিল পাবে।
৪। গর্ভবতী মহিলা এবং সদ্য প্রসূতি মায়েরা ৬ হাজার টাকা পাবেন গর্ভধারণ থেকে শিশু জন্মগ্রহণের ৬ মাস পর্যন্ত।

রেশন ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা:

জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যে রেশন ব্যবস্থাকে সবার কাছে পৌঁছে দেবার।কথা বলা হয়েছে এই বিলে। পরিবারের সব থেকে বয়স্ক মানুষ যিনি কিংবা যিনি সংসারের প্রধান ব্যক্তি তার নামে রেশনকার্ড বিলি করা হবে। আর এ জন্যে গঠন করা হয়েছে ‘State Food Commissions.’ এই কমিশনের কাজ হলাে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ যাতে সমস্ত সুযােগ সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা করা। বলাবাহুল্য এই বিলের দ্বারা খাদ্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এরফলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। বণ্টন ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শস্য সুরক্ষা ব্যবস্থা, পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি প্রক্রিয়াগুলি যাতে সুনিশ্চিত হয় তার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে এই বিলে।

খাদ্য সুরক্ষা বিলের সমালােচনা:

কেন্দ্রীয় সরকারের আনা খাদ্য সুরক্ষা বিল রাজনৈতিক স্বার্থে আনা হয়েছে বলে বিরােধিরা মনে করেন তাদের বক্তব্য শুধুমাত্র ভােটের অঙ্ক অনুসারে এই বিলটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তারা মনে করে, শুধুমাত্র সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া আর বিশেষ কোনাে লাভ হবে না এই বিলের মাধ্যমে বলে বিরােধীদের মনে হয়েছে। 
১। এই বিল খাদ্য সুরক্ষা বিল নয়, এ হলাে ভােট সুরক্ষা বিল।
২। ভােট বৈতরণী পার করার জন্যে দরিদ্র মানুষকে কাছে ডাকার ছদ্ম-ভালােবাসার প্রয়াস হলাে এই বিল।
৩। সুনির্দিষ্ট পরিকাঠামাে না থাকার কারণে এই বিল সদর্থক কোনাে ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবে না।

স্বচ্ছতা ও গ্রহণযােগ্যতা :

এই বিলের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযােগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রাজনীতির অঙ্গুলিহেলনের মধ্যে সাধারণ মানুষ যে খুব সুবিধা পাবে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। ফলে এই বিল নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থেকেই যায়। তাছাড়া নির্দিষ্ট রাজনীতির মানুষরা ছাড়া অন্যেরা কতখানি উপকৃত হবে সে বিষয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে।

উপসংহার :

খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে বিতর্ক আছে। তবু সাধারণ মানুষের যদি সামান্যতম কল্যাণ হয় তবেই সমস্ত বিতর্কের অবসান হবে। নিত্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও আগুন ছোয়া বাজার যেভাবে মানুষের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে, সেখানে খাদ্য সুরক্ষা বিল  যদি আশার আলো দেখায়, তাহলে আমরা খুশি হবাে।