
অসুখী একজন – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা
প্রশ্ন : ‘ অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলােচনা করাে।
উত্তর : ভূমিকা : নামকরণের মধ্য দিয়ে কোনাে কবিতার ভাববস্তু বা মর্মার্থের আভাস পাওয়া যায়। চিলির কবি পাবলাে নেরুদা রচিত স্প্যানিশ ভাষার একটি কবিতার অনুবাদ করে নবারুণ ভট্টাচার্য নামকরণ করেছেন ‘অসুখী একজন’। অনুবাদক মূল কবিতার ভাব অনুযায়ী নামকরণ করেছেন।
মূল বিষয় : ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আলােচ্য কবিতার কথক তার প্রিয়তমা নারীকে অপেক্ষায় রেখে দূরে চলে যান এবং আর কোনােদিনই ফিরে আসেন না। সাধারণ, স্বাভাবিক ঘটনার মধ্য দিয়ে জীবনপ্রবাহ চলতে থাকে, কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও প্রিয়তমার অপেক্ষা শেষ হয় না। এরপর গৃহযুদ্ধের বীভৎসতা কেড়ে নেয় অসংখ্য প্রাণ, ধ্বংস করে বাড়িঘর, শহর পরিণত হয় শ্মশান বা কবরখানায়। মানুষ ক্রমে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারায়। মানুষের স্বপ্ন পুড়ে যায় যুদ্ধের আগুনে।
নামকরণের সার্থকতা বিচার : মৃত্যুপুরীর মাঝে বেঁচে থাকে শুধু অপেক্ষারতা মেয়েটি। সে মৃত্যু নয়, জীবনের প্রতীক। সেই মেয়েটি একাধারে কথকের মাতৃভূমি, ভালােবাসা ও মানবতার প্রতিমূর্তি। তাই সে মৃত্যুহীন। দীর্ঘ অপেক্ষা, অপূর্ণ প্রতীক্ষা আর যুদ্ধের বীভৎসতা তাকে অসুখী করেছে। সে অসুখী একজন। অন্যদিকে কথক তার প্রিয় নারী, প্রিয় মাতৃভূমিকে অপেক্ষায় রেখে দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং কখনােই ফিরে আসতে পারেননি—তাই কথকও বিচ্ছেদের বেদনায় অসুখী। অতএব, দু-দিক থেকেই অসুখী একজন’ নামকরণটি সার্থক, তাৎপর্যপূর্ণ এবং ব্যঞ্জনাময়।
প্রশ্ন : যুদ্ধের নেতিবাচক ভাবের পাশাপাশি যে মানবিক আবেদন অসুখী একজন’ কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে, তা আলােচনা করাে।
উত্তর : যুদ্ধের নেতিবাচকতা : পাবলাে নেরুদার লেখা কবিতার বাংলা অনুবাদ ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক চিলির গৃহযুদ্ধের কারণে প্রিয়জন, পরিবার, বাসভূমি তথা স্বদেশ ছেড়ে যান। আর অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে যান তার প্রিয়তমাকে। তার চলে যাওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে যুদ্ধ দেখা দেয়। যুদ্ধের প্রভাবে মানবতার অপমৃত্যু ঘটে। মানুষের নিরাপদ আশ্রয়, মন্দির, শহর, জনপদ ধ্বংস হয়ে যায়। শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানাে লােহা, ভাঙা মূর্তি, রক্তের কালাে দাগ। চারদিকে কেবল রক্তপাত, মৃত্যু আর ধ্বংসের ছবি। গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত জীবনের চিত্রেই কবি যুদ্ধের নেতিবাচক ভাবটি প্রকাশ করেছেন।
মানবিকতা:এই ধ্বংসচিত্রের পাশাপাশি কবি দেখিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ কথা বলে না। ধ্বংসের মধ্যেও থেকে যায় জীবনের স্পন্দন। মানবতা, স্বদেশপ্রেম মৃত্যুহীন। তাই শিশু ও বাড়িরা খুন হলেও কবির প্রিয়তমার মৃত্যু হয় না। মেয়েটি আসলে মানবিক ভালােবাসা তথা মাতৃভূমির প্রতীক। ধ্বংসলীলার মধ্যেও সে চির-অপেক্ষায় থেকে যায়। যুদ্ধের ফলশ্রুতি যতই ধ্বংসাত্মক, বীভৎস হােক, জীবনকে, মানবতাকে সে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে না। তাই ছড়ানাে কাঠকয়লা, দোমড়ানাে লােহা, ভেঙে পড়া মূর্তি আর রক্তের দাগের মধ্যেও বেঁচে থাকে সেই মৃত্যুহীন নারী।‘ছেড়ে আসার মধ্য দিয়ে যে কবিতা শুরু হয়েছিল, থেকে যাওয়া দিয়ে তা শেষ হয়। তাই সমগ্র কবিতায় মানবিক আবেদন। প্রবলভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
অসুখী একজন – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা
প্রশ্ন : “আমি চলে গেলাম দূর … দূরে।”—বক্তা চলে যাওয়ার পর কী কী ঘটল?
উত্তর : পরবর্তী ঘটনা : পাবলাে নেরুদা রচিত স্প্যানিশ ভাষায় লেখা কবিতার নবারুণ ভট্টাচার্য কৃত বাংলা অনুবাদ পাঠ্য ‘অসুখী একজন ‘ কবিতাটি। কবিতার কথক তার প্রিয়তমা তথা তার স্বদেশকে দরজায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে অনেক অনেক দূরে চলে গিয়েছেন। কথকের প্রিয়তমা অনন্ত অপেক্ষায় দিন গুণতে থাকে কথকের ফিরে আসার। সময়ের স্রোত বয়ে যায় নিজের নিয়মে। বাইরের জগতে ঘটে চলে নানান পরিবর্তন। কিন্তু কথকের প্রেয়সীর প্রতীক্ষার অবসান হয় । দীর্ঘসময় চলে গেলেও কথক ফিরে আসেন না। বহমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা দিয়ে চলে যায় কুকুর, হেঁটে যায় গির্জার এক সন্ন্যাসিনী। ক্রমে এক সপ্তাহ, এক বছর কেটে যায়। বৃষ্টি নামে, ধুয়ে যায় কথকের পায়ের দাগ, নতুন ঘাসে ঢেকে যায় তার হেঁটে যাওয়ার চিহ্ন। সময় যত এগিয়ে যায়, সমস্ত বিচ্ছেদের যন্ত্রণাকে বুকে চেপে রেখে প্রেয়সীর প্রতীক্ষা তত কঠিন হয়। বিচ্ছেদবেদনায় ভারাক্রান্ত বছরগুলি তার কাছে পাথরের মতাে ভারী মনে হয়। তারপর একসময় যুদ্ধ আসে। যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রাণ কেড়ে নেয় অসংখ্য মানুষের। নিরাপদ আশ্রয়, শহর-নগর যুদ্ধের আগুনে জ্বলে ছারখার হয়ে যায়। শুধুমাত্র মৃত্যুঞ্জয়ী অনন্ত প্রেমের সাক্ষী রূপে বেঁচে থাকে কথকের প্রিয়তমা, কথকের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়।
প্রশ্ন : তারপর যুদ্ধ এল’—কোন্ ঘটনার পর যুদ্ধ এল? যুদ্ধের ফলশ্রুতি কী হয়েছিল?
উত্তর : যুদ্ধপূর্ব ঘটনা : পাবলাে নেরুদার লেখা কবিতার অনুবাদ অসুখী একজন’কবিতার কথক তার বাসভূমি তথা প্রিয় নারীকে দরজায় অপেক্ষায় রেখে চলে গিয়েছিলেন দূরে। আর কখনও ফেরেননি। সময়ের স্রোতে বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেল কথকের পায়ের দাগ, তার চলে যাওয়ার পথে ঘাস জন্মাল। বছরগুলাে পাথরের মতাে ভারী হয়ে নেমে এল দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির মাথার উপর। এইসব ঘটনার পর
একদিন যুদ্ধ শুরু হল।
যুদ্ধের ফলশ্রুতি : মানুষের শান্ত জীবনে ভয়াবহ যুদ্ধ ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতাে নেমে এল। সমতলে যেখানে মানুষের বসতি ছিল, সেখানে আগুন ধরে গেল। মন্দির থেকে টুকরাে টুকরাে হয়ে ছিটকে পড়ল দেবতাদের মূর্তিগুলাে। মানুষের দেবতার প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ হল। প্রাণের প্রতীক শিশুরা এবং আশ্রয়ের প্রতীক বাড়িরা খুন হল।। কথকের মিষ্টি বাড়ি, ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়ে থাকার বারান্দা, গােলাপি। গাছ, চিমনি, জলতরঙ্গ সব চুর্ণ হয়ে গেল। সারা শহরে পড়ে রইল। কাঠকয়লা, দোমড়ানাে লােহা, ভাঙা মূর্তি, রক্তের কালাে দাগ। শহর জুড়ে শুধু রক্তপাত, ধ্বংস আর মৃত্যুর ছবি। আলােচ্য কবিতায় এভাবেই যুদ্ধের বীভৎস ফলশ্রতি প্রকাশ পেয়েছে। তবু জীবন, মানবতা, হৃদয়ের ভালােবাসা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। ধ্বংসের মধ্যেও জীবনের প্রতীক হয়ে রয়ে যায় মৃত্যুঞ্জয়ী সেই মেয়েটি। কথকের ফিরে আসার
প্রত্যাশায় সে দাঁড়িয়ে থাকে।
অসুখী একজন – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা
প্রশ্ন : ‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হলাে না।’—মেয়েটির পরিচয়। দাও। মেয়েটির মৃত্যু হতে পারত কেন? তার মৃত্যু না হওয়ার মধ্য দিয়ে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
অথবা, আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়’—মেয়েটি কীসের প্রতীক হিসেবে কবিতায় প্রতিভাত হয়েছে? ‘মেয়েটি আমার অপেক্ষায়’ এর দ্বারা কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : মেয়েটির পরিচয় : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার বাংলা অনুবাদ ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক যখন গৃহযুদ্ধের অনিবার্য কারণে নিজ বাসভূমি ছেড়ে চলে গেলেন দূরে তখন দরজায় তার ফেরার অপেক্ষায় রেখে গেলেন নিজের প্রিয় নারীকে। ব্যাপক অর্থে, সে কথকের স্বদেশ তথা প্রেম ও মানবতার প্রতীক।
মৃত্যুর সম্ভাবনা : কথকের ভালােবাসার মেয়েটির মৃত্যু হতে পারত, কারণ কয়েক বছরের মধ্যে ভয়ংকর যুদ্ধ বাধল। সেই যুদ্ধে নিস্পাপ শিশুরাও রেহাই পেল না। সমস্ত সমতলে ছড়িয়ে পড়ল যুদ্ধের আগুন। অসংখ্য প্রাণ আর বাড়িঘরের বিনাশ ঘটল। এমন ভয়ংকর যুদ্ধে যে-কোনাে মুহূর্তে সেই মেয়েটিরও মৃত্যু হতে পারত।
মৃত্যু না হওয়ার তাৎপর্য : তার মৃত্যু না হওয়ার মধ্য দিয়ে কবি জীবনের জয়গান করেছেন এবং মৃত্যুহীন মানবতার কথা বলতে চেয়েছেন। কারণ সেই মেয়েটি শুধু দরজায় কথকের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী নয়—সে কথকের স্বদেশ ও মানবতার প্রতীক। যুদ্ধ যত ভয়ংকরই হােক, তা মানুষের আশা-বিশ্বাস-ভালােবাসাকে মুছে ফেলতে পারে না। ধ্বংসস্তুপের উপরে আবার জীবন জেগে ওঠে। স্বদেশপ্রেম আর মানবতার কখনও মৃত্যু হয় না। কথকের অপেক্ষায় তার বেঁচে থাকার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের শেষে নতুন দিনবদলের স্বপ্ন বেঁচে থাকে, বেঁচে থাকে ভালােবাসার অনুভূতি। তাই মেয়েটির মৃত্যু না হওয়ার মধ্য দিয়ে কবি জীবনের সুন্দর রূপ প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
অসুখী একজন – মাধ্যমিক
প্রশ্ন : ‘যেখানে ছিল শহর/সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লাঅসুখী একজন’কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখাে।
উত্তর : শহরের পরিণতি : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার অনুবাদ ‘অসুখী একজন’কবিতার কথক গৃহযুদ্ধের অনিবার্য কারণে নিজের দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তিনি আর ফিরতে পারেননি। তার ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনেছে দরজায় দাঁড়ানাে সেই মেয়েটি। কয়েকবছর পর ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হল। যেখানে একসময় প্রাণচঞ্চল শহর ছিল সেখানে
ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানাে লােহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা, রক্তের কালাে দাগ। আর সেই অপেক্ষারত মেয়েটিকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।
শহরের এই পরিণতির জন্য দায়ী ভয়ংকর যুদ্ধের বীভৎসতা। যুদ্ধ যখন দেখা দিল তখন মানুষের জীবনে রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড় যেন ভেঙে পড়ল। সমতল জুড়ে আগুন লেগে গেল, শিশু আর বাড়িরা খুন হল। অর্থাৎ মানুষের আশ্রয় ও প্রাণ, বস্তুজগৎ ও প্রাণীজগৎ ছারখার হয়ে গেল। চূর্ণ হয়ে গেল মানুষের নিরাপদ বাসস্থান, সাজানাে বাগান। মৃত্যু ঘটল সাজানাে শহর, জনপদের। শহর জুড়ে পড়ে থাকা দোমড়ানাে লােহা, রন্তের কালাে দাগ যুদ্ধের প্রবল ধ্বংসাত্মক রূপকে প্রকাশ করল। যুদ্ধবাজ সাম্রাজ্যবাদীরা যতই ধ্বংসের পরিবেশ রচনা করুক, ধ্বংসস্তুপের উপর জেগে রইল মৃত্যুহীন মানবতার প্রতীক অপেক্ষারতা সেই মেয়েটি, যুদ্ধশেষে নতুন জীবন সুচনার বার্তা নিয়ে।
অসুখী একজন – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন :
প্রশ্ন : অসুখী একজন’কবিতায় ‘অসুখী’কে? সে কেন অসুখী’?
উত্তর : যে অসুখী : পাবলাে নেরুদার কবিতার অনুবাদ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘অসুখী’ হল কথকের প্রিয়তমা যে কথকের ফিরে আসার পথ চেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আসলে মেয়েটির মধ্যে দিয়ে
কবি বােঝাতে চেয়েছেন সমগ্র স্বদেশ তথা মানবতা অসুখী। অন্যদিকে মাতৃভূমি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে কথকও বিচ্ছেদবেদনায় অসুখী।
কারণ : দুপক্ষেরই অসুখী হওয়ার একটি কারণ বিচ্ছেদ, ব্যবধান। অন্য কারণ হল ভয়ংকর যুদ্ধ আর তার ধ্বংসাত্মক বীভৎস ফলশ্রুতি।
প্রশ্ন : আমি তাকে ছেড়ে দিলাম’–আমি’ কে? বক্তা কাকে ছেড়ে দিলেন? তিনি তাকে কী অবস্থায় রেখে এলেন?
উত্তর : ‘আমি’ : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার অনুবাদ ‘অসুখী একজন’কবিতায় আমি বলতে কবিতার কথকরূপী সৈনিককে বােঝানাে
হয়েছে।
যাকে ছেড়ে দিলেন : বক্তা তার প্রিয় নারীরূপী মাতৃভূমিকে, ভালােবাসার বন্ধনকে ছেড়ে দিলেন।
যে অবস্থায় রেখে এসেছিলেন : বক্তা তার প্রিয় নারী তথা স্বদেশকে অপেক্ষারত অবস্থায় দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে এলেন। অপেক্ষারতা জানত না বক্তা আর কখনও ফিরে আসবেন না। ফলে তার প্রতীক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকল। বিচ্ছেদবেদনায় আর
প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশার মধ্যে বক্তা তাকে রেখে এলেন।
প্রশ্ন : একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল –সপ্তাহ আর বছর কেটে যাওয়ার মাধ্যমে কী বােঝানাে হয়েছে? এইসময়ের মধ্যে কী কী ঘটল?
অথবা, একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল গির্জার নান’এই বর্ণনার মধ্য দিয়ে বা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরা : বক্তব্য : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার বাংলা অনুবাদ ‘অসুখী। একজন’ কবিতায় সপ্তাহ আর বছর কেটে যাওয়া অথবা গির্জার এক নান হেঁটে যাওয়ার মাধ্যমে সময়ের প্রবহমানতাকে বােঝানাে হয়েছে। সময় নিজের নিয়মে অতিক্রান্ত হয়।
যা ঘটেছিল : যে পথ দিয়ে কবি তথা কথক হেঁটে চলে গেছেন এই দীর্ঘসময়ের মধ্যে মাতৃভূমির সেই পথে তার পায়ের দাগ বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়ে ঘাস জন্মাল। অর্থাৎ সময় তার স্মৃতিচিহ্নটুকু মুছে দিল। দরজায় অপেক্ষারতা প্রিয় নারীর মাথার উপর পাথরের মতাে একটার পর একটা বছর নেমে এল। অর্থাৎ অপেক্ষা আরও দীর্ঘ এবং কঠিন। হয়ে উঠল।
অসুখী একজন – মাধ্যমিক
প্রশ্নঃ ‘ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ’-কে, কার পায়ের দাগ ধুয়ে দিল? পায়ের দাগ ধুয়ে দেওয়ার তাৎপর্য কী?
উত্তর : যে, যার : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার অনুবাদ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বৃষ্টির জল কবিতা কথকের পায়ের দাগ ধুয়ে দিল।
তাৎপর্য : ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক তার প্রিয় নারীকে দুয়ারে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে মাতৃভূমি ছেড়ে একদিন দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার বিদায়পথে পায়ের দাগ পড়েছিল। সপ্তাহ থেকে বছর কেটে গেলেও কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। বৃষ্টিতে মুছে গেল তার পায়ের চিহ্ন। অর্থাৎ, সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার স্মৃতিচিহ্নগুলােও ক্রমশ আবছা হয়ে গেল। নতুন ঘাস গজিয়ে।
যেমন পথকে ঢেকে দিল তেমনই তার স্মৃতির স্থানে ভিড় করে এল নানান নতুন ঘটনা, কর্মকাণ্ড।
প্রশ্ন : ‘নেমে এল তার মাথার ওপর।’-কার মাথার উপর কী নেমে এল? কীভাবে এবং কেন নেমে এল?
উত্তর : যার উপর, যা নেমে এসেছিল : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার অনুবাদ ‘অসুখী একজন’ কবিতা-কথকের প্রিয় নারীর মাথার উপর একটার পর একটা পাথরের মতাে বছরগুলি পরপর নেমে এল।
যেভাবে এবং যে কারণে নেমে এসেছিল : পাহাড়ে ধস নামলে যেমন একটার পর একটা পাথর নেমে আসে সেভাবেই কথকের ফেরার অপেক্ষায় বছরগুলি নেমে এল। দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় কথক তার ফিরে আসার অপেক্ষায় দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে
গিয়েছিলেন প্রিয় নারীকে, কিন্তু কথক আর ফেরেননি। তার ফিরে আসার অপেক্ষায় বছরগুলি বিচ্ছেদবেদনায় পাথরের মতাে ভারী হয়ে উঠল। তাই বছরগুলি পাথরের মতাে নেমে এল বলা হয়েছে।
অসুখী একজন – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা
প্রশ্নঃ যুদ্ধকে রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতাে বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : রক্তের আগ্নেয় পাহাড়ের মতাে বলার কারণ : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার বাংলা অনুবাদ অসুখী একজন’কবিতায় যুদ্ধকে রক্তের আগ্নেয়পাহাড় বলা হয়েছে। যুদ্ধ জনজীবনে বিপুল রক্তপাত এবং পাহাড়প্রমাণ বিপর্যয় নিয়ে আসে। আগ্নেয়গিরি থেকে যেমন বিস্ফারিত জ্বলন্ত পাথর জঙ্গলে গড়িয়ে পড়ে সমতলে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে তেমনই ভয়াবহ যুদ্ধের আঁচে জনপদ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যুদ্ধের আগুন গ্রাস করে নিরীহ মানুষের শান্ত-স্বাভাবিক জীবনকে। ধ্বংস করে, রক্তাক্ত করে মানুষের আশা-স্বপ্ন-প্রেমকে। তাই যুদ্ধকে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতাে’ বলা হয়েছে।
প্রশ্ন : শিশু আর বাড়িরা খুন হলাে।’—শিশু’ ও বাড়িরা বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? তারা কেন খুন হল?
উত্তর : ‘শিশু’ ও ‘বাড়ির’ স্বরূপ : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার অনুবাদ ‘অসুখী একজন’কবিতায় “শিশু’ ও ‘বাড়িরা’ কথা দুটি আক্ষরিক অর্থে যেমন ব্যবহৃত হয়েছে, তেমনি গভীর অর্থেও প্রযুক্ত হয়েছে
“ শিশু’ হল পরবর্তী প্রজন্ম, স্বদেশের সম্পদ, সরল ও নিস্পাপ মানবতা প্রতীক। বাড়ি শুধু গৃহ নয় পরিবার, আশ্রয়, নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা। বাড়ি হল শান্তি ও মানবতার কেন্দ্রবিন্দু।
খুন হওয়ার কারণ : গৃহযুদ্ধের বীভৎসতায় শিশু ও বাড়িরা খুন হল, যুদ্ধের গ্রাসে নিহত হল হাজার হাজার শিশু আর ধ্বংস হয়ে গেল কতশত বাড়িঘর।
প্রশ্ন : শান্ত হলুদ দেবতারা’-দেবতাদের শান্ত হলুদ’ বলার কারণ কী?
উত্তর : কারণ : পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার অনুবাদ ‘অসুখী একজন কবিতার কথক ‘শান্ত হলুদ’ বিশেষণের মাধ্যমে দেবতাদের বিদ্রুপ করেছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে না দেবতারা; বরং তারাও মন্দির থেকে ছিটকে পড়ে। তাদের শান্তভাব যুদ্ধের অশান্তিকে রােধ করতে পারে না। নিজেদের দেবতার প্রতিনিধি মনে করা ধর্মগুরুরা অন্ধ ধর্মবিশ্বাসে আটকে থাকে। তাদের চিন্তাচেতনাও
জীর্ণ। হাজার বছরের পুরােনাে ধ্যানধারণা আঁকড়ে ধরে তারা শান্তির বাণী শােনায়। তাই ‘শান্ত হলুদ’ বলে দেবতা তথা রক্ষণশীল ধর্মের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন : তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।’—কারা, কেন আর স্বপ্ন দেখতে পারল না?
উত্তর: যারা, যেকারণে স্বপ্ন দেখতে পারল না : পাবলাে নেরুদার লেখা কবিতার বাংলা অনুবাদ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় উল্লিখিত শান্ত হলুদ দেবতারা “আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। কারণ যুদ্ধের গ্রাসে তারা দেবালয় থেকে ছিটকে পড়ল এবং তাদের অস্তিত্বই থাকল না। দেবতারা নিজেদের প্রভাব বজায় রেখেছিল হাজার হাজার বছর ধরে। দেবতাদের আশ্রয় করে মানবসমাজ সুন্দর পৃথিবী গড়ে তােলার
স্বপ্ন দেখেছিল। আসলে দেবতাদের কোনাে অস্তিত্ব নেই – তারা মানুষের কল্পনা আর বিশ্বাসে গড়া। তাদেরকে কেন্দ্র করে একদল ধর্মব্যবসায়ী
চিরকাল আধিপত্য কায়েম রাখার স্বপ্ন দেখেছে।যুদ্ধের বীভৎসতা তাদের সমস্ত স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে।
অসুখী একজন – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন : অসুখী একজন’ কবিতাটি কে বাংলায় তরজমা করেছেন?
উত্তর : ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি বাংলায় তরজমা করেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন : অসুখী একজন’ কবিতায় কথক চলে যাওয়ার আগে তাকে কী অবস্থায় ছেড়ে আসেন?
উত্তরঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক চলে যাওয়ার আগে তাকে অর্থাৎ এক নারীকল্প দেশমাতৃকাকে দরজায় চির অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলেন দুর থেকে দূরে।
প্রশ্ন : “আমি চলে গেলাম দূর…দূরে।”—কে, কখন চলে গেলেন?
উত্তর : প্রখ্যাত কবি পাবলাে নেরুদার কবিতার অনুবাদ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় স্বয়ং কথক দেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে চলে গেলেন দূর থেকে দূরে।
প্রশ্ন : “সে জানত না…”–‘সে’ কী জানত না?
উত্তর : কবি পাবলাে নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায়, কথকের নারীকল্প স্বদেশ জানত না, কথক আর কখনও ফিরে আসবেন
প্রশ্ন : ‘সব চুর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”—কোন কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে? এই পরিণতির কারণ কী?
অথবা, সব চূর্ণ হয়ে গেল, জলে গেল আগুনে’ -কবিতা অনুসরণে পরিস্থিতিটির বিবরণ দাও।
উত্তর : যা যা চূর্ণ হয়ে গেল : পাবলাে নেরুদার কবিতার নবারুণ ভট্টাচার্য কৃত অনুবাদ ‘অসুখী একজন’ কবিতায় মানুষের নিশ্চিন্ত আশ্রয় চুর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। চুর্ণ হয়ে গেল কথকের ফেলে আসা “মিষ্টিবাড়ি’। যে বারান্দায় ঝুলন্ত বিছানায় তিনি ঘুমােতেন সেই বারান্দা আর রইল না। করতলের মতাে পাতাযুক্ত গােলাপি গাছ, চিমনি আর পুরােনাে জলতরঙ্গ সব চুর্ণ হয়ে গেল।
পরিণতির কারণ : আগ্নেয়পাহাড়ের মতাে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ গ্রাস করেছিল সমতলকে। যার নির্মম আঘাতে চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল কথকের স্মৃতিবিজড়িত বাসস্থান ও অস্তিত্বের চিহ্নটুকু।
প্রশ্ন : রক্তের একটা কালাে দাগ।’—রক্তের দাগকে কালাে বলা হয়েছে কেন? এই উক্তিতে কোন বীভৎসতার ইঙ্গিত আছে?
উত্তর : ‘কালাে’ বলার কারণ :পাবলাে নেরুদা রচিত কবিতার অনুবাদ অসুখী একজন’কবিতায় উল্লিখিত রক্তের দাগ আসলে চিলির গৃহযুদ্ধের সময় যে রক্তপাত হয়েছে সেই রক্তের কালাে দাগ। কারণ শুকনাে এবং জমাট রক্তের রং কালচে হয়। কালাে’ শব্দের মধ্য দিয়ে কবি কলঙ্কের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। কারণ, যুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসকে কলঙ্কিত
করে, সুস্থ-সুন্দর মানবতাকে অন্ধকারের কালাে রঙে ঢেকে দেয়।
ইঙ্গিত : এই উক্তিতে মানবতার লাঞ্ছনার প্রতি, প্রাণঘাতী, ধ্বংসাত্মক ভয়াবহ যুদ্ধের বীভৎসতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :

প্রশ্ন : অসুখী একজন’ কবিতায় কারা খুন হল ?
উত্তর : আলােচ্য কবিতায় যুদ্ধবাজের হামলায় খুন হল শিশু ও বাড়ি। এখানে ‘শিশু’ হল পরবর্তী প্রজন্ম, সরল-নিস্পাপ মনুষ্যত্বের প্রতীক। অন্যদিকে বাড়ি’ অর্থে পরিবার-আশ্রয় নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা, মানবিক সম্পর্কের বন্ধন।
প্রশ্ন : “শিশু আর বাড়িরা খুন হলাে।”—“শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল কেন ?
উত্তর : ভয়াবহ যুদ্ধে শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছিল। অর্থাৎ এই যুদ্ধ শিশুদের রেহাই দেয়নি এবং মানুষের বাসস্থানকেও ধূলিসাৎ করেছিল।
প্রশ্ন : “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না”– সেই মেয়েটি কে?
উত্তর : অসুখী একজন’ কবিতায় কবির তথা কথকের প্রিয় নারী হলেন ‘সেই মেয়েটি – যে আসলে কবির স্বদেশভূমি।
প্রশ্নঃ “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না।”– কেন মৃত্যু হল না?
উত্তর : কবিকথিত ‘সেই মেয়েটি’ আসলে মাতৃকল্প দেশ, মানবতা রপ্রতীক। সর্বগ্রাসী যুদ্ধে দেশীয় সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, মৃত্যু হয় অগণিত মানুষের। কিন্তু প্রতীক্ষারত মেয়েটির বেশে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, মানবতা তখনও বেঁচে থাকে, তার মৃত্যু হয় না।
প্রশ্ন : “সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন”—কেন এমন হল?
উত্তর : কবি পাবলাে নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় দেখা যায় যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু সমতলভূমিতেই জনবসতির পরিপূর্ণ বিকাশ, বেশি মানুষের বাস, তাই সেখানেই আগুনের
প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
প্রশ্ন : মন্দির থেকে দেবতাদের টুকরাে টুকরাে হয়ে পড়ে যাওয়ার অন্তর্নিহিত অর্থ কী?
উত্তর : কবির কাছে তার দেশ মন্দির। সেখানে যখন যুদ্ধ বাঁধল, তখন দেবতাদের মতাে পূজা আদায়কারী ধর্মগুরুরাও যুদ্ধের আঘাতে টুকরাে টুকরাে হয়ে গেল, কেননা যুদ্ধ কাউকে ছাড়ে না।
প্রশ্ন : “শান্ত হলুদ দেবতারা/যারা হাজার বছর ধরে/ডুবে ছিল ধ্যানে।”—সেই শান্ত হলুদ দেবতাদের পরিণতি কী হয়েছিল?
উত্তর : যুদ্ধ এলে, হাজার বছর ধরে মন্দিরে ধ্যানমগ্ন থাকা দেবতারা মন্দির থেকে পড়ে টুকরাে হয়ে গেলেন। তারা বিধ্বংসী যুদ্ধে মানুষের রক্ষক হতে পারেননি, ফলে মূর্তির সঙ্গে মানুষের চিরাচরিত ধর্মবিশ্বাস ভেঙে গেল।
প্রশ্ন : “সেই মিষ্টি বাড়ি,”–মিষ্টি বাড়ির পরিবেশে আর কী কী ?
উত্তর : সেই মিষ্টি বাড়ির পরিবেশে ছিল বারান্দা, যেখানে ঝুলন্ত বিছানায় কবি ঘুমােতেন। আর ছিল গােলাপি গাছ, তার করতলের মতাে পাতা, চিমনি, জলতরঙ্গ।
প্রশ্ন : “ সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”—এমন অপেক্ষার কারণ কী ?
উত্তর: প্রিয়জন প্রিয়জনেরই অপেক্ষায় থাকে। তাই বক্তা যাকে অপেক্ষায় রেখে একদিন চলে গিয়েছিলেন, যত অঘটনই ঘটুক, তার অপেক্ষা আর শেষ হয় না।
You must be logged in to post a comment.