আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা

আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান

প্রশ্ন : ‘আফ্রিকা’কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।

উত্তর : সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মানবতারই জয়গান গেয়েছেন।পৃথিবী সৃষ্টির মুহূর্তে অস্থিরতার কারণে মহাদেশীয় পাতের কিছু অংশ মূল অংশ থেকে সরে গিয়ে সমুদ্রের মাঝে আফ্রিকা মহাদেশের জন্ম হয়। তাই আফ্রিকা ছিল মূল স্থলভাগ থেকে আলাদা। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও প্রচুর সম্পদে পূর্ণ আফ্রিকার স্বরূপ যখন শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী দেশের কাছে প্রকাশিত হল তখন কোনাে দেশই আফ্রিকা দখলের লােভ সামলাতে পারেনি। তারা হিংস্র পশুর মতাে আফ্রিকার উপর ঝাপিয়ে পড়ল।
ক্ষমতাশালী পশ্চিম বিশ্বের দেশগুলির অন্য দেশ দখলের অপরিসীম লােভ এবং নাৎসি ও ফ্যাসিবাদের বীভৎসতা ভয়ানক বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছে। বহুদিন শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতন সহ্য করে করে আফ্রিকাও পশ্চিমী অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে। মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেছেন বিশ্বজোড়া এই হিংসার মধ্যে একমাত্র যুগান্তের কবিই সভ্যতার পুণ্যবাণী শােনাতে পারেন। তার মাধ্যমেই কবি শুভবুদ্ধি জাগ্রত করার আহ্বান জানিয়েছেন, অহংকারী ইউরােপীয় সভ্যতাকে আফ্রিকার কাছে নতজানু হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। আফ্রিকা যদি অত্যাচারী দেশ গুলিকে ক্ষমা করতে পারে তবেই হিংসার অবসান ঘটবে ও মানবতার জয় ঘােষিত হবে।


প্রশ্ন : ‘উদভ্রান্ত সেই আদিমযুগে’—আফ্রিকা’ কবিতা অনুসারে আদিম যুগের সেই উদ্ভ্রান্তির পরিচয় দাও।
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আফ্রিকা’ কবিতার সূচনায় উক্ত উদ্ধৃতাংশে পৃথিবী সৃষ্টির আদিমুহূর্তের একটি বিশেষ ব্যঞ্জনা উপস্থাপন করেছেন।
উদভ্রান্ত শব্দের অর্থ : উদ্ভ্রান্ত শব্দের অর্থ হল ভ্রম থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়েছে যা। উদ্ধৃতাংশে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বসৃষ্টির একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে কাব্যিক রূপ দিয়েছেন।
আদিম যুগের উদ্ভ্রান্তি : বিগ ব্যাং অর্থাৎ মহাজাগতিক বিস্ফোরণ থেকে এই সৌরলােকের সৃষ্টি। সেই আদি মুহূর্তে পৃথিবী ছিল জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড। আদিম সেই ক্ষণে পৃথিবীর পিণ্ড থেকে বার বার অগ্ন্যুৎপাত হয়ে তৈরি হচ্ছিল পাহাড় পর্বত। কোথাও ভূতল বসে গিয়ে সমুদ্র তৈরি হচ্ছিল। স্রষ্টা নিজেই যেন তার সৃষ্টির এই আকস্মিকতায় খানিক স্তম্ভিত, বিস্মিত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান। তাই নিজের সৃষ্টিতে তিনি নিজেই অসন্তুষ্ট ছিলেন। সেই ক্ষোভে নতুন সৃষ্টি বার বার বিধ্বস্ত হচ্ছিল। তার অধৈর্য আর অতৃপ্তিতে সমগ্র পৃথিবী যেন বার বার নিজের রূপ বদলাচ্ছিল। রুদ্র সমুদ্রের উত্তাল রূপ ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল ভূভাগকে। এমনই সমুদ্রের রােষ প্রাচী ধরিত্রী অর্থাৎ এশিয়ার মূল ভূভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় আফ্রিকার ভূমিখণ্ডকে। আর সেই বিচ্ছিন্ন আফ্রিকাকে গভীর বনস্পতি নিবিড় ছায়ায় আষ্টেপৃষ্টে পাহারার শিকলে বেঁধে দেয়।

আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা

প্রশ্ন : “বাঁধলে তােমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়,/কৃপণ। আলাের অন্তঃপুরে।’—বনস্পতির নিবিড় পাহারা’ ও কৃপণ আলাের অন্তঃপুর’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘আফ্রিকা’ কবিতায় নবগঠিত আফ্রিকা মহাদেশের বর্ণনা দিতে এই মন্তব্যটি করেছেন।
বনস্পতির নিবিড় পাহারা’ : সৃষ্টির সময় থেকেই আফ্রিকায় ছিল ঘনপাতার বড় বড় গাছ। কবি বলেছেন আফ্রিকার বুকে জন্মানাে এইসব বনস্পতিই আফ্রিকার পাহারাদার বা রক্ষক ছিল। এই গভীর অরণ্যের নিবিড় পাহারায় আপন সৃষ্টিতে ডুবে ছিল আফ্রিকা।
কৃপণ আলাের অন্তঃপুর : আফ্রিকার ঘন গভীর অরণ্য ভেদ করে সূর্যের আলাে প্রবেশ করতে পারে না। তাই কবির ব্যঞ্জনায় সূর্যালােকও যেন সেখানে কৃপণ হয়ে যায়—সে আফ্রিকার অন্তঃপুরের মাটি স্পর্শ করে না।
তাৎপর্য :আফ্রিকার অরণ্যের ঘন সবুজ পাতার গাছ আফ্রিকাকে ছায়াময় আশ্রয় দিয়েছে। তাই এই মহাদেশের ঐতিহ্য ও সম্পদ চিরকালই তথাকথিত সভ্য মানুষের কাছে অধরা থেকে গিয়েছে।
আফ্রিকার প্রকৃতি ঘােমটা ঢাকা নারীর মতােই রহস্যময়ী থেকেছে বিশ্বের কাছে। কবির মতে, বিশ্বস্রষ্টা বিধাতার এই লীলার জন্যই আফ্রিকা দেশীয় ঐতিহ্য-সম্পদ- সংস্কৃতি নিয়ে নিশ্চন্ত নিরাপদে ছিল বহুদিন।

প্রশ্ন : “হায় ছায়াবৃতা”–‘ছায়াবৃতা’ বলার কারণ কী? তার সম্পর্কে কবি কী বলেছেন সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তর : ছায়াবৃতা বলার কারণ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত। আফ্রিকা মহাদেশের গভীর অরণ্যের আবরণ ভেদ করে সূর্যালােক সে দেশের মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রবেশ করতে পারে না। তাই সে ছায়াবৃতা’ বা ছায়ায় ঢাকা। আবার সভ্য জগতের সংস্পর্শ থেকে দূরে অবস্থিত আফ্রিকা সভ্যতার আলাের স্পর্শ না পাওয়ায় ছায়াবৃতা’ বলে পরিচিত হয়েছে।

কবির বক্তব্য : উদভ্রান্ত আদিম যুগে স্রষ্টার অসন্তোষে পৃথিবী ছিল বিধ্বস্ত। সৃষ্টির সেই আদি মুহূর্তে উত্তাল সমুদ্রের বুদ্র বাহু আফ্রিকাকে প্রাচী ধরিত্রী অর্থাৎ এশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্রষ্টার এই লীলাতেই আফ্রিকা মহাদেশের সৃষ্টি। প্রাচ্য বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন গভীর অরণ্যঘেরা আফ্রিকার বৈশিষ্ট্য তার দুর্গমতার রহস্য। সেখানে প্রকৃতির নিজস্ব জাদু যেন চেতনায় মন্ত্র জাগায়। আফ্রিকা যেন নিজের এই ভীষণ রহস্যময় রূপ দিয়ে বিদ্রুপ করে ভয়ংকর সৃষ্টিকে। সভ্য জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আফ্রিকা যেন বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায় নিজের আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করছিল। কিন্তু তার এই রহস্যময়ী মানবীরূপ পাশ্চাত্য সভ্যতার দম্ভে উপেক্ষিত ছিল।

আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা

প্রশ্ন : অপরিচিত ছিল তােমার মানবরুপ–তােমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার রূপ অপরিচিত ছিল কেন? সেই মানবরূপের পরিচয় দাও।
উত্তর : উদ্দিষ্ট : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতার এই পংক্তিতে ‘তােমার’ বলতে আফ্রিকার কথা বােঝানাে হয়েছে।
অপরিচিত থাকার কারণ : উদভ্রান্ত সেই আদিম যুগে পৃথিবী সৃষ্টির মুহূর্তে স্রষ্টার অসন্তোষে সমুদ্রের উত্তাল রূপ এশিয়ার মূল ভূমিভাগ থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই জন্মমুহূর্ত থেকেই তিনদিক সমুদ্র বেষ্টিত আফ্রিকা ছিল প্রাচ্য বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন।
আফ্রিকার প্রাকৃতিক পরিবেশও রহস্যময়। ঘন, গভীর অরণ্যে ঘেরা আফ্রিকার নিজস্ব জীবন, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে পাশ্চাত্য জগৎ ছিল উদাসীন। তারা নিজেদের সভ্যতার দম্ভে আফ্রিকার দিকে উপেক্ষার আবিল দৃষ্টি ছুড়ে দিয়েছিল। সেই অবহেলা আর উপেক্ষাতেই চিররহস্যময় আফ্রিকার মানবরূপ বিশ্বের কাছে অপরিচিত ছিল।

আফ্রিকার মানবরূপ : বিশ্বের উন্নত সভ্যতার ভৌগােলিক সীমানা থেকে বিচ্ছিন্ন আফ্রিকার একটি উজ্জ্বল ঐতিহ্য আছে। তার নিজস্ব মানুষের জীবন, সংস্কৃতি, বেঁচে থাকা সেই ঐতিহ্যের অঙ্গ। পাশ্চাত্য সভ্যতার অহংকার বা প্রাচ্যের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও আফ্রিকার মানুষের ছিল আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াই, নিজেদের শক্তিতে জেগে ওঠার প্রস্তুতি। উদ্ধৃতাংশে আফ্রিকার মানবরূপ বলতে আফ্রিকাবাসীর এই জীবনের চিত্রকে উল্লেখ করা হয়েছে।

****প্রশ্ন : ‘এল ওরা লােহার হাতকড়ি নিয়ে, / নখ যাদের তীক্ষ্ম তােমার নেকড়ের চেয়ে,/ এল মানুষ-ধরার দল’‘মানুষ-ধরার দল’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে। [ Most Important ]

উত্তর : উদ্দিষ্ট : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় মানুষ ধরার দল’ বলতে আফ্রিকা মহাদেশে সম্পদলােভে আসা সাম্রাজ্যবাদী ইউরােপীয় দেশগুলাের কথা বলেছেন।
তাৎপর্য: আফ্রিকা মহাদেশের প্রচুর সম্পদের লােভে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী, তথাকথিত সভ্যদেশগুলি আফ্রিকার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা যে-কোনাে ভাবে আফ্রিকার সম্পদ হরণ করতে চায় নেকড়ে হিংস্র, মাংসাশী প্রাণী। ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির গর্বোদ্ধত আচরণেও ছিল পাশবিকতা। উপনিবেশ দখলের মানসিকতায় তারা সারা পৃথিবীতে মানবতার অবলুপ্তি ঘটায়। লােহার হাতকড়ি দিয়ে যেমন অপরাধীকে বন্দি করা হয়, তেমনি আফ্রিকাকে বন্দি করতে আসে বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আফ্রিকার স্বাধীনতা হরণ করে শুরু হয় অবাধ শােষণ-লুণ্ঠন-অত্যাচার। কৃষ্নাঙ্গ আফ্রিকাবাসীকে ক্রীতদাসে পরিণত করে হাটবাজারে মানুষ কেনাবেচা চলে। আর এটাই ছিল মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড়াে অপমান। মানবিক চেতনাহীন এই পশুস্বভাবের সাম্রাজ্যবাদকেই কবি হিংস্র, মাংসাশী নেকড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং সাম্রাজ্যবাদের উগ্র স্বভাবকে নেকড়ের নখের চেয়ে তীক্ষ্ণ বা ভয়ংকর বলেছেন। অর্থাৎ পশুর পাশবিকতাও সেদিন মানুষের নৃশংসতার কাছে পরাজিত হয়েছিল।

***প্রশ্ন : “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তােমার অপমানিত ইতিহাসে।”— ‘তােমার’বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার অপমানিত ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। [ Most Important ]
উত্তর : উদ্দিষ্ট : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আফ্রিকা’ কবিতায় ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অত্যাচারে রক্তাক্ত, যন্ত্রণাদগ্ধ আফ্রিকার। উদ্দেশে এ কথা বলেছেন।
অপমানের ইতিহাস : সমুদ্রবেষ্টিত, অরণ্যঘেরা আফ্রিকা মহাদেশ বহুদিন বিশ্বের কাছে অপরিচিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত ছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি সেই সম্পদের খোঁজ পেয়েই আফ্রিকার উপর আধিপত্যের থাবা বসায়। উপনিবেশ স্থাপনের লােভে পাশ্চাত্যের তথাকথিত সভ্য দেশগুলি আফ্রিকার মানুষের পায়ে লােহার শিকল পরিয়ে দেয়। আফ্রিকার প্রাচীন জাতি পরিণত হয় তথাকথিত সভ্য দেশগুলির দাসে। আফ্রিকার মুক্তবাজারে শুরু হয় দাস কেনা-বেচা। পাশ্চাত্য সভ্যতার গর্ব তাদের যেন আফ্রিকার ঘন গভীর অরণ্যের অন্ধকারের মতােই অন্ধ করে রেখেছিল। তাই তাদের নৃশংসতা তারা উপলব্ধি করতে পারছিল না। আফ্রিকাবাসীর উপর তাদের পাশবিক অত্যাচার যেন নেকড়ের চেয়েও হিংস্র হয়ে উঠেছিল। তাদের কাটা-লাগানাে জুতাের পদাঘাতে পিষ্ট হয়ে গিয়েছিল আফ্রিকার আদিম মানবগােষ্ঠী। তাই আফ্রিকার মানুষের রক্ত আর বেদনার অশ্রুতে পঙ্কিল হয়ে গিয়েছিল আফ্রিকার নিস্পাপ বনভূমি। সেই আঘাতের চিহ্ন মানবতাকে কালিমালিপ্ত করে আফ্রিকার ইতিহাসে অপমানের গ্লানি রেখে যায়।

আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান

প্রশ্ন : ‘সেই হােক তােমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।।—কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর : প্রসঙ্গ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটি কবি যুগান্তের কবির উদ্দেশে প্রয়ােগ করেছেন।
পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যলােভী দেশগুলি উপনিবেশ স্থাপনের জন্য হিংস্র নেকড়ের মতাে আফ্রিকার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সভ্যতার গর্বে অন্ধ সেইসব দেশ আফ্রিকার মানুষের পায়ে লােহার শিকল পরিয়ে তাদের দাসে পরিণত করে। আফ্রিকার মুক্তবাজারে শুরু হয় দাস কেনা-বেচা। ইউরােপের দেশগুলির নির্লজ্জ পাশবিক অত্যাচারে আফ্রিকার মানবতা সেদিন কালিমালিপ্ত হয়। আফ্রিকার এমন অপমানেরদিনে পাশ্চাত্যের কবি-সাহিত্যিকরা সুন্দরের আরাধনা করছিলেন। কিন্তু যখন, নাৎসিদের উত্থানে পাশ্চাত্যের সেই সভ্যদেশগুলি সন্ত্রস্ত তখন রবীন্দ্রনাথ আহ্বান করেছেন যুগান্তের কবিকে। যিনি সমস্ত হিংসা আর ‘নির্লজ্জ অমানুষতা’র বিপরীতে মানবতার জয়গান গাইবেন। তার সেই
মানবতার পুণ্যবাণী যুগ থেকে যুগে সভ্যতায় চিরপ্রবহমান থাকবে।
তাৎপর্য : রবীন্দ্রনাথ সমস্ত হিংসা আর ক্ষমতার আস্ফালনের অবসানে যুগান্তের কবিকে প্রত্যাশা করেছেন। বিশ্বব্যাপী হিংসা আর অমানবিক, হিংস্র প্রলাপে মানবতা ক্ষতবিক্ষত। তাই যুগান্তের কবি এসে আফ্রিকার অপমানিত জনজাতির সামনে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইবেন। আর, তিনি যে মানবতার কথা বলবেন তাই হবে সভ্যতার প্রধান ও শেষ কথা। সেই মানবতার বাণীই যুগ থেকে যুগে বয়ে চলবে।

প্রশ্ন : ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ কাকে, কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল?
উত্তর : উদ্দিষ্ট :বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় বলেছেন আফ্রিকা মহাদেশকে ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
বিচ্ছিন্নতা : এ কবিতায় কবি বলেছেন, পৃথিবী সৃষ্টির আদিম যুগে প্রাচী ধরিত্রীর স্থলভাগ থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল উত্তাল সমুদ্র। ভৌগােলিক তত্ত্ব থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে প্রাচ্যের মহাদেশগুলির সঙ্গে আফ্রিকা একটিই মহাদেশীয় পাতের মধ্যে ছিল। মহাদেশীয় পাতগুলির স্থান পরিবর্তনের ফলে একসময়ে আফ্রিকান প্লেটের সৃষ্টি হয়। আর, এভাবেই প্রাচ্যের মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আফ্রিকা মহাদেশটি।

প্রশ্ন : ‘সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি/সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য,’—আলােচ্য অংশের তাৎপর্য আলােচনা করাে।
উত্তর : তাৎপর্য: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকা’কবিতায় বলেছেন, পৃথিবী সৃষ্টির সময়ে উত্তাল সমুদ্র প্রাচ্য বিশ্বের ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করে বনস্পতির নিবিড় পাহারায় আবদ্ধ করে। বিশ্বসভ্যতা থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে আলােছায়াময়, গভীর অরণ্যের রহস্যপূর্ণ পরিবেশে নিভৃতে আফ্রিকা নিজেই নিজের অরণ্যভূমির দুর্ভেদ্য রহস্যকে
চিনতে শুরু করে।

প্রশ্ন : বিরূপের ছদ্মবেশে,—বিরূপের ছদ্মবেশে কে, কী করেছিল?
উত্তর : ভয়কে জয় :বিশ্বসৃষ্টির আদিপর্বে নানা ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে প্রাচ্য ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকা মহাদেশ আলাদা ভূখণ্ডরূপে সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন জন্মের প্রথম লগ্নে প্রকৃতির প্রতিকূলতার কাছে সে ছিল শিশুর মতােই অসহায়। ক্রমে তার চেতনাহীন মনে আত্মজাগরণের মধু জেগে উঠেছিল। সে প্রকৃতির দুর্বোধ্য সংকেত বুঝতে শিখেছিল।
শক্তিসাধনার দ্বারা শঙ্কাকে হারিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছিল সে। এভাবেই আফ্রিকা বিরূপের ছদ্মবেশে যেন ভীষণকে বিদ্রুপ করে সমস্ত ভয়কে জয় করতে চেয়েছিল।

আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান

প্রশ্ন : ‘গর্বে যারা অন্ধ তােমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়েউদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর : অন্তর্নিহিত অর্থ:উদ্ধৃতাংশটির উৎস কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’কবিতা। পৃথিবীর ইতিহাসে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং মানবসভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশ্বের পশ্চিমদিকের দেশগুলি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। সেই শ্রেষ্ঠত্ব তাদের উদ্ধত, অহংকারী এবং অমানবিক করে তুলেছে। শিক্ষা, প্রাচুর্য এবং আধুনিকতার অহংকারে শ্বেতাঙ্গ শাসকশ্রেণির মানবিকতা নষ্ট হয়েছে। আফ্রিকার নিবিড় বনস্পতির ঘন অরণ্য ভেদ করে সূর্যের আলাে প্রবেশ করতে পারে না বলে আফ্রিকা অন্ধকারাচ্ছন্ন, অহংকারী সভ্যজাতি যেন গর্বে তার চেয়েও বেশি অন্ধ।

প্রশ্ন : নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষ।’—এই উক্তির কারণ কী?
উত্তর :  উদ্ধৃত উক্তির কারণ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ ইউরােপীয় শাসকদের নেতিবাচক রূপ প্রকাশিত হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ আফ্রিকার উপর সুসভ্য ইউরােপীয়রা হিংস্র পশুর মতাে ঝাপিয়ে পড়েছিল। সভ্যতার মুখােশ ছিড়ে ফেলে ভয়াবহ অত্যাচারের মাধ্যমে আফ্রিকাকে পদদলিত করেছিল তারা। আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তুলে, সেখানকার অসহায় কৃষ্নাঙ্গদের ক্রীতদাস বানিয়ে তাদের উপর অবর্ণনীয় শোষণ চালিয়ে, সম্পদ লুঠ করে সাম্রাজ্যলােভী দেশগুলি নিজেদের অমানবিক কুৎসিত চেহারা প্রকাশ করেছিল। সভ্যতার মুখােশের আড়ালে মানবতার নগ্ন রূপ দেখে কবি একথা বলেছেন।

প্রশ্ন : ‘গর্বে যারা অন্ধ তােমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে – উদ্ধৃতাংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর : অন্তর্নিহিত অর্থ:উদ্ধৃতাংশটির উৎস কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’কবিতা। পৃথিবীর ইতিহাসে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং মানবসভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশ্বের পশ্চিমদিকের দেশগুলি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।সেই শ্রেষ্ঠত্ব তাদের উদ্ধত, অহংকারী এবং অমানবিক করে তুলেছে। শিক্ষা, প্রাচুর্য এবং আধুনিকতার অহংকারে শ্বেতাঙ্গ শাসকশ্রেণির মানবিকতা নষ্ট হয়েছে। আফ্রিকার নিবিড় বনস্পতির ঘন অরণ্য ভেদ করে সূর্যের আলাে প্রবেশ করতে পারে না বলে আফ্রিকা অন্ধকারাচ্ছন্ন, অহংকারী সভ্যজাতি যেন গর্বে তার চেয়েও বেশি অন্ধ।

প্রশ্ন : নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষ।’—এই উক্তির কারণ কী?
উত্তর : উদ্ধৃত উক্তির কারণ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ ইউরােপীয় শাসকদের নেতিবাচক রূপ প্রকাশিত হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ আফ্রিকার উপর সুসভ্য ইউরােপীয়রা হিংস্র পশুর মতাে ঝাপিয়ে পড়েছিল। সভ্যতার মুখােশ ছিড়ে ফেলে ভয়াবহ অত্যাচারের মাধ্যমে আফ্রিকাকে পদদলিত করেছিল তারা। আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তুলে, সেখানকার অসহায় কৃস্নাঙ্গদের ক্রীতদাস বানিয়ে তাদের উপর অবর্ণনীয় শশাষণ চালিয়ে, সম্পদ লুঠ করে সাম্রাজ্যলােভী দেশগুলি নিজেদের অমানবিক কুৎসিত চেহারা প্রকাশ করেছিল। সভ্যতার মুখােশের আড়ালে মানবতার নগ্ন রূপ দেখে কবি একথা বলেছেন।

প্রশ্ন : ‘তােমার ভাষাহীন ক্রন্দনে’—কার ক্রন্দন? তা ভাষাহীন কেন?
উত্তর : উদ্দিষ্ট:রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকা মহাদেশ ও তার সহজসরল কৃয়াঙ্গ সন্তানদের ভাষাহীন ক্রন্দনের কথা বলেছেন।
ক্রন্দন ভাষাহীন হওয়ার কারণ : ইউরােপীয় মানুষরা শিক্ষাদীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ হয়েও বিশ্বের দুর্বল দেশগুলির উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছে। ক্ষমতার অহংকারে অন্ধ হয়ে তারা আফ্রিকার সম্পদ লুঠ করেছে, কৃয়াঙ্গদের ক্রীতদাসে পরিণত করে তাদের দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করিয়েছে। শ্বেতাঙ্গদের ভয়ে আফ্রিকার মানুষ নীরবে অত্যাচার সহ্য করে নীরবে চোখের জল ফেলেছে কিন্তু প্রতিবাদে গর্জে উঠতে পারেনি। তাই কবি তাদের কান্নাকে ভাষাহীন বলেছেন।

আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান

প্রশ্ন : কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল/সুন্দরের আরাধনা -এই বেজে ওঠার তাৎপর্য কী?
উত্তর :  তাৎপর্য : ‘আফ্রিকা’ কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, যখন আফ্রিকায় সাম্রাজ্যবাদী ইউরােপের শােষণ চলছে, সেখানকার মানুষ বিপন্ন, তখন সমুদ্রের অন্য পারে পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে জনজীবন স্বাভাবিক, সেখানে শান্তি বিরাজ করছে। সেখানকার তৎকালীন কবিরা সুন্দরের আরাধনা করছেন অর্থাৎ শেলী, কীট, বায়রন প্রমুখ ইংরেজ কবিরা তখন রােমান্টিক কাব্যচর্চা করছেন। কবিরা সমাজসচেতন, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের প্রতিনিধি। যখন বিশ্বে মানবতা বিপন্ন, তখন কবিদের কবিতায় সমাজসচেতনতার প্রকাশের প্রয়ােজন। কিন্তু তা না করে তারা সুন্দরের আরাধনায় মগ্ন। এই বিষয়টাকেই বিশ্বকবি এই পঙক্তির মাধ্যমে ব্যঙ্গ করেছেন।

প্রশ্ন : ‘পশ্চিম দিগন্তে/প্রদোষকালে ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস’মর্মার্থ লেখাে।
উত্তর : আফ্রিকা’ কবিতায় এই পক্তির মাধ্যমে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখিয়েছেন, সাম্রাজ্যবাদ দীর্ঘস্থায়ী হলেও তা চিরস্থায়ী নয়।
মর্মার্থ : পশ্চিম দিগন্ত বলতে বিশ্বের পশ্চিমদিকের দেশ বা ইউরােপকে বােঝায়। সভ্যতার দম্ভে এবং সাম্রাজ্যবাদের লােভে তারা যুদ্ধে, শােষণে, আগ্রাসনে রক্তাক্ত করে মানবতাকে নষ্ট করেছিল। কিন্তু সেই পাশ্চাত্যেই যখন নাৎসিদের উত্থান হল তখন অমঙ্গলের অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে মানবসমাজ। এই ভয়ংকর সময়কেই কবি ‘প্রদোষকাল’ বলেছেন। এই নাৎসিদের আগ্রাসন ঝঞাবাতাস হয়ে
সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে এবার সাম্রাজ্যবাদীদের রুদ্ধশ্বাস বা নিঃশ্বাস বন্ধ হবার পালা।

আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা

প্রশ্ন : যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল’—এখানে কাদের পশু বলা হয়েছে? ‘গুপ্ত গহুর’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর : উদ্দিষ্ট : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতার এই পঙক্তিতে পশু বলতে নাৎসিবাদের উত্থানকে বুঝিয়েছেন।
গুপ্ত গহ্বর : গুপ্ত গহুর শব্দের অর্থ গােপন গুহা। বিশ শতকের শুরুর দিক থেকেই জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসিবাদের উত্থান ঘটে। এই শক্তি এতটাই আগ্রাসী হয়ে ওঠে যে, তাতে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিও ভয় পেয়ে যায়। সুপ্ত নাৎসিবাদের বহিঃপ্রকাশ ও ভয়ংকর আগ্রাসনকেই গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুর বেরিয়ে আসার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

আরও দেখুন : অসুখী একজন

প্রশ্ন : অশুভ ধ্বনিতে ঘােষণা করল দিনের অন্তিমকাল’—অশুভ ধ্বনি বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? দিনের অন্তিমকাল ঘােষণার মর্মার্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : অশুভ ধ্বনি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতার এই পঙক্তিতে ‘অশুভ ধ্বনি’ বলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠাকে বােঝানাে হয়েছে।
মর্মার্থ : সাম্রাজ্যবাদী ইউরােপীয়রা বহুদিন ধরে বিশ্বের অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলিকে শােষণ করেছে, উপনিবেশ গড়ে তুলেছে। বিশ শতকে এই নৃশংসতা আরাে বৃদ্ধি পায়। এই সময়েই জার্মানিতে নাৎসিবাদের ও ইটালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। তাদের একনায়কতন্ত্রে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিও ভয় পেয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। এই অশুভ ধ্বনিতে বিশ্ব মানবতার সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলােরও দিনের অন্তিমকাল
ঘনিয়ে আসে।

প্রশ্ন : দাঁড়াও এইমানহারা মানবীর দ্বারে;—কাকে দাঁড়াতে বলা হয়েছে? ‘মানহারা মানবী’ বলার তাৎপর্য কী?
উত্তর : উদ্দিষ্ট : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃতিতে যুগান্তের কবিকে এই অপমানিত আফ্রিকার দ্বারে দাঁড়াতে বলা হয়েছে।
তাৎপর্য : ঘােমটা ঢাকা নারীর মতােই নিবিড় বনস্পতির ছায়ায় ঘেরা আফ্রিকা মহাদেশ। নিভৃতে-নির্জনে, লােকচক্ষুর আড়ালে তার মানবজীবন স্পন্দিত ছিল। সম্পদের লােভে এল ইউরােপের সাম্রাজ্যলােভীর দল, তারা শান্তি ধ্বংস করল। তাদের শাসনে, শােষণে, অত্যাচারে নিপীড়িত হল আফ্রিকার মানুষ। লাঞ্ছিতা নারীর মতােই সমগ্র আফ্রিকার মানবিকতা সাম্রাজ্যলােভীদের হাতে বারবার অপমানিতা হয়েছে। তাই আফ্রিকাকে ‘মানহারা মানবী’ বলা হয়েছে।

আফ্রিকা : মাধ্যমিক কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান


প্রশ্নঃ “প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে”—প্রাচী ধরিত্রী বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?কে কার বুক থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল?
উত্তর : প্রাচী’ শব্দটির অর্থ পূর্বদিক। উদ্ধৃতাংশে প্রাচী ধরিত্রী বলতে প্রাচ্য বিশ্ব বা এশিয়ার মূল ভূখণ্ডকে বােঝানাে হয়েছে।
রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে অর্থাৎ পৃথিবীর পূর্ব ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল।
প্রশ্ন : বনস্পতির নিবিড় পাহারায় আফ্রিকার কী অবস্থা হয়েছিল?
উত্তর : বিশ্বপ্রকৃতি আফ্রিকাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারা দিয়ে ঘিরে ফেললে, সে ‘কৃপণ আলাের অন্তঃপুরে’ বাঁধা পড়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন : “বিদ্রুপ করছিলে ভীষণকে”—কে, কাকে বিদ্রুপ করছিল?
উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকা নিজের জঙ্গলাকীর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশের দুর্গম রহস্য দিয়ে ভীষণকে বিদ্রুপ করছিল।
প্রশ্ন : ‘বিদ্রুপ করছিলে ভীষণকে কীভাবে বিদ্রুপ করছিল?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় অরণ্যপ্রকৃতির দুর্ভেদ্য রহস্যে আফ্রিকা বিরূপের ছদ্মবেশে ভীষণকে বিদ্রুপ করেছিল।
প্রশ্ন : ‘এল ওরা লােহার হাতকড়ি নিয়ে” – লােহার হাতকড়ি নিয়ে তারা কী করেছিল?
উত্তর : নেকড়ের চেয়ে হিংস্র সাম্রাজ্যবাদী মানুষ ধরার দল আফ্রিকার বস্তুসম্পদ ও মানবসম্পদের লােভে লােহার হাতকড়িতে আফ্রিকাকে বন্দি করল, অর্থাৎ তারা আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তুলে আফ্রিকার মানুষকে দাসে পরিণত করল।
প্রশ্ন : “গর্বে যারা অন্ধ ••••• গর্বে কারা অন্ধ ?
উত্তর : ইউরােপীয়রা প্রচুর সম্পদশালী; শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত জাতি। ক্ষমতা, সম্পদ ও সভ্যতার অহংকারে অন্ধ ইউরােপীয় জাতির কথাই এখানে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন : “সভ্যের বর্বর লােভ”—এই লােভ কী করেছিল?
উত্তর : নিজেদের সভ্যতা সম্পর্কে সাম্রাজ্যবাদীদের গর্ববােধ ছিল। কিন্তু এই সভ্যরা ছিল বর্বর ও লােভী। এই লােভের জন্য তারা নিজেদের নির্লজ্জ অমানুষতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছিল।
প্রশ্ন : “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল”—“চিরচিহ্ন বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর : আফ্রিকার উপর সাম্রাজ্যবাদীদের নৃশংস অত্যাচারের চিহ্নকেই কবি ‘চিরচিহ্ন’ বলে চিহ্নিত করেছেন।
প্রশ্ন : “এসাে যুগান্তের কবি”—কবির ভূমিকাটি কী হবে?
উত্তর : সমাজসচেতন যুগান্তের কবি তার লেখার মাধ্যমে অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করে আফ্রিকার কাছে ক্ষমা চাইবেন এবং নতুন যুগের সূচনা করবেন। তার কণ্ঠেই সভ্যতার পুণ্যবাণী উচ্চারিত হবে।
প্রশ্ন : “হিংস্র প্রলাপের মধ্যে”—হিংস্র প্রলাপ কী ?
উত্তর : সাম্রাজ্যবাদের নৃশংস অত্যাচার ও হিংসার বীজকে এই কবিতায় হিংস্র প্রলাপ বলা হয়েছে।