জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় এর সম্পূর্ণ নোট
পরিবেশের পরিবর্তন সনাক্তকরণ এবং উদ্ভিদের সাড়া প্রদানের পদ্ধতি :
উদ্দীপক- পরিবেশের যে সকল পরিবর্তন বিভিন্ন জীবের দ্বারা সহজেই শনাক্ত হয়ে থাকে ও জীব এই পরিবর্তনের সাপেক্ষে সাড়া প্রদান করে তাকেই আমরা উদ্দীপক বলে থাকি।
বহিঃস্থ উদ্দীপকসমূহ- যে সকল উদ্দীপক জীবদেহের বাইরের পরিবেশে উৎপন্ন হয়ে থাকে তাদের আমরা বহিঃস্থ উদ্দীপক বলে থাকি।
যেমন: আলোক, অভিকর্ষ বল, উষ্ণতা, প্রভৃতি।
অভ্যন্তরীণ উদ্দীপকসমূহ- জীবদেহের অভ্যন্তরে অবস্থিত উদ্দীপকসমূহকে অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক বলা হয়ে থাকে। যেমন- ক্যালসিয়াম আয়ন, হরমোন, প্রভৃতি।
সংবেদনশীলতা- কোনো পরিবর্তন শনাক্ত করে, সেই অনুযায়ী জীবের সাড়া প্রদানের ক্ষমতাকে আমরা সংবেদনশীলতা বলে অভিহিত করে থাকি। উদাহরণস্বরূপ- কুমড়ো গাছে উপস্থিত বিভিন্ন আকর্ষগুলি গাছের ডাল অথবা কঞ্চির সংস্পর্শে এলে তাদেরকে স্প্রিং এর ন্যায় জড়িয়ে ধরে থাকে।
উদ্ভিদের চলন:
চলন :
কোন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির ভাবে অবস্থান করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অথবা উদ্দীপকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ঘটনাকে আমরা চলন বলি ।
যান্ত্রিক চলন- ভৌত পদ্ধতিতে যে চলন সংঘটিত হয়ে থাকে তাকেই যান্ত্রিক চলন বলা হয়।
জৈবিক চলন- জৈবিক চলন হল কোন কোশের প্রোটোপ্লাজমের সক্রিয়তার মাধ্যমে সংঘটিত চলন।
উদ্ভিদ চলন এর প্রকারভেদ:
ট্যাকটিক চলন- বহিঃস্থ কোন উদ্দীপকের প্রভাবে ঘটে থাকা উদ্ভিদের সামগ্রিক চলনকে আমরা আবিষ্ট বা সামগ্রিক চলন বা ট্যাকটিক চলন বলে অভিহিত করে থাকি।
পজিটিভ ফটো ট্যাকটিক চলন- কোন আলোর উদ্দীপকের উৎসের দিকে যে ট্যাকটিক চলন সংঘটিত হয়ে থাকে তাকে পজিটিভ ফটো ট্যাকটিক চলন বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ- ভলভক্স, ক্ল্যামাইডোমোনাস প্রভৃতি শৈবাল এবং ক্লাদফোরা, ইউলোথ্রিক্স, ইত্যাদি শৈবালের চলন।
নেগেটিভ ফটো ট্যাকটিক চলন– আলোক উদ্দীপকের উৎসর বিপরীত দিকে যে ট্যাকটিক চলন সংঘটিত হয় তাকে নেগেটিভ ফটো ট্যাকটিক চলন বলা হয়। যেমন : তীব্র আলোক উৎসের বিপরীত দিকে ভলভক্স, ক্ল্যামাইডোমোনাস জাতীয় শৈবালের চলন।
ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন- বিভিন্ন বহিঃস্থ উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে কোন উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট বক্র চলনকে আমরা ট্রপিক চলন বলে অভিহিত করি। এই ধরনের চলন মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
ফটোট্রপিক চলন :
আলো উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট বক্র চলনকে ফটোট্রপিক চলন বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
অনুকূল আলোকবর্তী চলন– এই ধরনের চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ আলোক উৎসের দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী চলন- এই প্রকার চলনের দ্বারা উদ্ভিদের বৃদ্ধি অভিকর্ষ বলের প্রতিকূলে হয়ে থাকে।
তির্যক অভিকর্ষবর্তী চলন- এই প্রকার চলনে উদ্ভিদদের বিভিন্ন অঙ্গ অভিকর্ষ বলের সাথে প্রায় তীর্যকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
ডায়াজিওট্রপিক চলন – এই প্রকার চলনে উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ অভিকর্ষ বলের সঙ্গে সমকোণে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
জিওট্রপিক চলন :
পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাবে উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট বক্র চলনকেই জিওট্রপিক চলন বলা হয়ে থাকে।
এই প্রকার চলনকে গ্রাভি ট্রপিজমও বলা হয়ে থাকে।
অনুকূল অভিকর্ষবর্তী চলন – এই প্রকার চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ অভিকর্ষ বলের অনুকূলে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
প্রতিকূল অভিকর্ষবর্তী চলন- এই প্রকার উদ্ভিদ চলনে উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধি অভিকর্ষ বলের প্রতিকূলে হয়।
তীর্যক অভিকর্ষবর্তী চলন- এই প্রকার চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ অভিকর্ষ বলের সঙ্গে তীর্যকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
ডায়াজিওট্রপিক চলন- এই প্রকার চলনে উদ্ভিদ অঙ্গ সমূহের বৃদ্ধি অভিকর্ষ বলের সঙ্গে সমকোণে হয়ে থাকে।
হাইড্রোট্রপিক চলন :
হাইড্রোট্রপিক চলন হল জলের গতিপথ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গের চলন।
অনুকূল হাইড্রোট্রপিক চলন– এই ধরনের চলনের দ্বারা উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধি জলের উৎসের অনুকূলে ঘটে থাকে।
প্রতিকূল হাইড্রোট্রপিক চলন- এই ধরনের চলনের মাধ্যমে উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধির জলের উৎসের প্রতিকূল ঘটে থাকে।
ন্যাস্টিক চলন :
বাহ্যিক উদ্দীপকের তীব্রতার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে উদ্ভিদ অঙ্গের যে চলন ঘটে থাকে তাকেই ন্যাস্টিক চলন বলা হয়। এই প্রকার চলন চার ধরনের হয়ে থাকে।
1.ফটোন্যাস্টিক চলন- আলোর উদ্দীপকের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতি জনিত আবিষ্ট চলনকেই আমরা ফটো ন্যাস্টিক চলন বলে থাকি। যেমন : পদ্মফুল দিনের বেলায় ফোটে এবং সন্ধ্যাবেলায় কম আলোর কারণে বুজে যায়।
2.থার্মোন্যাস্টিক চলন- উষ্ণতার তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতি জনিত আবিষ্ট চলনকে আমরা থার্মোন্যাস্টিক চলন বলে থাকি। যেমন : টিউলিপ ফুল বেশি উষ্ণতায় ফোটে আর কম উষ্ণতায় বুঝে যায়।
কেমোন্যাস্টিক চলন- রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত, উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতি জনিত আবিষ্ট বক্র চলনকে আমরা কেমোন্যাস্টিক চলন বলে অভিহিত করি। যেমন : সূর্যশিশির একটি পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। ইহার পাতার সঙ্গে কোন পতঙ্গের সংস্পর্শ ঘটলে ইহা পতঙ্গের দিকে বেঁকে যায় ও পতঙ্গটিকে আবদ্ধ করে থাকে।
সিসমোন্যাস্টিক চলন- উদ্দীপক অথবা আঘাত জনিত উদ্দীপনার তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উদ্ভিদ অঙ্গের আবিষ্ট চলনকে সিসমোন্যাস্টিক চলন বলা হয়। যেমন : লজ্জাবতীর পাতার অগ্রভাগ স্পর্শ করলে পাতাগুলি জোড়া লেগে বন্ধ হয়ে যায়।
ট্যাকটিক চলনের বৈশিষ্ট্য :
উদ্দীপক : বহিঃস্থ উদ্দীপকের তীব্রতা অথবা গতিপথের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে ।
ঘটনাস্থল : সমগ্র উদ্ভিদ দেহে এই চলন ঘটে থাকে।
সংবেদনশীলতা : এই প্রকার চলনের দ্বারা উদ্ভিদ দেহের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন বা গমন ঘটে থাকে।
প্রতিক্রিয়া : ইহা অনুকুল অথবা প্রতিকূলধর্মী হতে পারে।
ট্রপিক চলনের বৈশিষ্ট্য :
উদ্দীপক : বহিঃস্থ উদ্দীপকের গতিপথের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
ঘটনাস্থল : মূলত উদ্ভিদের অপরিণত অঙ্গে ঘটে থাকে।
সংবেদনশীলতা : এই প্রকার চলন সংবেদনশীল অঙ্গের বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘটে।
প্রতিক্রিয়া: অনুকুল অথবা প্রতিকূলধর্মী হতে পারে।
ন্যাস্টিক চলনের বৈশিষ্ট্য :
উদ্দীপক : বহিঃস্থ উদ্দীপকের তীব্রতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
ঘটনাস্থল : উদ্ভিদের পরিণত অংশে লক্ষ্য করা যায়।
সংবেদনশীলতা : উদ্ভিদের সংবেদনশীল অঙ্গের কোশ গুলিতে মূলত রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য ঘটে।
প্রতিক্রিয়া: সর্বদা অনুকূলধর্মী হয়ে থাকে।
Next page— Click Number 2