বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ : দশম শ্রেণী
জেনেটিক কাউন্সেলিং : যে পদ্ধতির সাহায্যে মানুষের কোনো বংশগত রোগের জিনগত অবস্থান নির্ণয় করে, পরবর্তী প্রজন্মে ওই রোগের প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করা যায়, সেই পদ্ধতিকে জিনগত পরামর্শ বা জেনেটিক কাউন্সেলিং বলে।
বংশগত জেনেটিক রোগ প্রতিরোধে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর গুরুত্ব :
জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর গুরুত্ব :
(i) রোগ নির্ণয় : জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে আলোচনা করে অর্থাৎ অতীত বংশবিবরণী শুনে পেডিগ্রি বিশ্লেষণের মধ্যে রোগসৃষ্টিকারী জিনের প্রকৃতি, অর্থাৎ সেটি প্রকট না প্রচ্ছন্ন এবং সেটি অটোজোমে না সেক্স ক্রোমোজোমে, কোথায় অবস্থিত সেটি নির্ণয় করা যায়।
(ii) রোগের কারণ বিশ্লেষণ : রোগসৃষ্টিকারী জিনের অবস্থান ও প্রকৃতি নির্ণয়ের পর, রোগের সঠিক কারণটি রোগীকে বিশ্লেষণ করে, তাঁর শারীরিক সমস্যার কথা বোঝানো যায়।
(iii) পরবর্তী প্রজন্মে রোগের সম্ভাবনা :
রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করার পর বিভিন্ন তথ্যের সাহায্যে রোগীকে পরবর্তী প্রজন্মে অর্থাৎ সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে এই রোগের সঞ্চারণের সম্ভাবনা সম্বন্ধে সাবধান করা যায়।
(iv) রোগাক্রান্ত শিশুর জন্ম প্রতিরোধ করা : দম্পতিকে তার পরবর্তী প্রজন্মে অসুস্থ শিশু নেওয়ার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দত্তক নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা যায়। এভাবে সমাজে রোগাক্রান্ত শিশুর জন্ম প্রতিরোধ করা যায়।
অনুরূপ প্রশ্ন :
প্রশ্ন : সমাজ থেকে তোমার জানা একটি জিনগত রোগের বিস্তার রোধ করতে বিয়ের আগে হবু দম্পতিকে কী কী পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে , সে বিষয়ে তোমার মতামত জানাও ।
অথবা, বিবাহের পূর্বে জেনেটিক কাউন্সেলিং গুরুত্বপূর্ণ কেন ?
অথবা, জিনগত রোগের প্রসার রোধে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা, থ্যালাসেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর ভূমিকা লেখো।
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ- যে রোগটির সমাজে বিস্তার রোধ করার জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি দেওয়া যায়—
(i) রক্তের জিনগত পরীক্ষা করে সুনিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে হবু দম্পতির একজন বা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা অথবা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কিনা।
(ii) ফলাফল বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায় একজন বা উভয়ই রোগের বাহক তবে তাদের বিয়ের পর সন্তান ধারণ করলে সন্তানের কী কী শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তা পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করা।
(iii) যদি উভয়ই বাহক হয় তবে তাদের বিবাহ না করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে অথবা বিবাহ করলেও সন্তান ধারণ না করার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে।
• জেনোটক কাউন্সেলিং-এর সময় প্রদত্ত পরামর্শ :
(i) থ্যালাসেমিয়া রোগের পারিবারিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করা।
(ii) ব্যক্তির রক্ত বা কলাকোশের জিনগত পরীক্ষা করে ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা নির্ণয় করা।
(iii) ব্যক্তিটি বাহক হলে হবু জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনীর রক্তের জিনগত পরীক্ষা করে বাহক কিনা তা সুনিশ্চিত করা।
(iv) উভয়ই বাহক হলে অনাগত শিশুতে রোগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা।
(v) রোগের প্রকৃতি, বিবাহ করা ও সন্তান গ্রহণের সমস্যা সম্পর্কে রোগীকে ব্যাখ্যা করা এবং বিবাহ বা সন্তান গ্রহণে বিরত থাকতে পরামর্শ প্রদান করা।