
পথের দাবী – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান
প্রশ্ন – “কৈ এ ঘটনা তাে আমাকে বলেন নি?”—এখানে কোনঘটনার কথা বক্তা বলতে চেয়েছেন?
উত্তর – বিনা দোষেইংরেজ যুবকরা অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদ করায় সাহেব স্টেশনমাস্টার ভারতীয় বলে অপূর্বকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এখানে এই ঘটনার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন – “মনে হলে দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাই।”—কোন কথা মনে করে অপূর্বর এই মনােবেদনা?
উত্তর – স্টেশনে অপূর্বর উপর অত্যাচারের সাক্ষী ভারতীয়রা কোনাে প্রতিবাদ করেনি, বরং অপূর্বর খুব বেশি শারীরিক আঘাত লাগেনি ভেবে তারা খুশি হয়েছিল। এই কথা মনে করে অপূর্ব দুঃখে লজ্জায় ও ঘৃণায় মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
প্রশ্ন – “এই সূত্রে দেশটাও একবার দেখা হইবে।”—কোন সূত্রে?
উত্তর – অপূর্ব ভেবেছিল অফিসের কাজে ভামাে যাবার সূত্রে দেশ অর্থাৎ অদেখা বর্মাকে একবার দেখা যাবে।
প্রশ্ন – ভামাে যাত্রায় ট্রেনে অপূর্বের কে কে সঙ্গী হয়েছিল ?
উত্তর – ভামাে যাত্রায় ট্রেনে অপূর্বের সঙ্গী ছিল আরদালি এবং অফিসের একজন হিন্দুস্থানি ব্রাত্মণ পেয়াদা।
প্রশ্ন – “আমাকেকিন্তু বাবুঝুটমুট হয়রান করা”—তাকে কেন হয়রান করা হয়েছে?
উত্তর – রেঙ্গুন পুলিশের কাছে খবর ছিল বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক বর্মায় এসেছে। তাকে ধরার জন্য পুলিশ সন্দেহজনক গিরীশ মহাপাত্রকে ধরে এনে কিছুক্ষণ আটকে রাখে, জিজ্ঞাসাবাদ করে,
জিনিসপত্র পরীক্ষা করে পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট সন্দেহে।
প্রশ্ন – “আমারও তাে তাই বিশ্বাস।”—বক্তার কী বিশ্বাস?
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্র অপূর্বকে বলেছিল কপালের লেখা কখনও খণ্ডানাে যায় না। অপূর্বও তখন এই কথায় সম্মতি জানিয়ে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিল।
প্রশ্ন – “ইহা যে কতবড়াে ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল।” –ভ্রম’টি কী ?
উত্তর – ‘পথের দাবী’ রচনায় অপূর্বর ধারণা ছিল ট্রেনের প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় প্রভাতকাল পর্যন্ত তার ঘুমের কোনাে ব্যাঘাত ঘটবে —এটাই তার ‘ভ্রম।
প্রশ্ন – “ও নিয়ম রেলওয়ে কর্মচারীর জন্য।”—নিয়মটি কী ?
উত্তর – বার সাব-ইনস্পেক্টর সাহেব অপূর্বকে বলেছেন রেলের প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের রাত্রে ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটানাের নিয়ম কেবল রেল কর্মচারীদের জন্য—এখানে এই নিয়মের কথাই বলা হয়েছে।
আরও দেখুন : প্রলয়োল্লাস বাংলা কবিতা
প্রশ্ন – নিমাইবাবু কাকে কেন সদাশয় ব্যক্তি বলেছেন ?
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্রের পকেট থেকে গাঁজার কলকে পাওয়া গেলে সে বলে, পথে কুড়িয়ে পাওয়া এই কলকে তার নয়, যদি কারাের
কাজে লাগে তাই তুলে রেখেছে। এই কথায় নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রকে ব্যঙ্গ করে সদাশয় ব্যক্তি বলেছেন।
পথের দাবী – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান
প্রশ্ন – “মিথ্যেবাদী কোথাকার।”—কে কাকে কেন মিথ্যেবাদী বলেছে?
উত্তর – উক্তিটি রেঙ্গুন পুলিশের কর্মচারী জগদীশবাবু গিরীশ মহাপাত্রকে বলেছে। গিরীশ মহাপাত্র বলে, সে গাঁজা খায় না, অথচ বন্ধুরা তৈরি করে দিতে বললে তাদের দেয়। তাই জগদীশবাবু তাকে মিথ্যেবাদী বলেছে।
প্রশ্ন – “এই জানােয়ারটিকে ওয়াচ করবার দরকার নেই”- বক্তা জানােয়ার’ বলতে কাকে বুঝিয়েছেন?
উত্তর – বক্তা জগদীশবাবু ‘জানােয়ার’ বলতে গিরীশ মহাপাত্রকে বুঝিয়েছেন।
প্রশ্ন – গিরীশ মহাপাত্র থানা থেকে চলে যাবার সময়ে তার সঙ্গে কী কী জিনিস ছিল ?
উত্তর – গিরীশ মহাপাত্র থানা থেকে চলে যাবার সময়ে তার সঙ্গে একটা ভাঙা টিনের তােরঙ্গা এবং চাটাই জড়ানাে ময়লা বিছানার বান্ডিল ছিল।
প্রশ্ন – ‘টিফিনের সময়ে উভয়ে একত্রে বসিয়া জলযােগ করিত”- উভয়ে’ কারা?
উত্তর – পথের দাবী’ গদ্যাংশের এই উদ্ধৃতিতে ‘উভয়ে’ বলতে অপূর্ব ও তার সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরকে বােঝানাে হয়েছে।
প্রশ্ন – কার জন্য অপূর্বর জিনিসপত্র বেঁচে গিয়েছিল?
উত্তর – অপূর্বর রেঙ্গুনের ভাড়াবাড়ির উপরতলার বাসিন্দা খ্রিস্টান মেয়েটির জন্য অপূর্বর জিনিসপত্র চুরি থেকে বেঁচে গিয়েছিল।
প্রশ্ন – তিনি আমার আত্মীয়।’—আত্মীয় ব্যক্তিটির পরিচয় দাও।
উত্তর – এখানে তিনি হলেন রেঙ্গুন পুলিশের বড়ােকর্তা নিমাইবাবু। নিমাইবাবু অপূর্বর বাবার বন্ধু, আত্মীয় এবং শুভাকাঙ্ক্ষী। অপূর্বর বাবা তাকে রেঙ্গন পুলিশে চাকরি করে দেন। অপূর্ব তাকে কাকাবাবু’ বলে ডাকে।
প্রশ্ন “এ-সব কথা বলার দুঃখ আছে—কোন্ কথাগুলি বলার দুঃখ আছে?
উত্তর – অপূর্ব বলেছিল তার কাছে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক তার আত্মীয় তথা পুলিশকর্তা নিমাইবাবুর থেকে বেশি আপন। এই কথার জন্য অপূর্ব ইংরেজদের রােষের মুখে পড়তে পারে ভেবে রামদাস এই কথা বলেছিল। থাকতে তার ভালাে লাগছিল না। আর এই প্রস্তাব পাওয়ায় অপূর্ব ভেবেছিল এইসূত্রে দেশটা একবার দেখা হয়ে যাবে। তাই সে প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গিয়েছিল।
পথের দাবী – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান
প্রশ্ন – প্রভাতকাল পর্যন্ত আর তাহার নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটিবে।’—কে এই কথা ভেবেছিল? এরুপভাবার কারণ কী?
উত্তর – যার ভাবনা:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী’রচনাংশের অন্যতম চরিত্র অপূর্ব এই কথা ভেবেছিল।
কারণ : অফিসের বড়ােসাহেবের নির্দেশে অপূর্বভামাের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। ট্রেনের প্রথম শ্রেণির যাত্রী অপূর্ব নিশ্চিন্ত ছিল পথে কেউ তাকে কোনােরকমভাবেই বিরক্ত করবে না। কারণ প্রথম শ্রেণির ক্ষেত্রে ট্রেনের সাধারণ কামরার মতাে ঝামেলা বা পুলিশি উৎপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের সমীহ করেই তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানাের কথা নয়। তাই তার মনে হয়েছিল সকাল অবধি সে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে।
প্রশ্ন – ইচ্ছা করিলে আমি তােমাকে টানিয়া নীচে নামাইতে পারি।’—উক্তিটি কার ? কেন বক্তা এরকম উক্তি করেছিলেন?
উত্তর – বক্তা : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী’ রচনাংশে এই উক্তির বক্তা বর্মা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর সাহেব।
কারণ : রেলের প্রথম শ্রেণির যাত্রী হলেও ভারতীয় বলে ব্রিটিশ পুলিশ অকারণে অপূর্বকে হেনস্তা করে। অপূর্ব প্রতিবাদ করলে সাব-ইনস্পেক্টর জানায়, প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটানাের নিয়ম কেবল রেল কর্মচারী ও ইউরােপিয়ানদের জন্য সংরক্ষিত। অপূর্ব এই দুটির কোনােটিই নয়। তাই এসব সহ্য করতে সে বাধ্য। এই উক্তিতে ভারতীয়দের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের পরিচয় স্পষ্ট।
প্রশ্ন – রামদাসের সুশ্রী গৌরবর্ণ মুখ ক্ষণকালের জন্য আরক্ত হইয়া উঠিল,— রামদাসের মুখ আরক্ত হয়ে উঠেছিল কেন?
উত্তর – কারণ : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় – এর পথের দাবী’ রচনাংশে রামদাসের সহকর্মী অপূর্ব রেলস্টেশনে ইংরেজ যুবকদের দ্বারা লাঞ্চিত হয়। অপূর্ব সাহেব স্টেশনমাস্টারের কাছে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ জানালে শুধুমাত্র ভারতীয় বলে তাকে আবার অপমানিত হতে হয়। ভারতীয়দের প্রতি ইংরেজদের এই অত্যাচার ও অবিচারের কথা শুনে উত্তেজনায় রামদাসের মুখ লাল হয়ে যায়।
প্রশ্ন – মনে হলে দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাই।’- উক্তিটির তাৎপর্য লেখাে।
উত্তর – তাৎপর্য : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী’ রচনাংশে এই উক্তিটির বক্তা অপূর্ব। একদিন রেলস্টেশনে একদল ইংরেজ যুবক অন্যায়ভাবে অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেয়। সাহেব স্টেশনমাস্টারের কাছে তার প্রতিবাদ জানাতে গেলে, স্টেশনমাস্টারও তাকে অপমান করে। অপূর্বর অপমানের সাক্ষী ভারতীয়রা কোনাে প্রতিবাদ করেনি, বরং তারা এই খবরেই খুশি হয় যে, লাথির চোটে অপূর্বর হাড়-পাঁজরা ভাঙেনি। এই লজ্জা ও অপমান
অপূর্বকে আঘাত করেছিল। তাই একথা মনে পড়লে অপূর্বর লজ্জা হয়।
পথের দাবী – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান
প্রশ্ন – অপূর্ব তৎক্ষণাৎ সম্মত হইয়া বলিল,—অপূর্ব কীসে সম্মত হয়েছিল ও কেন?
উত্তর – যাতে সম্মত :শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী’রচনাংশে অপূর্ব অফিসের কাজে ভামাে যেতে সম্মত হয়েছিল।
কারণ : রেঙ্গনের প্রবাসজীবন অপূর্বর কাছে সুখকর ছিল না, সেখানে তাকে নানাভাবে বিব্রত হতে হয়েছিল। অনেক কারণে রেঙ্গুনে
প্রশ্ন – আজকের মতাে নির্বোধ আহম্মক হতে বােধ করি কেউ কখনাে দেখেনি।-কাদের উদ্দেশ করে, কেন বক্তা এমন মন্তব্য করেছে?
উত্তর – উদ্দিষ্ট বক্তা : অপূর্ব রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনের পুলিশের বড়ােকর্তা নিমাইবাবু ও তার সহকর্মীদের উদ্দেশ করে তলওয়ারকরকে কথাটি বলেছে।
মন্তব্যের কারণ : বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহ করে রেঙ্গুন পুলিশ গিরীশ মহাপাত্রকে থানায় ধরে এনেছিল। গিরীশ মহাপাত্রের স্বাস্থ্য, পােশাক আর কথা বলার ভঙ্গি কোনাে কিছুই সব্যসাচীরসয়ে
মেলে না। তাই বিভ্রান্ত হয়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিলেও অপূর্ব গিরীশের ছদ্মবেশের আড়ালে থাকা প্রকৃত সব্যসাচীকে চিনে ফেলে। পুলিশের বড়কর্তাকে গিরীশের ব্যবহারে সম্পূর্ণ বােকা হয়ে যেতে দেখে বিস্ময়ে অপুর্ব এই মন্তব্যটি করে।
প্রশ্ন – “বাবাই একদিন এর চাকরি করে দিয়েছিলেন।”—বক্তা কে? তাঁর বাবা কাকে কী চাকরি করে দিয়েছিলেন?
উত্তর – বক্তা:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পথের দাবী’গদ্যাংশ থেকে নেওয়া এই উক্তিটির বক্তা হল অপূর্ব। যাকে, যে চাকরি:অপূর্বর বাবা তার বন্ধুনিমাইবাবুকে পুলিশের চাকরি করে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন – তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।’ —কেঅপূর্বর অনেক বেশি আপনার জন? উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কোন পরিচয় ফুটে উঠেছে?
উত্তর – উদ্দিষ্ট : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর কাছে তার আত্মীয়, পুলিশকর্তা নিমাইবাবুর থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা অনেক বেশি আপনার জন। বক্তার চরিত্রের পরিচয় : অপূর্বর মনে গভীর দেশপ্রেম ছিল। তাই তার কাকা নিমাইবাবু তার ভালাে চাইলেও তিনি যেহেতু ভারতীয় হয়ে ব্রিটিশ পুলিশের কথামতাে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরেন তাই অপূর্ব তাকে পছন্দ করে না। অপরপক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নিজের দেশকে স্বাধীন করতে চায় বলে তাদেরকেই অপূর্বর বেশি আপনার মনে হয়েছে। এই উক্তিতে অপূর্বর অগাধ দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।
প্রশ্ন – আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভােগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না’—বা কাকে এ কথা বলেছিলেন? কোন অবিচারের দণ্ডভােগ তাকে ব্যথিত করেছিল?
উত্তর – উদ্দিষ্ট:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে এই উক্তির বক্তা অপূর্ব তার সহকর্মী ও বন্ধু রামদাস তলওয়ারকরকে এই
কথাটি বলেছিলেন।
অবিচারের দণ্ড : একবার কয়েকজন ইংরেজ যুবক বিনা দোষে ভারতীয় অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্ব সাহেব স্টেশনমাস্টারের কাছে এই অন্যায়ের অভিযােগ করলে তাকে পুনরায় দুর্ব্যবহার ভােগ করতে হয়েছিল। ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের এই বৈষম্যমূলক আচরণ বা অবিচারের দণ্ড অপূর্বকে ব্যথিত করেছিল। বয়সি গিরীশের শরীর দুর্বল হলেও সাজ শৌখিন, যদিও তার পােশাক যাত্রাপথের ধকলে নােংরা হয়ে গিয়েছে। লােকটির কথাবার্তা ও উৎকট সাজসজ্জা দেখে অপূর্ব বােঝে যে এ লােক কখনােই শিক্ষিত, রুচিশীল সব্যসাচী হতে পারে না। তাই সে নিমাইবাবুকে লােকটিকে ছেড়ে দিতে অনুরােধ করে। তার রুগণ অবস্থা দেখে নিমাইবাবু বুঝতে পারেন অত্যধিক গাঁজা খাওয়ার ফলেই তা হয়েছে। তাই তিনি গিরীশকে এ নেশা ত্যাগ করতে বলেন।
প্রশ্ন – আজকের মতাে নির্বোধ আহম্মক হতে বােধ করি কেউ কখনাে দেখেনি।-কাদের উদ্দেশ করে, কেন বক্তা এমন মন্তব্য করেছে?
উত্তর – উদ্দিষ্ট বক্তা : অপূর্ব রেঙ্গুন পুলিশস্টেশনের পুলিশের বড়ােকর্তা নিমাইবাবু ও তার সহকর্মীদের উদ্দেশ করে তলওয়ারকরকে কথাটি বলেছে।
মন্তব্যের কারণ : বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহ করে রেঙ্গুন পুলিশ গিরীশ মহাপাত্রকে থানায় ধরে এনেছিল। গিরীশ মহাপাত্রের স্বাস্থ্য, পােশাক আর কথা বলার ভঙ্গি কোনাে কিছুই সব্যসাচীরসয়ে
মেলে না। তাই বিভ্রান্ত হয়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিলেও অপূর্ব গিরীশের ছদ্মবেশের আড়ালে থাকা প্রকৃত সব্যসাচীকে চিনে ফেলে। পুলিশের বড়কর্তাকে গিরীশের ব্যবহারে সম্পূর্ণ বােকা হয়ে যেতে দেখে বিস্ময়ে অপুর্ব এই মন্তব্যটি করে।
পথের দাবী – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান
প্রশ্ন – “বাবাই একদিন এর চাকরি করে দিয়েছিলেন।”—বক্তা কে? তাঁর বাবা কাকে কী চাকরি করে দিয়েছিলেন?
উত্তর – বক্তা:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পথের দাবী’গদ্যাংশ থেকে নেওয়া এই উক্তিটির বক্তা হল অপূর্ব। যাকে, যে চাকরি:অপূর্বর বাবা তার বন্ধুনিমাইবাবুকে পুলিশের চাকরি করে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন – তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।’ —কেঅপূর্বর অনেক বেশি আপনার জন? উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কোন পরিচয় ফুটে উঠেছে?
উত্তর – উদ্দিষ্ট : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর কাছে তার আত্মীয়, পুলিশকর্তা নিমাইবাবুর থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা অনেক বেশি আপনার জন। বক্তার চরিত্রের পরিচয় : অপূর্বর মনে গভীর দেশপ্রেম ছিল। তাই তার কাকা নিমাইবাবু তার ভালাে চাইলেও তিনি যেহেতু ভারতীয় হয়ে ব্রিটিশ পুলিশের কথামতাে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ধরেন তাই অপূর্ব তাকে পছন্দ করে না। অপরপক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নিজের দেশকে স্বাধীন করতে চায় বলে তাদেরকেই অপূর্বর বেশি আপনার মনে হয়েছে। এই উক্তিতে অপূর্বর অগাধ দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।
প্রশ্ন – আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভােগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না’—বা কাকে এ কথা বলেছিলেন? কোন অবিচারের দণ্ডভােগ তাকে ব্যথিত করেছিল?
উত্তর – উদ্দিষ্ট:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে এই উক্তির বক্তা অপূর্ব তার সহকর্মী ও বন্ধু রামদাস তলওয়ারকরকে এই
কথাটি বলেছিলেন।
অবিচারের দণ্ড : একবার কয়েকজন ইংরেজ যুবক বিনা দোষে ভারতীয় অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্ব সাহেব স্টেশনমাস্টারের কাছে এই অন্যায়ের অভিযােগ করলে তাকে পুনরায় দুর্ব্যবহার ভােগ করতে হয়েছিল। ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের এই বৈষম্যমূলক আচরণ বা অবিচারের দণ্ড অপূর্বকে ব্যথিত করেছিল। বয়সি গিরীশের শরীর দুর্বল হলেও সাজ শৌখিন, যদিও তার পােশাক যাত্রাপথের ধকলে নােংরা হয়ে গিয়েছে। লােকটির কথাবার্তা ও উৎকট সাজসজ্জা দেখে অপূর্ব বােঝে যে এ লােক কখনােই শিক্ষিত, রুচিশীল সব্যসাচী হতে পারে না। তাই সে নিমাইবাবুকে লােকটিকে ছেড়ে দিতে অনুরােধ করে। তার রুগণ অবস্থা দেখে নিমাইবাবু বুঝতে পারেন অত্যধিক গাঁজা খাওয়ার ফলেই তা হয়েছে। তাই তিনি গিরীশকে এ নেশা ত্যাগ করতে বলেন।
******প্রশ্ন – “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ যােলােআনাই বজায় আছে”—বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও।
অথবা, “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলােআনাই বজায় আছে।”—বাবুটি কে? তার স্বাস্থ্য এবং যােলাে আনা শখের পরিচয় দাও। t [Most Important ]
উত্তর – উদ্দিষ্ট : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী’ রচনাংশে গিরীশ মহাপাত্রকে ‘বাবু’ বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং শখের স্বরূপ : গিরীশ মহাপাত্র, রােগা ও ক্ষয়িষ্ণু চেহারার মানুষ। সামান্য কাশিতে তার হাঁপিয়ে পড়া এবং প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার মতাে কষ্টে মনে হয় সে ভীষণ অসুস্থ। তবুও তার চোখের অদ্ভুত দৃষ্টির গভীরতায় যে ক্ষীণ প্রাণশক্তি লুকানাে ছিল, তাতে যেন মৃত্যুও প্রবেশ করতে ভয় পায়। তার সাজপােশাক বিচিত্র। তার মাথার সামনে লেবুর তেলমাখা বড়াে বড়াে চুল চেরা সিঁথি করে আঁচড়ানাে। পরনে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, ধুতি করে পরা বিলেতি মিলের কালাে মকমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, লাল ফিতে বাঁধা সবুজ মােজা, বার্নিশ করা পাম্প-শু, পকেটে বাঘ-আঁকা রুমাল ও হরিণের শিঙের হাতলের বেতের ছড়ি গিরীশ মহাপাত্রকে এক অদ্ভুত রূপ দিয়েছে, যা দেখে তার বয়স হলেও শখ বজায় থাকার কথা বােঝা যায়।
পথের দাবী – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান
প্রশ্ন : ‘পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট’সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল।’—’পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে কী জানা যায়? তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কী পরিস্থিতি তৈরি হয়?
উত্তর – সব্যসাচীর পরিচয় : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী’ রচনাংশে ‘পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ সব্যসাচী মল্লিক বর্মায় এসেছে- পুলিশের কাছে এই খবর আছে। তারা তাই সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। ছদ্মবেশের জন্য পুলিশ গিরীশকে চিনতে না পারলেও সব্যসাচীই যে গিরীশ তা অপূর্বর কথায় জানা যায়। অপূর্বর কথায় আরও জানা যায় যে, স্বাধীনতা সংগ্রামী সব্যসাচী মল্লিক শিক্ষিত, রুচিশীল, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে পারদর্শী। পুলিশস্টেশনে আনার পরবর্তী ঘটনা : রেঙ্গুন পুলিশ পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে আটক করলে তার বিচিত্র সাজসজ্জা ও মাথায় লেবুর তেলের কটু গন্ধ তার সম্পর্কে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ত্রিশ-বত্রিশ বছর দৃঢ়তা : নিমাইবাবু, অপূর্ব এবং রামদাস তলওয়ারকর—গিরীশকে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও, তাদের সঙ্গে গিরীশ বিনয়ী আচরণ
করেছে। এমনকি তাকে নিয়ে কৌতুক করা পুলিশের সঙ্গে আচরণে গিরীশ ধৈর্য ও নম্রতা বজায় রেখেছে। এতে তার চরিত্রের অপরিসীম ধৈর্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় স্পষ্ট। একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর যেসব চারিত্রিক গুণ, যেমন দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, ছদ্মবেশধারণের অসামান্য দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধি প্রভৃতি থাকা প্রয়ােজন, সেইসব গুণগুলি গিরীশ মহাপাত্রের চরিত্রে রয়েছে।

প্রশ্ন – ‘পথের দাবী’ রচনাংশ অবলম্বনে অপূর্ব চরিত্রটি আলােচনা করাে।
উত্তর – পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পথের দাবী গদ্যাংশের প্রধান চরিত্র অপূর্ব। শিক্ষিত, মার্জিত রুচি, ভদ্র, ব্রাত্মণসন্তান অপূর্ব নিজের বাড়িতে চুরির কথা রেঙ্গন পুলিশস্টেশনে জানাতে এসে একটি বিশেষ ঘটনার সাক্ষী হয়। রেঙ্গন পুলিশস্টেশনে পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটক গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত সাজপােশাক, আচরণ পুলিশের কর্মচারীদের কাছে আত্মপরিচয় গােপন করতে সব্যসাচীকে সাহায্য করলেও তার দৃষ্টিতে নিহিত অদম্য প্রাণশক্তির রহস্যময়তা অপূর্বর চোখে ধরা পড়েছে।
আত্মসম্মানবােধ : ভারতীয় হওয়ার জন্য রেঙ্গুন রেলস্টেশনে অকারণে ফিরিঙ্গিদের কাছে লানা, সাহেব স্টেশনমাস্টারের দুর্ব্যবহার, ভামাে যাওয়ার পথে পুলিশের চরম অপমান অপূর্বর আত্মসম্মানবােধে আঘাত করেছে।
দেশপ্রেম: অপূর্বর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গভীর দেশপ্রেম। ফিরিঙ্গিরা তাকে যেভাবে অপমান করেছে তাতে পরাধীনতার যন্ত্রণই প্রধান হয়ে উঠেছে। বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের প্রতি সে যে শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাতে তার গভীর স্বদেশপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। রামদাসের সঙ্গে কথােপকথনে অপূর্ব জানিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তার আত্মীয়ের থেকেও আপন এবং দেশকে ভালােবাসার জন্য সে কঠিন শাস্তি ভােগ করতেও প্রস্তুত।
চারিত্রিক দ্বন্দ্ব : অপূর্ব প্রকৃত দেশপ্রেমিক হলেও সে ছিল অন্তর্মুখী, ভীরু স্বভাবের। তাই ফিরিঙ্গি ছোঁড়া বা সাহেব স্টেশন মাস্টারের অপমানে সে আহত হলেও বিশেষ কোনাে প্রতিবাদ করে না।
পথের দাবী – মাধ্যমিক বাংলা | মাধ্যমিক বাংলা সাজেসান
প্রশ্ন – ‘পথের দাবী’ গদ্যাংশ অবলম্বনে রামদাস তলওয়ারকরের চরিত্রের পরিচয় দাও।
উত্তর – পরিচয় : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ রচনাংশে রামদাস তলওয়ারকর রেঙ্গুনে অপূর্বর সহকর্মী, বন্ধু ও পেশায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সহমর্মিতা : অপূর্বর বাড়িতে চুরি, অভদ্র ফিরিঙ্গিদের কাছে অপূর্বর চরম লাঞ্ছনা, স্টেশনমাস্টারের অপমানজনক আচরণ-এর কথা শুনে রামদাস ব্যথিত হয়েছে। অপূর্বর প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে সে। অপূর্ব ভামাের উদ্দেশে রওনা হলে রামদাস কথা দিয়েছে সবকিছু দেখাশােনা করবে। এতে বােঝা যায় রামদাস সহৃদয়, পরােপকারী এবং অপূর্বর সহমর্মী ও সমব্যথী। বাস্তববােধ : তলওয়ারকর অল্পভাষী এবং সংযত। অপুর্ব যখন অকপটে স্বদেশপ্রেমের কথা বলেছে তখন রামদাস তাকে সমর্থন করলেও স্বল্প কথায় এসব কথা বলার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছে।
ব্রিটিশ শাসকের নির্দয়তা সম্বন্ধে সে সচেতন। সমকালীন রাজনীতি সম্পর্কে তার বাস্তববােধ যথেষ্ট।
বিচক্ষণতা : অপূর্বর মুখেই তলওয়ারকর গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত সাজসজ্জার পরিচয় পেয়েছে। তবে গিরীশকে ভালােভাবে দেখে তার মনে হয়েছে যে, গিরীশ কোনাে সাধারণ মানুষ নয়। তাই অপূর্ব
গিরীশকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করলেও, তলওয়ারকরের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা যায়। রামদাসের এই চিন্তা পাঠককে গিরীশের প্রকৃত পরিচয় জানার জন্য কৌতুহলী করে তুলেছে।
প্রশ্ন – শরৎচন্দ্র রচিত ‘পথের দাবী’ রচনায় লেখকের যে স্বদেশভাবনার প্রচ্ছন্ন পরিচয় আছে, তা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – যুগসচেতন সাহিত্যিকদের রচনায় সমকালীন যুগের ছবি ধরা পড়ে। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ পাঠাংশেও লেখকের স্বদেশভাবনা প্রকাশিত হয়েছে।
স্বদেশভাবনার পরিচয় : এই রচনাংশের শুরুতে দেখা যায়, রেঙ্গুন পুলিশের বডােকর্তা ‘পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্র-সহ অন্যান্যদের আটক করেছে। কেননা তাদের কাছে খবর আছে সব্যসাচী বর্মায় এসেছে। কিন্তু পুলিশকর্তারা গিরীশের ছদ্মবেশে থাকা সব্যসাচীকে চিনতে পারেনি। সেইসময় থানায় উপস্থিত অপূর্ব সব্যসাচীকে চিনতে পারলেও সে পুলিশকর্তা
নিমাইবাবুকে অনুরােধ করে গিরীশকে ছেড়ে দিতে। আসলে এর মধ্যে অপূর্বর দেশপ্রেম নিহিত ছিল। ব্রিটিশ সরকারের চাকর হয়ে নিমাইবাবু
দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রেপ্তার করে দেশদ্রোহিতা করছেন বলেই অপূর্বর মনে হয়েছে। তাই তার কাছে কাকা নিমাইবাবুর থেকেও
বেশি আপনজন পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার চেষ্টা করছে যারা। অপূর্ব বহুবার নিজের দেশের মাটিতেই দেশীয় লােক বলে অপমানিত হয়েছে। একবার রেলস্টেশনে একদল ইংরেজ যুবক অকারণে অপূর্বকে লাথি মেরে বার করে দেয়। অপূর্ব স্টেশনমাস্টারের কাছে অভিযােগ জানাতে গিয়ে পুনরায় অপমানিত হয়। কিন্তু স্টেশনে থাকা অপূর্বর দেশের লােকেরা এর কোনাে প্রতিবাদই করে না। বরং তারা এই ভেবে খুশি হয় যে, অপূর্বর মারাত্মক আঘাত লাগেনি। আবার ভামাে যাত্রাপথে ট্রেনে ইউরােপিয়ান নয় বলে বর্মা সাব-ইনস্পেক্টর নিয়মভঙ্গ করে অপূর্বর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। নিজের দেশে নিজের এই অপমান, অবহেলা অপূর্বর পীড়িত করে, সে প্রতিবাদীও হয়। আর এভাবেই লেখক এই রচনাংশে তার স্বদেশভাবনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
প্রশ্ন – ‘পথের দাবী’গদ্যাংশ অবলম্বনে গিরীশ মহাপাত্র চরিত্রের বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।
উত্তর – ছদ্মবেশধারণের নিপুণতা:শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী গদ্যাংশের সূচনায় ‘পােলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে রেগুনে প্রবেশকারী যে দলটিকে পুলিশ আটক করেছিল, সেই দলেই ছিল গিরীশ মহাপাত্র। জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, কালাে মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা সবুজ রঙের ফুলমােজা, পকেটে বাঘ-আঁকা রুমাল, লােহার নাল-বাঁধানাে জুতাে, মাথায় লেবু তেলের উগ্র গন্ধ—ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্রের এই বিচিত্র সাজপােশাক তাকে সব্যসাচীর সঙ্গে তুলনা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তার সাজপােশাক ও কথাবার্তা পুলিশের কাছে তাকে করুণার পাত্র করে তুলেছে।
ব্যক্তিত্ব : গিরীশ মহাপাত্রের চোখের উজ্জ্বল রহস্যময় ক্ষুরধার দৃষ্টি থেকে অনুমান করা যায়, এই ব্যক্তিই সব্যসাচী মল্লিক। তার গভীর জলাশয়ের মতাে চোখের দৃষ্টিতে লুকোনাে আছে অদম্য প্রাণশক্তি। এখানে তার দৃঢ় ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
You must be logged in to post a comment.