
প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও প্রতিবর্ত চাপ : জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়
প্রতিবর্ত ক্রিয়া : বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ আকস্মিক উদ্দীপনায় প্রাণীদেহে যে দ্রুত, স্বতঃস্ফূর্ত এবং অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় ,তাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা রিফ্লেক্স অ্যাক্সন বলে।
প্রতিবর্ত ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য :১) প্রতিবর্ত ক্রিয়া মস্তিষ্কের সাহায্য ছাড়াই ঘটে । ২) প্রতিবর্ত ক্রিয়া অনৈচ্ছিক। ৩) বেশির ভাগ প্রতিবর্ত ক্রিয়া সুষুম্নাকান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
প্রতিবর্ত ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ : রুশ বিজ্ঞানী প্যাভলভ প্রতিবর্ত ক্রিয়াকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করেছেন – ১) সহজাত বা শর্তবিহীন ২) অভ্যাসগত বা শর্তাধীন ।
সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়াঃ যে সকল প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মগত অর্থাৎ জন্মের সাথে সাথে বংশগত সূত্রে পূর্বপুরুষ থেকে প্রাপ্ত তাকে সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে ।
সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ : ১) জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর স্তন্যপানের ইচ্ছা ২) উজ্জ্বল আলোকে চোখের পাতা বন্ধ হওয়া ৩) খাদ্যের উপস্থিতিতে লালা নিঃসরণ ৪) নির্দিষ্ট সময়ে মল-মূত্রের বেগ অনুভব প্রভৃতি ।
অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়াঃ যেসব প্রতিবর্ত ক্রিয়া জন্মের পর বিভিন্ন অভিজ্ঞাতার মাধ্যমে অর্জিত হয় তাকে অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া বলে।
অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ: ১) সাইকেল চালানো ২) শিশুদের হাঁটতে শেখা ৩) কথা বলতে শেখা ৪) সাঁতার কাটা প্রভৃতি ।
প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও প্রতিবর্ত চাপ : জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়
প্রশ্ন : নীচের ঘটনাগুলি ঘটলে প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্ত ক্রিয়া ঘটে। এই প্রতিবর্ত ক্রিয়ার গুরুত্ব লেখো- যখন শ্বাসনালিতে খাদ্য কণা ঢুকে পড়ে এবং যখন নাকের মধ্যে কোনো বিজাতীয় বস্তু প্রবেশ করে। অথবা , প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর : প্রতিবর্ত ক্রিয়ার গুরুত্বঃ
শ্বাসনালিতে খাদ্যকণা প্রবেশঃ যখন শ্বাসনালিতে খাদ্যকণা ঢুকে , তখন কাশি প্রতিবর্ত ক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে শ্বাসনালি থেকে খাদ্যকণা নির্গত হয়ে শ্বাসনালি পরিষ্কার হয়।
নাকের মধ্যে কোনো বিজাতীয় বস্তু প্রবেশ : নাকের মধ্যে কোনো বিজাতীয় বস্তু ঢুকে পড়ে, তখন হাঁচি প্রবির্তের সৃষ্টি হয়। এই বিজাতীয় বস্তু হিস্টামিন ক্ষরণে উদ্দীপনা দেয়, যা নাকের স্নায়ু কোশকে উদ্দীপিত করে হাঁচির প্রতিবর্ত ক্রিয়া সৃষ্টি করে, ফলে বিজাতীয় বস্তু নির্গত হয়।
প্রশ্ন : নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি কোন প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উদাহরণ: ১) সদ্যজাতের স্তনপানের ইচ্ছা ২) সাইকেল চালানো ৩) হাঁচি ও কাশি ৪) ক্ষিপ্রতার সাথে উইকেট কিপারের বল ধরা।
উত্তর : ১) সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া ২) অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া ৩) সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া ৪) অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া ৷
প্রশ্নঃ একটি সরল প্রতিবর্ত চাপের চিত্র এঁকে নিম্নলিখিত অংশ গুলি চিহ্নিত করো – ক) গ্রাহক খ) সংজ্ঞাবহ স্মায়ু গ) স্নায়ু কেন্দ্র ঘ) চেষ্টীয় স্নায়ু

প্রশ্নঃ সঠিক প্রতিবর্ত পথ এর রেখাচিত্র দেখাও ।
উত্তরঃ গ্রাহক ➩ অন্তর্বাহী স্নায়ু ➩ স্নায়ু কেন্দ্র ➩ বহির্বাহী স্নায়ু ➩ কারক ।
প্রশ্ন : প্রতিবর্ত চাপ বা রিফ্লেক্স আর্ক কাকে বলে ? একটি প্রতিবর্ত চাপের বিভিন্ন অংশের নাম লেখো
উত্তরঃ যে স্মায়ুপথে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্মায়ুস্পন্দন আবর্তিত হয়, তাকে প্রতিবর্ত চাপ বলে ।
প্রতিবর্ত চাপের অংশ : প্রতিবর্ত চাপের বিভিন্ন অংশগুলি হল—
গ্রাহক বা রিসেপটর : এর মাধ্যমে পরিবেশ থেকে আগত উদ্দীপনা গৃহীত হয়।
অন্তর্বাহী স্নায়ু : এটি সেনসরি নিউরােন দিয়ে গঠিত। এর মাধ্যমে স্নায়ুসংবেদন গ্রাহক থেকে স্নায়ুকেন্দ্রে পৌঁছােয়।
স্নায়ুকেন্দ্র : এটি সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর পদার্থ দ্বারা পূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা আজ্ঞাবহ উদ্দীপনায় রূপান্তরিত হয়।
বহির্বাহী স্নায়ু : এটি মােটর নিউরােন দিয়ে গঠিত। এর মাধ্যমে আজ্ঞাবহ উদ্দীপনা (সাড়া) ইফেকটর বা কারকে পৌঁছােয়।
কারক বা ইফেকটর : পেশি, গ্রন্থি ইত্যাদি হল কারক । এগুলি উদ্দীপনায় উদ্দীপিত হয় বা সাড়া দেয় ।
You must be logged in to post a comment.