
প্রলয়ােল্লাস – বাংলা কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা | কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : ‘প্রলয়ােল্লাস’কবিতায় সমকালীন ভারতবর্ষের পটভূমিকায় কবি নজরুল ইসলামের যে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখাে।
উত্তর : সমকালীন ভারতবর্ষের সমাজ : কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে পরাধীন ভারতবর্ষের বিপ্লববাদের জয়গান ঘােষিত হয়েছে। পরাধীন দেশে
ভারতীয়রা মৃত্যুর মতাে পরাধীনতার অন্ধকারে আবদ্ধ। প্রাণহীনতার জরা তাদের চেতনাকে আচ্ছন্ন করেছে। বিদেশি শাসকশক্তি ভয় দেখিয়ে তাদের চিন্তা-চেতনার সজীবতাকে গ্রাস করেছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করেছে ভারতবাসীর স্বাধীন সত্তা। এমন সময়ে তরুণ বিপ্লবীরা স্বাধীনতার নতুন কেতন উড়িয়ে বিপ্লবে অংশ নেয়। নিষ্ঠুর
ব্রিটিশ শাসক তাদের দ্বীপান্তরে নির্বাসিত করে।
কবির প্রতিবাদ : এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কবি নজরুল ইসলাম ধ্বংসের দেবতা রুদ্রদেবের রূপকে নির্ভীক বিপ্লবীদের উত্থানের কল্পনা করেছেন। যারা রুদ্রশিখার মশাল জ্বেলে’ সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংসের
সূচনা করবে, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে পরাধীনতার আগল ভেঙে দেবে। তাদের প্রবল প্রতিবাদে রাজনৈতিক বন্দিরা মুক্তি পাবে। এই
বিপ্লববাদের আদর্শ ভয়ংকরবেশে এসে সমস্ত জড়তাকে বিনাশ করবে। কবি আশা করেন একদিন এই বিপ্লবমন্ত্র স্বাধীনতার নতুন ভাের নিয়ে আসবে। তাই তিনি সমগ্র ভারতবাসীকে চিরসুন্দরের জয়গানে মুখরিত হতে আহ্বান জানিয়েছেন এবং তরুণ শক্তির জয়ধ্বনি উচ্চারণ করতে বলেছেন।
****প্রশ্ন : “তােরা সব জয়ধ্বনি কর।”—এখানে তােরা’ বলতে কাদের বােঝানাে হয়েছে? তারা কেন, কাদের জয়ধ্বনি করবে? [ Most Important ]
উত্তর : ‘তােরা’ বলতে যাদের বুঝিয়েছেন : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’ কবিতাটির এই পঙক্তিতে ‘তােরা’ বলতে কবি পরাধীন, অত্যাচারিত, আর্ত ভারতবাসীকে বুঝিয়েছেন।
যে কারণে জয়ধ্বনি : ধ্বংসের গভীরেই নতুন সৃষ্টির বীজ নিহিত থাকে। তাই পরাধীন ভারতবর্ষেকবি রুদ্ররূপী তরুণ বিপ্লবীশক্তিকে আহ্বান জানিয়েছেন। নবীন বিপ্লবীদল প্রাণের আবেগে পরিপূর্ণ। তারা স্বদেশের মুক্তির উদ্দেশ্যে প্রাণ দিতে প্রস্তুত। বিদ্রোহী যুবসমাজ প্রলয়দেবতার মতােই রুদ্ররূপ ধারণ করে ধ্বংসের মাধ্যমে নতুন সৃষ্টির স্বপ্ন সার্থক করে তুলবে বলেই কবির দৃঢ় বিশ্বাস। তাদের বিপ্লবের বাণীকে তাই কবি ‘নতুনের কেতন’ বলে উল্লেখ করেছেন। ধূমকেতুর মতাে হঠাৎ এসে তারা সমস্ত স্তব্ধ চরাচরকে জাগিয়ে তুলবে। এই ভয়ংকর প্রলয় দেখে অজ্ঞান, ভীরু ভারতবাসী ভীত না হয়ে পরাধীনতার অবসানে নতুন উজ্জ্বল দিনের সূচনার আশায় তার জয়ধ্বনি করবে।
যাদের জয়ধ্বনি : স্বাধীনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারতবাসী ‘চিরসুন্দর’ ও ‘ভয়ংকর বেশে আসা বিপ্লবীশক্তির জয়ধ্বনি করবে। বিদ্রোহী তরুণ সমাজের উৎসাহ, উদ্দীপনা বৃদ্ধি করার জন্য তাদের
জয়ধ্বনি করা একান্ত প্রয়ােজন বলে মনে করেন কবি।
***প্রশ্ন : “আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল/ সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!’ কবি কার আগমন কামনা করেছেন? তিনি এলে দেশের কোন পরিবর্তন হবে বলে তুমি মনে করাে? [ Most Important ]
উত্তর : যার আগমন : ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘অনাগত’-এর আগমন কামনা করেছেন। অনাগত’ শব্দের অর্থ এখনও পর্যন্ত যার আগমন ঘটেনি। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে
দেশবাসীকে পরাধীনতার যন্ত্রণামুক্ত করতে কবি নজরুল সৃষ্টি ও ধ্বংসের দেবতা রুদ্র নটরাজের রূপকে এমন তরুণ বিপ্লবীশক্তির আবির্ভাব প্রার্থনা
করছেন, এর আগে যার আগমন ঘটেনি।
দেশের পরিবর্তন: রুদ্ররূপী তরুণ সমাজ নতুনের কেতন উড়িয়ে এসে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করবে। প্রলয়নেশায় উন্মত্ত হয়ে তারা দ্বীপান্তরে নির্বাসিত তরুণদের মুক্ত করবে। পরাধীনতার যে অন্ধকার মৃত্যুকূপের মতাে গভীর, তাকে জয় করবে তরুণ বিপ্লবীদল। তাদের বিপ্লববাদের মন্ত্র যেন বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে’ সমাজকে পথ দেখাবে। তাই জগদ্ব্যাপী
অন্ধকার দূর করে তরুণরা নতুন উষার আলাে নিয়ে আসবে। মুমূর্য ভারতবাসী তরুণদের মাভৈঃমন্ত্রে নতুন করে বাঁচতে শিখবে। পরাধীন ভারতবর্ষের অন্ধকারময় যুগের অবসানে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন আশাবাদের জন্ম দেবে।
প্রলয়ােল্লাস – বাংলা কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা | কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : মহাকালের চণ্ড-রুপে—/ধূ-ধূপে/বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে’ভয়ংকর!’—মহাকালের স্বরুপ আলােচনা করাে। কবি মহাকালের প্রয়ােজন অনুভব করেছেন কেন?
উত্তর : মহাকালের স্বরূপ :উদ্ধৃতাংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা থেকে সংগৃহীত। আলােচ্য কবিতায় ‘মহাকাল’ শব্দটি দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মহাকাল চিরপ্রবহমান সময় এবং দেবাদিদেব মহাদেব—এই দুইয়ের প্রতীক।
মহাকালের নিয়মে প্রকৃতির বুকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস ও সৃষ্টির পরম্পরা চলে। মহাকালরূপী দেবাদিদেব মহাদেব সভ্যতার ধ্বংস ও সৃষ্টিকর্তা। আলােচ্য কবিতায় পুরাতনকে ধ্বংস করে নতুনের আগমন বার্তা শােনাতে কবি মহাকালের প্রসঙ্গ এনেছেন।
মহাকালের প্রয়ােজনীয়তা : আধুনিক বিশ্বের অসন্তোষ, ক্ষোভ ও পরাধীনতা থেকে অসহায় মানবজাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য মহাকালের আবির্ভাব প্রয়ােজন। বিশ্বের পালনকর্তা মহাকালের
বাহুতে রয়েছে বিপুল শক্তি। সমস্ত বাধাবিপত্তি থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করার ভার তার। মহাকালের শক্ত বাহুর বাঁধনে বিশ্বজননীর আসন। সুরক্ষিত হয়েছে। ভারতবর্ষ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। বিদেশী শক্তির
অত্যাচারে ভারতবাসীর জীবনে রাত্রিসম অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। তবে আশাবাদী কবি জানেন রাত্রির অন্ধকার যতই গভীর হােক, একসময় সূর্যোদয় হবেই। তাই মনেপ্রাণে তিনি বিশ্বাস করেন তরুণদের বিপ্লবমন্ত্রে মহানিশার অবসান ঘটিয়ে মহাকাল একদিন পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতার নতুন ভােরের সূচনা করবেন।
প্রশ্ন : বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!’—এখানে ভয়ংকর’ বলতে কবি কাদের ইঙ্গিত করেছেন? তাদের ভয়ংকর’ বলার কারণ কী? ভয়ংকর’রা কীভাবে আসছে তা কবিতা অবলম্বনে লেখাে।
উত্তর : ‘ভয়ংকর’:কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশে ‘ভয়ংকর’ বলতে নবযুগের বার্তাবহ তরুণ
বিপ্লবীদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
‘ভয়ংকর’ বলার কারণ : ‘ভয়ংকর’ শব্দের অর্থ ভয় সৃষ্টিকারী। তরুণ বিপ্লবীদল ভারতবর্ষের পরাধীনতার দুর্দশাকে দূর করতে উদ্যত। তারা রুদ্রদেবের প্রলয় নৃত্যের মতােই ধ্বংসের নেশায় মেতে উঠেছে।
তাদের ভয়াল-ভয়ংকর মূর্তির দুঃসাহসিক চরিত্রকে উদ্দেশ্য করে তাদের ‘ভয়ংকর’ বলা হয়েছে।
ভয়ংকরের আগমন:প্রবল ঝড়ের তাণ্ডবে যেমন সমস্ত জীর্ণতা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, ঠিক তেমনভাবেই নতুনের কেতন উড়িয়ে তরুণ বিপ্লবীদল ভয়ংকর কালবৈশাখীর মতাে গতিতে আবির্ভূত হয়। তাদের বজ্ৰশিখার মশাল’ পরাধীনতার কালিমা দূর করে। কবির দৃঢ় বিশ্বাস ভয়ংকরের প্রবল তাণ্ডবে সব দীনতার অবসান ঘটবে। ভয়ংকররুপী নবীন বিপ্লবীরা প্রথমে ধ্বংস, তারপরে সৃষ্টির খেলায় মেতে ওঠে।
তারা তীব্রগতিতে সমগ্র বিশ্বে বিদ্রোহের রথ ছুটিয়ে আসে। তাদের ভয়ংকর বিপ্লববাদ পরাধীনতার অন্ধকারকে দূর করে। কখনও ভয়ংকর জ্বালামুখী ধূমকেতুরূপে চামর দুলিয়ে হাসির অট্টরােলে চরাচর স্তব্ধ করে। এভাবেই সেই ভয়ংকরের আগমনবার্তা ধ্বনিত হয়।
প্রশ্ন : ‘রক্ত তাহার কৃপাণ ঝােলে’-কোন্ কবিতার অংশ এটি? কৃপাণ’ শব্দের অর্থ কী? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য লেখাে।
উত্তর : উৎস : উপরােক্ত উদ্ধৃতিটি কবি নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতার অংশ। ‘কৃপাণ’ শব্দের অর্থ : ‘কৃপাণ’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল খরগ বা তরবারি।
তাৎপর্য : বিদ্রোহী কবি নজরুল অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে সর্বদা প্রতিবাদমুখর। আলােচ্য কবিতায় অত্যাচারী সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বিনাশ সাধনের জন্য রুদ্র নটরাজের রূপকে তরুণ বিপ্লবীদের – কবি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রলয়ের আগমন নিশ্চিত জেনে তিনি আনন্দিত হয়েছেন। কালবৈশাখীর মতাে প্রবল গতিতে তরুণরা পরাধীনতা মােচনে বিপ্লবে অংশ নেয়। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে নতুন। জীবন ছিনিয়ে আনে নবীনদল। ভয়ংকরের বেশে তারা নিষ্ঠুর শাসকের সিন্ধুপারের সিংহদ্বারের আগল ভাঙতে থাকে। আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয় নিজেরা, তবুও প্রাণপণ শক্তিতে জীর্ণ-পুরাতনকে ধ্বংস করে। সমস্ত দীনতা, পুরাতন ধ্যান ধারণা, ভীরুতা তাদের প্রচণ্ড দাপটে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। নবীন বিপ্লবীদল তীক্ষ্ণ, ধারালাে কৃপাণের আঘাতে পরাধীনতার শৃঙ্খলকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে
চায়। কৃপাণের দ্বারা হত্যা, রক্তপাতের পথে হেঁটেই তারা স্বদেশের যন্ত্রণামুক্তির সংকল্প গ্রহণ করে।
প্রলয়ােল্লাস – বাংলা কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা | কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : অট্টরােলের হট্টগােলে স্তব্ধ চরাচর’—চরাচর স্তন্ধ কেন?’ কবি ‘অট্টরােলের হট্টগােল’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : স্তব্ধতার কারণ : পরাধীন ভারতবাসীর কাছে স্বাধীনতার বার্তা পৌছে দিয়েছেন কবি নজরুল। তার প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় সেই স্বাধীনতার আগের মুহূর্তের কথা বর্ণিত হয়েছে। বিদেশি শাসকের অত্যাচারে জর্জরিত ভারতবর্ষের বুকে দীর্ঘদিন ধরে অশিক্ষা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির অন্ধকার সঞ্জিত হয়ে আছে। অত্যাচারী শাসক ভারতীয়দের শােষণ করছে -এই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য কবি ধ্বংস
ও প্রলয়ের দেবতা বুদ্র নটরাজের আগমন প্রার্থনা করেছেন। আসন্ন ভয়ংকর প্রলয়ের প্রতীক্ষায় নিস্তব্ধ, ভীত বিশ্বকে কবি স্তন্ধ চরাচর বলেছেন। রুদ্রদেব প্রলয় ও সৃষ্টির দেবতা। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে যে অন্যায়,
অবিচার ও নৈরাজ্য চলছে, তাকে দূর করার জন্য কবি রুদ্ররূপী তরুণ বিপ্লবীদের প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। তারা এসে যে ভয়ংকর ধ্বংসলীলা চালাবে তার ভয়াবহতায় চরাচর আতঙ্কিত বলেই পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
অট্টরােলের হট্টগােল’ কথাটির অর্থ : ‘অট্টরােল’ কথাটির আভিধানিক অর্থ অতি উচ্চ ধ্বনি বা কলরব, ‘হট্টগােল বলতে বােঝায় গােলমাল। পরাধীন দেশের জন্য মুক্তি প্রয়ােজন। সেই মুক্তি কখনােই শান্তির পথ ধরে আসবে না। বিপ্লবীরা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায়
ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামের সূচনা করেছে। তারা ভয়ংকরবেশে গগন দুলিয়ে, মহাকালের রুদ্র চণ্ডরূপে, কৃপাণ হাতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। তাদের আগমনের প্রবল শব্দে চরাচর ভীত। সরব প্রতিবাদের
মধ্য দিয়ে, অট্টহাসি হেসে তরুণ সৈনিকরা স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
প্রশ্ন : জয় প্রলয়ঙ্কর!’ – প্রলয়ঙ্কর’ কে? কারা, কেন
প্রলয়ঙ্করের জয় ঘােষণা করেছে? তাদের পরিচয় দাও।
উত্তর : প্রলয়ঙ্কর’ : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়ােল্লাস’কবিতায় প্রলয়ঙ্কর বলতে বােঝানাে হয়েছে সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের দেবতা রুদ্র নটরাজকে।
যারা, যে কারণে : বিদেশি শাসকের অত্যাচারে অত্যাচারিত ভারতবর্ষের পরাধীনতার গ্লানি, জীর্ণতা ও দুদর্শাকে ভয়ংকর বিপ্লবের মাধ্যমে ধ্বংস করে স্বাধীনতা লাভের আশায় তরুণ সমাজ প্রলয়নেশায়
মত্ত। সেই মুক্তিমন্ত্রে নিজেদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যেই বিপ্লবী তরুণরা প্রলয়ঙ্করের জয় ঘােষণা করেছে।
তাদের পরিচয় : বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষিত তরুণ সমাজ রুদ্রদেবের মতােই ধ্বংসের মাধ্যমে নতুনের সৃষ্টি করে। তারা দেশের মুক্তির জন্য, অনায়াসে ভয়কে জয় করে হাসিমুখে জীবন উৎসর্গ করতে পারে। সাধারণ জীবন বিসর্জন দিয়ে, জীবন-মৃত্যুকে তুচ্ছ করে তারা স্বাধীনতার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ধূমকেতুর মতাে এসে তারা যা কিছু জীর্ণ পুরাতন তা ধ্বংস করে নতুনের সূচনা করবে।
আরও দেখুন : আফ্রিকা কবিতা

প্রশ্ন : ‘দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যুপে/পাষাণ-স্তুপে!’—এখানে ‘দেবতা কীভাবে বাঁধা পড়ে আছে? ‘পাষাণ- স্তূপ’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? অংশটির তাৎপর্য লেখাে।
উত্তর : বন্দি দেবতা : উদ্ধৃতিটির উৎস বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’ কবিতাটি। এখানে ‘দেবতা’ শব্দটির দুটি অর্থ। এক অর্থে, অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ঈশ্বর, অন্য অর্থে ভারতবর্ষের নবীন বিপ্লবীদল। সর্বব্যপ্ত দেবতাকে দেবালয়ে যেমন পাথরের মূর্তির মধ্যে। আবদ্ধ করার বৃথা চেষ্টা করা হয়, তেমনই অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের কারাগারে দেবতাসম তরুণ বিপ্লবীরা বন্দি।
‘পাষাণস্তুপ’ : দেবালয় নির্মিত হয় কঠিন পাথরের দ্বারা, দেবতা সেই পাথরে নির্মিত মন্দির ও মূর্তির মাঝে বন্দি হন। অন্যদিকে নিষ্ঠুর ইংরেজ শাসকের পাষাণ নির্মিত কারাগারে তরুণ বিপ্লবীদের কারারুদ্ধ
করা হয়। তাদের আত্মত্যাগের রক্তে রাঙানাে কারাগারই আলােচ্য উদ্ধৃতিতে ‘পাষাণ- স্তূপ’ বলে উল্লিখিত হয়েছে।
তাৎপর্য : হৃদয়ে মাতৃমুক্তির ব্রত নিয়ে স্বাধীনতার লড়াই শুরু করেছে ভারতবর্ষের নবীন প্রজন্ম। স্বদেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে তারা জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত। নির্দয় শাসকের চাবুকের
আঘাতে ক্ষতবিক্ষত বিপ্লবীদের রক্তে পাথরের কারাগার রাঙিয়ে উঠেছে। বীর সৈনিকদের আত্মদানের রক্তে রঞ্জিত শাসকের অন্ধ কারাগার। বিদ্রোহী কবির চেতনায় রক্তে রাঙা সেই অন্ধ কারাগারই দেশজননীর পূজার পাষাণপ।
প্রলয়ােল্লাস – বাংলা কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা | কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : তার আসার সময় ওই রথঘর্ঘর’–এখানে তার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার আগমনের কারণ কী? তার আগমনে রথের চাকায় যে আওয়াজ শােনা যায়, তার তাৎপর্য লেখাে।
উত্তর : উদ্দিষ্ট : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়ােল্লাস’ কবিতার অন্তর্গত উদ্ধৃতাংশে উল্লিখিত ‘তার’ বলতে রুদ্রদেবের সারথি তরুণ সমাজের কথা বলা হয়েছে। তরুণ বিপ্লবীদল
রক্ত-তড়িৎ চাবুক হেনে ক্রমশ এগিয়ে আসছে।
আগমনের কারণ : ভারতবর্ষ বিদেশি শাসকের অসহনীয় অত্যাচারে বিধ্বস্ত। পরাধীন ভারতবর্ষের জীর্ণতা ও দৈন্য ভারতবাসীর জীবনে দুর্দশা ডেকে এনেছে। সেইসঙ্গে ভারতবর্ষের কোনায় কোনায়
বাসা বেঁধেছে গোঁড়ামি, অশিক্ষা ও নৈরাজ্যের অন্ধকার। পরাধীন ভারতবর্ষের বুক থেকে এই ঘােরতর অন্ধকারকে দূর করার জন্য প্রলয়রূপী তরুণ সমাজের আবির্ভাব একান্তভাবেই প্রয়ােজন।
তাৎপর্য : মহাকালের রথ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে। চলার পথে সমস্ত বাধাবিপত্তি ও অন্যায় অত্যাচারকে সে ভেঙে চুরমার করে দেয়। ব্রিটিশের পদানত ভারতবর্ষে অন্যায় অত্যাচার, অবিচার ও অরাজকতা যখন লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে তখন তাকে বিনাশ করার জন্য মহাকালের রথ এগিয়ে এসেছে। রথের চাকার ভয়ংকর ঘর্ঘর ধ্বনিতে চারদিক ভরে উঠেছে। ভারতবর্ষের তরুণ বিপ্লবীদল মহাকালের রথের সারথি হয়ে তাকে টেনে নিয়ে চলেছে ধ্বংসের দিকে, কারণ ধ্বংসের মধ্য দিয়েই নতুন যুগের সৃষ্টি হবে।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন : “ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবােশেখির ঝড়।”
নূতনের কেতন’ কী? অংশটির তাৎপর্য লেখাে।
উত্তর : নূতনের কেতন : কেতন’ কথাটির অর্থ নিশান বা পতাকা। ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় নূতনের কেতন’ বলতে নূতনের সম্ভাবনা বয়ে আনা পতাকা বা নূতনের আগমনবার্তার নিশানকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এই পতাকার উত্তোলনে নবযুগের সূচনা ঘটে।
তাৎপর্য : সূর্যের প্রখর তাপে প্রকৃতি যখন ক্লান্ত, শ্রান্ত তখন নবজীবনের আশ্বাস বহন করে আনে কালবৈশাখীর ঝড়। প্রবল ঝড়ের দাপটে প্রাণ ফেরে রুক্ষ পৃথিবীর বুকে। শীতল বৃষ্টিধারায় পৃথিবীতে
নবীন জীবনের স্পন্দন জাগে। তেমনই ভারতের তরুণ বিপ্লবীরা কালবৈশাখীর মতাে দুর্বার গতিতে পরাধীন ভারতবর্ষের মাটিতে স্বাধীনতার কেতন উড়িয়ে নবযুগের সূচনা করে।
প্রশ্ন : বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে’—বজ্ৰশিখার মশাল’ আসলে কী ? মশাল জ্বেলে কার আগমনের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : বজ্রশিখার মশাল’ : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় উল্লিখিত বজ্ৰশিখা হল বজ্রের আগুন। বজ্ৰশিখার মশাল’ বলতে বজ্রের আগুনের মতাে সর্বনাশী ভয়ংকর
মশালের আগুনের কথা বলা হয়েছে। ব্রিটিশ শাসকের পদানত পরাধীন ভারতবর্ষের সমস্ত দুঃখ দুর্দশাকে দগ্ধ করার জন্য প্রয়ােজন বজ্রের মতাে তীব্র আগুন। যার আগমন : আলােচ্য কবিতায় বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে ভয়ংকরের আগমনের কথা বলা হয়েছে। এই ‘ভয়ংকর’ হল তরুণপ্রাণ বিপ্লবীদল।
প্রলয়ােল্লাস – বাংলা কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা | কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : ওই ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?’— কবির এই মন্তব্যটি কোন ইঙ্গিতবাহী?
উত্তর : তাৎপর্য:বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় কবি মহাকালের নিয়মে এই জগতের সৃষ্টি ও বিনাশকে ‘ভাঙা-গড়ার খেলা’ বলে অভিহিত করেছেন। রুদ্রদেব একাধারে সৃষ্টি ও ধ্বংসকর্তা। তিনি নতুন সৃষ্টির আগে প্রলয়ের নেশায় মেতে উঠে নিজের সৃষ্টি ধ্বংস করেন। সেই ধ্বংসস্তুপের উপরেই নতুন সৃষ্টির বীজ অঙ্কুরিত হয়।
ব্রিটিশ শাসকের পদানত ভারতবর্ষের দারুণ দুর্দিনে কবি প্রলয়দেবের আবির্ভাব কামনা করেছেন। সমকালীন ভারতবর্ষের সীমাহীন অন্যায়-অত্যাচার- অবিচার ও অরাজকতার হাত থেকে স্বদেশকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি রুদ্রদেবকে আহ্বান করেছেন।
সত্য, শিব ও সুন্দরের পূজারি ভারতবর্ষের তরুণ বিপ্লবীদলের মধ্যেই তিনি রুদ্রদেবের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। রুদ্রদেবের মতােই তারাও সৃষ্টির জীর্ণতাকে সহ্য করতে পারে না। তারা এই অন্ধকার নৈরাজ্যের অবসান চায় বলেই তারাও মেতে ওঠে প্রলয়ের আনন্দে। কারণ তাদের স্থির বিশ্বাস ধ্বংসের পরেই আসবে নতুন সৃষ্টি। পরাধীন ভারতবর্ষের
অন্ধকারময় যুগের অবসানে নবসৃষ্টির উল্লাসে, প্রলয়ের নেশায় তরুণদল মেতে ওঠে বলেই তাদের ভাঙাগড়ার খেলায় কোনাে ভয় নেই।
প্রশ্ন : ‘ধূমকেতু’ বলতে কী বােঝাে? সর্বনাশী জ্বালামুখী’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : ধূমকেতু : ধূমকেতু বলতে সৌরজগতের উজ্জ্বল ঝাটার মতাে পুচ্ছবিশিষ্ট এক ধরনের অগ্নিপিণ্ডকে বােঝায়। জ্বলন্ত ধূমকেতুর তীব্র গতিবেগের কারণে কোনাে কিছুর সঙ্গে তার সংঘর্ষ হলে সেই বস্তুর ধ্বংস অনিবার্য।
সর্বনাশী জ্বালামুখী বলার কারণ : ধূমকেতু অজ্ঞান, অশিক্ষিত মানুষের কাছে অমঙ্গলের প্রতীক হলেও কবির লেখনীতে ধূমকেতু রুদ্র নটরাজের প্রলয়লীলার সঙ্গী। নতুন সৃষ্টির জন্য নটরাজের তাণ্ডবে প্রলয় সংঘটিত হবে, সেই প্রলয়ে সর্বগ্রাসী অগ্নিসংযােগ করবে ধূমকেতু। ধূমকেতুর জ্বলন্ত সম্মুখপ্রান্তের সঙ্গে সংঘর্ষে পুরাতনের সর্বনাশ ঘটবে
বলে তাকে ‘সর্বনাশী জ্বালামুখী’ বলা হয়েছে।
প্রশ্ন : দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়, মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর : তাৎপর্য বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় মহাকালের প্রলয়ংকর রূপ বর্ণনায় কবি দ্বাদশ রবির চিত্রকল্পটি ব্যবহার করেছেন।
পৌরাণিক মতে, দ্বাদশ রবি’ বলতে বােঝানাে হয় ধাতা, মিত্র, অর্যমা, রুদ্র, বরুণ, সূর্য, ভগ, বিবস্বান্, পূষা, সবিতা, ত্বষ্টা এবং বিয়ুকে। রুদ্র নটরাজের তৃতীয় নয়নের দীপ্তিতে থাকে এই ‘দ্বাদশ রবি’র সম্মিলিত তেজ। সেই তেজ দিয়েই ভাঙনদেব পৃথিবীর সমস্ত দীনতা, হীনতা ও জীর্ণতাকে দগ্ধ করেন। আবার অনেকে মনে করেন মধ্যাহ্ন সূর্যের তেজের মতাে প্রখর রুদ্রদেবের নয়নের দীপ্তিকেই এই উপমার দ্বারা বােঝানাে হয়েছে।
প্রশ্ন : “বিন্দু তাহার নয়নজলে/সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে/
কপােলতলে!”—নয়নজলে’ বলতে কী বােঝানাে
হয়েছে? সপ্ত মহাসিন্ধু’ কেন কপােলতলে দোলে?
উত্তর : নয়নজল :কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে নয়নজল’বলতে বােঝানাে হয়েছে রুদ্রদেবের
চোখের জলকে।
সপ্তমহাসিন্ধু যে কারণে দোদুল্যমান: মহাবিশ্বের পালনকর্তা ভাঙনদেবের নয়নে বহ্নির সঙ্গে মিশেছে অশ্রুধারা। পীড়িত মানুষের যন্ত্রণা দেখে দেবতার চোখে কাতর অশু আসতে দেখেছেন কবি। সেই
বিন্দু বিন্দু অশ্রুতে মহাসিন্ধুর আলােড়ন তৈরি হয়েছে। রুদ্রদেবের নয়নজলের সঙ্গে কবি সাতসমুদ্রে বিশাল জলরাশির তুলনা করেছেন।
প্রলয়ােল্লাস – বাংলা কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা | কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : দেবতার অশ্রুধারায় সৃষ্টির ভিত্তি যেন দুলছে।
জয় প্রলয়ঙ্কর!’—প্রলয়ঙ্কর’ কে? কবিতায় তাঁকে
আর কী কী নামে অভিহিত করেছেন কবি?
উত্তর : প্রলয়ঙ্কর’ : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ঙ্কর’ বলতে বােঝানাে হয়েছে সৃষ্টি, স্থিতি ও বিনাশের দেবতা রুদ্র নটরাজকে।
প্রলয়ংকরের অভিধা : জীর্ণ-পুরাতন সমাজ ও সংসারকে নিশ্চিহ্ন করে নতুন সৃষ্টির খেলায় মেতে উঠেছেন সৃষ্টি ও বিনাশের দেবতা রুদ্র মহাদেব। আলােচ্য কবিতায় সেই প্রলয়ংকর রুদ্র মহাদেবকে
কবি ভিন্ন ভিন্ন নামে চিহ্নিত করেছেন, যথা—মহাকাল’ ‘বিশ্বপাতা, ‘ভয়ংকর’, ‘দিগম্বর’, ‘চিরসুন্দর’ এবং কাল-ভয়ংকর।
প্রশ্ন : এবার মহানিশার শেষে/আসবে উষা অরুণ হেসে ‘মহানিশা’ কী? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কবি কীসের ইঙ্গিত দিয়েছেন?
উত্তর : মহানিশা : কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় ‘মহানিশার’ উল্লেখ রয়েছে। পরাধীনতার গ্লানি ভারতবাসীকে আত্মবিশ্বাসহীন, গৃহহারা, ভীত-শঙ্কিত করেছিল। বিদেশি শাসকের পদানত ভারতবর্ষে কবি দেখেছেন অশিক্ষা, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মীয় গোঁড়ামির ভয়ংকর রূপ। পরাধীনতার যন্ত্রণায় সমগ্র ভারতবর্ষের স্থবির,
জীর্ণ, অন্ধকার সময়কেই কবি মহানিশা’ বলেছেন।
কবির ইঙ্গিত : রাত্রির অন্ধকার যতই গভীর হােক, একদিন সূর্যোদয় হবেই। উদ্ধৃতাংশে কবি আশ্বাস দিয়েছেন যে, তরুণ সমাজের বিপ্লবের দ্বারা পরাধীনতার অন্ধকার রাত্রির অবসানে ভারতবর্ষে
স্বাধীনতার নতুন ভাের আসবে।
প্রশ্ন : দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাদের কর/ভরবে এবার ঘর।’—দিগম্বর কে? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : দিগম্বর : কবি নজরুলের ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতা থেকে সংগৃহীত উদ্ধৃতাংশে ‘দিগম্বর’ বলতে মহাদেবকে বােঝানাে হয়েছে।
তাৎপর্য : মহাকালের ধারক ও বাহক রুদ্রদেব। তিনি কখনও সৃষ্টিকর্তা, আবার কখনও বা ধ্বংসকর্তা। ব্রিটিশ শাসকের অধীনস্থ ভারতবর্ষের পরাধীনতার বাঁধন ছিন্ন করার জন্য রুদ্রদেবকে আহ্বান
জানিয়েছেন কবি। তার আগমনেই ধ্বংস হবে পরাধীন ভারতবর্ষের দৈন্য। তার মাথার জটাজালে শােভা পায় একফালি চাঁদ যা শিশুর ক্ষুদ্র সত্তার সঙ্গে তুলনীয়। দিগম্বরের জটায় শােভা পাওয়া একফালি চাঁদের
কিরণে শিশু চাদের আলােকের ন্যায় আবছা অস্পষ্ট ভারতবর্ষের সুদিন আগমনের আশার আলাে দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন : “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তাের?—প্রলয় নূতন সৃজনবেদন!’—কবি কাদের ধ্বংস দেখে ভয় করতে বারণ করেছেন? এরুপ বলার কারণ কী?
উত্তর : যাদের বারণ করেছেন : বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম তার ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় ধ্বংস দেখে ভারতবর্ষের অচেতন, ভীরু ভারতবাসীকে ভয় পেতে বারণ করেছেন। আশাবাদী কবি সত্যকে ভয়
পেয়ে তাকে বরণ করতে বলেছেন।
কারণ : মহাকালের নিয়মে যখনই সৃষ্টির মধ্যে স্থবিরতা, জীর্ণতা ও হীনতা বাসা বাঁধে তখনই তার ক্ষয় শুরু হয়। কবি জানেন পুরাতনের ধ্বংসের মাধ্যমেই নতুন সৃষ্টি সম্ভব। ব্রিটিশের পদানত ভারতবর্ষের পরাধীনতার শৃঙ্খলমােচনে তরুণ বিপ্লবী প্রলয়নেশায় মেতে উঠেছে। তাদের বিপ্লবের সেই ধ্বংসলীলার উপরেই নতুন স্বাধীন ভারতবর্ষসৃষ্টি
হবে বলে কবি দেশবাসীকে ভয় পেতে বারণ করেছেন।
প্রলয়ােল্লাস – বাংলা কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা | কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : “আসছেনবীন—জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!”—উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখাে।
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় নবীন’ বলতে প্রতিবাদী তরুণ সমাজকে উদ্দেশ করা হয়েছে।
তাৎপর্য : ব্রিটিশ শাসনের পদানত ভারতবর্ষের পরাধীনতার শৃঙ্খলমােচনে তরুণ সমাজ বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষিত। বিপ্লবের মাধ্যমে তারা জরাজীর্ণ, অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজের কালাে অধ্যায়কে বিনাশ করে
স্বাধীনতার নতুন ভাের নিয়ে আসবে। এভাবেই তারা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা প্রাণহীণতা ও অসুন্দরকে ধ্বংস করে সুন্দরের সৃষ্টি করবে।
প্রশ্ন : কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর!’—কাল ভয়ংকর কে? তাকে কাল ভয়ংকর বলার কারণ কী?
উত্তর : কাল-ভয়ংকর’: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় ‘কাল ভয়ংকর’ বলতে কবি প্রলয় দেবতা রুদ্র নটরাজের রূপকে বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষিত ভারতবর্ষের যুব সমাজকে বুঝিয়েছেন।
ভয়ংকর বলার কারণ : মহাকাল বা রুদ্র দেবতা যা কিছু জীর্ণ, পুরাতন প্রবল প্রলয়ের দ্বারা তাকে বিনাশ করে সেই ধ্বংসস্তুপের উপর নবসৃষ্টি করেন। এই নবসৃষ্টিই হল সুন্দরের প্রতীক। সেই প্রলয়ের
ভয়ংকর রূপের মতােই বিধ্বংসী ভারতবর্ষের বিপ্লবীশক্তিও ভয়ংকরবেশে তীব্র আঘাতে ভারতবর্ষের সব জীর্ণতা, দৈন্য বিনাশ করবে বলে
কবি আশাবাদী। তাই কবিতায় এই বিপ্লবী জাগরণের ভয়াবহতাকে কবি কাল ভয়ংকর বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রশ্ন : ওই আসে সুন্দর!’—কবি সুন্দর আসে বলতে কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : সুন্দর’ : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রলয়ােল্লাস’ কবিতায় বিপ্লবী শক্তির জয়গান করেছেন। অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের অন্যায় শােষণে বিপর্যস্ত পরাধীন ভারতবর্য। বহু যুগ ধরে ভারতবর্ষের
অন্তরে জমা হয়ে আছে অশিক্ষা, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের অভিশাপ। দেশের এমন সংকটে কবি সৃষ্টি ও ধ্বংসের দেবতা রুদ্র নটরাজের আবির্ভাব প্রার্থনা করেছেন। নটরাজের প্রলয়নাচনে জীর্ণতা ভেঙে যাবে – গড়ে উঠবে নতুন সৃষ্টি। নতুনের মাঝেই সুন্দরের অবস্থান। ধ্বংসলীলার শেষে তাই কবি আসন্ন সুন্দরের জয়ধ্বনি করেছেন।
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
প্রশ্ন : “তােরা সব জয়ধ্বনি কর!”—কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতাংশে ‘তােরা’ বলতে পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজ কর্তৃক অত্যাচারিত, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ভারতীয়দের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন : “তােরা সব জয়ধ্বনি কর।”—‘জয়ধ্বনি করার কারণ কী?
উত্তর : কবি নজরুল ইসলাম চেয়েছেন কালবৈশাখীর প্রলয়ংকর ঝড় এসে জীর্ণজরা ঝরিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সূচনা করবে। তাই তিনি জয়ধ্বনি করার কথা বলেছেন।
প্রশ্ন : “আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল” নৃত্য পাগল’ কে?
উত্তর : নৃত্য পাগল’ বলতে নটরাজ শিবের কথা বলা হয়েছে, যার দুই রূপ-রক্ষক ও সংহারক।প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল’ নটরাজ শিব অর্থাৎ শিবের মতাে।
প্রলয়ােল্লাস – বাংলা কবিতা | মাধ্যমিক বাংলা কবিতা | কাজী নজরুল ইসলাম
প্রশ্ন : “মৃত্যু-গহন অন্ধকূপে”–‘অন্ধকূপ’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর : “অন্ধকূপ ” কথাটির অর্থ মৃত্যুর মতাে গভীর অন্ধকারময় কুপ হলেও আলােচ্য কবিতায় মৃত্যু গহন অন্ধকূপ’ হল পরাধীন ভারতবর্ষ।
প্রশ্ন : “আসছে ভয়ংকর!” – ভয়ংকর কীভাবে আসছে?
উত্তর : ভয়ংকর’ মহাকালের মতাে চণ্ডরূপ ধারণ করে ধূম্র ধূপে বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে আসছে।
প্রশ্ন : “ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর।”—ভয়ংকরের হাসির কারণ কী?
উত্তর : ভয়ংকর এসে পরাধীন ভারতবর্ষের সমস্ত রকম অরাজকতার অবসান ঘটাবে, তারপরেই হরে নবসৃষ্টি। তাই তিনি তার ভয়ংকর রূপ প্রদর্শনের জন্য অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছেন।
প্রশ্ন : “ঝাপটা মেরে গগন দুলায়”-কে ঝাপটা মেরে গগন দুলায় ?
উত্তর : প্রলয় সৃষ্টিকারী ‘ভয়ংকর’ এসে তার ঝামর বা কৃষ্ণবর্ণ কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে যেন গগনকে দুলিয়ে যায়।
You must be logged in to post a comment.