বংশগতি : সাধারণ জিনগত রোগ | মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায়
বংশগতি : সাধারণ জিনগত রোগ
প্রশ্ন : জেনেটিক কাউন্সেলিং কাকে বলে ?
উত্তর: মানুষের বিভিন্ন বংশগত রােগের জিনের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি নির্ণয়ের মাধ্যমে যে-পদ্ধতিতে ওই জিনের পরবর্তী জনু বা প্রজন্মে সঞ্জারণ লক্ষ করা হয় এবং ওইসব রােগের সম্ভাবনা নির্দেশ করা হয়, তাকে জেনেটিক কাউন্সেলিং বলে। থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য বংশগত রােগের ক্ষেত্রে এটি ভীষণভাবে প্রযােজ্য।
প্রশ্ন : সমাজ থেকে তোমার জানা একটি জিনগত রোগের বিস্তার রোধ করতে বিয়ের আগে হবু দম্পতিকে কী কী পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে , সে বিষয়ে তোমার মতামত জানাও ।
অথবা, বিবাহের পূর্বে জেনেটিক কাউন্সেলিং গুরুত্বপূর্ণ কেন ?
অথবা, জিনগত রোগের প্রসার রোধে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা, থ্যালাসেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর ভূমিকা লেখো।
উত্তর : জেনেটিক কাউন্সেলিং এর ভূমিকা : দুটি পরিবারের মধ্যে যখন বিবাহের প্রস্তাব ওঠে তখন উভয় পরিবারের রক্ত পরীক্ষা করে জানা দরকার তাদের বংশে কারও মাইনর থ্যালাসেমিয়া আছে কি না। যদি উভয় পরিবারে মাইনর থ্যালাসেমিয়া থাকে তাহলে তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিবাহ হলে তাদের সন্তান সন্ততিতে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রকাশ পাবে এবং তীব্র রক্তহীনতায় ভুগে মৃত্যু হবে। তাই সেই দুটি পরিবারের মধ্যে বিবাহ বন্ধন হওয়া উচিত নয়। সুতরাং থ্যালাসেমিয়া রোগের ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর ভূমিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কোনো শিশুর দেহে কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায়।
উত্তরঃ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর লক্ষণঃ
১) হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় ফলে রক্তাল্পতা দেখা যায়।
২) লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৩) অস্থির ভঙ্গুরতা ও গঠনে বিকৃতি দেখা দেয়।
প্রশ্ন : থ্যালাসেমিয়া রোগের উপসর্গ কী কী ? থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ লেখো।
উত্তর : ১) হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় ফলে রক্তাল্পতা দেখা যায়।
২) লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় অক্সিজেন পরিবহণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৩) অস্থির ভঙ্গুরতা ও গঠনে বিকৃতি দেখা দেয়।
থ্যালাসেমিয়ার কারণ : 16 নম্বর ও 11 নম্বর ক্রোমোজোমে ত্রুটিযুক্ত গ্লোবিন জিনের উপস্থিতির জন্য থ্যালাসেমিয়া রোগ হয়। জিনগত ত্রুটির জন্য যখন হিমোগ্লোবিন পলিপেপটাইড শৃঙ্খল উৎপন্ন হয় না তার ফলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়, তখন থ্যালাসেমিয়া রোগ হয়।
প্রশ্ন : মানুষের জনগোষ্ঠীতে প্রকাশিত হয় এমন দুটি জিনগত রোগের নাম বলো।
উত্তর : হিমোফিলিয়া ও বর্ণান্ধতা ।
প্রশ্ন : থ্যালাসেমিয়া রোগ দূর করতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
অথবা , একদিন শিক্ষার্থীরা খবরের কাগজে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে একটি প্রবন্ধ পড়ল এবং একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তির পরিনতি জেনে ভীত হল। জনগোষ্ঠী থেকে এই রোগ দূর করার জন্য কী কী উদ্যোগ নিতে পারে তা লেখো ।
অথবা, থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধের কয়েকটি উপায় লেখো।
উত্তর: ১) জেনেটিক কাউন্সেলিং করতে হবে।
২) থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জনসাধারনের মধ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করতে হবে।
৩) বিবাহের পূর্বে থ্যালাসেমিয়ার জন্য রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪) বাহক ও থ্যালাসেমিয়া রোগীর সন্ধান করা ও তাদের সচেতন করা।
প্রশ্ন : বর্ণান্ধতা কী? বর্ণান্ধতার কারণ ও লক্ষণ উল্লেখ করো।
উত্তর : যে বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশে কোনো মানুষ লাল ও সবুজ বর্ণের পার্থক্য বুঝতে পারেনা সেই প্রকার অস্বাভাবিকতাকে বর্ণান্ধতা বলে।
লাল বর্ণ চিনতে না পারাকে প্রোটোনোপিয়া এবং সবুজ বর্ণ চিনতে না পারাকে ডিউটেরানোপিয়া বলে। নীল বর্ণ চিনতে না পারাকে ট্রাইটেনোপিয়া বলে।
বর্ণান্ধতার কারণ : বর্ণান্ধ জিনটি প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির এবং X ক্রোমোজোমে অবস্থিত৷ পুরুষদের ক্ষেত্রে X ক্রোমোজোমে বর্নান্ধ জিন থাকলে সে বর্ণান্ধ হবে, কিন্তু স্ত্রীদের ক্ষেত্রে দুটি X ক্রোমোজোমে বর্ণান্ধ জিন থাকলে তবে স্ত্রীলোকেরা বর্ণান্ধ হবে।
লক্ষণ : লাল ও সবুজ বর্ণ চিনতে না পারা।
প্রশ্ন : অটোজোম বাহিত বংশগত রোগ ও সেক্স ক্রোমোজোম বাহিত বংশগত রোগের উদাহরণ দাও ৷
উত্তর : আটোজোম বাহিত বংশগত রোগঃ থ্যালাসেমিয়া, ডাউন সিন্ড্রোম প্রভৃতি৷
সেক্স ক্রোমোজোম বাহিত রোগঃ হিমোফিলিয়া , বর্ণান্ধতা প্রভৃতি ।
প্রশ্ন : একজন বর্ণান্ধ রোগের বাহক একজন মহিলা , একজন বর্ণান্ধ পুরুষকে বিবাহ করল। তাদের একটি কন্যা সন্তান হল ৷ এই কন্যা সন্তানটির বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কতট বিশ্লেষণ করে লেখো
উত্তর : যেহেতু মা বর্ণান্ধ রোগের বাহক তাই একটি X ক্রোমোজোম আক্রান্ত ও অপর X ক্রোমোজোমটি আক্রান্ত হবে এবং বাবার X ক্রোমোজোম আক্রান্ত হবে। যেহেতু কন্যার কাছে একটি X ক্রোমোজোম বাবা থেকে অপর X ক্রোমোজোম ( স্বাভাবিক বা আক্রান্ত) মায়ের থেকে আসে তাই কন্যার বর্ণান্ধ হওয়ার সম্ভাবনা 50 % হবে।
প্রশ্ন : হিমোফিলিয়া কী? এর কারণ ও লক্ষণ লেখো।
উত্তর : মানুষের যে বংশগত রোগের ফলস্বরূপ আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়না অর্থাৎ রক্ততঞ্চন হয়না তাকে হিমোফিলিয়া বলে।
হিমোফিলিয়ার কারণ : এটি X ক্রোমোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন জিন দ্বারা উৎপন্ন হয়। হিমোফিলিয়া A রোগের জিন X ক্রোমোজোমের দীর্ঘ বাহুর প্রান্তভাগে অবস্থিত৷ প্রচ্ছন্ন জিন থাকার ফলে রক্ত তঞ্চনের VIII নম্বর ফ্যাক্টর কার্যকরী হয় না। হিমোফিলিয়া B রোগের জিনও X ক্রোমোজোমে অবস্থিত।
লক্ষণ : হিমোফিলিয়া একটি বংশগত রোগ। এই রোগে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে অবিরাম রক্তক্ষরণ হতে থাকে। রক্ত তঞ্চণ হয় না।
প্রশ্ন : হিমোফিলিয়া কেবলমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থায় প্রকাশ ঘটার কারণ কী?
উত্তর : হিমোফিলিয়া X ক্রোমোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন জিনগত রোগ। তাই কেবল হোমোজাইগাস অবস্থায় মহিলাদের দেহে এই রোগটি প্রকাশ পায়।
প্রঃ থ্যালাসেমিয়া রোগের জন্য দায়ী জিন মানুষের কোন ধরনের ক্রোমোজোম বহন করে ?
উত্তর : অটোজোম ।
প্রশ্নঃ থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় এমন তিনটি অঙ্গের নাম লেখো।
উত্তর : হৃৎপিণ্ড , প্লিহা এবং যকৃৎ ।