মাধ্যমিক ভূগোল-নদী, হিমবাহ

মাধ্যমিক ভূগোল-নদী, হিমবাহ সাজেসন ২০২২

প্রশ্ন : বদ্বীপ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ উল্লেখ করাে।


বদ্বীপ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ:

বদ্বীপ সৃষ্টি হওয়ার জন্য প্রয়ােজনীয় অনুকূল পরিবেশগুলি হল – অবক্ষেপণের হার বেশি: মােহানায় নদীর অবক্ষেপণের হার সমুদ্রস্রোতের অপসারণ হারের তুলনায় বেশি হওয়া প্রয়ােজন।
সুদীর্ঘ নদী ও বেশি উপনদী: নদীর জলের সঙ্গে যাতে বেশি পরিমাণে পলি আসে, সেজন্য নদীকে সুদীর্ঘ হতে হবে। পাশাপাশি নদীর উপনদীর সংখ্যাও বেশি হতে হবে।
নদীর স্রোত কম হওয়া: নদীর মুখে বা মােহানায় যাতে পলি জমতে পারে, সেজন্য নদীর স্রোত কম হওয়া দরকার।
সমুদ্রের ঢাল কম হওয়া: সমুদ্রের যে অংশে নদী এসে মিশবে, সেখানে সমুদ্রের ঢাল কম হতে হবে, না হলে অবক্ষিপ্ত পলি গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাবে।
জোয়ারভাটার প্রকোপ কম থাকা: মােহনায় জোয়ারভাটার প্রকোপ কম থাকলে সহজে বদ্বীপ গড়ে ওঠে।
বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ: মােহানায় নদীস্রোতের বিপরীত দিকে বায়ু প্রবাহিত হলে বদ্বীপ গঠনের কাজ দ্রুত হয়।
আংশিক বেষ্টিত সমুদ্র: উন্মুক্ত সমুদ্রের তুলনায় আংশিক বেষ্টিত সমুদ্রে বেশি বদ্বীপ গড়ে ওঠে।
সমতল ভূমি: নদী মােহানার সংলগ্ন ভূমি সমতল হওয়া প্রয়ােজন।

প্রশ্ন : টীকা লেখো : হিমশৈল

সংজ্ঞা : উচ্চ অক্ষাংশে সমুদ্রে জলের উদ্ধদেশে হিমবাহের কিছু অংশ ভেঙে ভাসতে থাকে । সমুদ্রে ভাসমান এরূপ বিশালাকার বরফস্তূপকে হিমশৈল (Ice Berg) বলে ।সমুদ্রে ভাসমান বিশালাকৃতি বরফের স্তৃপকে হিমশৈল (iceberg) বলা হয়। iceberg’ শব্দটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ বরফের পাহাড় বা শৈল।

বৈশিষ্ট্য: ১) সাধারণত মহাদেশীয় হিমবাহ থেকে
বিশাল বরফের স্তূপ আলাদা হয়ে সংলগ্ন সমুদ্রে হিমশৈলরূপে ভেসে বেড়ায়।                            

২) হিমশৈলের কেবল 1/9 ভাগ জলের ওপর দেখা যায়।
৩) হিমশৈলগুলি গলে গেলে তার মধ্যে থাকা নুড়ি, বালি, পাথর প্রভৃতি‌ সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি হয়।দৃষ্টান্ত: বিশ্ববিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম সমুদ্রযাত্রাতেই এরকম একটি হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গভীর সমুদ্রে ডুবে যায়।

প্রশ্ন : টীকা লেখো: এসকার

সংজ্ঞা : পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ এবং হিমবাহগলিত জলধারার মাধ্যমে সৃষ্ট আঁকাবাঁকা শৈলশিরার মতাে স্বল্প উঁচু, শাখাপ্রশাখাযুক্ত ভূমিকে এসকার বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: ১) এসকারগুলির উচ্চতা প্রায় 3 থেকে 5 মিটার পর্যন্ত হয়। ২) আঁকাবাঁকা ও সংকীর্ণ
হয় এবং দৈর্ঘ্য কয়েক কিলােমিটার পর্যন্ত হতে দেখা যায়।
উদাহরণ: ফিনল্যান্ডের পুনকাহারয়ু এসকারের উল্লেখযােগ্য উদাহরণ।

প্রশ্ন : বােল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ বলতে কী বােঝ?

সংজ্ঞা : পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে তােলে এবং সেইসব ভূমিরূপকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন, হিমবাহ গলে যাওয়ার পর হিমবাহবাহিত বালি, কাদা ও পাথর একসঙ্গে সঞ্চিত হলে, তাকে বােল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: ১) বােল্ডার ক্লে পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে গঠিত হয়। ২) এটি হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরূপ।

প্রশ্ন : ড্রামলিন কী?

ধারণা : হিমবাহের সঞ্জয়কার্যের ফলে অনেকসময় হিমবাহের শেষ প্রান্তে বরফগলা জলপ্রবাহের মাধ্যমে হিমবাহবাহিত প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, কাকর, বালি প্রভৃতি এমনভাবে টিলার মতাে সঞ্চিত হয় যে, সেগুলিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন উলটানাে নৌকা বা চামচ উলটানাে অবস্থায় আছে। এই ধরনের ভূমিরূপগুলি ড্রামলিন নামে পরিচিত।যেসব জায়গায় একসঙ্গে অনেক ড্রামলিন অবস্থান করে সেই জায়গাকে দূর থেকে ডিম ভরতি ঝুড়ির মতাে দেখতে লাগে। এজন্য
ড্রামলিন অধ্যুষিত অঞ্চলকে ডিমের ঝুড়ি ভূমিরূপ বলে ৷
বৈশিষ্ট্য: (১) ড্রামলিন সঞ্চয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। (২) এগুলির উচ্চতা 6 মি থেকে 60 মি হয়। (৩) এগুলি হিমবাহপ্রবাহের দিকে অমসৃণ ও খাড়াই এবং বিপরীত দিকে মসৃণ ও ঢালু হয়।
উদাহরণ: সুইটজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতে এই ধরনের ভূভাগ দেখা যায়।

প্রশ্ন : আগামুক বা ইরাটিক কী?

ধারণা: হিমবাহের সঙ্গে বহুদূর থেকে বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড এসে কোনাে স্থানে সঞ্চিত হয়ে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তা আগামুক বা ইরাটিক নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য: (১) এটি হিমবাহের সঞ্জয় কাজের ফলে।
সৃষ্ট ভূমিরূপ। (২) এর শিলাধর্মের সঙ্গে স্থানীয় শিলাধর্মের কোনাে মিল থাকে না। (৩) এগুলি কঠিন শিলায় গঠিত হয়। উদাহরণ: কাশ্মীরের পহেলগামের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে আগামুক দেখতে পাওয়া যায়।

মাধ্যমিক ভূগোল-নদী, হিমবাহ

প্রশ্ন : হিমসিড়ি বা হিমধাপ বা হিমসােপান বলতে কী বােঝ ?

ধারণা: পার্বত্য উপত্যকার মধ্য দিয়ে নামার সময় উপত্যকার বিভিন্ন অংশে শিলার গঠনগত তারতম্য থাকলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যেরও বৈষম্য ঘটে। এই বৈষম্যমূলক ক্ষয়ের ফলে উপত্যকায় অনেক ধাপের সৃষ্টি হয়, এগুলিকে বলে হিমর্সিড়ি বা হিমসােপান।
বৈশিষ্ট্য: ১) অনেকসময় এরকম গভীর উপত্যকায় জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়। এই হ্রদগুলিকে প্যাটার্নস্টার হ্রদ বলে। ২) হিমদ্রোণিতে হিমসিড়ি বা হিমসােপান দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়ােসেমিতি উপত্যকা।

প্রশ্ন : ফিয়র্ড কী ?

পরিচিতি : ফিয়র্ড (fiord) হল সমুদ্রোপকূলসংলগ্ন পার্বত্যভূমিতে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট হিমবাহ উপত্যকা। সমুদ্রোপকূলে হিমবাহ তার উপত্যকাকে এমন গভীরভাবে ক্ষয় করে যে সেই উপত্যকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকেও নীচু হয়ে যায়। এরপর হিমবাহ অপসারিত হলে সেই গভীর উপত্যকাগুলি সমুদ্রের জলে ভরে যায়। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের
দ্বারা সৃষ্ট কিন্তু বর্তমানে সমুদ্রের জলে পূর্ণ এই ধরনের উপত্যকা ফিয়র্ড নামে পরিচিত।
উদাহরণ: নরওয়ে, সুইডেন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা উপকূলে অনেক ফিয়র্ড দেখা যায়। এর মধ্যে নরওয়ের সােগনে বা সােজনে বা সােভনে পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড।

প্রশ্ন : করি বা সার্ক কাকে বলে ?

সংজ্ঞা : হিমবাহের উৎসমুখী ক্ষয়কার্যের কারণে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে সার্ক বা করি সৃষ্টি হয়। হিমবাহ যখন উঁচু পার্বত্য অঞ্চল থেকে নীচেরদিকে নামে, তখন একই সঙ্গে হিমবাহের অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ার দরুন পর্বতের ঢালের পিছন দিকে খাড়া দেয়াল, মধ্যভাগে অর্ধবৃত্তাকার গহ্বর এবং সামনে ধাপসমন্বিত হাতল লাগানাে ডেকচেয়ারের মতাে ভূভাগের সৃষ্টি হয়। স্কটল্যান্ডের স্থানীয় ভাষায় একে করি এবং ফ্রান্সে সার্ক বলা হয়। উদাহরণ: অ্যান্টার্কটিকায় ওয়ালকট পৃথিবীর গভীরতম করি বা সার্ক।

মাধ্যমিক ভূগোল সাজেসন 2022

প্রশ্ন : এরিটি বলতে কী বোঝ ?

সংজ্ঞা : হিমবাহের উৎসমুখী ক্ষয়ের ফলে একই পর্বতশৃঙ্গের দুই দিকে দুটি করির সৃষ্টি হলে ও তাদের আয়তন ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকলে মধ্যবর্তী সংকীর্ণ খাড়া শিরা বা তীক্ষ প্রাচীরের মতাে অংশের সৃষ্টি হয়, যা অ্যারেট বা এরিটি নামে পরিচিত। বৈশিষ্ট্য: ১) এরিটিগুলি প্রায় ছুরির ফলার মতাে ধারালাে হয়। ২) এগুলির কোনাে অংশ যদি ভেঙে যায়। তাহলে এক সার্ক থেকে অন্য সার্কে যাওয়ার ‘গিরিপথ’ সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: হিমালয় এবং কারাকোরাম পর্বতে অনেক এরিটি দেখা যায়।

প্রশ্ন : কেম বলতে কী বােঝ?

সংজ্ঞা : হিমবাহের শেষ প্রান্তে যদি কোনাে বড়ড়া জলাভূমি বা হ্রদ থাকে, তাহলে তার মধ্যে হিমবাহবাহিত পাথর, নুড়ি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি স্থূপাকারে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার বদ্বীপের মতাে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। এই ভূমিরূপকে বলা হয় কেম।
বৈশিষ্ট্য: ১) কম হিমবাহ ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে গড়ে ওঠা একটি ভূমিরূপ। ২) হিমবাহ উপত্যকার দু-পাশে কেম সৃষ্টি হলে তাকে কেমমঞ্চ বলে।
উদাহরণ: ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের নরফেকের গ্লাভেন উপত্যকায় কেম ও কেমমঞ্চ দেখতে পাওয়া যায়।

প্রশ্ন : বার্গশ্রুন্ড কী ?

সংজ্ঞা: করির মস্তক দেশের দেয়ালটি খুব খাড়া থাকে। হিমবাহ যখন এই করির খাড়া ঢালের ওপর দিয়ে নীচের দিকে নামে তখন অনেকসময় হিমবাহের মস্তক এবং মস্তকের দিকের ওই খাড়াই পর্বতগাত্রের মাঝে যে গভীর উল্লম্ব ফাক বা ফাটল সৃষ্টি হয়, তাকে বার্গশ্রুন্ড বলে।
উৎপত্তি: সাধারণত করির অবতল অংশের মধ্যে দিয়ে নামার সময় নিম্নমুখী টানে চলমান হিমবাহের অংশ এবং মাথার দিকের খাড়া পর্বতগাত্রসংলগ্ন হিমবাহের স্থিতিশীল অংশের মধ্যে এই ফাঁক বা ফাটল তৈরি হয়।
বৈশিষ্ট্য: ১) এই ফাঁক বা ফাটল হিমবাহের পৃষ্ঠদেশ
থেকে একেবারে তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। ২) এগুলি খুব গভীর (গভীরতা গড়ে 100 মিটার) এবং 80 বা তারও বেশি খাড়া হয়।