হারিয়ে যাওয়া কালি কলম

হারিয়ে যাওয়া কালি কলম | মাধ্যমিক বাংলা

প্রশ্ন –  1. ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক যেভাবে কলমের বিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরেছেন তা নিজের ভাষায় সংক্ষেপে বিবৃত করাে।
উত্তর – শ্রীপান্থ তার ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে তথ্যনিষ্ঠভাবে কলমের বিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরেছেন।
কলমের বিবর্তনের ইতিহাস : জিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে প্রাচীন মিশরে নীলনদের তীরে নলখাগড়া ভেঙে নিয়ে সেটিকে ভোঁতা করে তুলি ও সুচালাে করে কলম বানিয়ে লেখা হত। ফিনিসীয়দের কলম ছিল বনপ্রান্ত থেকে কুড়িয়ে পাওয়া হাড় এবং রােমানদের ব্রোঞ্জের শলাকা বা স্টাইলাস ছিল তাদের লেখনী। চিনারা তুলি দিয়ে লেখালেখি করত। বাংলায় একসময় বাঁশের কঞ্চির কলম, খাগের কলম, পাখির পালকের কলম প্রচলিত ছিল। প্রাবন্ধিকের প্রথম লেখা শুরু বাঁশের কলম দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে এইসব কলম অচল। সরস্বতী পুজোয় এখন খাগের কলম সাজিয়ে রাখা হয়। পালকের কলমও এখন কেবল পুরােনাে দিনের তৈলচিত্র কিংবা ফোটোগ্রাফে দেখা যায়। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে লেখার সামগ্রী হিসেবে ফাউন্টেন পেন কলমের জগতে বিপ্লব আনে। লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান এই পেনের আবিষ্কর্তা। ফাউন্টেন পেন’-এর বাংলা নামকরণ ঝরনা কলম করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কলমের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে নানা জাতের, নানা দামের ফাউন্টেন পেন বাজারে আসে। এর মধ্যে পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সােয়ান, পাইলট উল্লেখযােগ্য। এইসব ফাউন্টেন পেনও যুগের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে যায় বল পেন বা ডট পেনে। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার যুগে এই কলমগুলির বিকল্প হয়ে উঠেছে কম্পিউটার।

প্রশ্ন 2. কালি কলমের প্রতি ভালােবাসা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা আলােচনা করাে।
উত্তর – হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধটিতে প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থর কলমের প্রতি আসক্তি ও গভীর ভালােবাসার পরিচয় পাওয়া যায়।
লেখকের শৈশব ও কলম : লেখক গ্রামের ছেলে। কলমের সঙ্গে তার শৈশব থেকেই আত্মিক ও নিবিড় সম্পর্ক। ছােটোবেলায় তিনি বাঁশের কঞি কেটে কলম বানাতেন। কলম ও কালি তৈরির চমৎকার বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক জানিয়েছেন তাদের প্রথম লেখালেখি শুরু হয়। বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি আর কলাপাতা দিয়ে।
লেখকের কল্পনা : কলম নিয়ে লেখকের অনেক কল্পনা ছিল। তিনি জিশু খ্রিস্টের আগে প্রাচীন মিশরে জন্মালে অথবা সুমেরিয়ান বা ফিনিসিয়ান হলে নীলনদের তীরের নলখাগড়া দিয়ে কলম বানাতেন বা বনপ্রান্ত থেকে কুড়িয়ে নেওয়া হাড় হত তার লেখার সামগ্রী।
বর্তমান পরিস্থিতি : শ্রীপান্থ ‘কালি-খেকো’ কলমের ভক্ত হলেও যুগ পরিবর্তনে বিল-পেনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। লেখক প্রবন্ধে জীবনের প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার স্মৃতিচারণ করেছেন। সস্তায় কেনা জাপানি পাইলট পেনটিকে তার মনে হয়েছিল জাদুকলম। প্রযুক্তির উন্নতিতে কলমের বিকল্প কম্পিউটার ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠলে কালি, কলম ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে। তখন প্রাবন্ধিক বিপন্ন বােধ করেন। এইভাবে লেখক কলমের প্রতি তার দুর্বলতা ও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

হারিয়ে যাওয়া কালি কলম | মাধ্যমিক বাংলা

প্রশ্ন 3. হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কোন কোন বিখ্যাত ব্যক্তির উল্লেখ আছে? যে-কোনাে দুজন ব্যক্তিত্বের নাম উত্থাপনের প্রসঙ্গ লেখাে।

উত্তর – উল্লিখিত বিখ্যাত ব্যক্তিগণ : ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ নানা প্রসঙ্গে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে বিদেশি ব্যক্তিরা হলেন—(১) জিশু খ্রিস্ট, (২) জুলিয়াস সিজার, (৩) লর্ড কার্জন, (৪) উইলিয়াম জোন্স, (৫) উইলিয়াম কেরি, (৬) লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান, (৭) শেকসপিয়র, (৮) দান্তে, (৯) মিল্টন।
ভারতীয় ব্যক্তিরা হলেন—(১) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, (২) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, (৩) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, (৪) শৈলজানন্দ মুখােপাধ্যায়, (৫) সুভাে ঠাকুর, (৬) কালিদাস, (৭) ভবভূতি, (৮) কাশীরাম দাস, (৯) কৃত্তিবাস, (১০) অন্নদাশঙ্কর রায়, (১১) সুভাষ মুখােপাধ্যায়, (১২) সত্যজিৎ রায়, (১৩) ত্রৈলােক্যনাথ মুখােপাধ্যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গ : আলােচ্য প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রসঙ্গ এসেছে দুটি কারণে এক, ফাউন্টেন পেনের নাম ঝরনা কলম রবীন্দ্রনাথের দেওয়া। দুই, চিত্রশিল্পীরূপে রবীন্দ্রনাথের আত্মপ্রকাশের বীজ লুকিয়ে ছিল পাণ্ডুলিপির অক্ষর কাটাকুটির মাধ্যমে লিপিশিল্প গড়ে, ভােলার মধ্যে।
সত্যজিৎ রায়ের প্রসঙ্গ : সত্যজিৎ রায়ের প্রসঙ্গ এসেছে, সম্ভবত শেষপর্যন্ত তিনিই নিবের কলমে সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখতেন আর তার অনেক সুন্দর সুস্থ নেশার মধ্যে একটি ছিল লিপিশিল্প। তার লিপিশিল্পের সঙ্গে অন্যান্য শিল্পকর্মের যােগ থাকা অসম্ভব নয়।

প্রশ্ন 4. “সবাই এখানে লেখক। কিন্তু আমি ছাড়া কারও হাতে কলম নেই।”—এখানে’ বলতে কোথাকার কথা বলা হয়েছে? লেখক হওয়া সত্ত্বেও কারও হাতে কলম নেই কেন?
উত্তর – যেখানকার কথা বলা হয়েছে: শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে প্রাবন্ধিকের কর্মক্ষেত্র আনন্দবাজার পত্রিকার অফিসকে নির্দেশ করা হয়েছে।
কারও হাতে কলম না থাকার কারণ : সাংবাদিকতা পেশার সূত্রে প্রাবন্ধিক লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। সংবাদপত্রের অফিসে সবাই লেখালেখির কাজে ব্যস্ত। অথচ কারও হাতে কলম নেই। কারণ প্রাবন্ধিক ছাড়া আর কেউ কলম দিয়ে লেখেন না। সাংবাদিকরা
লেখেন সরাসরি কম্পিউটারে। সবার সামনে চৌকো আয়নার মতাে কাচের স্ক্রিন। তার নীচে বসানাে টাইপরাইটারের মতাে কি-বাের্ডের বােতামগুলােতে অক্ষর বা বর্ণ লেখা বােতামগুলাের উপর আঙুলের আলতাে চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনে লেখা ফুটে ওঠে। প্রাবন্ধিক তার পুরােনাে কলমে লেখার আবেগকে আঁকড়ে থাকলেও আধুনিক যুগের নতুন লেখক-সাংবাদিকরা উন্নত প্রযুক্তিকে সাদরে বরণ করে নিয়েছেন। তারা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অনবরত লিখে চলেছেন। মাঝে মাঝে পরদার দিকে চোখ তুলে দেখছেন লেখা ঠিক ঠিক ফুটে উঠছে কিনা। শ্রীপান্থ কাগজ-কলমে যা লেখেন সেগুলােও নতুন যুগের লেখকরা এভাবেই টাইপ করে ছাপার জন্য তৈরি করে দেন। তাই উক্ত সংবাদপত্রের অফিসে শ্রীপান্থ ছাড়া আর কারও হাতে কলম নেই।

আরও দেখুন : পথের দাবী

প্রশ্ন 5.  ‘তারা হয়তাে বুঝবেন কলমের সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক।’—কারা বুঝবেন? কলমের সঙ্গে তাদের কী সম্পর্ক?
উত্তর: যারা বুঝবেন: হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থর সমসাময়িক যারা বাংলার অজপাড়াগাঁয়ে জন্মেছেন তার বুঝবেন কলমের সঙ্গে তাদের ও লেখকের কতখানি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
কলমের সঙ্গে সম্পর্ক : লেখক শ্রীপান্থ এবং তার সমবয়সি মানুষদের কলমের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিবিড়। কলমের সঙ্গে তাদের শৈশব থেকেই সখ্য এবং নৈকট্য। তখন কলম এত সহজলভ্য ছিল না। অনেক কষ্ট করে মনােযােগ দিয়ে নিজেদেরই কলম বানাতে হত। সর বাঁশের কঞ্চি কেটে মুখটা ছুঁচোলাে করতে হত। কালি যাতে একসঙ্গে গড়িয়ে না পড়ে তার জন্য মুখটা চিরে দিতে হত। সেই মুখ চেরার কাজটি সহজ ছিল না, বড়ােরা শিখিয়ে দিতেন। কলম তৈরির মধ্যে ছিল সৃষ্টির আনন্দ ও উদবেগ। সেই কলম কালিতে ডুবিয়ে লিখতে হত কলাপাতায়। কালিও নিজেদের বানাতে হত। সুতরাং কলম-সহ লেখার অন্যান্য উপকরণ তৈরির মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিকের মনে কলমের সঙ্গে একটা সহজ আত্মীয়তা গড়ে ওঠে। সেই স্মৃতি, কলমের প্রতি সেই ভালােবাসা ছিল আজীবনের। তাই লেখক শ্রীপান্থর চাকরিজীবনে নতুন প্রযুক্তির ফসল কম্পিউটারে নব্য-লেখকরা লিখতে অভ্যস্ত হলেও তিনি কলমকে বিদায় জানাতে পারেননি। কারণ নির্জীব কলমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নিজস্ব অনুভূতি আর একটি সময়ের ইতিহাস।

প্রশ্ন 6.  “আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।”—কারা কালি তৈরি করতেন? তারা কীভাবে কালি তৈরি করতেন?
উত্তর :  যারা কালি বানাতেন : শ্রীপান্থের হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, প্রাবন্ধিক ও তার সমবয়সীরা শৈশবে মা-পিসি-দিদিদের সাহায্যে কালি তৈরি করতেন।
কালি তৈরির পদ্ধতি : প্রবীণ মানুষেরা ভালাে কালি তৈরি করার উপায় সম্পর্কে ছড়া কেটে বলতেন—“তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ছাগ দুগ্ধে করি মেলা/লৌহপাত্রে লােহায় ঘসি/ছিড়ে পত্র না ছাড়ে মসি। অর্থাৎ তিল, ত্রিফলা (আমলকী, হরিতকী, বহেড়া -এই তিন ফলবিশেষ) ও শিমুল গাছের ছাল ছাগলের দুধে মিশিয়ে লােহার পাত্রে ঘষে ভালাে কালি তৈরি করা হত। সেই কালি এতই গাঢ় যে, লেখার পাতা ছিড়ে গেলেও কালি মুছত না। কালি তৈরির জন্য এত আয়ােজন অল্পবয়সিদের করা সম্ভব হত না বলে প্রাবন্ধিক-সহ অন্যান্যরা কালি তৈরির সহজ পদ্ধতি গ্রহণ করতেন। কাঠের উনুনে রান্নার পর কড়াইয়ের নীচে যে কালাে ছাই জমত—তা লাউপাতা দিয়ে ঘষে একটি পাথরের বাটিতে রাখা অল্প জলে গুলে নেওয়া হত। কেউ কেউ আবার সেই ছাই গােলা কালাে জলে হরিতকী ঘষত। কেউবা মেশাত ভাজা, পােড়া আতপ চালের গুঁড়াে। এরপর সেই কালাে জলের মিশ্রণে খুন্তি আগুনে লাল করে উত্তপ্ত করে ছ্যাকা দেওয়া হত। জল টগবগ করে ফুটলে তা ঠান্ডা করে ন্যাকড়ায় ছেকে মাটির দোয়াতে ভরে রাখা হত। এইভাবে প্রাবন্ধিক তার শৈশবে বাড়ির আত্মীয়স্বজনের সাহায্যে কালি তৈরি করতেন।

প্রশ্ন 7. “একসময় বলা হতাে-কলমে কায়থ চিনি, গোঁফেতে রাজপুত।”—কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে? সেই সময়ে এমন কথা বলা হত কেন?
উত্তর – প্রসঙ্গ : ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে শ্রীপান্থ কলমের। বিবর্তনের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন।কলমের জগতে যখন বিপ্লব ঘটল তখনসমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ নানা ধরনের কলম ব্যবহার করতে শুরু করল। কিন্তু আগেকার দিনে কলম একটি বিশেষ শ্রেণিকে চিহ্নিত করত। এই পার্থক্য বােঝাতেই উদ্ধৃত উক্তিটি করা হয়েছে।
এমন কথা বলার কারণ : এক সময় বলা হত কলম দিয়েই কায়থকে চেনা যায় আর গোঁফ দিয়ে চেনা যায় রাজপুতকে। কারণ কয়থ বংশের অনেকেই তখন ছিলেন কলমজীবী অর্থাৎ লেখক বা মুনশি। তারা জমিদারের খাজাঞ্জির বা সেরেস্তার কাজ করতেন, ব্যাবসাদারদের গদিতে খাতা লিখতেন অথবা অফিস-কাছারিতে কেরানির কাজ করতেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন কবি। একদল ছিলেন কুশলী লিপিকর। তাদের কাজ কলম নিয়ে ছিল বলে সকলের হাতেইকলম থাকত। সেই কলম দেখে তাদের কায়স্থ বলে চেনা সহজ হত। অন্যদিকে, রাজপুতরা ছিলেন বীরজাতি। তারা দীর্ঘ ও মােটা গোঁফ পরিপাটি করে পাকিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। তারা মনে করতেন এই মােটা গোঁফ কেবল সৌন্দর্যের প্রতীকই নয়, এ হল তাদের পৌরুষের প্রকাশক। তাই মােটা পাকানাে গোঁফ দেখেই একসময় তাদের রাজপুত-পুরুষ বলে চেনা যেত। তাই উদ্ধৃত প্রবাদটি বলা হত।

প্রশ্ন 8. “পণ্ডিতরা বলেন কলমের দুনিয়ায় যা সত্যিকারের বিপ্লব ঘটায় তা ফাউন্টেন পেন।”– ফাউন্টেন পেন কলমের দুনিয়ায় কীভাবে বিপ্লব ঘটিয়েছিল লেখাে।
উত্তর – পূর্বের অবস্থা : হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধেশ্রীপান্থ কলমের বিবর্তন নিয়ে আলােচনা প্রসঙ্গে নানা সময়ের বিভিন্ন ধরনের কলমের কথা উল্লেখ করেছেন। ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের আগে প্রচলিত বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি কলম, খাগের কলম, পশুর হাড়ের কলম, পাখির পালকের কলম, ব্রোঞ্জের কলম বাস্টাইলাস,তুলির কলম প্রভৃতি ছিল। কালক্রমে নতুন আবিষ্কৃত ফাউন্টেন পেন বা ‘রিজার্ভার পেন’ ব্যবহৃত হতে থাকে।লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান সেই রিজার্ভার পেনকে উন্নত করে তৈরি করলেন ফাউন্টেন পেন, বাংলায় যাকে বলে
হরনালন।
পরবর্তী অবস্থা : ঝরনা কলম আবিষ্কারের ফলে কলমের দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটে যায়। দেশে-বিদেশে নানা সংস্থা বিভিন্ন দামের ফাউন্টেন পেন উৎপাদন করতে শুরু করে। যেমন—পাইলট, পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সােয়ান ইত্যাদি। এই পেনগুলাের নিব ও হ্যান্ডেল ছিল রকমারি এবং টেকসই। আগের মতাে আর দোয়াতের কালিতে বারবার কলম ডুবিয়ে লেখার সমস্যা আর এইসময় থাকে না। শেীদিন ও ধনী ব্যক্তিদের জন্য কোনাে-কোনাে পেনে হিরে বসানাে হত। টিনাম, সােনা ইত্যাদি দিয়ে মুড়ে ফাউন্টেন পেনকে করে তােলা হয় আরও দামি ও আকর্ষণীয়। সস্তা-দামি নানা রকমের ফাউন্টেন পেনে আর ছেয়ে যায়।অফিস কাছারিতে সকলেই এইসব ব্যবহার করতে শুরু করে। ফাউন্টেন পেন ব্যবহারে লেখকরা নেশাগ্রস্ত হয়ে যান।

প্রশ্ন 9. ‘ফাউন্টেন পেন’বাংলায় কী নামে পরিচিত? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে? ফাউন্টেন পেনের জন্য ইতিহাস লেখো।
উত্তর – বাংলায় যে নাম : ‘ফাউন্টেন পেন বাংলায় ঝরনা কলম নামে পরিচিত। নামটি যার দেওয়া ; নামটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া বলে শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই অংশের উত্তর ১০নং প্রশ্নোত্তরের দ্বিতীয় অংশ অনুসরণে লেখাে।
প্রশ্ন ১০. ‘তার নাম- লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান।’- লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান কে? তার কৃতিত্ব সম্পর্কে যা জানাে লেখাে।
উত্তর – পরিচয় :লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ছিলেন ফাউন্টেন পেন বা ঝরনা কলমের আবিষ্কারক।
কৃতিত্ব : লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান কলমের দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। রিজার্ভার পেনকে অনেক উন্নত করে তিনি ফাউন্টেন পেন তৈরি করেছিলেন। তার আগে দোয়াতের কালিতে কলম বারবার ডুবিয়ে লিখতে হত। একবার এক ব্যাবসায়িক চুক্তিপত্রে সই করতে গিয়ে দলিল লেখার সময় ওয়াটারম্যানের দোয়াত উলটে কালি পড়ে গিয়েছিল। তিনি পুনরায় কালি সংগ্রহ করে ফিরে এসে শােনেন ইতিমধ্যে অন্য ব্যবসায়ী চুক্তিপত্র পাকা করে চলে গিয়েছেন। তখন বিমর্ষ ওয়াটারম্যান প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কলমে সম্পূর্ণ নতুন কিছু পরিবর্তন আনার। তখনই প্রচলিত কলমের বিবর্তনে জন্ম নিয়েছিল ফাউন্টেনপেন। আগে বাঁশের তৈরি কলম, পালকের কলম, নলখাগড়ার কলম ছিল কম টেকসই। সব কলমই কালিতে ডুবিয়ে ডুবিয়ে লিখতে হত। ফলে কলমের সঙ্গে কালির দোয়াত রাখতে হত। তাই লেখার জন্য বিশেষ আয়ােজন করতে হত। ফাউন্টেন পেন এসে সাবেকি দোয়াত কলমের যুগের অবসান ঘটায়।সস্তা, দামি ফাউন্টেন পেনে বাজার ছেয়ে যায়।সকলেই এই পেন ব্যবহার করতে শুরু করে। তাতে লেখালেখির কাজ অনেক সহজ ও সুন্দর হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন ১১. “ফাউন্টেন পেনের এক বিপদ, তা লেখককে নেশাগ্রস্ত করে।”— আলােচ্য রচনায় কোন্ কোন্নামের ফাউন্টেন পেনের উল্লেখ আছে? ফাউন্টেন পেন যে লেখককে নেশাগ্রস্ত করে তার দু-একটি দৃষ্টান্ত দাও।
উত্তর – বিভিন্ন নামের ফাউন্টেন পেন : শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ নামক প্রবন্ধে পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সােয়ান ও পাইলট নামের ফাউন্টেন পেনের উল্লেখ আছে। দৃষ্টান্ত : আলােচ্য রচনায় প্রাবন্ধিক ফাউন্টেন পেনকে জাদুকলম (জাদু-পাইলট’) বলেছেন। সত্যিইফাউন্টেন পেনে যেন জাদু ছিল। এই পেনে লেখার মজাই আলাদা। তা ছাড়া ফাউন্টেন পেন ছিল শৌখিন এবং সুন্দর। অনেক নামিদামি লেখক নানা ধরনের ফাউন্টেন পেন সংগ্রহের নেশায় আচ্ছন্ন ছিলেন। বিখ্যাত লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ফাউন্টেন পেন সংগ্রহের নেশা ছিল। তার কাছ থেকে এই নেশা পেয়েছিলেন আর-এক বিখ্যাত সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখােপাধ্যায়। তার সংগ্রহের প্রায় দুই ডজন ফাউন্টেন পেন তিনি প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থকে দেখিয়েছিলেন। তার মধ্যে বেশ কয়েক রকমের পার্কারও ছিল। অবশ্য ফাউন্টেন পেনের নেশা বা শখ পূরণ করতে পারতেন অপেক্ষাকৃত ধনী লেখকরাই।

প্রশ্ন ১২. ‘সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমতাে ছােটোখাটো একটা অনুষ্ঠান।”—প্রবন্ধ অনুসরণে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর – এ কথা বলার কারণ : শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলমের বিবর্তনের ইতিহাস প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক জানান কালি, কলম ও দোয়াতের যুগে লেখালেখি সম্পূর্ণ করার জন্য এত আয়ােজন করতে হত যে, মনে হত যেন তা ছােটোখাটো একটা অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের পরিচয় : শ্রীপান্থর ছােটোবেলায় ছিল করি ও খাগের কলম। গ্রামে থাকার সময় লেখক ও তার সমবয়সিরা কঞি কেটে কলম বানাতেন। কলমের মুখ ছুঁচোলাে করে মাঝখানে চিরে দিতে হত যাতে কালি ধীরে টুইয়ে পড়ে। রান্নার কড়াইয়ের নীচে যে কালি জমত তা লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে পাথরের বাটিতে অল্প জলে গােলা হত। তাতে ভাজা, পােড়া আতপ চাল বাটা মিশিয়ে, হরীতকী ঘষে, গরম খুন্তি ডুবিয়ে ছেকে নিলে তৈরি হত লেখার কালি। দোয়াতের কালিতে
কঞ্চির কলম ডুবিয়ে কলাপাতায় লেখা হত।
শহরে এসে হাই স্কুলে পড়ার সময় লেখক অপেক্ষাকৃত উন্নত, আধুনিক কলমে লিখতেন। কালিট্যাবলেট বা কালিবড়ি গুলে কালি বানাতেন। একসময়ে কালি শুকোনাে হত বালি দিয়ে। পরে এল ব্লটিং পেপার। ফাউন্টেন পেন আসার পর বিপ্লব ঘটল কলমের দুনিয়ায়। করি, খাগের পালকের কলম, দোয়াত ইত্যাদি পুরােনাে উপকরণগুলাে ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে গেল। কিন্তু ফাউন্টেন পেন প্রচলিত হওয়ার আগে পর্যন্ত লেখালেখি ছিল রীতিমতাে ছােটোখাটো একটা অনুষ্ঠান।

প্রশ্ন ১৩. ‘ “দোয়াত যে কতরকমের হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।”— প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ তাঁর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে নানাবিধ কলমের জন্য কালি রাখার আধার দোয়াতের যে বৈচিত্র্য তুলে ধরেছেন, তা নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তর – শ্রীপান্থ তার হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে বহু বিচিত্র কলমের বিবর্তনের ইতিহাস বর্ণনার প্রসঙ্গে কালি রাখার পাত্র দোয়াতের সবিশেষ পরিচয় দিয়েছেন।
দোয়াতের বৈচিত্র্য : প্রাবন্ধিক কালি ও কলমের তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে নানারকম দোয়াত প্রত্যক্ষ করেছিলেন।দোয়াতগুলি কাচ, কাট গ্লাস, পাের্সেলিন, শ্বেতপাথর, জেড, পিতল, ব্রোঞ্জ, ভেড়ার শিং দিয়ে তৈরি ছিল। আবার কখনও কখনও দোয়াত তৈরি হত মূল্যবান সােনা দিয়ে। গ্রামের কোনও পড়ুয়া পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলে বয়স্ক মানুষেরা আর্শীবাদ করতেন ‘তােমার সােনার দোয়াত কলম হােক’ বলে। প্রাবন্ধিক স্বচক্ষে সােনার দোয়াত দেখেছিলেন সুভাে ঠাকুরের দোয়াত সংগ্রহশালায়। কিছু দোয়াতের সঙ্গে সাহিত্য এবং ইতিহাসের নানা চরিত্রের যােগ ছিল বলে লেখক জানিয়েছেন। কালি-খেকো কলমের ভক্ত’ প্রাবন্ধিক অবাক হয়ে ভেবেছিলেন—সেইসব দোয়াতের কালি দিয়েই বিশ্বসাহিত্যের অমর স্রষ্টারা তাদের সাহিত্য সৃষ্টি করে গিয়েছেন।

প্রশ্ন ১৪. “আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে।” —কোন জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে? এই অবলুপ্তির কারণ কী? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী?
উত্তর – যে জিনিস:শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশে কঞ্জির কলম, খাগের কলম, পালকের কলম, ফাউন্টেন পেন, বল পেন প্রভৃতি বৈচিত্র্যময় কলমের অবলুপ্তিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
কারণ : যন্ত্রসভ্যতার ক্রমবিকাশে উন্নত প্রযুক্তির কম্পিউটার আবিষ্কৃত হওয়ায় কলম ক্রমশ অবলুপ্ত হতে চলেছে।
এই অংশের উত্তর ২নং প্রশ্নোত্তর অনুসরণে লেখাে।

প্রশ্ন ১৫. বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন লাঠি তােমার দিন ফুরাইয়াছে।” বঙ্কিমচন্দ্র কোন্ রচনায় কী প্রসঙ্গে কথাটি লিখেছিলেন? প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ কোন্ প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটি ব্যবহার করেছেন, তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর – লাঠির প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘দেবী চৌধুরাণী’উপন্যাসে লিখেছিলেন—“হায় লাঠি! তােমার দিন গিয়াছে। দস্যুদলের রানি দেবী চৌধুরাণীর ছিল বহু বরকন্দাজ অর্থাৎ লাঠিয়াল। অন্যদিকে দেবী চৌধুরাণীকে আক্রমণ করতে আসা হরবল্লভ ও লেফটেনান্ট ব্লেনানের সঙ্গে ছিল পাঁচশাে বন্দুকধারী প্রশিক্ষিত সেপাই। উভয় দলের রণকৌশলের পার্থক্য নির্দেশ করে বঙ্কিমচন্দ্র উক্ত কথাটি লিখেছিলেন।
শ্রীপান্থর ব্যবহৃত প্রসঙ্গ : হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনায় শ্রীপান্থ মুল উক্তিটির সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। লাঠির মতাে কলমের ক্ষমতাও অসীম। কিন্তু বর্তমান যুগে আধুনিক প্রযুক্তি এসে কলমের সেই ক্ষমতাকে ম্লান করে দিয়েছে। নতুন যুগের লেখকরা কলমের পরিবর্তে সরাসরি কম্পিউটার স্ক্রিনে লিখছেন। অক্ষর লেখা কি-বাের্ডের এক-একটি বােতামে চাপ দিয়ে কাচের স্ক্রিনে ফুটিয়ে তুলছেন তাদের লিপিমালা। অথচ একসময় দক্ষ কলমজীবীদের হাতে লিপি হয়ে উঠেছিল স্বতন্ত্র এক শিল্পকলা। লেখালেখির মূল উপকরণের এই পরিবর্তন সময়ের সঙ্গে স্বাভাবিক। এই পরিবর্তনকে নির্দেশ করে প্রাবন্ধিক বলতে চেয়েছেন কলমের প্রয়ােজনীয়তার দিন শেষ হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন ১৬. “যাঁরা ওস্তাদকলমবাজাঁদের বলা হলাে ক্যালিগ্রাফিস্ট’বা লিপিকুশলী।”—লিপিকুশলীদের কাজ কী ছিল? তাদের সম্পর্কে প্রবন্ধে কী জানা যায়?
উত্তর – লিপিকুশলীদের কাজ : শ্রীপান্থ তার হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে মুদ্রণ যুগের আগে মানুষের লেখালেখির ইতিহাস উল্লেখ করতে গিয়ে পুথিলেখকদের কথা বলেছেন। তারা অন্যের লেখা পুথি সুনিপুণ হস্তাক্ষরে লিখতেন। তারা লিপিকুশলী বা লিপিকর নামে পরিচিত ছিলেন। আধুনিক যুগে ছাপাখানা বা মুদ্রণশিল্পের আর্বিভাবের পরও সেইসব লিপিকর বা লিপিকুশলীরা সুনিপুণ হস্তাক্ষরে লেখা প্রস্তুত করতেন। তাদের ইংরেজিতে ক্যালিগ্রাফিস্ট বলা হত। লিপিকুশলীদের বৃত্তান্ত : আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে কালিকলমের ব্যবহার কমে গেলেও প্রাবন্ধিক পুথিলেখক ও লিপিকরদের স্মরণ করেছেন। কালিকলমের অবদানকে এরাই একসময় মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলেন। মুঘল দরবারে এইসব পুথিলেখক ও লিপিকর তথা লিপিকুশলীদের যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদা ছিল। বাংলাদেশেররাজা ও জমিদাররাও এদের গুণে মুগ্ধ হয়ে সম্মান করতেন, এমনকি তাদের ভরণপােষণেরও ব্যবস্থা করতেন। সাধারণ গৃহস্থ-পরিবারও লিপিকরদের পুথি নকল করার জন্য ডাকতেন। সেইসব লিপিকরদের হস্তাক্ষর ছিল মনােমুগ্ধকর। মুক্তোর মতাে প্রতিটি অক্ষর ছিল সমান, সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন। সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তারা এ কাজ করতেন।

প্রশ্ন ১৭. “মুঘল দরবারে একদিন তাদের কত না খাতির, কত না সম্মান!”—তাঁদের বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের খাতির ও সম্মানের পরিচয় দাও।
উত্তর – উদ্দিষ্ট : শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ। থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশে তাদের’ বলতে লিপিকুশলীদের নির্দেশ করা হয়েছে।
• এই অংশের উত্তর ১৬ নং প্রশ্নোত্তরের দ্বিতীয় অংশ অনুসরণে লেখাে।

প্রশ্ন ১৮. কলমকে বলা হয় তলােয়ারের চেয়েও শক্তিধর। বহিরঙ্গভাবে এ কথার ভিত্তি কী? বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর – মন্তব্যের ভিত্তি:শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে কলমের অসামান্য ক্ষমতা বর্ণনা প্রসঙ্গে আলােচ্য উদ্ধৃতিটির অবতারণা করা হয়েছে। প্রাবন্ধিক কলমের ভক্ত বলেই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কলমের ক্রমশ হারিয়ে যাওয়াতে বিমর্ষ হন। তিনি কলমের প্রকৃত ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই ফাউন্টেন পেনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তার বিভিন্ন অংশ যেমন ব্যারেল, কার্টিজ ইত্যাদি উল্লেখ করেন। এইসব অংশ বন্দুকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। আবার, ফাউন্টেন পেনে লিখিত রচনাও বিপ্লব ঘটাতে পারে।
অন্তর্নিহিত অর্থ:মানুষের মনের কথা কলমের কালির সাহায্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বন্দুক কিংবা তলােয়ারের মতাে অস্ত্র দিয়ে মানুষকে হত্যা করা যায়। কিন্তু কলম মানুষের অন্ধ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনকে আলােকিত করে তােলে। তাই কলম এমনই শক্তিধর যা যুগযুগান্তব্যাপী মানুষের মন ও মননে স্পষ্ট ছাপ রেখে যায়। একারণেই কলমকে তলােয়ারের চেয়ে শক্তিধর রূপে গণ্য করেছেন প্রাবন্ধিক।

প্রশ্ন ১৯. “ফাউন্টেন পেনও হয়তাে আভাসেইঙ্গিতে তা-ই বলতে চায়।”—ফাউন্টেন পেন যা বলতে চায় তার তাৎপর্য কী? লেখক কীভাবে তার আভাস পান?
উত্তর – যা বলতে চায় তার তাৎপর্য : তলােয়ারের চেয়ে কলমের শক্তি বেশি—এমন একটা কথা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। কথায় বলে ‘অসির চেয়ে মসি বড়াে’। ফাউন্টেন পেনও যেন প্রচ্ছন্নভাবে তার ক্ষমতা বা প্রভাবের কথা বলতে চায়। সে যেন বলতে চায় যতই অন্য কলম আবির্ভূত হােক, তার আভিজাত্য কমবে না। নতুন প্রযুক্তি আসলেও, লেখালেখির দুনিয়ায় কলমের শক্তি ও মাহাত্ম্য কখনও ক্ষুন্ন হবে না। লেখক যেভাবে আভাস পান:কলম যে তলােয়ারের চেয়েও শক্তিধর এ কথা তাে বহুকাল থেকেই প্রচলিত। আভাসে-ইঙ্গিতে ফাউন্টেন পেনও সে-কথা বলতে চায়। কারণ এর অনুষঙ্গে ব্যারেল’, কার্টিজ’ এসব শব্দ ব্যবহূত হয়। যুদ্ধের অনুষঙ্গ হিসেবেও শব্দগুলাে ব্যবহৃত হয়। ব্যারেল সেখানে বন্দুকের নল আর কার্টিজ হল টোটা বা কার্তুজ। লেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যারেল বলতে দোয়াত বা কালি রাখার পাত্র এবং কার্টিজ মানেও কালির আধারকে বােঝানাে হয়। ইতিহাসে দেখা গিয়েছে অনেক পালকের কলমধারী মিথ্যের বিরুদ্ধে তলােয়ার হাতে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। লেখক শ্রীপান্থ যখন দেখেন এত পরিবর্তনের মধ্যেও অনেকেই এখনও কলমে লিখছেন তখন তার আনন্দ হয়। কলমের এত বিবর্তন ঘটেছে, এ যুগের বিজ্ঞান উপহার দিয়েছে কম্পিউটার। তবু লেখকের সমকালের বেশিরভাগ সাহিত্যিক কলম দিয়েই লিখে চলেছেন আজও। বহুযুগ আগে থেকেই কলমে
রচিত বিভিন্ন প্রতিবাদী রচনা মানবতার উপর তলােয়ারের আঘাতের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠে সামাজিক বিপ্লব ঘটিয়েছে। কলমের শক্তি আজও নষ্ট হয়নি, তার ব্যবহার এখনও স্তন্ধ হয়নি।

প্রশ্ন ২০. “সেই আঘাতেরই পরিণতি নাকি তাঁর মৃত্যু।”- কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? কীসের আঘাত কার মৃত্যুর কারণ বলে লেখকের সংশয় ?
উত্তর – বক্তা ও প্রসঙ্গ :শ্রীপান্থ রচিত হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন। কলমের শক্তি বা ক্ষমতার কথা সর্বজনবিদিত। কথায় বলে, “অসির চেয়ে মসি বড়াে’। কলম যে তলােয়ারের চেয়ে বেশি শক্তিধর, মানুষের সামাজিক ইতিহাসে তা
বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কলম যে আক্ষরিক অর্থেই কোনাে মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে, একবার অন্তত তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এই প্রসঙ্গেই লেখক উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
আঘাত ও মৃত্যুর কারণ :উদ্ধৃতাংশে নিবের কলমের আঘাতের কথা বলা হয়েছে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ডমরুধর’, কঙ্কাবতী’ প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক ত্রৈলােক্যনাথ মুখােপাধ্যায় মারা গিয়েছিলেন কলমের আঘাতে। শােনা যায়, তার নিজের হাতের কলমের নিব হঠাৎ অসাবধানে বুকে বিধে গিয়েছিল। সেই আঘাতেই নাকি তার মৃত্যুহয়েছিল।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর :

প্রশ্ন : “সবাই এখানে লেখক।”—সবাই এখানে লেখক কেন?
উত্তর – সংবাদপত্র বা পত্রপত্রিকার অফিসে সকলকেই কোনাে না কোনাে ধরনের লেখার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। তাই বক্তার অফিসে সবাই লেখক।

***প্রশ্ন : কিন্তু আমি ছাড়া কারও হাতে কলম নেই।”— কারও হাতে কলম নেই অথচ বক্তার হাতে কলম কেন?
উত্তর – বক্তা বয়সে অপেক্ষাকৃত প্রবীণ এবং কলমের প্রতি আসক্ত হওয়ায় নবীনদের মতাে কি-বাের্ডের সাহায্যে কম্পিউটার স্ক্রিনে লেখা
পছন্দ করেন না। তিনি কলম দিয়ে কাগজে লেখেন বলে শুধু তার হাতেই কলম আছে।

প্রশ্ন “তবে তাতে লিখে আমার সুখ নেই।”—তাতে লিখে সুখ নেই কেন?
উত্তর – অফিসে কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলে সহকর্মীদের কাছ থেকে যদি বক্তা একটা কলম পেয়েও যান, তবে সেটির শুকনাে কালি ও ভোতা মুখের জন্য তার দ্বারা তিনি স্বচ্ছন্দে লিখতে পারেন । তাই এমন কলমে লিখে বক্তার সুখ হয় না।

প্রশ্ন :“বাংলায় একটা কথা চালু ছিল”– যে কথাটা চালু ছিল সেটি কী?
উত্তর – বাংলায় একসময়ে যে কথাটা প্রচলিত ছিল সেটা হল— কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি!

প্রশ্ন : কালগুণে বুঝিবা আজ আমরাও তা-ই। —আমরা আজ কেমন?
উত্তর – কালগুণে অর্থাৎ সময়ের প্রভাবে আমরা কালিকলমহীন লেখক। এই যন্ত্রযুগে আজ সকলে কম্পিউটারে লেখালেখি করেন। লেখার জন্য কালি কলম এখন আর অপরিহার্য নয়।

প্রশ্ন : ‘লেখার পাত’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর – লেখার পাত’ বলতে লেখক কলাপাতাকে বুঝিয়েছেন।

প্রশ্ন : লেখক শ্রীপান্থ ছােটোবেলায় কীসে ‘হােম-টাস্ক’ করতেন?
উত্তর – লেখক শ্রীপান্থ ছােটোবেলায় কলাপাতায় হােম টাস্ক করতেন।

প্রশ্ন : “আমরা ফেরার পথে কোনও পুকুরে তা ফেলে দিয়ে আসতাম।”—বক্তা কেন তা পুকুরে ফেলে দিতেন?
উত্তর – বক্তা অর্থাৎ লেখক ‘হােম-টাস্ক’করা কলাপাতার বান্ডিল পুকুরে ফেলে দিতেন। কারণ, বাইরে ফেললে সেটি গােরু খেয়ে নিলে অমঙ্গল। গােরুকে অক্ষর খাওয়ানাে পাপ।

প্রশ্ন : “তখন মনে কষ্ট হয় বইকী!”—কী কারণে বার মনে কষ্ট হয়?
উত্তর – বক্তা আশৈশব কলম দিয়ে লিখে চলেছেন। কিন্তু আধুনিক যুগে কম্পিউটারে লেখার চল ক্রমশ প্রাধান্য পাওয়ায় কলম
অপ্রয়ােজনীয় হয়ে পড়ছে বলে বক্তার মনে কষ্ট হয়।

প্রশ্ন : সিজার যে কলমটি দিয়ে কাসকাকে আঘাত করেছিলেন সেটি
কেমন ছিল?
উত্তর – সিজার স্টাইলাস বা ব্রোঞ্জের শলাকা দিয়ে কাসকাকে আঘাত করেছিলেন—সেটি ছিল সিজারের কলম।

প্রশ্ন : গ্রামে বুড়ােবুড়িরা কী বলে আশীর্বাদ করতেন?
উত্তর – গ্রামে বুড়ােবুড়িরা ‘তােমার সােনার দোয়াত কলম হােক’ বলে আশীর্বাদ করতেন।

**প্রশ্ন :“সােনার দোয়াত কলম যে সত্যই হতাে”—তা লেখক কীভাবে জেনেছিলেন?
উত্তর – “সােনার দোয়াত কলম যে সত্যিই হতােতা লেখক জেনেছিলেন। সুভাে ঠাকুরের দোয়াত সংগ্রহ দেখতে গিয়ে।

প্রশ্ন : হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’-এ বর্ণিত সবচেয়ে দামি কলমটির কত দাম?
উত্তর – সবচেয়ে দামি কলমটির দাম আড়াই হাজার পাউন্ড (এক পাউন্ড। সমান পঁচাত্তর টাকা)।

প্রশ্ন : ক্যালিগ্রাফিস্ট কাদের বলে?
উত্তর – মুদ্রণের যুগেও যেসব লেখক শিল্পগুণান্বিত হাতের লেখায় পাণ্ডুলিপি তৈরি করতেন তাদের বলা হয় ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলী।

প্রশ্ন : “আমার কোনও বিবাদ নেই।”—কার সঙ্গে, কেন বক্তার বিবাদ নেই?
উত্তর – ফাউন্টেন পেন বা বল পেনের সঙ্গে বক্তা শ্রীপান্থের বিবাদ নেই, কারণ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনিও বল পেনে লিখতে শুরু করেছেন।

প্রশ্ন : “সেই আঘাতেরই পরিণতি নাকি তার মৃত্যু।”—কোন আঘাতের পরিণতিতে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে?
উত্তর – শােনা যায় সাহিত্যিক ত্রৈলােক্যনাথ মুখােপাধ্যায়ের বুকে তারই কলমের নিব অসাবধানে ফুটে গিয়েছিল এবং সেই আঘাতেরই পরিণতিতে তার মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।