মাধ্যমিক ভূগোল : ভারতে অসম জনবণ্টনের কারণ
ভারতের সর্বত্র জনবণ্টনের প্রকৃতি একপ্রকার নয়। গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে অধিক জনঘনত্ব, দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলে মধ্যম জনঘনত্ব এবং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বিরল জনঘনত্ব দেখা যায়। ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনের এরূপ তারতম্যের কারণগুলি হল—
প্রাকৃতিক কারণ:
ভূপ্রকৃতি: পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিরূপ বন্ধুর ও প্রস্তরময় বলে ওই অঞ্চলে রেলপথ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য হয়ে
পড়ে, ফলে কৃষি ও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। এই কারণে ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল জনবিরল। অপরদিকে মালভূমি অঞ্চল বন্ধুর হলেও পার্বত্য অঞ্চলের মতো দুর্গম প্রকৃতির নয় বলে জনবসতি মধ্যম প্রকৃতির। আবার সমতল নদী উপত্যকা অঞ্চল কৃষি, শিল্প ও পরিবহণ গড়ে তোলার উপযোগী বলে জনঘনত্ব অধিক হয়।
নদনদী: উত্তর ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র এবং দক্ষিণ ভারতের মহানদী, গোদাবরী, কৃম্না, কাবেরী প্রভৃতি নদী উপত্যকাগুলিতে জনঘনত্ব বেশি। কারণ, এইসব নদী থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পানীয় জল সরবরাহ, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি নানারকম সুবিধা পাওয়া যায়।
জলবায়ু : উত্তর ভারত ও পূর্ব ভারতের সমভূমি অঞ্চলে অনুকূল জলবায়ুর কারণে জনঘনত্ব বেশি। অন্যদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে শুষ্ক, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে শীতল প্রকৃতির জলবায়ুর কারণে জনঘনত্ব কম।
মৃত্তিকা: ভারতের যে-সমস্ত অঞ্চলে মৃত্তিকা উর্বর ও চাষাবাদযোগ্য, সেখানে জনবসতির ঘনত্ব বেশি। যেমন— দাক্ষিণাত্যের লাভাগঠিত অঞ্চলে উর্বর কৃষ্ণমৃত্তিকা এবং সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদী উপত্যকা অঞ্চলে উর্বর পলিমাটির অবস্থানের কারণে কৃষিকার্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে বলে জনঘনত্ব বেশি।
অর্থনৈতিক কারণ:
পরিবহণ ব্যবস্থা: উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থাযুক্ত এলাকায় জনঘনত্ব বেশি হয়। এই কারণে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে রেলপথ, সড়কপথ ও জলপথ ব্যবস্থা উন্নত বলে জনঘনত্ব অধিক দেখা যায়।
শিল্প ও বাণিজ্য: ভারতের যেসকল অঞ্চলে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রভূত প্রসার ঘটেছে, সেই সকল অঞ্চলে জনঘনত্ব অনেক বেশি। এই কারণে হুগলি শিল্পাঞ্চল, মুম্বাই-আমেদাবাদ শিল্পাঞ্চল, কানপুর-এলাহাবাদ শিল্পাঞ্চল অধিক ঘনবসতিপূর্ণ।