দলিত আন্দোলনে আম্বেদকারের ভূমিকা : মাধ্যমিক ইতিহাস
দলিত আন্দোলন কি ? দলিত আন্দোলনে ড: আম্বেদকারের ভূমিকা আলোচনা করো।
ঔপনিবেশিক আমলে ‘দলিত’ বা ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনগ্রসর এবং পশ্চাদপদ শ্রেণি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের অত্যাচার, শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়ে যে বহুমুখী আন্দোলন শুরু করেছিল তা ‘দলিত আন্দোলন‘ নামে পরিচিত।
দলিত আন্দোলনে ড. আম্বেদকরের ভূমিকা:
ঔপনিবেশিক ভারতে দলিত আন্দোলনের নেতৃত্বদানে যিনি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি হলেন ড. ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (১৮৯১- ১৯৫৬ খ্রি.)।
দলিত আন্দোলনে তাঁর বহুমুখী ভূমিকা হল :
অনগ্রসর পরিবারে জন্ম: আম্বেদকর মহারাষ্ট্রের অনগ্রসর মাহার সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ও দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দলিত পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি বাল্যকাল থেকেই দলিতদের প্রতি উচ্চবর্ণের বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক বিষয়গুলি লক্ষ করেন। তখন থেকেই এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন।
বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা: ড. আম্বেদকর দলিতদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই শহরে ‘বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন। দলিতদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার এবং আর্থিক উন্নয়ন ঘটানোই ছিল এই সভার মূল কাজ।
মাহার সত্যাগ্রহ: আম্বেদকর মহারাষ্ট্রের কোলাবা জেলায় পানীয় জল ব্যবহারকে কেন্দ্র করে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাহার সত্যাগ্রহ শুরু করেন। এরপর তিনি হিন্দুধর্মের বর্ণবৈষম্য ও জাতিভেদ প্রথার মূল-ভিত্তি,তথা ‘মনুস্মৃতি’গ্রন্থটি প্রকাশ্যে আগুনে পোড়ান।
গোলটেবিল বৈঠক: আম্বেদকর ভারতের অনগ্রসর শ্রেণির নেতা হিসেবে ১৯৩০ ও ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের ডাক পান |এই বৈঠক দুটিতে তিনি ভারতীয় দলিতদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া উপস্থাপন করেন ও তাদের অধিকার আদয়ে সচেষ্ট হন।
সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস: আম্বেদকর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করে দলিতদের ঐক্যবদ্ধ করার এবং তাদের জন্য রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেন।
পুনা চুক্তি: আম্বেদকর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস নেতা গান্ধিজির সঙ্গে পুনা চুক্তি স্বাক্ষর করে দলিতদের জন্য নির্বাচনে আসন সংরক্ষণ, চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ প্রভৃতি বেশকিছু দাবিদাওয়া আদায়ে সক্ষম হন।
অল ইন্ডিয়া সিডিউলড কাস্ট ফেডারেশন: আম্বেদকর ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া সিডিউলড কাস্ট ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দলিতদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হন। দলিতদের স্বার্থে তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন।
পিপলস এডুকেশন সোসাইটি: আম্বেদকর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ‘পিপলস এডুকেশন সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সংবিধান সভার সভাপতি: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ড. আম্বেদকর ভারতের সংবিধান সভার খসড়া কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন| এই সময় ভারতের সংবিধান রচনা করে তিনি সাংবিধানিকভাবে দলিতদের স্বার্থরক্ষার বিভিন্ন ব্যবস্থা করেন।