হায়দ্রাবাদ সমস্যা: মাধ্যমিক ইতিহাস

হায়দ্রাবাদ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?[Madhyamik 2018 ]

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ ছিল সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য। হায়দ্রাবাদের প্রধান
শাসক নিজাম নামে পরিচিত ছিলেন।


[1] জনবিন্যাস: ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন ওসমান আলি খান। তবে শাসক মুসলিম হলেও রাজ্যের অন্তত ৮৭ শতাংশ জনগণই ছিল হিন্দু।

[2] ভারত-বিদ্বেষ : ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর হায়দ্রাবাদের ভারত-বিদ্বেষী নিজাম ভারত বা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে নিজ রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করেন। সাম্প্রদায়িক নেতা কাশিম রিজভির নেতৃত্বে ‘রাজাকার’ নামে হায়দ্রাবাদের দাঙ্গাবাহিনী সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখণ্ডের হিন্দুদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু করতে থাকে। তখন তারা ভারতের ত্রাণশিবিরগুলিতে আশ্রয় নেয়।


[3] জটিলতা বৃদ্ধি: হায়দ্রাবাদের নিজাম সেখানকার মুসলিমদের ভারতের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণার আহ্বান জানান। হায়দ্রাবাদ
পাকিস্তান থেকে অস্ত্রশস্ত্র এনে এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলে।

[4] অপারেশন পোলো: এইরকম জটিল পরিস্থিতিতে ভারত হায়দ্রাবাদকে একটি চরমপত্র পাঠালে নিজাম তা উপেক্ষা করেন।
এই পরিস্থিতিতে জেনারেল জে এন চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে অভিযান শুরু করে (১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে) যা ‘অপারেশন পোলো’ নামে পরিচিত।


[5] আত্মসমর্পণ : ভারতীয় আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে হায়দ্রাবাদের বাহিনী শীঘ্রই পরাজিত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে (১৮ সেপ্টেম্বর)। ফলে হায়দ্রাবাদ ভারতের দখলে আসে।

উপসংহার: ভারতের সামরিক অভিযানে হায়দ্রাবাদের প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। নিজাম ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। হায়দ্রাবাদ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে
ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।