INDIGO REVOLT ( নীল বিদ্রোহ )

মাধ্যমিক ইতিহাস ( Madhyamik History )

নীল বিদ্রোহ ( ১৮৫৯ ) : মাধ্যমিক

ভূমিকা : ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নীলচাষিরা নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, তা ইতিহাসে ‘নীল বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। ১৮৫৯ – ৬০ সালে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদেশী নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এই বিদ্রোহকে Blue Mutiny নামেও অভিহিত করা হয়।

নীল বিদ্রোহের কারণ :

নীল বিদ্রোহটি ছিল বিভিন্ন কারণের সম্মিলিত ফল। এই বিদ্রোহের কারণগুলি হল-_

১. নীলকর সাহেবদের অত্যাচার : নীল বিদ্রোহের অন্যতম কারণ ছিল কোনো চাষির ইচ্ছার বিরুদ্ধে নীলচাষ করানো। নীলকরদের অত্যাচার, লুষ্ঠন, শোষণ ছিল এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।

২. উৎকৃষ্ট জমিতে নীলচাষ করানো : নীলকর সাহেবেরা সব সময় কৃষককে উৎকৃষ্ট জমিতে নীলচাষ করিয়ে নিত। কোনো কৃষকই তাদের খাদ্যশস্য ছেড়ে ওই উৎকৃষ্ট জমিতে নীল চাষে আগ্রহী ছিল না।

৩. দাদন প্রথা : “দাদন” শব্দের অর্থ হল অগ্রিম। নীলকর সাহেবেরা নীল চাষের জন্য বিঘা প্রতি দু টাকা করে দাদন বা অগ্রিম দেওয়া হত। আর একবার দাদন নিলে শোধ হতনা।

8. পঞ্চম আইন : ১৮৩০ খ্রি. লর্ড বেন্টিঙ্ক পঞ্চম আইন পাশ করেন। এই আইনে বলা হয় দাদন নিয়ে চাষ না করলে তা বে-আইনি বলে গণ্য হবে এবং অপরাধীর জেল হবে।

নীলবিদ্রোহের গুরুত্ব:

নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। যেমন—

স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ: নীল বিদ্রোহ ছিল নীল- করদের বিরুদ্ধে সংঘটিত একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণবিদ্রোহ | এই বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্পর্কে অমৃতবাজার পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছে যে, নীল বিদ্রোহ দেশের মানুষকে রাজনৈতিক চেতনা ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের শিক্ষা দিয়েছিল।

শিক্ষিত সম্প্রদায়ের নজর: নীল বিদ্রোহকে উপলক্ষ্য করে বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গ্রামগঞ্জের সাধারণ গরিব মানুষ ও কৃষকদের প্রতি নজর দেয়। ফলে শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে নীল বিদ্রোহ ও বিদ্রোহীদের সংযোগ ঘটে।

রাজনৈতিক চেতনা: নীল বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে ইংরেজ সরকারের অত্যাচার ও শোষণের আসল রূপ শিক্ষিত সমাজের চোখে ধরা পড়ে। এর ফলে দেশবাসীর রাজনৈতিক চেতনাও বৃদ্ধি পায় |

হিন্দু-মুসলিম ঐক্য: নীল বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে বাংলায় হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের চাষিরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আন্দোলনে শামিল হয়।

গান্ধিজির আন্দোলনের অগ্রদূত: নীল বিদ্রোহ ছিল গান্ধিজির নেতৃত্বে পরিচালিত অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনের অগ্রদূত। পরবর্তীকালে সম্ভবত নীল বিদ্রোহের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই গান্ধিজি বিহারের চম্পারণে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন।

জাতীয়তাবোধ: নীল বিদ্রোহ বাঙালি সমাজে জাতীয়তাবোধের জাগরণ ঘটিয়েছিল। যা পরে স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপ নিয়েছিল।

নীল কমিশন: নীল বিদ্রোহের ফলে সরকারও নড়েচড়ে বসে। তৎকালীন বাংলার ছোটোলাট জন পিটার গ্রান্ট নীলচাষিদের ক্ষোভের কারণ অনুসন্ধানের জন্য ১৮৬০ খ্রি. নীল কমিশন গঠন করে। কমিশনের রিপোর্টে নীলচাষিদের ওপর অত্যাচারের বহু তথ্য উঠে আসে।

মূল্যায়ন : পরিশেষে বলা যায়, নীল বিদ্রোহ বাঙালি সমাজে ব্যাপক চাও্ল্য ও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় নীলচাষিদের বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিল এবং দিগম্বর বিশ্বাস, বিশ্বনাথ সর্দার, মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নেতৃত্ববৃন্দের নীলকর সাহেবের বিরুদ্ধে এক বিস্ফোরক প্রতিবাদই ছিল নীলবিদ্রোহ ৷