৩. দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো ১১টি): ২x১১=২২
৩.১ পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কী ?
Ans. মানুষ পরিবেশের উপর নির্ভরশীল । প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও সংরক্ষণ এবং তার উপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপব্যবহার মানব সভ্যতাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং লুণ্ঠন জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে । তারই প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন । যেমন— চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন । সেজন্য পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে ইতিহাসে পরিবেশের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ।
৩.২ স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয় ?
Ans. ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে স্মৃতিকথা এবং আত্মজীবনীতে লেখকের ব্যক্তিগত আবেগ অপেক্ষা সমকালীন সমাজ সংস্কৃতির বস্তুনিষ্ঠ বিবরণই প্রধান বিবেচ্য । যেমন— সরলা দেবী চৌধুরানীর আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথা ‘জীবনস্মৃতি’ -তে শুধু ঠাকুর পরিবারের কথা নয় সমকালীন বিশ শতকের কলকাতার সমাজ সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিবরণও পাওয়া যায় ।
৩.৩ ‘মেকলে মিনিট’ কি ?
Ans. ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত আকার ধারণ করে । এমতাবস্থায় জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে পাশ্চাত্য শিক্ষার স্বপক্ষে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন পেশ করেন তা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত । মেকলের মতে— প্রাচ্য শিক্ষা নীতিহীন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত । তার মতে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং এই শিক্ষা সমাজের উঁচুতলা থেকে চুঁইয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে ।
৩.৪ সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কী ছিল ?
Ans. হিন্দু কলেজের শিক্ষক ডিরোজিও এবং তার অনুগামী ছাত্ররা যাঁরা ইয়ংবেঙ্গল নামে পরিচিত ছিলেন তাঁরা হিন্দু ধর্মের প্রচলিত কুসংস্কার ও ধর্মীয় সংকীর্ণতার বিরোধিতা করেছিলেন । এঁরা মূলত যুক্তিবাদী ও প্রগতিপন্থী ছিলেন । তাঁরা যেমন মূর্তি পূজা, উপবীত ধারণের বিরোধিতা করেছিলেন তেমন স্ত্রীশিক্ষার প্রসার, বাক স্বাধীনতার স্বপক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন ।
৩.৫ দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন ?
Ans. ফরাজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা দুদু মিঞা একদিকে যেমন জমিদার এবং মহাজনদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন অন্যদিকে বাংলার নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন । তিনি প্রচলিত কর কাঠামো ও বে-আইনি কর আদায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন এবং প্রচার করেন, “জমি যারা চাষ করে জমি তাদের” । তিনি বাংলার বেশ কিছু স্থানে অস্থায়ী সমন্তরাল প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন ।
৩.৬ নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা কীরূপ ছিল ?
Ans. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর পত্রিকায় একদিকে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন এবং অন্যদিকে নীলকর বিরোধী জনমত গঠনে প্রয়াসী হয়েছিলেন । সাধারণ কৃষকদের উপর নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচার, দাদন প্রথা, উর্বর জমিতে বলপূর্বক নীলচাষে কৃষকদের বাধ্য করা প্রভৃতি বিষয় তাঁর পত্রিকায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন । তিনি তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সংগঠিত করেন ।
৩.৭ ‘মহারানীর ঘোষণাপত্র’ -এর (১৮৫৮) মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?
Ans. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পরিপেক্ষিতে মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তি কর্তৃক ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনভার গ্রহণ করা । দ্বিতীয়ত ব্রিটিশ সরকারের নীতি ও আদর্শের সঙ্গে ভারতবাসীর যোগসাধন ঘটানো ।
৩.৮ ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয় ?
Ans. চিত্রশিল্পের অন্যতম শাখারূপে ব্যঙ্গচিত্রে মূলত তির্যক বা ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি, ত্রুটিবিচ্যুতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরা হয় । অত্যন্ত সরল ভঙ্গিতে সমাজের পাশাপাশি রাজনীতি, অর্থনীতি এমনকি সংস্কৃতির ত্রুটিগুলিকে আক্রমণ করা হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা, ‘বাবু’ সমাজের ভণ্ডামি এবং ধর্মীয় দ্বিচারিতা কে তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন ।
৩.৯ বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা কী ছিল ?
Ans. প্রথম বাংলা ভাষার ছাপাখানার হরফ নির্মাণের অন্যতম রূপকার ছিলেন মিশনারি প্রেসের চার্লস উইলকিন্সের সহযোগী পঞ্চানন কর্মকার । তিনি বাংলা ভাষার সচল ধাতু হরফের ঢালাই ও ছেনিকাটা আকার নির্মাণে প্রধান রূপকার ছিলেন । এর মাধ্যমে অল্প সময়ে কম খরচে ছাপা শিল্পের ব্যবসায়িক বিকাশ ঘটেছিল । তিনি দেবনাগরী ভাষায় মার্জিত সংস্কৃত ব্যাকরণ ছাপার উদ্যোগ নেন ।
৩.১০ বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী ?
Ans. আপার চিৎপুর রোডের বড়তলা প্রকাশনা ছিল কলকাতার আদি প্রকাশনা শিল্প । এখানে মূলত হ্যান্ডমেড পেপারে ছাপচিত্রের মাধ্যমে স্বদেশী কারিগরেরা চটি বই, পুঁথি, পাঁচালী প্রকাশ করত । এখান থেকে অনুবাদ সাহিত্যও প্রকাশিত হত । উনিশ শতকের কলকাতা ও ‘বাবু’ সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য এখান থেকে পাওয়া যায় ।
৩.১১ ‘একা’ আন্দোলন শুরু হয় কেন ?
Ans. ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ অঞ্চলে মাদারি পাসির নেতৃত্বে ‘একা’ আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল । কৃষকেরা মূলত অত্যধিক রাজস্ব বৃদ্ধি, বাড়তি কর আদায়, জমি থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ, বেগার শ্রমদানের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল ।
৩.১২ বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন কেন শুরু হয় ?
Ans. ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের কৃষকরা বৃহত্তর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে । নিম্নবর্ণের কৃষক কালিপরাজদের উপর উচ্চবর্ণের কৃষক উজলিপরাজদের অত্যাচারে কৃষকরা ক্ষুব্ধ ছিল । এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার রাজস্বের পরিমাণ ২৭ থেকে ৩০ পর্যন্ত বৃদ্ধি করলে, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলোর দাম পড়ে গেলে এবং জলসেচের সংকট দেখা দিলে কৃষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে ।
৩.১৩ অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠা হয় ?
Ans. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে ছাত্র সমাজকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য লর্ড কার্জনের শিক্ষা সচিব কার্লাইল ১৯০৫ সালের অক্টোবর মাসে যথাক্রমে কার্লাইল সার্কুলার, লিয়ন সার্কুলার, পেডলার সার্কুলার জারি করেন । এর প্রত্যুত্তরে ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি গঠন করেন । এর উদ্দেশ্য ছিল সরকারি বিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা এবং ছাত্রদের মধ্যে স্বদেশ প্রেম জাগ্রত করা ।
৩.১৪ দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ?
Ans. ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে লীলা নাগ (রায়) দিপালী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন । মেয়েদের শিক্ষিত, আত্মসচেতন ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে এবং স্বদেশ প্রেম ও বৈপ্লবিক চিন্তা ও চেতনার উন্মেষ ঘটাতে এই সংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয় । প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এই সংঘের সঙ্গে প্রথম দিকে যুক্ত ছিলেন
৩.১৫ কী পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন ?
Ans. কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংহ ভারত বা পাকিস্তানে কোথাও যোগ না দিয়ে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন । এমতাবস্থায় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী কাশ্মীর আক্রমণ করে কাশ্মীরের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয় । তখন হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি হানাদারের পিছু হঠতে বাধ্য করে ।
৩.১৬ রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল ?
Ans. ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবি উঠতে শুরু করে । এই দাবির যৌক্তিকতা বিচারের জন্য ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে স্বরাষ্ট্র দফতরের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ ফজল আলির সভাপতিত্বে কে. এম. পানিকর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জুরকে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়েছিল ।