Madhyamik History Questions 2023

মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নোত্তর মান- ২

৩। দু’টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো এগারোট) : ১১ x ২ = ২২

৩.১) আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চা গুরুত্বপূর্ণ কেন ? (Madhyamik 2019)

Ans. ভৌগলিক দিক থেকে নির্দিষ্ট অঞ্চলের স্থানীয় ব্যক্তি বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইতিহাস হল স্থানীয় ইতিহাস, যা আঞ্চলিক ও জাতীয় ইতিহাসের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ে সাহায্য করে এবং আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইতিহাস রচনার যোগসূত্র ও তথ্যসূত্রের যোগান দেয় । ইতিহাসের বৃহত্তর আলোচনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি উপেক্ষিত থেকে যায় আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে তার সার্বিক প্রকাশ ঘটে, যার ফলে সমগ্র ইতিহাস জনসমক্ষে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।

৩.২) ‘সরকারি নথিপত্র’ বলতে কী বোঝায় ?(Madhyamik 2019)

Ans. বিভিন্ন সরকারি আধিকারিক, পুলিশ, গোয়েন্দা ও সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সমকালীন বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ঘটনা সম্পর্কে যেসকল তথ্য লিখে গেছেন, তাই সরকারি নথিপত্রের বিবরণ নামে পরিচিত।

তৎকালীন সরকারি নথিপত্র হল—(১) পুলিশ বিভাগের রিপোর্ট ও জরুরি চিঠিপত্র, (২) গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট ও বিভিন্ন তথ্য এবং (৩) সরকারি আধিকারিকদের প্রতিবেদন ও চিঠিপত্র যা তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সার্বিক ইতিহাস তথ্যসূত্রের যোগান দেয় । স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের মহাফেজখানা সহ আদালতগুলিতে সংরক্ষিত রিপোর্ট এবং সরকারি আধিকারিকদের চিঠিপত্র যা থেকে ভারত-ইতিহাসের বহু তথ্য পাওয়া যায় ।

৩.৩) সংবাদপত্র এবং সাময়িক-পত্রের মধ্যে পার্থক্য কী ?(Madhyamik 2019)

Ans. ✦ রোজকার ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ প্রকাশিত হয়ে থাকে দৈনিক সংবাদপত্রে । সংবাদপত্র মূলত প্রতিবেদন মূলক, অন্যদিকে সাময়িকপত্র হল বিশ্লেষণধর্মী এবং এটি সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, এমন কি বার্ষিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়ে থাকে ।

✦ সংবাদপত্র সস্তা দামের কাগজে বাঁধাইহীন ভাবে প্রকাশিত হয় । অন্যদিকে সাময়িকপত্র তুলনামূলক দামি কাগজে বাঁধাই আকারে প্রকাশিত হয় ।

✦ দৈনিক সংবাদপত্রের একটি উদাহরণ হল ‘সংবাদ প্রভাকর’ । সাময়িকপত্রের উদাহরণ হল ‘বঙ্গদর্শন’ ও’ সোমপ্রকাশ’ ।

৩.৪) মধুসূদন গুপ্ত কে ছিলেন ?(Madhyamik 2019)

Ans. মধুসূদন গুপ্ত কলিকাতা মেডিকেল কলেজের একাধারে ছাত্র ও শিক্ষক ছিলেন । এখানে থাকাকালীন সমস্ত রকম সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি তিনি এখানে প্রথম বাঙালি ছাত্র হিসাবে ‘শব ব্যবচ্ছেদ’ করেন যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ । ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকে তিনি ডাক্তারী পাশ করেন । তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অনুবাদ গ্রন্থ হল বাংলায় ‘লন্ডন ফার্মাকোপিয়া’ এবং সংস্কৃতে হুপারের ‘Anatomist’s Vade Mecum’ ।

৩.৫) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থ হল কেন ?(Madhyamik 2019)

Ans. সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণগুলি হল— (ক) ব্রিটিশ সরকারের চরম দমন-পীড়ন নীতি, (খ) সাংগঠনিক দুর্বলতা, (গ) সমাজের বৃহত্তর অংশ তথা সাধারণ মানুষের বিদ্রোহে সামিল না হওয়া, (ঘ) পরবর্তীকালে সাম্প্রদায়িক চরিত্র এই বিদ্রোহকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে ।

৩.৬) নীল বিদ্রোহে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা কিরূপ ছিল ?(Madhyamik 2019)

Ans. খ্রিস্টান মিশনারিরা সর্বপ্রথম নীলকরদের কার্যকলাপের প্রকাশ্য সমালোচনা করে শিক্ষিত সমাজকে জাগরিত করেছিল । চার্চ মিশনারিদের মধ্যে থেকে জে. জে. লিংকে, ফ্রেডারিক সুর এবং বামওয়েচ নীলকরদের অত্যাচারের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছিলেন । আলেকজান্ডার ডাফ জেমস লং প্রমুখ মিশনারিদের সমর্থন করেছিলেন । সেই সময় রেভারেন্ড জেমস লং নিজ নামে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে ব্রিটিশ সরকারের কোপে পড়েন ।

৩.৭) জমিদারসভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো ।(Madhyamik 2019)

Ans. ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত জমিদারদের স্বার্থে সংরক্ষিত একটি আঞ্চলিক সংগঠন । ভারতসভা হল ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের রাজনৈতিক সংগঠন এবং এটি আঞ্চলিক চরিত্র থেকে সর্বভারতীয় চরিত্রলাভ করে ও কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন ।

৩.৮) উনিশ শতকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির কীরূপ ভূমিকা ছিল ?(Madhyamik 2019)

Ans. ওয়াশ চিত্ররীতিতে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতমাতা চিত্রটি আঁকেন, যার প্রথম নাম ছিল বঙ্গমাতা, পরে ভগিনী নিবেদিতা এর নামকরণ করেন ভারতমাতা । ভারতমাতা চিত্রের মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্রের বিমূর্ত জাতীয়তাবাদ মূর্ত হয়ে উঠেছিল । মাতৃমূর্তি বেদ, ধানের আঁটি, সাদা কাপড় এবং জপের মালা ধারণ করে আছেন যার অর্থ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, দীক্ষা, যা সন্তানের প্রতি মায়ের দান, যা দেশমাতার শৃঙ্খল মুক্তিতেই একমাত্র পাওয়া সম্ভব । এই চিত্রটি জাতীয়তাবোধের প্রসারে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল ।

৩.৯) চার্লস উইলকিনস কে ছিলেন ?(Madhyamik 2019)

Ans. বাংলা ছাপা হরফের যথার্থ পরিকল্পনা করেছিলেন চার্লস উইলকিন্স । তিনিই প্রথম ছেনিকাটা বাংলা হরফের নির্মাণ করেছিলেন বলে তাঁকে ‘বাংলার মুদ্রণ শিল্পের জনক’ বলা হয় । পরে হেস্টিংসের অনুরোধে হুগলির পঞ্চানন কর্মকারের সাহায্যে তিনি ছেনিকাটা হরফ নির্মাণ করেন ও সরকারি ছাপাখানার দায়িত্ব নেন । হ্যালহেডের বাংলা ব্যাকরণ তাঁর দ্বারাই ছাপা হয় এবং এজন্য তাঁকে ‘বাংলার গুটেনবার্গ’ বলা হয় ।

৩.১০) বাংলা লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী ?(Madhyamik 2019)

Ans. ‘লাইন অফ টাইপ’ থেকে লাইনোটাইপ কথাটি এসেছে, যেটি আদতে একটি কম্পোজিং মেশিন, যার সাহায্যে হাতের বদলে মেশিনে অত্যন্ত দ্রুত ও সুচারুরূপে চলমান ধাতব হরফ স্থাপন করা যেত । বাংলায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সুরেশচন্দ্র মজুমদার, রাজশেখর বসু প্রমুখের উদ্যোগে এই প্রযুক্তিতে সংবাদপত্র ছাপা শুরু হয় ।

৩.১১) কৃষক আন্দোলনের বাবা রামচন্দ্রের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?(Madhyamik 2019)

Ans. বাবা রামচন্দ্র যুক্তপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন । অহিংস অসহযোগ আন্দোলনকালে বেগারশ্রম, অতিরিক্ত কর, জমি বেদখল প্রভৃতির বিরুদ্ধে কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে তিনি খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করেন । কৃষকদের সংগঠিত করার জন্য তিনি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ‘অযোধ্যা কিষাণ সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন ।

৩.১২) মাদারি পাশি কে ছিলেন ?(Madhyamik 2019)

Ans. মাদারি পাশি অসহযোগ আন্দোলনকালে যুক্তপ্রদেশের বিশিষ্ট কৃষক নেতা ছিলেন । যুক্তপ্রদেশের হরদই, বারাবাকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলার কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে অতিরিক্ত কর আদায়ের ক্ষেত্রে অত্যাচার, বেগারশ্রম প্রভৃতির বিরুদ্ধে ‘একা’ বা ‘একতা’ আন্দোলন শুরু করেন । ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের মধ্যে সরকার চরম দমননীতি প্রয়োগ করে এই আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয় ।

৩.১৩) মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন ?(Madhyamik 2019)

Ans. ভারত ছাড়ো আন্দোলনকালে বাংলায় সতীশচন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে গঠিত তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অধীনে একটি নারী বাহিনী গঠিত হয় । এই নারীবাহিনীর অন্যতম সদস্যা ছিলেন ৭৩ বছরের বৃদ্ধা ‘গান্ধিবুড়ি’ মাতঙ্গিনী হাজরা । যার নেতৃত্বে তমলুক থানা ঘেরাও কর্মসূচি গৃহীত হয় এবং পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন । ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এই দুঃসাহসিক কাজের জন্য তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় ।

৩.১৪ ) দলিত কাদের বলা হয় ?(Madhyamik 2019)

Ans. ‘দলিত’ শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ দলন বা বলপূর্বক দমিয়ে রাখা । ব্রিটিশ শাসনে ভারতের নিপীড়িত, শোষিত, লাঞ্ছিত মানুষদের দলিত বলা হয় । গান্ধীজি এদেরকে ‘হরিজন’ বলতেন । সাধারণত মাহার, নাদার, চামার, নমশূদ্র, প্রমুখরা দলিত নামে পরিচিত ছিল । স্বাধীনতার পর এদেরকে তপশিলি জাতি ও উপজাতি হিসেবে ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে|

৩.১৫) দার কমিশন (১৯৪৮) কেন গঠিত হয়েছিল ?(Madhyamik 2019)

Ans. স্বাধীনতার পর ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের দাবি জোরালো হয়ে উঠলে এর যৌক্তিকতা বিচারের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার এস. কে. দার -এর নেতৃত্বে ‘ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠন করে, যা ‘দার কমিশন’ নামে পরিচিত । এই কমিশন তার রিপোর্টে ভাষা ভিত্তিক রাজ্য গঠনে তীব্র আপত্তি জানায়, কারণ তাঁরা মনে করতেন ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য গঠিত হলে দেশের জাতীয় ঐক্য ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে ।

৩.১৬) পত্তি শ্রীরামুলু কে ছিলেন ?(Madhyamik 2019)

Ans. পত্তি শ্রীরামালু ছিলেন জনপ্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামী তেলেগু নেতা । ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজ প্রদেশের তেলেগু ভাষাভাষী অঞ্চলকে পৃথক করে অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের দাবিতে দীর্ঘ ৫৮ দিন অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন । তাঁর মৃত্যুর পর সারা অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয় । এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতায় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে আপোস করে পৃথক ভাষাভিত্তিক অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য গঠিত হয় ।