বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ
ভূমিকা: বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুর ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায় বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ যে শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে তা সাধারণভাবে ‘মুন্ডা বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।
[i] বিদ্রোহের কারণ: মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল—
✬ জমিতে মুন্ডাদের চিরাচরিত যৌথ মালিকানা ব্যবস্থা (খুঁৎকাঠি প্রথা) বাতিল করা
মুন্ডাদের নিজস্ব আইন, শাসন ও বিচারব্যবস্থা বাতিল করা।
✬ মুন্ডাদের ওপর ভূমিরাজস্বের হার বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ধরনের নতুন কর আরোপ।
✬ মুন্ডা শ্রমিকদের বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা।
✬ মুন্ডাদের জমিজমা বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের দ্বারা দখল।
✬ মুন্ডাদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরণ প্রভৃতি।
[ii] ক্ষোভের সূত্রপাত: বিরসা এক নতুন ধর্ম প্রচার করে মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করেন | তিনি মুন্ডাদের খাজনা দিতে নিষেধ করেন
এবং বিদেশিদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়ে এক স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে তাঁকে দুই বছর (১৮৯৫-৯৬ খ্রি.) জেলে থাকতে হয়।
[iii] বিদ্রোহের প্রসার: বিরসা ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে একটি সেনাদল গঠন করে নতুন উদ্যমে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়েন | খুঁটি, রাঁচি, চক্রধরপুর, বুন্দু, তামার, তোরপা, কারা বাসিয়া প্রভৃতি স্থানে তাঁর গোপন ঘাঁটি গড়ে ওঠে। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। ইংরেজ কর্মচারী, পুলিশ, জমিদার, মহাজনদের পাশাপাশি থানা, গির্জা প্রভৃতির ওপরও আক্রমণ চলে।
[iv] বিদ্রোহের অবসান: প্রবল বিক্রমে লড়াই করেও বিদ্রোহী মুন্ডারা শেষপর্যন্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। বহু বিদ্রোহীর ফাঁসি বা কারাদণ্ড হয়। এভাবে বিদ্রোহ থেমে যায়। বিরসা মুন্ডা রাঁচি জেলে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
উপসংহার: মুন্ডা উপজাতিদের বিদ্রোহ ছিল এক অর্থে কৃষকবিদ্রোহ | দরিদ্র মুন্ডা কৃষকরাই ছিল এই বিদ্রোহের প্রধান
চালিকাশক্তি | নরহরি কবিরাজও মুন্ডা বিদ্রোহকে কৃষকবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন।