শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক

শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক আলোচনা করো | মাধ্যমিক ইতিহাস ( Class Ten History)

ভূমিকা :

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এরপর এদেশে শিক্ষাব্যবস্থার নীতি-নির্ধারণের বিষয়টি তাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

দ্বন্দ্বের সূত্রপাত:

ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতে জনশিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নিলে এদেশে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো উচিত সে প্রশ্নকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

রামমোহন রায়ের উদ্যোগ:

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সনদ আইনের (১৮১৩ খ্রি.) দ্বারা ভারতীয় জনশিক্ষার জন্য প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিলে রামমোহন রায় সরকারকে এক পত্রের দ্বারা (১৮২৩ খ্রি.) এই টাকা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা অর্থাৎ ইংরেজি ও আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ব্যয়ের অনুরোধ জানান।

প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব:

বেন্টিঙ্কের শাসনকালে (১৮২৮-৩৫খ্রি.) ভারতে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা উচিত—এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা কার্যত প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট এবং পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্ট নামে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এভাবে সরকারি শিক্ষানীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

প্রাচ্যবাদী:

প্রাচ্যবাদীরা ভারতে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। প্রাচ্যবাদের সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এইচ টি প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলসন প্রমুখ।


পাশ্চাত্যবাদী:

পাশ্চাত্যবাদীরা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা, অর্থাৎ ইংরেজি, আধুনিক বিজ্ঞান প্রভৃতি শিক্ষার প্রসারের দাবি জানান। পাশ্চাত্যবাদের সমর্থকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, সন্ডার্স, কলভিন প্রমুখ।

মেকলে মিনিট:

বেন্টিঙ্কের আমলে জনশিক্ষা কমিটি-র
সভাপতি মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে (২ ফেব্রুয়ারি) বড়োলাট লর্ড বেন্টিঙ্কের একটি প্রস্তাব (Minutes) দেন যা ‘মেকলের মিনিট’ নামে পরিচিত। অবশেষে পাশ্চাত্যবাদীরা জয়ী হন এবং সরকার ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের নীতি নেয়।

উপসংহার :


প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্বে শেষপর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীরা জয়ী হওয়ার ফলে ভারতে সরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের কোনো বাধা রইল না। এরপর একে একে বিভিন্ন পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে এদেশে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের পথ আরও সুগম হয়।