স্বাধীন ভারতে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ : মাধ্যমিক ইতিহাস

প্রশ্নঃ স্বাধীন ভারতে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল ?

উত্তর :

ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন :

ভূমিকা: মানুষের মুখের ভাষা মানবসংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। অথচ ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে রাজ্য পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে ভাষাগত বিষয়টিকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি।

[1] দাবি: স্বাধীন ভারতে অধিকাংশ দেশবাসীর দাবি ছিল ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন করতে হবে। এই প্রেক্ষিতে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গণপরিষদের উদ্যোগে গঠিত ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তার রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে গঠিত জে ভি পি কমিটি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে।

[2] আন্দোলনের তীব্রতা: কিছুদিনের মধ্যেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে পত্তি শ্রীরামুলু অনশনে প্রাণত্যাগ (১৯৫২ খ্রি.) করলে সেখানে চরম নৈরাজ্য শুরু হয়। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়ে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তেলুগু ভাষা-অঞ্চল নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিল ভাষা-অঞ্চল নিয়ে তামিলনাড়ু রাজ্য গঠন করে।


[3] রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন: এই পরিস্থিতিতে অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারণের নীতি উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’(১৯৫৩ খ্রি.) গঠন করে।

[4] রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস হয়। এর দ্বারা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ভারত সরকার ভাষার ভিত্তিতে ১৪টি রাজ্য ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করে। এভাবে ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

উপসংহার: স্বাধীনতা পরবর্তী রাজ্য পুনর্গঠনের নীতি নির্ধারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু প্রথমে ভাষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। কিন্তু কিছুকালের মধ্যেই প্রমাণ হয় যে, নেহরুর নীতি ভুল ছিল। পরে মূলত ভাষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যগুলি পুনর্গঠিত হয়।