গ্যাসের আচরণ
Q. গ্যাসের চাপ কাকে বলে?
Ans= আবদ্ধ পাত্রে থাকা গ্যাসীয় পদার্থ পাত্রের দেওয়ালে একক ক্ষেত্রফলের ওপর লম্বভাবে যে বল প্রয়ােগ করে তাকে গ্যাসের চাপ বলে।
গ্যাসের চাপ = দেয়ালে লম্বভাবে প্রযুক্ত বল / দেয়ালের ক্ষেত্রফল
Q. কোন যন্ত্রের সাহায্যে কোনাে পাত্রে আবদ্ধ বায়ুর বা গ্যাসের চাপ মাপা হয়?
Ans=> ম্যানােমিটার যন্ত্রের সাহায্যে কোনাে পাত্রে আবদ্ধ বায়ুর বা গ্যাসের চাপ মাপা হয়। এর অপর নাম চাপ-গেজ।
📝বল, ক্ষেত্রফল ওচাপের C.G.S ও SIএকক উল্লেখ করাে।
⏩বল :ডাইন (dyne) ও নিউটন (N)
ক্ষেত্রফল: বর্গ সেমিঃ ও বর্গমিটার
চাপ:ডাইন/বর্গসেমি ও নিউটন /বর্গমিটার
অথবা পাস্কাল।
চাপের আন্তর্জাতিক বা SI একক হল প্যাস্কাল (Pa)।
প্যাস্কাল : এক নিউটন বল প্রতি এক বর্গমিটার ক্ষেত্রের উপর প্রযুক্ত হলে যে পরিমাণ চাপের সৃষ্টি হয় তাকে এক পাস্কাল বলে।
এক প্যাস্কাল = 1 নিউটন / বর্গ মিটার (1N/m2)।
প্রমাণ বা স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় চাপকাকে বলে? এর মান নির্ণয় করাে।
Ans= প্রমাণ বা স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় চাপ : 0°C উষ্ণতায় সমুদ্র সমতলে 76 সেমি উচ্চতা বিশিষ্ট পারদস্তম্ভের চাপকে প্রমাণ বা স্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় বা 1 অ্যাটমস্ফিয়ার (1 atm) চাপ বলে।
1atm=1.013 ✖ 105 N/m²
গ্যাসের আয়তন বলতে কী বােঝায়? এর একক লেখো।
গ্যাসের নির্দিষ্ট কোনাে আকার বা আয়তন নেই। নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস যে কোনাে করাে পাত্রেই রাখা হােক না কেন পাত্রের সমগ্র আয়তন জুড়ে থাকে। তাই গ্যাসের আয়তন বলতে যে পাত্রে গ্যাসটি আবদ্ধ আছে তার আয়তনকে বােঝায়।
আয়তনের আন্তর্জাতিক বা SI একক হল ঘনমিটার (m) ও C.G.S একক হল ঘনসেমি (cm)
📝বয়েলের সূত্রটি বিবৃত করাে। বয়েলের সূত্রটির গাণিতিক রূপটি দাও এবং ব্যাখ্যা করাে।
বয়েল সূত্র : স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনাে গ্যাসের আয়তন গ্যাসটির চাপের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়।
বয়েল সূত্রের গাণিতিক রুপ :
ধরি , একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় একটি নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন ও চাপ যথাক্রমে v ও P।
বয়েল সূত্রানুযায়ী , V∝ 1/P [ গ্যাসের ভর ও উষ্ণতা স্থির ।
বা V = K.1/P বা PV = K [K = ধুবক ] : এটাই বয়েল সূত্রের গাণিতিক রূপ
ধরি , একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় একটি নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন ও চাপ যথাক্রমে V1 ও P1 এখন উষ্ণতা স্থির
রেখে চাপ P2 করায় ধরি আয়তন V2 হয় , তবে বয়েল সূত্রানুসারে প্রাথমিক অবস্থায় P1V1 = K এবং অন্তিম
অবস্থায় P2V2 = K [K = ধুবক ], সুতরাং P1V1 = P2V2
📝স্থির উষ্ণতায় একটি নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের ক্ষেত্রে P বনাম V এবং PV বনাম P লেখচিত্র অঙ্কন করো।
P বনাম V লেখচিত্র : PV = K [K= ধ্রুবক ] সমীকরণটি সম-পরাবৃত্তাকার রেখাচিত্র নির্দেশ করে।
PV বনাম P লেখচিত্র : বয়েল সূত্রানুসারে PV = K( ধ্রুবক ) যখন গ্যাসের উষ্ণতা ও ভর স্থির।
PV কে কোটি এবং P কে ভুজ ধরে লেখচিত্র অঙ্কন করলে P অক্ষের সমান্তরাল সরলরেখা পাওয়া যাবে ।
জলাশয়ের তলদেশ থেকে বায়ু বুদবুদ এর মতাে ওপরে ওঠার সময় এর আয়তন ক্রমশ বাড়তে থাকে কেন?
বায়ু বুদবুদের ওপর মােট চাপ, বায়ুমন্ডলের চাপ ও জলের চাপের যােগফলের সমান। বুদবুদ যত
ওপরে ওঠে তত জলের চাপ কমতে থাকে। ফলে মােট চাপ কমতে থাকে। বায়ু বুদবুদে বায়ুর পরিমাণ (ভর) ও
উষ্ণতা অপরিবর্তিত আছে , তাই বয়েল সূত্রানুযায়ী বুদবুদের আয়তন চাপের ব্যাস্তানুপাতিক। যেহেতু বুদবুদের ওপর মােট চাপ কমতে থাকে তাই এর আয়তন ক্রমশ বাড়তে থাকে।
বেলুনে ফু দিলে বেলুেনের আয়তন বাড়ে এবং চাপও বাড়ে। এখানে বয়েলের সূত্র লঙঘিত হচ্ছে কী?
Ans=> একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বেলুনে ফু দিলে বেলুনটির আয়তন বাড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে বেলুনের ভিতরের বাতাসের চাপও বাড়ে। যখন বেলুনে ফু দেওয়া হয় তখন বেলুনে অতিরিক্ত বায়ু প্রবেশ করে, ফলে বেলুনের ভিতরের বায়ুর ভর বেড়ে যায় , তাই আয়তন ও চাপ দুই-ই বেড়ে যায়।
কিন্তু স্থির উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের ক্ষেত্রেই বয়েলের সূত্রটি প্রযােজ্য। তাই এক্ষেত্রে বয়েলের সূত্র প্রযােজ্য নয়।
বায়ুপূর্ণ একটি বেলুনকে চাঁদে নিয়ে গেলে বেলুনটির কী অবস্থা হবে?
Ans=> চাঁদে বায়ু না থাকায় বায়ুর চাপ প্রায় শূন্য হয়ে যায়। ফলে বেলুনের ভিতরের বায়ুচাপ বাইরের বায়ুচাপ অপেক্ষা অনেক বেশি হবে। চাপ সমান করার উদ্দেশ্যে বেলুনটি খুব বেশি প্রসারিত হতে চাইবে। তাই বেলুনটি
আয়তনে বাড়তে বাড়তে একসময় ফেটে যাবে।
📝চার্লসের সূত্রটি বিবৃত করাে এবং ব্যাখ্যা করাে।
Ans=> চার্লস সূত্র : স্থির উষ্ণতার প্রতি 1°C উষ্ণতার বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য নির্দিষ্ট ভরের কোনাে গ্যাসের আয়তন , উক্ত গ্যাসের 0°C উষ্ণতায় যে আয়তন হয় , তার 1/273 অংশ যথাক্রমে বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় ।
বয়েল ও চার্লস এর সূত্র বিবৃত করার সময় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের কথা উল্লেখ করা হয় কেন?
Ans=> গ্যাসের আয়তন ও চাপ গ্যাসের ভরের ওপর নির্ভর করে। গ্যাসের ভরের পরিবর্তন করলে গ্যাসের আয়তন এবং চাপের পরিবর্তন হয়।এজন্য বয়েল ও চার্লসের সূত্রে নির্দিষ্ট ভরের উল্লেখ থাকে।
📝পরম শূন্য উষ্ণতা কাকে বলে?
As=> পরম শূন্য উষ্ণত: যে উষ্ণতার (-273°C) যে কোনাে গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়ে যায় , সেই উষ্ণতাকে পরম শূন্য উষ্ণতা বলে।
📝উষ্ণতার পরম বা কেলভিন স্কেল বলতে কী বােঝায়?
Ans=> উষ্ণতার পরম স্কেল : পরমশূন্য উষ্ণতা অর্থাৎ -273°C কে শূন্য ধরে তাপমাত্রার প্রতি ডিগ্রিকে এক ডিগ্রি সেন্টিগেডের সমান করে উষ্ণতা পরিমাপের যে স্কেল তৈরি করা হয়েছে তাকে উষ্ণতার পরম স্কেল বা কেলভিন স্কেল বলে।
📝পরম উষ্ণতা কাকে বলে? পরমশূন্য উষ্ণতায় কোনাে গ্যাসের আয়তন কী হবে?
Ans=> পরম উষ্ণতা : পরম স্কেল অনুযায়ী উষ্ণতার মানকে পরম উষ্ণতা বলে ।
পরম শূন্য উষ্ণতায় কোনাে গ্যাসের আয়তন শূন্য হবে।
পরমশূন্য উষ্ণতায় কোনাে গ্যাসের আয়তন বাস্তবে কি শুন্য হয়ে যায়? ব্যাখ্যা করাে।
Ans=> -273°C উষ্ণতায় পৌচ্ছাবার আগেই সব গ্যাস তরলে পরিনত হয়ে যায়। তাই ওই উষ্ণতায় কোনাে গ্যাসের আয়তন বাস্তবে শূন্য হয় না।
পরমশূন্য উষ্ণতাকে পরম বলা হয় কেন?
Ans=> মহাবিশ্বে -273°C এর চেয়ে কম উষ্ণতা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই এই উষ্ণতাকে পরম উষ্ণতা বলে।
কোন উষ্ণতায় গ্যাসের অণুগুলির বেগশূন্য হয়?মহাবিশ্বে এই উষ্ণতা পাওয়া সম্ভব কী?
Ans=> পরম উষ্ণতায় (-273°C) গ্যাসের অণুগুলির বেগ শূন্য হয়। মহাবিশ্বে ওই উষ্ণতা পাওয়া সম্ভব নয়।
কোনাে গ্যাসেরআয়তন বলার সময় ওই গ্যাসের চাপ ও উষ্ণতা উল্লেখ করার প্রয়ােজন হয় কেন?
As=> নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন ওই গ্যাসের চাপ ও উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে। উষ্ণতা স্থির রেখে চাপের পরিবর্তন করলে গ্যাসের আয়তনের পরিবর্তন ঘটে। চাপ বাড়ালে আয়তন কমে , আবার চাপ কমালে আয়তন বাড়ে। আবার চাপ স্থির রেখে উষ্ণতা পরিবর্তন করলেও গ্যাসের আয়তনের পরিবর্তন হয়।উষ্ণতা বাড়ালে আয়তন বাড়ে এবং উষ্ণতা কমালে আয়তন কমে। এই কারণে কোনাে গ্যাসের আয়তন বলার সময় ওই গ্যাসের চাপ ও উষ্ণতা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে
উষ্ণতার পরম স্কেল অনুযায়ী চার্লসের সূত্রটি লেখাে।
Ars=> স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনাে গ্যাসের আয়তন তার পরম উষ্ণতার সমানুপাতিক হয়।
অর্থাৎ V ∝ T যখন চাপ P ধ্রুবক।
📝গ্যাসের অণুর গতিশীলতার সপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
Ans:গ্যাসের ব্যাপন : ঘরের মধ্যে কোনাে স্থানে অ্যামােনিয়া বা ক্লোরিন গ্যাস রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরের সর্বত্র অ্যামােনিয়ার তীব্র ঝাঝালাে গন্ধ বা ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ পাওয়া যায়। অ্যামােনিয়া বা ক্লোরিন গ্যাসের অণুগুলি গতিশীল বলেই ঘরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
• গ্যাসের চাপ : বদ্ধপাত্রে রাখা গ্যাসের অণুগুলি অনবরত পাত্রের দেওয়ালে ধাক্কা মারে, ফলে পাত্রের দেওয়ালে চাপের সৃষ্টি হয়। গ্যাসের অণুগুলি গতিশীল বলেই চাপের সৃষ্টি হয়।
📝গ্যাসের আদর্শআচরণ থেকে বিচ্যুতির দুটি প্রধান কারণ উল্লেখ করাে।
Ans=> গ্যাসেরআদর্শআচরণ থেকে বিচ্যুতির কারণ :
1. গ্যাস অণুগুলিকে বিন্দুরূপে কল্পনা করা হয়, তাই আদর্শ গ্যাসের অণুগুলির আয়তনকে নগন্য ধরা হয়।কিন্তু বাস্তব গ্যাসগুলির অণুগুলি ক্ষুদ্র হলেও তাদের একটি নির্দিষ্ট আয়তন আছে। বাস্তব গ্যাসের অণুগুলির অবাধ বিচরণের জন্য কার্যকরী আয়তন পাত্রের আয়তনের তুলনায় কিছু কম হয়।
2. গ্যাসের গতীয় তত্ত্বানুসারে আদর্শ গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে কোনাে আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে না। কিন্তু বাস্তব গ্যাসগুলির মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল ক্রিয়া করে । তাই আদর্শ গ্যাসের অণুগুলি পাত্রের দেয়ালে যে পরিমাণ ধাক্কা দিতে পারে বাস্তব গ্যাসের অণুগুলি তা পারে না।
📝একটি বাস্তব গ্যাস কখন আদর্শ গ্যাসের ন্যায় আচরণ করবে?
Ans=অতি নিম্ন চাপ এবং অতি উচ্চ উষ্ণতায় একটি বাস্তব গ্যাস আদর্শ গ্যাসের ন্যায় আচরণ করবে।
Nice post