অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা “ভারতমাতা” চিত্রটির অবদান

প্রশ্ন : ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা “ভারতমাতা” চিত্রটির অবদান কি ছিল ?
অথবা
টীকা লেখ : ভারতমাতা চিত্র
অথবা : “ভারতমাতা” চিত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন।

উত্তর :
সূচনা : ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে উনিশ শতকে একটি বিশেষ অবদান নিয়েছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা “ভারতমাতা” চিত্রটি। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে আঁকা এই চিত্রটি শিক্ষিত ও প্রগতিশীল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তা বোধের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।

প্রেক্ষাপট : অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের সমান্তরাল এক সংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এবং এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশী আন্দোলনের সময় ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর অনুকরণে একটি চিত্র অঙ্কন করেন যার ভারতমাতা নামকরণ করেন।

স্বদেশী মনোভাব জাগরণ: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্ভূজা ভারতমাতার হাতে রয়েছে বেদ, ধানের শীষ, জপের মালা ও শ্বেত বস্ত্র । এগুলো মূলত ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। এগুলি দ্বারা তিনি স্বদেশী আন্দোলনের যুগে দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশী মনোভাব ও জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন।

শান্তির প্রতীক : সশস্ত্র আন্দোলন সুস্থ জাতীয়তাবাদের বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে এমনটা অবনীন্দ্রনাথ মনে করতেন। তাই তার আঁকা ভারতমাতা হস্তে কোনো অস্ত্র নেই। এর দ্বারা অবনীন্দ্রনাথ তার স্বদেশী ভাবনা সশস্ত্র আন্দোলনকে দূরে রেখেছেন।

জাতীয়তাবাদের চেতনা : বিশ শতকের ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে মিছিলের সামনে এই ভারতমাতা চিত্র টি রাখা হতো। নবজাগ্রত ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনে ছিল ভারতমাতা অঙ্কনের অনুপ্রেরণা।

মূল্যায়ন : ভারতমাতা চিত্রটির মধ্যে কেউ কেউ হিন্দু স্বাদেশিকতার প্রভাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু স্বাদেশিকতার উগ্র সমর্থক ছিলেন না তার প্রমাণ পাওয়া যায় ভারতমাতা চিত্রটির নিরস্ত্র ভাবনা থেকে । বাস্তবিক অর্থে এই চিত্রটি ভারতের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব প্রদান করেছিল।

Rlearn Education