বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (waste management)

CHECK POINT:

1. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি

2. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা

3. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা

4. E- waste বা ইলেকট্রনিক বর্জ্য

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : মাধ্যমিক ভূগোল

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি ( Method of waste management) :
কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বর্জ্যকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা করা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই পদ্ধতিগুলি হল—

বর্জ্য পৃথককরণ: কঠিন বর্জ্যগুলিকে এই পদ্ধতিতে প্রথমেই জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর—এই দুই প্রকৃতি অনুসারে পৃথক করে ফেলা হয় | এরপর জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে জৈব সার, শক্তি প্রভৃতি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় এবং জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যগুলিকে শোধন করে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়।

ভরাটকরণ বা ল্যান্ডফিল: এই পদ্ধতিতে কোনো নীচু জায়গা বা মাটি খুঁড়ে তৈরি গর্তকে ক্রমান্বয়ে বর্জ্য ও মাটির স্তর দ্বারা ভরাট করা হয় | সবচেয়ে উপরে থাকে 1-1.4 মিটার পুরু মাটির স্তর। এত পরিবেশদূষণের সম্ভাবনা কমে যায় |

কম্পোস্টিং: এই পদ্ধতিতে জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যগুলিকে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পচিত বিশ্লিষ্ট করা হয়| এই পদ্ধতিতে জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য সহজেই উর্বর জৈব সারে পরিণত হয়।

বর্জ্য কম্পোস্টিং পদ্ধতির সুবিধা: জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্যগুলিকে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা হিউমাস তৈরি করার পদ্ধতিকে বলে বর্জ্য কম্পোস্টিং |
বর্জ্য কম্পোস্টিং পদ্ধতির সুবিধাগুলি হল—
(a) এই পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্যকে অত্যন্ত উন্নতমানের জৈব সারে পরিণত করা যায় ।
(b) এই পদ্ধতি জৈব পদার্থ এবং উদ্ভিদের পুষ্টিমৌলকে পুনরায় মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়া যায় |
(c) মাটিতে জৈব পদার্থ সংযোজিত হওয়ায় মাটির জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় |
(d) এই পদ্ধতিজাত কম্পোস্ট সার উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক হয়।

তাপীয় শোধন: এই পদ্ধতিতে দুইভাবে কঠিন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হয়। যেমন- [i] চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যকে নিয়ন্ত্রিত দহন বা ইনসিনারেশন পদ্ধতির মাধ্যমে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হয়।
[ii] প্রায় 430°C উম্নতায় অক্সিজেনের অনুপস্থিতে পাইরোলিসিস পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্যের তাপ- রাসায়নিক দহন করা হয়।

নিষ্কাশন: তরল বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতি হল নিষ্কাষণ বা নিকাশি ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে রান্নাঘর, শৌচাগার, স্নানঘর, শিল্প-কারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রভৃতি থেকে নির্গত তরল বর্জ্য পদার্থকে ভৌত-রাসায়নিক ও জৈবিক পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয় এবং পরিবেশে ছাড়া হয়।

গ্যাসীয় বর্জ্য কণার অপসারণ: মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে (শিল্প কারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যানবাহন প্রভৃতি) বিভিন্ন উৎস থেকে নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্য থেকে দূষণ সৃষ্টিকারী কণাগুলিকে স্ক্রাবার (শিল্প কারখানার ধোঁয়া), ক্যাটালিটিক কনর্ভাটার (মোটরগাড়ির ধোঁয়া), ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর প্রভৃতি আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে পৃথক করা যায়।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা:
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন—
পরিবেশের সুরক্ষা : বর্জ্য পদার্থ প্রতিনিয়ত বায়ু, জল ও মৃত্তিকাকে দূষিত করে পরিবেশকে বিষময় করে তুলেছে। তাই এই সুন্দর পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের কাছে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।

মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা: বর্জ্য পদার্থ রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু বা প্যাথোজেন সৃষ্টি করে, যার প্রভাবে মানুষ বিভিন্ন মারণব্যাধির শিকার হয়। তাই মানুষের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ : স্থলভাগ ও জলভাগের যত্রতত্র স্তূপাকারে বর্জ্য পদার্থ সঞ্চিত হওয়ার কারণে স্থলজ ও জলজ বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। এগুলি সংরক্ষণের জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত প্রয়োজন।

এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা হল—
✧ সম্পদের পুনরুদ্ধার ও পুনর্ব্যবহার,
✧ সম্পদ সংরক্ষণ,
✧ মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি,
✧পরিবেশের সৌন্দর্যায়ন প্রভৃতি।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা:
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর প্রধান তিনটি ভূমিকা হল—
(a) প্লাস্টিক বা পলিথিন জাতীয় ব্যাগের পরিবর্তে কাপড় বা চটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।
(b) বিদ্যালয়, রাস্তাঘাট বা গৃহের চারপাশে ব্যবহার্য দ্রব্য না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে অর্থাৎ ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
(c) একবার মাত্র ব্যবহার্য পেনের পরিবর্তে কালিপেন শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা উচিত। এতে বর্জ্যের পরিমাণও কমে এবং খরচও হ্রাস পায় |

ই-বর্জ্য (Electronic Waste) :
সংজ্ঞা : বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সামগ্রী থেকে যেসব বর্জ্য পরিবেশে বাতিল বলে চিহ্নিত হয়, তাকে বৈদ্যুতিন বর্জ্য বা ই-বর্জ্য বলে।

প্রভাব: এই সকল বর্জ্য থেকে উৎপন্ন সিসা, পারদ, নিকেল, আর্সেনিক প্রভৃতি মানব ও জীব শরীরে মিনামাটা, ব্ল্যাকফুট,
ইটাই-ইটাই নানা রোগের সংক্রমন ঘটায়।

উদাহরণ: কম্পিউটার, টিভি, সেলফোন, রেডিয়ো, টেপ রেকর্ডার প্রভৃতি থেকে বৈদ্যুতিন বর্জ্য পরিবেশে নিঃসৃত হয়।

Rlearn Education