প্রশ্ন:- টীকা লেখ: কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল।অথবা, কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্ভব কীভাবে হয় ?
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল :
ভূমিকা:- বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার ব্যাপক প্রসার ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল। ইতিহাসের একসন্ধিক্ষণে আবির্ভূত হয় কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল।
প্রতিষ্ঠা : ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর বোম্বাইয়ে কংগ্রেস স্যোশালিস্ট পার্টি বা কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়।
সদস্যবৃন্দ : কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের সদস্যদের মধ্যে রাম মনােহর লােহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধন, মিনু মাসানি , আশোক মেহেতা প্রমুখ ছিলেন বিশেষ উল্লেখযােগ্য। আচার্য নরেন্দ্র দেব ছিলেন দলের সভাপতি এবং জয়প্রকাশ নারায়ন ছিলেন দলের সম্পাদক |
প্রতিষ্ঠার কারণ :
এই দল প্রতিষ্ঠার পিছনে কতকগুলি কারণ ছিল।যেমন –
(১) আইন অমান্য আন্দোলনের ব্যর্থতা,
(২) শ্রমিক- কৃষকদের দুর্দশায় কংগেসের উদাসীনতা,
(৩) কংগ্রেসের দুই তরুণ নেতা জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্রের প্রভাব,
(৪) রুশ বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রভাব,
(৫) কমিউনিস্টদের কার্যকলাপের প্রভাব,
(৬) সমাজতন্ত্র সম্বন্ধে গান্ধিজি ও তার অনুগামীদের বিরূপ মন্তব্য,
(৭) গান্ধিজির আন্দোলন পদ্ধতি বিষয়ে বামপন্থীদের বিরূপ মনোভাব,
(৮) সর্বোপরি ব্রিটিশ সরকারের চরম দমনপীড়ন নীতি প্রভৃতি।
দলের নেতৃবৃন্দ : আচার্য নরেন্দ্র দেব, জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধন, ইউসুফ মেহরআলি, অরুনা আসফ আলি, মিনু মাসিনি প্রমুখ ছিলেন এই দলের প্রধান নেতা।
প্রধান কর্মসূচি : এই দলের প্রধান কর্মসূচি গুলি হল –
(১) কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী শক্তিকে সুসংহত করা,
(২) ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ঐতিহ্যকে সামনে রেখে স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনা করা,
(৩) জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী ও শ্রমিক বিরোধী আইন বাতিল করা,
(৪) দেশের সকল উপনিবেশ বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা,
(৫) শিক্ষার বিস্তার ও বেকারত্ব দূর করা,
(৬) দেশিয় রাজতন্ত্র, জমিদারি ও তালুকদারী প্রথার অবসান ঘটানো,
(৭) কৃষকদের মধ্যে জমি বণ্টন, কৃষি ঋণ মকুব, ন্যায্য মজুরি, শিল্প- বাণিজ্যের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
গুরুত্ব : কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। যেমন –
(১) এই দলের প্রভাবে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে কংগ্রেস সাফল্য লাভ করে,
(২) এই দলের চাপে কংগ্রেস কৃষি ও ভূমি সংস্কারে যত্নবান হয়,
(৩) ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হলে গোপনে সমাজতন্ত্রীরাই আন্দোলন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
উপসংহার :- সমাজতন্ত্রীদের আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই গান্ধিজির প্রবল আপত্তি অগ্রাহ্য করে সুভাষচন্দ্র ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরি অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই দলের প্রচেষ্টাতেই পরবর্তীকালে ভারতভূমিতে গড়ে ওঠে সক্রিয় বামপন্থী আন্দোলন।