মাধ্যমিক ভূগোল সাজেশান
পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ:
ভারতের অধিকাংশ লৌহ ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র পূর্ব ও মধ্য ভারতে গড়ে উঠেছে। পূর্ব ও মধ্য ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে 6 টি বৃহত্তম লৌহ ইস্পাত কারখানা একটি সংকর ইস্পাত কারখানা এবং অসংখ্য ছোট, মাঝারি কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রধান কারখানা গুলি হল –
A. পশ্চিমবঙ্গ: দুর্গাপুর ও কুলটি বার্নপুর।
B. ঝাড়খন্ড: বোকারো ও জামশেদপুর।
C. ওড়িশা: রাউরকেল্লা।
D. ছত্রিশগড়: ভিলাই।
ভারতের এই অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি হল –
1. কাঁচামালের প্রাচুর্য: লৌহ ইস্পাত শিল্প একটি অবিশুদ্ধ কাঁচামাল ভিত্তিক শিল্প। ফলে কাঁচামাল উৎস কেন্দ্রে কারখানা গড়ে তোলা সবচেয়ে লাভজনক। ভারতের খনিজ ভান্ডার ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রাচুর্য এই অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের প্রধান কারণ।
A. আকরিক লোহা: লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল আকরিক লোহা। আকরিক লোহা প্রাপ্তি জায়গা গুলি হল –
I. ঝাড়খন্ড: সিংভূম, নোয়ামুন্ডি ও গুয়া।
II. ওড়িশা: গোরুমহিষানি, কেওনঝড় ময়ূরভঞ্জ, বাদাম পাহাড় ও বোনাই।
III. ছত্রিশগড়: দাল্লিরাজহারা ও বাইলাডিলা।
B. কয়লা: আকরিক লোহা গলানোর জন্য প্রচুর তাপশক্তির প্রয়োজন ও এই তাপশক্তির উৎস হল কয়লা। কয়লার প্রাপ্তির প্রধান কেন্দ্র গুলি হল —
I. ঝাড়খন্ড: ঝরিয়া, বোকারো ও গিরিডি।
II. ওড়িশা: তালচের ও রামপুর।
III. পশ্চিমবঙ্গ: রানীগঞ্জ, মেজিয়া, জামুরিয়া ও অন্ডাল।
IV. ছত্রিশগড়: করবা, রায়গর ও তাতাপানি।
C. ম্যাঙ্গানিজ: ওড়িশার কেওনঝড়, গাংপুর, বোনাই এবং ছত্রিশগড়ের বালাঘাট ও ভান্ডারাতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়।
D. চুনাপাথর ও ডলোমাইট: ওড়িশার বীরমিত্রপুর ও ভবনাথপুর এবং ছত্রিশগড়ের বিলাসপুর, রায়গর ও বাস্তার প্রভৃতি জায়গায় প্রয়োজনীয় চুনাপাথর ও ডলোমাইট পাওয়া যায়।
2. সুলভ্য জল: লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রচুর জল এর প্রয়োজন হয়, এই জলের যোগান পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের দামোদর নদ, ঝাড়খণ্ডের সুবর্ণরেখা, বরাকর, খরকাই নদী এবং তেনুঘট বাঁধ, ওড়িশার ব্রাহ্মণী নদী ও মন্দিরা জলাধার থেকে।
3. পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ শক্তি: বোকারো, দুর্গাপুর, তালচের, চন্দ্রপুরা প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মাইথন, পাঞ্চেত, তিলাইয়া ও হিরাকুঁদ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ শক্তির জোগান পাওয়া যায়
4. শ্রমিকের প্রাচুর্য: এই অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় শ্রমিকের অভাব হয় না। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পকেন্দ্র, ফলে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত প্রয়োজনীয় শ্রমিক সহজে পাওয়া যায়।
5. উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা: পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ এবং 2, 5, 6, 23, 32, 32 প্রভৃতি জাতীয় সড়ক পথের মাধ্যমে কাঁচামাল শিল্প কেন্দ্রে আনা এবং বিক্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর সুবিধা আছে।
6. বন্দরের সান্নিধ্য: নিকটবর্তী কলকাতা, হলদিয়া, পারদ্বীপ ও বিশাখাপত্তনাম বন্দরের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি আমদানি ও ইস্পাত রপ্তানির সুবিধা রয়েছে।
7. প্রয়োজনীয় মূলধন: পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের পিছনে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের জোগান।
8. চাহিদা ও বাজার: কলকাতা শিল্পাঞ্চল, দুর্গাপুর ও আসানসোল শিল্পাঞ্চল এবং রাচি ও হাতিয়া শিল্পাঞ্চলে নানান ধাতব শিল্প ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ ঘটায় ইস্পাতের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উপরিউক্ত কাঁচামাল প্রাপ্তি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পূর্ব-মধ্য ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের বিকাশে সহায়তা করেছে।
[…] পূর্ব ও মধ্যভারতে লৌহ- ইস্পাত শিল্পের … | […]
[…] – এখানে ক্লিক করে দেখে নাও […]