Somudro Sroter Probhab
সমুদ্রস্রোতের প্রভাব :
[1] মগ্নচড়া সৃষ্টি: শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, বালি প্রভৃতি সমুদ্রবক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জমতে জমতে উঁচু হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে।
উদাহরণ : নিউফাউন্ডল্যান্ডের অদূরে গ্রান্ড ব্যাংক, জর্জেস ব্যাংক প্রভৃতি এবং ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের কাছে ডগার্স ব্যাংক, রকফল ব্যাংক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য মগ্নচড়া।
[2] উষ্ণতার ওপর প্রভাব: সমুদ্রস্রোত যে উপকূলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেখানকার উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
উদাহরণ : শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে বায়ুর উষ্ণতা কমে এবং উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে
জাপানের পশ্চিম উপকূলে বায়ুর উষ্ণতা বাড়ে।
[3] বৃষ্টিপাতের ওপর প্রভাব: উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে বলে ওই বায়ুর মাধ্যমে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়| কিন্তু শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক বলে বৃষ্টিপাত ঘটায় না|
উদাহরণ: আফ্রিকার দক্ষিণ- পশ্চিমে নামিবিয়া উপকূলে এই কারণে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
[4] কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝার ওপর প্রভাব: যেসব অঞ্চলে উম্ন ও শীতল স্রোতের মিলন ঘটে সেখানে উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় এবং প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা হয়। ফলে সেখানে জাহাজ বা বিমান চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়|
উদাহরণ: নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল।
[5] জলবায়ুর পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর সমুদ্রস্রোতের সর্বাধিক প্রভাব লক্ষ করা যায়। ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। এল নিনো আবির্ভূত হলে দক্ষিণ আমেরিকার পেরু-চিলি-ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরমুখী শীতল হামবোল্ড স্রোতের পরিবর্তে উত্তর দিক থেকে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয়। এর ফলে যেমন পেরু- ইকুয়েডরে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হয়, তেমন ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমপ্রান্তে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয়। ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতেও তখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়।
আবার, এল নিনো অন্তর্হিত হলে যখন লা নিনার আবির্ভাব ঘটে তখন ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমের দেশগুলিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হলেও পূর্বের দেশগুলিতে অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনার আবির্ভাব ঘটলে সারা পৃথিবীর জলবায়ুতেই নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে।