কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্রের অবদান | মাধ্যমিক ইতিহাস
ভূমিকা : ১৯২০ র দশকে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ-খিলাফত আন্দোলন শুরু হলে যুক্তপ্রদেশে কৃষক আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করেছিলেন বাবা রামচন্দ্র ।
বাবা রামচন্দ্রের পূর্বপরিচয় : মহারাষ্ট্র নিবাসী বাবা রামচন্দ্র মাত্র ১৩ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করে ফিজি দ্বীপে শ্রমিকের জীবনযাপন করার পর ১৯০৯ খ্রি: ফৈজাবাদে ফিরে আসেন ।তিনি মূলত গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে রামায়ণ গান পরিবেশন করতেন ।১৯২০ খ্রি: তিনি জৌনপুর ও প্রতাপগড় থেকে কয়েকজন কৃষককে সঙ্গে নিয়ে এলাহাবাদে গৌরীশঙ্কর মিশ্র ও জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ।
কুর্মী ক্ষত্রিয় সভা গঠন : ধর্মীয় আবেদনের সঙ্গে বাবা রামচন্দ্র জাতপাতের জিগির তোলেন ।এই উদ্দেশ্যে তিনি কুর্মী ক্ষত্রিয় সভা গঠন করেন ।
আন্দোলনের লক্ষ্য : বাবা রামচন্দ্রের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল
(ক) জোরজবরদস্তিমূলক কর আদায় বন্ধ করা বা করে পরিমান হ্রাস
(খ) বেগার প্রথার অবসান
(গ) বেদখলী জমি চাষ করতে অস্বীকার
(ঘ) অত্যাচারী ভূস্বামীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা ইত্যাদি ।
আন্দোলনকারীদের ক্রিয়াকলাপ :
১৯২১ খ্রি: বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে এবং হিংসাত্মক হয়ে ওঠে । বিদ্রোহী কৃষকরা তালুকদারদের বাড়ি , ফসলের গোলা , হাটবাজার লুঠ করতে থাকে ।
কংগ্রেসের ভূমিকা : গান্ধীজি যুক্তপ্রদেশের বিদ্রোহী কৃষকদের সমর্থন করেননি । সরকার বাবা রামচন্দ্রকে গ্রেফতার করলে কংগ্রেসি নেতারা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলেন ।
চুরির দায়ে বাবা রামচন্দ্র গ্রেপ্তার : বাবা রামচন্দ্রকে চুরির দায়ে গ্রেফতার করা হলে প্রতাপগড় জেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্যে চার পাঁচ হাজার কৃষক জমায়েত হন ।অনেক বুঝিয়ে তাঁদেরকে ফেরত পাঠানো হয় ।
বাবা রামচন্দ্রের মুক্তি : কৃষকরা বাবা রামচন্দ্রের সঙ্গে জেলে দেখা করতে আসলে গুজব রটে যায় যে বাবা রামচন্দ্রের মুক্তির আবেদন করতে গান্ধীজি স্বয়ং আসছেন ।
এর ফলে কৃষকদের মধ্যে চরম উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দেয় । প্রায় ষাট হাজার কৃষকের জমায়েত হয় ।এই পরিস্থিতিতে সরকার ভীত হয়ে বাবা রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন এবং বাবা রামচন্দ্র মুক্তিলাভ করেন ।
যুক্তপ্রদেশ কিষাণসভা ভাঙন :বাবা রামচন্দ্রের মুক্তির পরেই কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে যুক্তপ্রদেশ কিষাণসভা ভেঙে যায় এবং ১৯২০ খ্রি: অক্টোবর মাসে প্রতাপগড়ে অযোধ্যা কিষাণসভা নামে অপর একটি কিষাণসভা গড়ে ওঠে ।
মূল্যায়ন : বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে সংঘটিত কৃষক আন্দোলন শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকেনি । সরকার সংশোধিত অযোধ্যা আইন তৈরি করে বিদ্রোহী কৃষকদের ক্ষোভের উপশম করেছিল মাত্র ।